১৯৭৫
-মারি আইসসোছ না? মারি ন আইউছ? মাইর হাইয়েরে মাইয়া ফোয়ার ডইল্লা ইক্কাই ইক্কাই হাঁদদদে না ব্যাডা? যা দুরো ইঁউত্তুন। মাইর হাইয়েরে আঁর হাঁছে নোয়াবি। চো**নীর ফোয়ার মাথা ফুডাই আঁর হাছে আবি।
তীব্র ঝাড়িতে ইউনুস মিয়া পাড়ার হাড় জ্বালানো সাত বছরের ইসহাক মিয়াকে দুর করে দেয়। ইউনুস মিয়ার বিচার আচারের কায়দা ছিল এরকম। কর্কশ। কুৎসিত। ছেলেটা বাপের আশকারা পাবার পর কদিন বাদে ইট মেরে একজনের মাথা ফাটিয়ে ঘরে এল হাসতে হাসতে।
-আজিয়া এক চো**নীর ফোয়ার মাথা ফুডাই আসসি।
বাপ তাকে গোল্ড মেডেল দেবার মতো আনন্দে দুহাতে কোলে তুলে নেয়।
-এই তো বাফর ব্যাডা। এন্ডইল্লা গরিলি গম লাগে। তুই নইলে বাঁশখাইল্লা ইনুইচ্চার ফোয়া ন।
১৯৮০
একদিন ইউনুস মিয়ার কাছে আইসক্রীম খাওয়ার টাকা চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে ইসহাক মিয়া। ঘর থেকে তাড়া খেয়ে রাস্তায় নেমে বাপের চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে সে। বাপ ঘরের মধ্যে লাটি হাতে বসে আছে। ইসহাক মিয়া ঘরে ঢুকতে পারছে না মারের ভয়ে। রাস্তায় দাড়িয়ে খিস্তি করেই যাচ্ছে। তার একটা চরম বাক্য হলো -"চো**নীর ফোয়া বাফর গুষ্টি মারি। তুই নমরিবি? তুই মইরলে তোর হবরত যাইয়েরে ফত্তিন উগ্গা গরি লাথি মাইরগুম।
১৯৮৫
কলেজ থেকে ফেরার পথে গলির মুখে মুখোমুখি হলাম ইউনুস মিয়ার বউয়ের। আলুথালু বেশ। সে ছুটে এসে বললো, "অবা তুই ইসহাকরে ইক্কিনি গরি ডাহ না। ইতে গরত ন আইয়ের। উন্দি গোস্বা অইয়েরে হারাই রইয়ে।" স্কুলে ইসহাক আমাদের সাথে পড়তো। কিন্ত ক্লাস এইটের পর তাকে আর স্কুলে দেখা যায়নি। বখে গিয়েছিল। পকেটে ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াতো। স্কুল সেখানেই ইস্তফা। এখন শুনছি ছিনতাইও করে। তবু এতদিনের প্রতিবেশী তাছাড়া আমাদের স্কুলে একই ক্লাসে পড়তো একসময়। ভয়ের কি আছে। গেলাম ডেকে আনতে। নালাপাড়া বাজারের মসজিদের কাছে গিয়ে দেখলাম এই ভর দুপুরে মদ খেয়ে দুলছে আর খিস্তি করছে অবিরাম। তার সাঙ্গপাঙ্গরা অশ্লীল ভঙ্গীতে হাসতেছে। ইসহাকের চোখ লাল। আমাকে দেখে চিনতে পারলো না বোধহয়। অচেনা এমন দৃষ্টিতে তাকালো, তাতে আমি শিউরে উঠলাম। তবু কাছে গিয়ে সাহস করে বললাম,"ইসহাক, তোরে তোর মা ডাকের।" কথা শুনে ইসহাক এমন একটা খিস্তি করলো, আমি কানে দুহাত দিয়ে একটা রিকশায় উঠে পড়লাম।
১৯৯০
খুন ধর্ষন ডাকাতি ছিনতাই ইত্যাদি অভিযোগে ইসহাকের দশ বছরের জেল হয়ে গেল। এলাকাবাসী স্বস্তি পেল।
২০০৫
সময় চমকে গেল একদিন। জেল ফেরত ইসহাক কয়েক বছরের মধ্যে হাজি ইসহাক মজুমদার হয়ে ইলেকশানে দাড়িয়ে গেল। হাজিসাব ইলেকশানে জিতে মসনদে আসীন হলো। চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটের জন্য আমাকে একদিন তার দরবারে হাজির হতে হয়। বাল্য পরিচিত হিসেবে সার্টিফিকেটের সাথে এক কাপ চাও জুটে যায়।
No comments:
Post a Comment