Thursday, December 15, 2016

তৌকিরের 'অজ্ঞাতনামা': ভালো সিনেমা তৈরীর একটা প্রচেষ্টা

তৌকিরের 'অজ্ঞাতনামা' দেখা হয়ে গেল ইউটিউবের সৌজন্যেই। আমার মতে একটি ভালো সিনেমা তৈরীর প্রচেষ্টার ভালো উদাহরণ। সিনেমার ইস্যুটা খুবই বাস্তব, সম্ভবতঃ কিছু কিছু বাস্তবতা এর চেয়েও নিষ্ঠুর। প্রবাসী বাঙালীদের অপাঘাতে মৃত্যুর খবর আমরা পত্রিকায় পড়ার পরে তাঁদের দেশে থাকা পরিবারের চিত্রটা আমাদের জানা হয় না। এই অংশটা যথেষ্ট  চমৎকারভাবে এসেছে। প্রথমার্ধকে বাহবা দিতে হয় সেজন্য।

তবে আর দশটি সিনেমার মতো এই সিনেমায় কিছু দুর্বলতাও রয়ে গেছে।

কিছু দুর্বলতা কারিগরী, কিছু দুর্বলতা চিত্রনাট্যের। কারিগরী দুর্বলতাগুলো অধিকাংশই দৃশ্যায়নে আলোর ব্যবহারজনিত। নাটক এবং সিনেমার  মধ্যে যে কারিগরি পার্থক্য থাকে তা এই সিনেমাতে উৎরাতে পারেনি। যাকে আমরা সিনেমাটোগ্রাফি বলি, তাতে এই সিনেমাতে উপস্থিত ছিল না। কোলকাতার বাংলা সিনেমাগুলো যারা দেখেন, তাঁদের কাছে এই পার্থক্যটা প্রকট।

চিত্রনাট্যের দুর্বলতাগুলো চাইলে এড়ানো যেতো। দ্বিতীয়ার্ধে যখন লাশের তৃতীয় পরিচয় উদঘাটিত হয় তারপর লাশ নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে ধর্না দেবার ব্যাপারটা বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। এমনকি পুলিশ হিসেবে মোশাররফ করিমের ভূমিকাটা প্রথমার্ধে মোটামুটি ঠিক থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে অবাস্তব লেগেছে। এখানে পুলিশের চরিত্র ছেড়ে বেরিয়ে মোশাররফ একদম টাইপড করিম হয়ে গিয়েছে।

তবে এই ছবির সবচেয়ে চমৎকার চরিত্র ছিল আসিরউদ্দিনের ছেলেটি। যদিও একেবারে অপ্রাসঙ্গিক তুলনা, তবু তাকে দেখে চট করে মনে পড়ে যায় পথের পাচালীর অপুর কথা। বাবার মৃত্যু সংবাদ অনুধাবন করতে না পারা একটি শিশু পাতার নৌকা ভাসিয়ে দিচ্ছে অজানার উদ্দেশ্যে - বুকের মধ্যে ব্যথা ছলকে ওঠে এখানটায়।

অজ্ঞাতনামা নিয়ে খুব বেশী আহলাদ কিংবা একেবারে প্রত্যাখ্যান কোনটাই করা উচিত না। কিন্তু এরকম সিনেমা বানানোর প্রচেষ্টাগুলোকে উৎসাহিত করা দরকার আমাদের পচে যাওয়া সিনেমা জগতকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনতে। এই সিনেমাটিকে অন্ততঃ ফারুকীর টেলিভিশনের মতো ফাজলামি মনে হয়নি। ক্রিকেটের মতো বাংলা চলচ্চিত্রেও তরুণ নির্মাতারাই আমাদের ভরসা।




No comments: