Monday, April 30, 2012

চাবির রিং

রাক্ষুসে অন্ধকার হা করে গিলে ফেললো টর্চলাইটের একরত্তি আলোকে। দুটো পেন্সিল ব্যাটারীর শক্তিতে নির্গত আলোর পরিধি দুচোখের গন্ডীর চেয়েও কম। গহীন এই অন্ধকারের কাছে আলো এক পরাজিত শক্তি। যা খোঁজা হচ্ছে তা দামী কিছুই না, সাধারণ ধাতব গোলাকার একটি চাবির রিং। চাবিটা হারাবার আগে মূল্য হারিয়েছিল। অকেজো চাবিটাকে গলায় ঝুলিয়ে বহুদিন বেঁচে ছিল রিংটা। চাবিটা হারাবার পর থেকে নিঃসঙ্গ রিংটা আংটির মতো আঙ্গুলে গলিয়ে হারানো চাবির অস্তিত্ব অনুভব করে বেড়াতো সে। চকচকে গোলাকার রিংটা সময়ের তামাটে স্পর্শে রূপোলী বর্ন হারিয়ে ফেলেছিল।

চাবি হারাবার আগে নষ্ট হয়েছিল ড্রয়ারের তালাটা। তালাচাবিওয়ালা এসে রায় দিল এই তালা ঠিক হবার নয়। তালাটা ভেঙ্গে ড্রয়ারটা উন্মুক্ত করে দিয়ে গেল সে। জং ধরা প্রাচীন তালা আশ্রয় পেল ডাস্টবিনের ধারে ছড়ানো আবর্জনার আড়ালে।

তারও আগে হারিয়েছিল ড্রয়ারে শুয়ে থাকা ডায়েরীটার কয়েকটি পাতা। সেই পাতাগুলোয় একটি অদ্ভুত চিঠি লেখা ছিল। পাঠাবার আগেই চিঠির প্রাপক হারিয়ে গিয়েছিল বলে চিঠিটাও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। অদ্ভুত নীল অক্ষরে সাজানো পাতাগুলো তাই ছিঁড়ে ফেলে দিতে হয়েছিল।

সবকিছু হারিয়ে গেলেও হারায়নি কথাগুলো। ভুলতে চাওয়া সেই কথাগুলো স্মৃতি প্রকোষ্ঠে স্থায়ী বাসস্থান গড়ে রাতের পর রাত ঘুনপোকার মতো খেয়ে যাচ্ছিল মগজের শিরা উপশিরা। তার সময়ে এক বিরল মুহুর্তের অধিকারবোধের উপহার এই চাবির রিং।

প্রতিকূল সময়ে টিকতে না পেরে সে হারিয়ে গেছে এটা যেমন সত্য, আবার একদিন সে ছিল বুকের খুব গভীরে এটাও ভীষণ সত্য। এই দুই সত্যের সেতুবন্ধন চাবির রিংটা। আমি তাই এই রাক্ষুসে অন্ধকার ভেদ করে সেই চাবির রিংটাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যা ভোলা দরকার তা ভুলতে পারি না, যা হারাবার নয় তা হারিয়ে যায়।

No comments: