জীবনে এই প্রথমবার বইমেলায় গিয়ে বইযোগ হলো না।
ঢাকা গিয়েছিলাম অন্য একটা কাজে। আজকাল ঢাকায় থাকা-খাওয়া-ঘোরা সবকিছুর উপর আমি চরম পরনির্ভরশীল, সবকিছু কতৃপক্ষের(মানে অফিসের) উপর ছেড়ে দেই। ছাত্রজীবনে যেরকম বেহুদা ঘুরে বেড়াতাম ঢাকার রাস্তা ঘাটে, এখন আর সেই ঢাকা নেই। সব রাস্তাঘাট দালানকোঠা অচেনা লাগে। বিশাল দানবীয় সব ব্যাপার। ঢাকার সবকিছু যেন একটু বড় বড়। এমনকি সাইনবোর্ডের সাইজগুলো। দেয়ালের চিকাগুলোও দেখতাম একসময় বিশাল বিশাল। গুলশান বনানী উত্তরা বারিধারার দিকে তো রীতিমতো গোলকধাঁধা। বাকী ঢাকার মধ্যে মতিঝিল কারওয়ান বাজার শাহবাগ টিএসসি এই অঞ্চলগুলো বাদ দিলে বাকী ঢাকায় আমি পথ হারানো বালক।
কাজ সেরে হাতে সময় ছিল কয়েক ঘন্টা। সময় দুপুর দেড়টা। শান্তিনগরের 'হোয়াইট হাউস' থেকে থেকে বেরিয়ে ভয়াবহ যানজটের মুখোমুখি। যেখানে যাবার কথা সেদিকে গাড়ি ঘোরানোই যাচ্ছে না। ড্রাইভারকে বললাম গুল্লি মারি কাজের। যেদিকে গাড়ি নড়তে পারে সেদিকে চালাও। হাতে যেটুক সময় আছে বইমেলা ঘুরে যাই। আড়াইটায় পৌঁছালাম, কিন্তু মেলার গেট তখনো আটকানো। বলা হলো তিনটায় খুলবে। আধঘন্টা পর গেট খুললো, কিন্তু দোকান তো খোলে না। ৯০% দোকান বন্ধ। যে দুয়েকটা খোলা আছে আমাকে দেখে বইপ্রেমিক মনে হলো তাদের। ডাকাডাকি করতে লাগলো 'ভাই আসেন জাফর ইকবালের কেপলার টুটুবি আছে', 'আহসান হাবীবের সায়েন্সফিকশন আছে'...........ইত্যাদি! রীতিমতো ফেরিঅলা কায়দা। জনপ্রিয় লেখক আর বই আমাকে কোনদিনই টানেনি। আমি তবু ইশারায় আস্বস্ত করলাম যেন একটু সবুর করো, আমি জাস্ট বস্তাটা কিনে ফিরছি বই নিয়ে যাবার জন্য।
বেকার সময়। ঘুরে ঘুরে ব্লগারদের বইটই কি আছে খুঁজছিলাম। কিন্তু লিটলম্যাগ চত্বরে তখনো ঘুঘু চড়ছে। গোল চত্বরটাতে একটা মাত্র স্টল খুলে বই সাজাচ্ছে একজন। সাজানো বইয়ের মধ্যে দুটো বইয়ে নজর পড়তে থমকে দাঁড়ালাম। আমাকে না বলে আমার দুটো গদ্যপদ্যর বই প্রকাশ করে ফেলেছে কেডায় জানি!! বিশ্বাস হয় না? ফটু দেখেন। :p
তবে সাবধান.... মলাট উল্টালে ভিন্ন খবর ;)
কাজ নেই তো খই ভাজ। কাজ না থাকলে আজকাল ফেসবুক ভাজে লোকজন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম তাই বাংলা একাডেমীর পুকুরপাড়ে বসে- 'তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত আছি মেলায়'।
এই সময়ে কাউকে পাবার কথা না, তবুও সাঈদভাই, টুটুল ভাই, তানিম ভাইসহ কয়েকজনের সাড়া পাওয়া গেল নেটে। বোঝা গেল এই অসময়ে মেলায় ঢুকে বসে থাকার মতো হাঁদারামের সংখ্যা খুব বেশী না। আমি মুসাফির মানুষ আমি ঘুরতে পারি বেহুদা। চারটা বেজে গেছে। ছটার মধ্যে এয়ারপোর্ট না পৌঁছালে মুশকিল। রাস্তাঘাটের উপর ভরসা করা যাচ্ছে না। বেরিয়ে পড়লাম। গেটের একপাশে দাঁড়িয়ে তখন তিন আঁতেল গলা ফাটিয়ে হাঁকছে জ্ঞানের ছক্কা। বলটা কানের পাশ ঘেষে বেরিয়ে গেল।
টিএসসির দিকে হাঁটা দিলাম। কিছুদুর গিয়ে ফুটপাতে এক মার্বেল বিক্রেতাকে বসে থাকতে দেখে ছেলেবেলার লোভী চোখটা জেগে উঠলো। এত সুন্দর সব মার্বেল!! দেখে শুনে রঙিন মার্বেল কিনে ফেললাম এক তোড়া। নাকের বদলে নরুণ, বইয়ের বদলে মার্বেল। খানিকক্ষণের জন্য ছেলেবেলায় ফিরে যেতে যেতে দীর্ঘশ্বাস চেপে চাঁটগা ফেরার পথ ধরলাম।
No comments:
Post a Comment