Saturday, August 31, 2024

আগষ্ট ২০২৪: বিবেচনা

বাংলাদেশের ইতিহাস আরেকটা অন্ধকার আগষ্ট মাস অতিক্রম করলো। ইতিহাসের কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে ২০২৪ সালের আগষ্ট। ১৫ বছরের ক্ষমতার তাজমহল ভেঙ্গে পড়েছে। এমন একটা পতন অনিবার্য ছিল। অনেকেই অপেক্ষা করছিলেন এই পতনের জন্য। কিন্তু এক মাস আগেও কেউ জানতো না এমন কিছু ঘটবে। যারা ঘটিয়েছে তারাও জানতো না, যাদের পতন ঘটেছে তাদের দূরবর্তী কল্পনাতেও ছিল না। ক্ষমতা মানুষকে এমনই নির্বোধ, এমনই অন্ধ করে ফেলে।

এই পরিবর্তনে বাংলাদেশ কেমন সুফল পাবে সেটা আমরা এখনো জানি না। এদেশের মানুষেরা নিজেদের দুর্ভাগ্যের জন্য অনেকটা দায়ী। তাদের মধ্যে বিশ্বাসের বড় ধরণের ঘাটতি আছে। প্রচুর স্ববিরোধীতা, অসংলগ্নতা। রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশই মতলবাজ। সবার ভেতরেই বাস করছে কোনো না কোনো একটা শকুন। বড় বড় দুর্নীতিবাজ যেমন আছে, তেমনি ছোট ছোট দুর্নীতিবাজেরও কমতি নেই। যে চুনোপুটিটা বড় দুর্নীতিবাজকে গালি দিয়ে বাহবা কুড়াচ্ছে, দেখা যায় সেও ব্যক্তিগত পরিসরে কোনো না কোনো দূর্নীতির কাজে যুক্ত। আমি চারপাশের পরিচিত মানুষদের মধ্যেই দেখতে পাই তাদের।

তাই এই বিপ্লবে দেশটা আমূল পাল্টে যাবে সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।

এই ছাত্রদের আমি বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম শুরু থেকেই। তারা হয়তো নতুন কিছু করবে। হয়তো তারা কোনো রাজনৈতিক মতলবপুষ্ট নয়।  

কিন্তু আজকে সমন্বয়কের গুরুর একটা বক্তব্যে খটকা লাগলো। ছেলেটা আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বলে পরিচিত। তার বুদ্ধির কাছে হেরে গেছে এত শক্তিশালী সরকার, ভাবতে অবাক লাগে। 

কিন্তু সে আজ বিশেষ একটা সভার মধ্যে তার বক্তব্যে একটা শব্দবন্ধ কয়েকবার উচ্চারণ করেছে। ভুলে করেছে নাকি সচেতনভাবে করেছে জানি না। কয়েকবার বলেছে এই শব্দবন্ধটা। '১৯৭১ সালের ঘটনাটা'। কী ঘটনা? ১৯৭১ সালে কী ঘটেছিল? মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা যুদ্ধ? নাকি ছোট একটা দুর্ঘটনা? 

কথা হচ্ছিল নতুন পরিস্থিতিতে সংবিধান বদলাবে ২০২৪ সালের প্রেক্ষাপটে। জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সেখানে দয়া করে  '১৯৭১ সালের ঘটনাটা' জায়গা পেতে পারে। বক্তব্যে এটুকু বুঝলাম। 

মুশকিল হলো যদি মুক্তিযুদ্ধ শব্দটা উচ্চারণ করতে এতটা সংকোচ হয় তাহলে বুঝতে হবে তাদের এজেণ্ডা সাধারণ মানুষের চাহিদার সাথে মিলছে না। মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগের সম্পত্তি নয়, যদিও তারা সবসময় এটা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছে সবসময়। জোর করে ১৫ বছরে গেলানোর চেষ্টা করে হিতে বিপরীত হয়েছে। যেসব লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে একাত্তরে তাদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। ৭ কোটি মানুষই মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ছিল। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের অপকর্মের কারণে তাদের বিরোধীতা করতে গিয়ে একাত্তরের লাখ লাখ শহীদকে ছোট করে দেখার প্রবণতা যদি দেখা দেয় তাহলে নতুন বিপ্লবীরা সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাবে নিশ্চিতভাবেই। কারণ বিএনপি-জামাত যদি সরকার পরিবর্তন আন্দোলনের ডাক দিতো তাহলে এত মানুষ নামতো না। কখনো নামেনি। সে কারণে নির্দলীয়ভাবে আন্দোলনটা চালানোর কৌশল করা হয়েছিল। যাতে মানুষ একাত্মতা বোধ করে। মানুষ আওয়ামী লীগ যেমন বিশ্বাস করে না, তেমনি বিএনপি-জামাতকেও করে না। মানুষ নতুন কিছু চায়। ছাত্ররা সেরকম কিছুর আশ্বাস দিয়েছিল বলেই সবাই একযোগে নেমেছিল। 

এখন যদি তার বিপরীত কিছু করা হয় তাহলে মানুষ সেটা মেনে নেবে না। নতুন বিপ্লবী সরকার এমন ভুল করবে কিনা সেটা দেখার অপেক্ষা।

এই বিপ্লবের অনেক ভালো দিকের সাথে কিছু কলঙ্কিত অধ্যায়ও যুক্ত হয়ে গেছে অতি উৎসাহী কিছু ছাত্রছাত্রীর কারণে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন কুৎসিত ব্যাপার ঘটেছে যে মনে হতে পারে এটা একটা বেয়াদবী বিপ্লব ছিল। সারা দেশে শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানো তার মধ্যে একটা। মজার ব্যাপার হলো সেই গণবেয়াদবীর ঘটনাগুলো ভিডিও করে প্রচারও করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। 

No comments: