Monday, April 30, 2012
ক্যাকটাস
এ যেন নিঝুত বছর আগের কথা। আমার দুজন বন্ধু ছিল। তার একজন মানুষ, আরেকটা বৃক্ষ। ক্যাকটাসের গাছকে বৃক্ষ বললে কি বৃক্ষসমাজকে অপমান করা হয়?
ক্যাকটাসের ছোট্ট টবটা কিনে সাজিয়ে রেখেছিলাম বিছানার পাশের টেবিলে। টবটায় প্রতিদিন একটু করে পানি স্প্রে করতে হতো। ওটাই তার একমাত্র দৈনিক পাওনা আমার কাছ থেকে। এর চেয়ে বাড়তি ছিল সপ্তাহে একবার খানিকটা রোদ।
নিয়ম মেনে সব দিয়ে যাচ্ছিলাম। রোদ পানির রুটিন ঠিক ঠাক থাকলে একদিন ছোট্ট একটা ফুল উপহার দিল আমাকে। আমি তার ছবি তুলে আমার মানুষ বন্ধুটাকে উপহার দিলাম। বন্ধুটা আমার কাছ থেকে বহুদূরের এক দেশে থাকে। আমি একা হয়ে যাবার পর সেই আমার একমাত্র সঙ্গী। তারপর যুক্ত হয় এই ক্যাকটাস। দুজনের সাথে আমি প্রচুর বকবক করি। যখন মানুষ বন্ধুটা থাকে তখন ক্যাকটাসের সাথে কথা বন্ধ থাকে। ক্যাকটাসের তাতে মন খারাপ হতো? অভিমানে ঠোট ফুলাতো? কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি।
আমি এই দুজনের মধ্যে কখনো তুলনা করতাম না। দুজনই আলাদা সত্ত্বায় তৈরী। মাঝে মাঝে মনে হতো আমি বুঝি ক্যাকটাস বন্ধুকে বেশী পছন্দ করি। ওর কাছেই নিরাপদ থাকি। মানুষ বন্ধু বড় ফ্যাসাদের জিনিস। কথায় কথায় রাগ করে অভিমান করে চলে যেতে পারে সাত দিনের জন্য। তখন আমি ওই ক্যাকটাসের সঙ্গ নিয়ে তাকে ভুলে থাকি। তবে মানুষটা আবার ফিরে আসলে আমি দুহাতে জড়িয়ে ধরি। যেদিন ফিরে আসে সেদিন আমি ওর সাথে একটু বেশী সময়ই থাকি। সেই সময়টাতে আমি ক্যাকটাসকে একরকম ভুলে থাকি। অনুভুতির অনুরণনে সারাদিন কেটে যায় আমার। এভাবেই চলছিল দিন।
একদিন কি যেন হয়ে গেল। মানুষ বন্ধুটার সাথে তুচ্ছ কারণে নেট ঝগড়া হয়ে গেল। মানুষ বন্ধু আমাকে ছেড়ে চলে যাবার ঘোষণা দিল। আমি সেদিন ভেবেছি সত্যি সত্যি যাচ্ছে না। মিছে ভয় দেখাচ্ছে। বরাবরই এমন করে। কিন্তু সেবার সত্যি চলে গেল সে। একদিন দুদিন তিনদিন......... আমি বিছানায় উপুড় হয়ে সাতদিন কাঁদলাম, চোখের জল শুকিয়ে কালি হয়ে গেল। তারপর মাস চলে গেলেও বন্ধু ফেরেনি।
না ফিরলেও আমার বিশ্বাস ছিল তার জন্য আমি অনন্তকাল অপেক্ষা করতে পারবো। অপেক্ষার দিন মাস বছরগুলোতে আমি একের পর এক ক্যাকটাসে ফুল ফুটিয়ে যাবো। আমার প্রতিজ্ঞা নিয়ে বিছানা থেকে মাথা তুললাম ক্যাকটাসের খোঁজে। কিন্তু সাইড টেবিলে তাকিয়ে দেখি, ক্যাকটাসটা কখন মরে শুকিয়ে রয়েছে ছোট্ট মলিন টবের মাঝে। আমার এক মাসের চরম অমনোযোগ আর অবহেলায় আমি ক্যাকটাস বন্ধুকেও হারালাম চিরতরে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment