Wednesday, August 7, 2024

বেহাত বিপ্লবের সমীকরণ

১.
আওয়ামী লীগের এবং শেখ হাসিনার ভুলের মাশুল দিচ্ছে সমগ্র বাংলাদেশ। যে চোরগুলোর কারণে দেশের এই পরিণতি তাদের কিছু হয়নি, তারা পালিয়ে গেছে কিন্তু অপমানিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং নিরীহ মানুষ।

১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ১৫ জুলাই যে আশঙ্কাটা ব্যক্ত করেছিলাম, ৫ আগষ্ট তার ফলাফল দেখা গেল। ১৫ বছর প্রবল প্রতাপের সাথে দেশ শাসন করে লজ্জাজনকভাবে পালিয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত ঘটনাগুলোর জন্ম দিয়েছেন তিনি। যাবার আগে ও পরে যেসব মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার সবকিছুর জন্য দায়ী থাকবেন তিনি। বাংলাদেশকে একটা অন্ধকার নৈরাজ্যকর অবস্থায় ফেলে তিনি প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গেছেন। হাজার হাজার মানুষ নিহত হচ্ছে প্রতিশোধের অংশ হিসেবে। পুরো পুলিশ বাহিনীটা ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশে কোনো কার্যকর আইন শৃংখলা বাহিনী নেই। পুরো দেশটাই একটা অরাজক অনিরাপদ রাজ্য। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন অন্ধকার আগে কখনো আসেনি।

যে ছাত্ররা এই বিপ্লব ডেকে এনেছিল, তাদের ঘাড়ে চেপে একটা অশুভ শক্তি সারা দেশে অরাজকতা চালাচ্ছে। বিপ্লব বেহাত হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই অরাজকতা হিংস্রতা চায়নি। সারা দেশে একদল দানবের আবির্ভাব হয়েছে। যেন এক দানবের প্রস্থান হলো, অমনি আরেক দানব উপস্থিত হলো।

৫ আগষ্ট যারা আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল, তাদের অনেকেও আক্রান্ত হয়েছে এই দানবের হাতে। বাংলাদেশে সকল দানবের রাজত্বের অবসান ঘটুক।

২.

আমাদের যৌবনে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ পতন হলো। তারপর ধারাবাহিকভাবে তিনটা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের একই ফ্যাসিবাদী আচার আচরণ দেখার পর চিরতরে ভোটবর্জন করার সিদ্ধান্ত নিলাম। পাঁচ বছরে একবার ভোট দিয়ে সারা বছর হাহুতাশ করার কোনো মানে হয় না। যে সিস্টেমটা বারবার ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নামে লুটপাটের মেয়াদপূর্তি করে, সে সিস্টেমে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি ভোট না দিলেও কিছু এসে যায় না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের শুধু কোনোমতে টিকে থাকার মতো একটা জীবিকার দরকার। সেটার জন্যই শ্রম ও সময় বিনিয়োগ করবো। গত বিশ বছর তাই করে এসেছি। এবার তাই ছাত্ররা যখন বললো, পুরোনো সিস্টেম ভেঙ্গে নতুন কিছু করবো, আমি কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। এদের কথাবার্তা বিপ্লবের গন্ধ আছে। নতুন কিছু করার জন্য বিপ্লবের কোনো বিকল্প নেই। অথর্ব রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে নবীনদের কাছেই দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে যাক। কিন্তু বিপ্লব সফল হতে না হতেই যা দেখতে শুরু করলাম, সেটা আর বললাম না। অনেকে বলছে এগুলো নাকি বিপ্লবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। একটু সময় দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। দিলাম সময়। আরো কয়েক হাজার ধ্বংস হোক, আরো কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হোক। কিন্তু তারপর? 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মেয়াদ তিন মাস। তাদের কাজ কী? একটা নির্বাচন করা। নির্বাচন করে কী হবে? সেই পুরোনো দলগুলোর একটা আবার ক্ষমতায় আসবে। তাহলে বিপ্লবের কী হবে? নতুন বোতলে পুরোনো মদ ঢেলেই বিপ্লবের দায়িত্ব শেষ? 

পুরোনো সিস্টেম বদলে নতুন কিছু গড়তে না পারলে তাহলে এত প্রাণের অপচয় কেন? পুরোনো দানবের নব উত্থানের জন্য এই বিপুল প্রাণক্ষয়? শুধুই ক্ষমতার পালাবদল? 

যে তরুনরা বিপ্লবের নেতৃত্ব দিল, তাদের অপ্রাসঙ্গিক অপাংক্তেয় হয়ে যেতে কতদিন সময় লাগবে?

No comments: