১৭ ডিসেম্বর ভোরবেলা মেজর থাপার নেতৃত্বে ভারতীয় বাহিনী যখন শহরে প্রবেশ করছিল তখন চট্টগ্রাম শহর একদম থমথমে। পাক বাহিনীর একাংশ কক্সবাজার হয়ে বার্মা পালিয়ে যাবার চেষ্টায় ছিল বলে শোনা গিয়েছিল। তাদেরকে বাধা দেবার জন্য দোহাজারীর কাছে সাঙ্গু নদীর সেতুটা ধ্বংস করারও পরিকল্পনা গ্রহন করেছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আসা মেজর জেনারেল উবানের নেতৃত্বে একদল কমাণ্ডো। শেষমেষ পাকিস্তানীরা ওদিক দিয়ে পালায়নি এবং সেতুও ধ্বংস হয়নি। জেনারেল উবানের দল চট্টগ্রাম শহরে আসার কথা থাকলেও শেষমেষ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে দক্ষিণ চট্টগ্রামেই থেকে যায়। চট্টগ্রামে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় ঢাকা থেকে আসা যৌথ বাহিনী। সেই সময়ে পাকিস্তানী বাহিনীর একাংশ আগ্রাবাদ হোটেলে আশ্রয় গ্রহন করেছিল। ঢাকায় যেমন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল রেডক্রস ঘোষিত নিরপেক্ষ জোন, সরকারীভাবে ঘোষিত না হলেও চট্টগ্রামে তেমনি আগ্রাবাদ হোটেল ছিল বিদেশী নাগরিকদের আশ্রয় কেন্দ্র। রেডক্রসের বিদেশী কর্মীগনও এই হোটেল থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। তাঁরা পাক বাহিনীর আত্মসমর্পনে মধ্যস্থতার ভূমিকায় ছিলেন।
জাপানের তাদামাসা হুকিউরা রেডক্রস কর্মী। পুরো মুক্তিযুদ্ধ কালে তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করেছিলেন। প্রধানত হাতিয়া অঞ্চলে কাজ করলেও ঢাকা চট্টগ্রামে যাতায়াত ছিল কর্মসুত্রে। ঢাকার আত্মসমর্পন পর্বে উপস্থিত ছিলেন তিনি। তারপর তিনি চট্টগ্রামের আত্মসমর্পন পর্ব প্রত্যক্ষ করার জন্য চট্টগ্রামে চলে আসেন ষোল তারিখ রাতেই।
রেডক্রস কর্মী তাসামাদা হুকিউরা ছাড়াও তখন আগ্রাবাদ হোটেলে ছিলেন পশ্চিম জার্মানীর কোখ, অস্ট্রিয়ার ইয়ানৎস এবং ফরাসী জাঁ পিয়েরে। ১৭ ডিসেম্বর সকালে পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পনে সম্মত হয় ভারতীয় বাহিনীর কাছে। কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করতে বলা হয়। আত্মসমর্পনের জন্য নেভাল বেইস ও ক্যান্টনমেন্ট এই দুই জায়গায় জড়ো হতে বলা হয়েছিল পাক বাহিনীকে। কিন্তু বেশ কয়েকশো সৈন্য আগ্রাবাদ হোটেলে আশ্রয় নেবার সংবাদে হোটেলের চারপাশে হাজারখানেক মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নিয়ে ঘেরাও করে ফেলে এবং মুক্তিবাহিনী দাবী জানাতে থাকে হোটেলে অবস্থান করা পাক বাহিনীকে তাদের হাতে তুলে দিতে যাতে তারা প্রকাশ্য গণ আদালতে বিচার করতে পারে।
মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তেজিত দেখে তাসামাদা অঘটনের আশংকা করলেন। শেষ মুহুর্তে বড় ধরনের একটা হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে কেননা হোটেলের ভেতর আত্মগোপন করে পাকিস্তানীরা হুমকি দিচ্ছে তারা হোটেলের বিদেশী অতিথিদের জিম্মি করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করবে। একই সময়ে মুক্তিবাহিনীর স্থানীয় কমাণ্ডারের সাথে রেডক্রসের আলোচনা চলছিল আত্মসমর্পনের বিষয়ে। ভারতীয় বাহিনী আসতে আরো খানিক সময় লাগবে। সেই অবকাশে পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাসামাদা তাঁর সহকর্মী পিয়েরেকে শহরের কেন্দ্রস্থলে ভারতীয় বাহিনীর কাছে খবর পাঠান। পিয়েরে দ্রুততার সাথে মেজর থাপারকে নিয়ে ফিরে আসার সময় প্রায় ৩০ ট্রাক ভারতীয় সৈন্য আগ্রাবাদ হোটেলে পৌঁছে যায়।
অবশেষে কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সকালে রেডক্রসের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করলো পাকিস্তানের তিন বাহিনী। চট্টগ্রামে সেদিন তিন বাহিনী মিলে মোট ৮৬১৮ জন পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পন করেছিল। আগ্রাবাদ হোটেল থেকে রাজাকার ও পাকিস্তানী মিলিয়ে ৭৫১ জনকে বন্দী করা হয়। ভারতীয় সৈন্যদের চিরকাল শত্রুজ্ঞান করলেও সেদিন পাকিস্তানীরা তাদের কাছেই আশ্রয় নিতে কতোটা আকুল হয়েছিল তার সাক্ষী রেডক্রস কর্মী তাসামাদা হুকিউরা।
মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তেজিত দেখে তাসামাদা অঘটনের আশংকা করলেন। শেষ মুহুর্তে বড় ধরনের একটা হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে কেননা হোটেলের ভেতর আত্মগোপন করে পাকিস্তানীরা হুমকি দিচ্ছে তারা হোটেলের বিদেশী অতিথিদের জিম্মি করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করবে। একই সময়ে মুক্তিবাহিনীর স্থানীয় কমাণ্ডারের সাথে রেডক্রসের আলোচনা চলছিল আত্মসমর্পনের বিষয়ে। ভারতীয় বাহিনী আসতে আরো খানিক সময় লাগবে। সেই অবকাশে পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাসামাদা তাঁর সহকর্মী পিয়েরেকে শহরের কেন্দ্রস্থলে ভারতীয় বাহিনীর কাছে খবর পাঠান। পিয়েরে দ্রুততার সাথে মেজর থাপারকে নিয়ে ফিরে আসার সময় প্রায় ৩০ ট্রাক ভারতীয় সৈন্য আগ্রাবাদ হোটেলে পৌঁছে যায়।
ওদিকে ততক্ষণে সেদিন সকালেই ক্যাপ্টেন রফিকের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করে সার্কিট হাউস থেকে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে ফেলেছে।
অবশেষে কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সকালে রেডক্রসের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করলো পাকিস্তানের তিন বাহিনী। চট্টগ্রামে সেদিন তিন বাহিনী মিলে মোট ৮৬১৮ জন পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পন করেছিল। আগ্রাবাদ হোটেল থেকে রাজাকার ও পাকিস্তানী মিলিয়ে ৭৫১ জনকে বন্দী করা হয়। ভারতীয় সৈন্যদের চিরকাল শত্রুজ্ঞান করলেও সেদিন পাকিস্তানীরা তাদের কাছেই আশ্রয় নিতে কতোটা আকুল হয়েছিল তার সাক্ষী রেডক্রস কর্মী তাসামাদা হুকিউরা।
No comments:
Post a Comment