Tuesday, March 20, 2018

প্রযুক্তির গাধা

১. প্রযুক্তির গাধা

লিখতে চেয়েছিলাম মানুষ 'প্রযুক্তির দাস'। কিন্তু লিখতে হলো 'প্রযুক্তির গাধা'। মোবাইল প্রযুক্তির দিকে তাকালে ব্যাপারটা বোঝা সহজ। যেদিন থেকে মোবাইল প্রযুক্তি চালু হলো সেদিন থেকে মানুষ বদলে যেতে শুরু করলো। বিশেষ করে স্মার্টফোনের যুগে। স্মার্টফোন আসার পর মানুষ কতটা স্মার্ট হয়েছে জানি না, কিন্তু তার দশগুন হয়েছে গাধা। স্মার্টফোনকে যদি একটা মুলো আর মানুষটিকে একটি গাধা হিসেবে কল্পনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে গাধাটি বছর বছর নতুন নতুন মুলোর পেছনে ছুটছে। নতুন মুলোয় নতুন কিছু নেই। সেই একই খিদে মেটায়। পাঁচ বছর আগের স্মার্ট ফোনে যেসব কাজ করতাম, নতুন ফোনেও তাই করি। বাড়তি কিছুই আবিষ্কার হয়নি। তবু বাজারে নতুন মুলো আসলেই মন আইঢাই করে। গড়ে বছরে অন্ততঃ একবার মোবাইল ফোন বদলায় সামর্থ্য থাকলে। আগের ফোন কার্যকর থাকলেও।

পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম সম্প্রসারিত বাণিজ্য মোবাইল ফোন। বর্তমানে বিশ্বের ৪৭৭ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল আছে। বাকী যে কজনের হাতে মোবাইল পৌঁছেনি তাদের বয়স নেহাত ৬ বছরের নীচে বলেই। ৬ বছরের বেশী বয়সী জনগোষ্ঠির ৯০% এর হাতে মোবাইল চলে এসেছে। এটা খুব ভালো খবর মনে হতো যদি সেই ৯০% মানুষের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতো। কিন্তু তা হয়নি। আমরা স্মার্টফোনের গাধা হিসেবে থেকে গেছি। কখনো কখনো ভাতের পয়সাতেও ভাগ বসাতে দিচ্ছি মোবাইল কোম্পানীকে।


২. ফেলে দেয়া জঞ্জাল থেকে

বাতিল জিনিসের ঝুড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে আজ এই পুরোনো নষ্ট মোবাইলটি হাতে পড়লো আজ। মোবাইলটির বয়স আমার কনিষ্ট সন্তানের সমান। প্রায় সাড়ে আট বছর। আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম এটার দিকে। ছবি তুলে নিলাম। এই মোবাইলের সাথে অনেক স্মৃতি জড়িত আমার। মোবাইলটি যখন প্রথম কেনা হয় তখন এটা একটি বিস্ময়কর বস্তু ছিল। তখনো স্মার্টফোনের যুগ আসেনি দেশে। আনস্মার্ট ফোনের মধ্যে এটা ছিল সবচেয়ে কার্যকরী যন্ত্র। এটা দিয়ে স্মার্টফোনের অনেক কাজ করা যেত, এমনকি টিভি দেখাও চলতো।



সেই যুগে এই মোবাইলের দাম পড়েছিল সাড়ে বারো হাজার টাকা। ছিনতাইকারীর চোখে পড়ে আবার ভয়ে পথেঘাটে মোবাইল কানে তুলতাম না। খুব যত্নে আদরের সাথে রাখতাম। এটার একটা চমৎকার খোপ ছিল, যার ভেতর মোবাইলটা রাখা যেতো। আমি এটা কেনার কদিন পরই কক্সবাজার গিয়েছিলাম। সমুদ্র সৈকতের গর্জন সাথে নিয়ে কথা বলেছিলাম প্রিয়জনের সাথে। কত ছবি ভিডিও করেছি এটা দিয়ে, সব কোথাও হারিয়ে গেছে। সময়ের সাথে সাথে নতুন নুতন মডেলের মোবাইল বাজারে আসলো। নতুন নতুন ফিচারে মনোযোগ দিতে দিতে কখন যে এটাকে বাতিল কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দিয়েছিলাম মনেই পড়ে না। আসলে কোন কিছুই চিরকাল একই গুরুত্ব পেতে পারে না। আমাদের প্রয়োজনের খিদে মেটাতে না পারলে সে যত দামী, যত আদরের বস্তুই হোক না কেন, তাকে বাতিল না করে উপায় থাকে না।

ব্যাটারিটা ফেলে দিয়ে মোবাইলটা আমার পুত্রকে খেলনা হিসেবে ব্যবহার করতে দিলে সে খুব খুশী হলো। আমিও খুশী, কেননা আরো কিছুদিন অন্তত মোবাইলটা চোখের সামনে দেখা যাবে। পুরোনো জিনিসের প্রতি আমার কেমন একটা মায়া কাজ করে। আমার ছেলেবেলার, চল্লিশ বছর পুরোনো খেলনাও রয়ে গেছে দুয়েকটা।

No comments: