Saturday, March 10, 2018

দুহাজার আঠারোর কড়চা

১.
আমি তেমন উন্নত প্রজাতির মানুষ নই, কিন্তু জেনেশুনে কখনো কারো ক্ষতি করিনি। দৈনিক যেসব ক্ষতির কাজ করি সেসব আমার নিজেরই। আমার সময়, অর্থ, চরিত্র, ধর্ম, অধর্ম, সবকিছুতে আমি কেবল নিজের ক্ষতিই করে গেছি। এর সবটাই জেনেশুনে। আমার আজকাল বেশী মানুষ ভালো লাগে না। এমনকি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গও আমাকে আনন্দ দেয় না। বইপত্র, সিনেমা, লেখালেখি, এসবের বাইরে আর কিছুর সাথে আমার সম্পর্ক নেই। আমি যাদের বন্ধুত্ব কামনা করি তাদের মধ্যে এই বিষয়গুলো উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু এই বিষয়ে আগ্রহ আছে তেমন মানুষ আমার বন্ধুচক্রে কম। তাই প্রাণের বন্ধু ব্যাপারটা আজকাল বিরল হয়ে গেছে বাস্তবে। চাইলে অনেকের মতো ভার্চুয়াল বন্ধুতা গড়ে তোলা যায়, তাদের সাথে মেতে দুনিয়া ভুলে থাকা যায়। কিন্তু তাতেও আমার মন সায় দেয় নি কখনো। কেমন একটা অবিশ্বাস কাজ করে অদেখা অচেনা মানুষের জন্য। অচেনা মানুষ হঠাৎ আপন হয়ে হঠাৎ বিগড়ে যেতে পারে তুচ্ছ কারণেও। তার কোন দায়বোধ নেই বলে। মাঝে মাঝে কম বয়সীদের সাথে মেলামেশা করে দেখেছি, কিন্তু তাতে কেমন যেন হংস মাঝে বক মনে হয় নিজেকে।

২.
আমি যেসব আঘাত পাই, তার জন্যও নিজেই দায়ী। কিছু বিষয়ে আমার পরনির্ভরশীলতা আছে। ব্যাপারটা নিতান্তই মানসিক। বাস্তবে কারো কোন সাহায্য ছাড়াই চলতে পারি। কিন্তু ওই যে মানসিক নির্ভরশীলতার একটা ব্যাপার ঘটে গিয়েছে বছর বছর ধরে, সেখানে হঠাৎ করে হোঁচট খেলে সব বিগড়ে যায়। অথচ কেউ আমাকে বলেনি পরনির্ভরশীল হতে। আমার নিজেরই সৃষ্ট জগত ওটা। যে নক্ষত্রের ক্ষীণ আলো আমার জন্য খরচ হয়, তাতে নীহারিকার কিছু এসে যায় না। কিন্তু সেই আলোক রশ্মি যদি কোন কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তখন আমি দুচোখে অন্ধকার দেখি। দোষটা নক্ষত্রের নয়, আমারই। আরো যে নক্ষত্র আছে আমি তাদের কাছ থেকে আলো নিয়েই পথ চলতে পারি। অথচ সেটা না করে নির্দিষ্ট নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি কক্ষপথে বন্দী একটা গ্রহ যেন। এসবের জন্য কাউকে দায়ী করা চলে না। ওই নক্ষত্রে মালিক আমি নই, সেই নক্ষত্রের গতিপথ আমার জানার কথা নয়।

৩.
দুমাসের জন্য যে কাজে হাত দিয়েছিলাম, এক বছর পার হয়ে যাচ্ছে, এখনো শেষ হয়নি। কদিন পরপর একেকটা ঝামেলা এসে হাজির হয়, আমি পিছিয়ে পড়তে থাকি। আমাকে কেউ কোন ডেডলাইন দেয়নি। আমি নিজের শৃংখলে নিজেই আটকে গেছি। কাজটা না হলে কারো কিছু এসে যাবে না। আমারও আর্থিক লাভ ক্ষতির কিছু নেই। তবু ধাক্কাগুলো ভোগায় বেশী। ইতিহাসের কাজে নেমে লাভ কিছু হয়েছে অবশ্য। পড়াশোনা করা গেছে বেশ। নতুন কিছু বইপত্র কেনা হয়েছে। এবার বইমেলার কোন বই কিনিনি। বাতিঘরে গিয়ে যে কয়েকটা বই কিনেছি তার সবই ইতিহাসের বই।  দুটো অনুবাদ কিনেছি (বাবরের জীবনী আর মানুচ্চির ভারত ভ্রমণ) যার মূল বইয়ের পিডিএফ আছে আমার।  তবু বাংলাটা কিনে রাখলাম চট করে উল্টে দেখার জন্য। তবে এর মধ্যে দুর্লভ ও উল্লেখযোগ্য বই হলো কৈলাশচন্দ্র সিংহের 'রাজমালা'। রাজমালার আরো দুটি সংস্করণ আছে আমার। চট্টগ্রামের ইতিহাসের সুত্র হিসেবে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সুত্রগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য একবার আগরতলা যাবার ইচ্ছে আছে, আগরতলা থেকে উদয়পুর, ত্রিপুরার প্রাচীন রাজধানী। পাণ্ডুলিপি এখনো মনমতো করে লিখতে পারিনি। যতদিন না হয় ততদিন প্রকাশ আটকে থাকবে।

৪.
বেলা শেষে জীবনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ হয়ে পড়ি। আমাকে তুমি ভরিয়ে দিয়েছো। এতটা আমার প্রাপ্য ছিল না কখনো। এবার তুমি অন্য দিকেও কিছু দাও। যেদিকে শূন্য সেদিকে।





No comments: