Monday, April 30, 2012

তিনটি অবুঝ প্রশ্ন এবং একটি জ্ঞানী উপলব্ধি

১) জগতে এত ঘুরন্তিস কেন?
কৈশোর থেকে প্রশ্নগুলো ঘুরছে। পড়াশোনায় মন ছিল না বলে টই টই করে ঘুরে বেড়াতাম। তাবৎ মুরব্বীর একই ঝাড়ি- 'এত ঘুরাঘুরি কিসের? লেখাপড়ার কাম নাই?' আরে আজব আমি একা ঘুরি নাকি? সারা দুনিয়াটা ঘোরে। কেবল পার্থক্য হলো ওরা ঘুরে নির্দিষ্ট বৃত্তাকারে, আমি ঘুরি লাইন ছাড়া। তবে এইসব ঘুরাঘুরি নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনা বিকাশ লাভের আগেই মারা গেছে। যেটুকু মনে আছে তা বলছি-

পৃথিবীটা গোল। চাঁদটাও। এমনকি সূর্যটাও। তাবৎ সৌরজগতের, এ পর্যন্ত জানা মহাকাশের সবগুলো গ্রহ নক্ষত্র গোলাকার। ব্যতিক্রম আছে কিছু গ্রহাণু, ধূমকেতু আর উল্কা, সেটাকে হিসেবে আনছি না। প্রত্যেকটা গ্রহ উপগ্রহ নক্ষত্রের একটা অক্ষরেখা আছে, সেই অক্ষরেখায় বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার রেখায় ঘুরছে সবাই। আবার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুপরমাণু ভেঙ্গেও একই কারবার। ছোট বড় সবাই ঘুরছে তো ঘুরছেই। হাতের নখের মধ্যে আটকানো একবিন্দু বালি, তার ভেতরেও চলছে অবিরাম ঘূর্ণি। এত ঘুরন্তিস কেন? কি উদ্দেশ্য তাহার? উদ্দেশ্যহীন ঘুরন্তিস প্রকৃতির সাথে যায় না। প্রত্যেকটা কাজেরই একটা ইনপুট আর একটা আউটপুট আছে। দুটো মিলেই জগতের সকল কর্মযজ্ঞ। নিশ্চয়ই এই ঘুরন্তিস এর কোন উদ্দেশ্য আছে যা আমাদের অজানা। ঘুরন্তিস এর উদ্দেশ্য বের করা সহজ না হলেও, এখান থেকে একটা সাধারণ জ্ঞান শিক্ষা নিলে ক্ষতি নেই। যেহেতু দুনিয়ার সবকিছুর আকৃতির মধ্যে ঘুরন্তিসের নেশা মানে বৃত্তের প্রভাব, তাহলে ধরে নেয়া যায় বৃত্ত একটি মৌলিক আকৃতি যার জন্ম আদিতে। বৃত্ত ছাড়া আর যত আকৃতি সব মানবসৃষ্ট। মানে দুনিয়াটা আসলে গোল।

২) একই আকাশে চাঁদ সূর্যের আকার পরিবর্তন হয় কেন?
সূর্য যখন দিগন্ত রেখার কাছাকাছি থাকে তখন তার সাইজ দেখছেন? কিংবা পূর্ণিমার সন্ধ্যার পূর্বদিগন্তের চাঁদটা? ইয়া ঢাউস সোনালী/কমলা থালা যেন। কিন্তু একই জিনিস যখন মাথার উপরে থাকে, তখন আবার সেই স্ট্যান্ডার্ড সাইজে ফিরে যায়। এই তেলেসমাতির রহস্য কি? এটা তো আর ভাত চালের ব্যাপার না যে রান্না করার আগে এক সাইজ, রান্না করার পরে অন্য সাইজ হয়ে যাবে। তাহলে রহস্যটা কি? টলেমি আংকেল বলছিলেন যে পৃথিবীর অভিকর্ষ বা বায়ুমণ্ডলের কোন একটা প্রভাব আছে এতে যার ফলে সাইজ এরকম হেরফের দেখায়। দুই হাজার বছর এতে কোন দ্বিমত দেখা না গেলেও আধুনিক মহাকাশ বিজ্ঞানীরা তার দাবীটা খারিজ করে দিয়ে বলেছে, বুড়া কিছুই জানতো না। এখানে কোন ব্যাপারই নাই। আগাগোড়া নাকি একই সাইজ দেখা যায়। যেটা আমরা বড় ছোট দেখি বলে মনে হয় সেটা আমাদের দেখার ভুল, মগজের এরর মেসেজ। যার নাম অপটিক্যাল ইল্যুশন।

আমি আধুনিক বিজ্ঞানীদের গুল্লি মারি। আমার বিশ্বাস টলেমি আংকেলের সাথে যায়। এখানে অভিকর্ষ কিংবা বায়ুমণ্ডলের কোন ফাঁপর না থাকলে এত বড় জালিয়াতি কারবার লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চলতে পারতো না।

৩) পা দিয়ে হাঁটেন নাকি চোখ দিয়ে?
ঘুরাঘুরি কেবল আমিই করি না। আপনিও করেন। কথা সেটা নয়। এই যে এত হাঁটাহাঁটি করেন কখনো ভেবে দেখেছেন কিভাবে হাঁটেন? হ্যাঁ, পা দিয়ে হাঁটেন জানা কথা। কিন্তু অজানা কথা হলো পা হলো একটা ভর দেবার অঙ্গ মাত্র আপনি আসলে হাঁটেন চোখে ভর দিয়ে। কিভাবে? আপনার আশেপাশে টাইলসের ফ্লোর আছে? একফুট বাই একফুট টাইলস? যদি থাকে তবে একফুট টাইলসের উপর দিয়ে সোজা সামনে একশো ফুট হেঁটে যান তো! সাবধান, একফুট টাইলসের বাইরে যেন কোনমতেই পা না পড়ে। সীমা এই একফুট প্রস্থ টাইলস। এর ডাইনে বামে যে টাইলস আছে তাতে যেন পা না পড়ে। .......... কী, পারা গেছে? পারার কথাই। সোজা একটা কাজ।

কিন্তু ধরুন এই একফুট প্রস্থ একটা সাঁকো স্রোতস্বিনী নদীর পঞ্চাশ ফুট উপরে বসিয়ে দেয়া হলো। এটার উপর দিয়েই আপনাকে নদীটা পার হতে হবে। পারবেন? এবার চিন্তায় পড়ে গেছেন তাই না? হুঁ সেজন্যই বলেছিলাম, আপনি আসলে হাঁটেন চোখের মাথায় ভর দিয়ে। ফ্লোরে হাঁটার সময় আপনার দৃষ্টি আশেপাশের টাইলসে ভর করে আপনাকে সোজা পথে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু নদীর উপর দিয়ে যাবার সময় আপনার চোখকে ভর দিতে হয় জলের স্রোতে। ফলে আপনি ভারসাম্য হারাবেন বারবার, হয়তো দশ পা গিয়েই নদীতে ঝপাৎ করে পড়ে যাবেন । (তবে হ্যাঁ কেউ যদি শারীরিক কসরতের কারিগর হয়, তাহলে এটা তার জন্য প্রযোজ্য নয়।) এখন বলুন, আপনি কী দিয়ে হাঁটেন, চোখ দিয়ে নাকি পা দিয়ে?

৪) এবং কলম বিষয়ে একটি সাম্প্রতিক উপলব্ধি
আমার ধারণা কলম দিয়ে লেখালেখি করতে হলে ৯৯% লোকের ব্লগিং নেশা ছুটে যেতো এবং নিশ্চিতভাবে আমি তাদের প্রথম সারিতে থাকতাম। সেদিন এক জায়গায় কলম দিয়ে দুই পাতা বাংলা লিখতে গিয়ে হাতের আঙুলগুলো এমন কিমা কিমা হলো যেন স্কুলের তিন ঘণ্টার বার্ষিক পরীক্ষার খাতা জমা দিয়ে বেরুলাম।

কম্পিউটারের কাছে কৃতজ্ঞতা। বিশ শতকে আবিষ্কৃত হবার জন্য এবং উনিশ শতকে আবিষ্কৃত না হবার জন্য। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, অভ্র এই তিনটা বস্তু না থাকলে এতগুলো বই একুশে মেলায় প্রকাশ পেতনা, বাঙালী এতখানি লেখালেখি করতো না, এতগুলো বাংলা ব্লগেরও জন্ম হতো না- এটা যেমন সত্য, এই আবিষ্কার ১০০ বছর আগে হলে রবি বুড়ো একা যা লিখতো তা পড়ে শেষ করার জন্য একেকটা মানুষের সত্তরবার জন্ম নিতে হতো সেটাও সত্য। বেঁচে গেছি!

No comments: