Wednesday, February 8, 2012

প্রবৃত্তি

.......রুমে ঢুকতেই ওদের দুজনের ঘনিষ্ঠতম অবস্থান দেখা গেল। ত আর ম। দুজনেই আমার চোখের সামনে। কিন্তু নিজেদের দিকে এত বেশী মনযোগী যে আমি একটা মানুষ পাত্তাই দিচ্ছে না। আমিও ব্যক্তিত্ব প্রচারে বিশ্বাসী না বলে চুপ করে থাকলাম। গলা খাকারি দিতেও ইচ্ছে করছে না পাছে রণে ভঙ্গ দেয়। আদতে সামান্য গলা খাকারিতে ভঙ্গ দিত কিনা সন্দেহ। নিজেদের নিয়ে এতটা মগ্ন।

আসলে সবাই নিজেদের প্রয়োজনেই মগ্ন থাকে। নিজেদের স্বার্থেই ডুবে থাকে। জগতের সকল প্রাণীর জন্য এই নিয়ম। এই নিয়মের ব্যতিক্রম কেউ হলে তাদের আমরা বিশেষায়িত করি। এই দুজন সেই কাতারে পড়ে না। এদের কান্ডকীর্তি মহান হবার প্রশ্নই ওঠে না।

দৃশ্যটাকে আমার কি ঘেন্না করা উচিত? মানবিক দৃষ্টিতে ঘেন্নাই সুলভ। কিন্তু পাশবিক দৃষ্টিতে ঠিক একই দৃশ্যটাকে বলা হয় প্রবৃত্তি।

আমার নির্বিকার দৃষ্টিও এখন কৌতুহলের সীমানা ছাড়িয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত উত্তেজিত। এখানে একটা প্রতিযোগিতা আছে। কে জিতবে? কে হারবে? আমি কার পক্ষে যাবো? যে কোন খেলায় কোন একটা পক্ষ নিতেই হয়। এখানেও ব্যতিক্রম নেই। তাছাড়া আমি তো রেফারী না, দর্শকমাত্র।

আমি বিজয়ীর পক্ষই নেবো, সিদ্ধান্ত নিলাম। যে-ই বিজয়ী হোক আমি তার জয়গান গাইবো।

লড়াই চলছে। যুগলবন্দী লড়াই। নিঃশব্দ লড়াই। হারজিতের মাত্রা বোঝা যাচ্ছে না তাই। দুজনেই দুজকেই কাবু করে ফেলেছে মনে হচ্ছে। কার শক্তি বেশী? দুজন দুজনের কঠিন বাঁধনে আটকে আছে। যেন অতিপ্রাকৃতিক কুস্তি।

নিঃশ্বাস আটকে বসে আছি আমি।

অবশেষে একসময় শেষ হলো লড়াই খেলা। পরাজিত নেতিয়ে পড়ে আত্মসমর্পন করলো বিজয়ীর বাহুতে। অবাক হয়ে দেখি বিজয়ী মাকড়সাটা বিজিত তেলাপোকাটাকে বগলে নিয়ে ধীরে ধীরে আস্তানার দিকে হেঁটে যাচ্ছে। তিন বেলার অন্নসংস্থান হয়ে গেল বুঝি তার।

বিজয়ীরাই যুগে যুগে জগতে রাজত্ব করে গেছে, করবে। প্রতিষ্ঠিত এই ধারণাটা আবারো রিভাইস দিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলাম আমি।

No comments: