দ্বারকানাথ ঠাকুর মনে হয় সমগ্র ঠাকুর বংশের মধ্যে সবচেয়ে স্মার্ট লোক। লোকটা বিলাতের খুব ভক্ত ছিলেন, দেশকে খুব একটা পছন্দ করতেন না মনে হলো। বিশেষ করে দেশের আবহাওয়া নিয়ে ত্যক্ত ছিলেন। তিনি যখন প্রথম বিলাতে যান তখন খুব বেশী লোক বিলাত দেখেনি। তার আগে রামমোহন রায় গিয়েছিলেন। রাজা রামমোহন রায় এবং দ্বারকানাথ ঠাকুর এই দুজন সাদা চামড়ার দেশে যথেষ্ট সমাদর পেয়েছিলেন। দ্বারকানাথ ঠাকুরের জমিদারী আয় খুব বেশী না থাকলেও বিলাতী বাণিজ্যে বেশ টাকাকড়ি কামিয়েছিলেন। যেগুলো তিনি দেদারসে উড়িয়েছেন ইউরোপে।
তিনি যখন প্রথম লণ্ডন যান তখন ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। আবার যখন প্যারিস যান তখন ফ্রান্সের ফিলিপ লুইও তাঁকে যথেষ্ট খাতির করেছিলেন। প্যারিসে তিনি বিলাসবহুল একটা ঘরে বসবাস করতেন। একদিন সান্ধ্য আসরে গণ্যমান্য লোকদের নিমন্ত্রণ করেন সেখানে রাজা লুই ফিলিপও আসেন। তিনি সমস্ত ঘর কাশ্মীরী শাল দিয়ে সাজিয়ে রাখেন, কাশ্মীরী শাল তখন পৃথিবীর অভিজাত রমনীদের সবচেয়ে কাংখিত বস্তু। নিমন্ত্রন শেষে ফিরে যাবার সময় যখন প্রত্যেক অভিজাত নারীদের গায়ে একটা করে কাশ্মিরী শাল জড়িয়ে দেন তখন তাদের কি আনন্দ হয়েছিল সেটা বলাই বাহুল্য। এভাবেই প্রিন্স দ্বারকানাথ তাঁর ঠাট বজায় রাখতেন। সম্ভবত তিনিই প্রথম ভারতীয় যাঁকে বৃটিশরা তাদের সমকক্ষ মনে করতো। তার বাণিজ্যবুদ্ধিও বেশ প্রখর ছিল। লণ্ডনের ইউনিয়ন ব্যাংকের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও।
বিলাতে অবস্থান কালে রাজা রামমোহন রায় মারা গেলে তার সমাধির উপর তিনি একটি মন্দির গড়িয়ে দেন। কিন্তু তার কিছুদিন বাদে তিনি নিজেই যে ওই দেশে দেহত্যাগ করবেন, তাকেও বিদেশে সমাধিস্থ করতে হবে, কে ভেবেছিল। তিনি ভারতবর্ষের আবহাওয়ায় স্বস্তিবোধ করতেন না। তাই দেহত্যাগও হলো ইউরোপের শীতল মাটিতে। শোনা যায়, তাঁর হৃৎপিণ্ডটি আলাদা করে ভারতবর্ষে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। এই বিষয়ে অবশ্য সত্যেন্দ্রনাথের বইতে কিছু পাইনি।
তিনি যখন প্রথম লণ্ডন যান তখন ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। আবার যখন প্যারিস যান তখন ফ্রান্সের ফিলিপ লুইও তাঁকে যথেষ্ট খাতির করেছিলেন। প্যারিসে তিনি বিলাসবহুল একটা ঘরে বসবাস করতেন। একদিন সান্ধ্য আসরে গণ্যমান্য লোকদের নিমন্ত্রণ করেন সেখানে রাজা লুই ফিলিপও আসেন। তিনি সমস্ত ঘর কাশ্মীরী শাল দিয়ে সাজিয়ে রাখেন, কাশ্মীরী শাল তখন পৃথিবীর অভিজাত রমনীদের সবচেয়ে কাংখিত বস্তু। নিমন্ত্রন শেষে ফিরে যাবার সময় যখন প্রত্যেক অভিজাত নারীদের গায়ে একটা করে কাশ্মিরী শাল জড়িয়ে দেন তখন তাদের কি আনন্দ হয়েছিল সেটা বলাই বাহুল্য। এভাবেই প্রিন্স দ্বারকানাথ তাঁর ঠাট বজায় রাখতেন। সম্ভবত তিনিই প্রথম ভারতীয় যাঁকে বৃটিশরা তাদের সমকক্ষ মনে করতো। তার বাণিজ্যবুদ্ধিও বেশ প্রখর ছিল। লণ্ডনের ইউনিয়ন ব্যাংকের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও।
বিলাতে অবস্থান কালে রাজা রামমোহন রায় মারা গেলে তার সমাধির উপর তিনি একটি মন্দির গড়িয়ে দেন। কিন্তু তার কিছুদিন বাদে তিনি নিজেই যে ওই দেশে দেহত্যাগ করবেন, তাকেও বিদেশে সমাধিস্থ করতে হবে, কে ভেবেছিল। তিনি ভারতবর্ষের আবহাওয়ায় স্বস্তিবোধ করতেন না। তাই দেহত্যাগও হলো ইউরোপের শীতল মাটিতে। শোনা যায়, তাঁর হৃৎপিণ্ডটি আলাদা করে ভারতবর্ষে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। এই বিষয়ে অবশ্য সত্যেন্দ্রনাথের বইতে কিছু পাইনি।
দ্বারকানাথের বাবা ছিলেন রামলোচন। আসলে রামলোচন তার আসল বাবা নন। রামলোচন নিঃসন্তান ছিলেন বলে তার ভাই রামমনির সন্তান দ্বারকানাথকে নিজের পুত্র হিসেবে গ্রহন করেন। রামলোচনের পিতা নীলমনি চট্টগ্রামে সেরেস্তাদার ছিলেন। নীলমনি কিছুকাল চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন৷ চট্টগ্রাম আদালতে সেরেস্তাগিরি করে তিনি অগাধ বিষয় সম্পদের মালিক হন। পরবর্তীকালে পাথুরিয়াঘাটার পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে জোঁড়াসাকোয় নতুন বাড়ি তৈরী করে বসবাস করতে শুরু করেন। সেই থেকে ঠাকুরবাড়ি জোঁড়াসাকোয় স্থানান্তরিত হলো।
দ্বারকানাথের ভাগ্যের দ্বার খুলে দিয়েছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। তারপর ধাপে ধাপে উপরে উঠে যান তিনি। মৃত্যুর আগে অবশ্য দেনার দায়ে জর্জরিত হন যখন তুলা ব্যবসায় বিশ্বমন্দা দেখা দেয়।
দ্বারকানাথের কথা থাক। দেবেন্দ্র পরবর্তী অংশে যাই। রবীন্দ্রনাথের বড়দা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর সুরসিক ব্যক্তি ছিলেন। তার লেখা ছড়া কবিতা শ্লোক আছে অসংখ্য। মজাদার একটা শ্লোক পেলাম পড়তে গিয়ে। লেখালেখিতে সিদ্ধলাভের উপায় সম্পর্কে লিখেছেন-
প্রথমে প্রথম খণ্ডে পাকাইবে হাত
দ্বিতীয় খন্ডের তবে উলটিবে পাত।।
মস্তকে মথিয়া লয়ে পুস্তকের সার
হস্তকে করিবে তার তুরুক সোয়ার।।
হইবে লেখনী ঘোড় দৌড়ের ঘোড়া
আগে কিন্তু পাকা করি বাঁধা চাই গোড়া।।
ভবিষ্যত লেখিয়েদের জন্য একটা উত্তম দিক নির্দেশনা হতে পারে এটি।
তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথের একজন সভাসদ নবীনচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, তিনিও খুব মজার কথা বলতেন। ভুলে যাওয়া আর মনে রাখা লোকদের চার ভাগে ভাগ করতেন। সেই ভাগগুলো নিন্মরূপ-
বেগাবেগা- যে শীঘ্র শেখে শীঘ্র ভুলে যায়
বেগচেরা- যে শীঘ্র শেখে চিরদিন মনে রাখে
চেরবেগা-যে দেরীতে শেখে শীঘ্র ভুলে যায়
চেরচেরা- যে দেরীতে শেখে দেরীতে ভোলে।
তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথের একজন সভাসদ নবীনচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, তিনিও খুব মজার কথা বলতেন। ভুলে যাওয়া আর মনে রাখা লোকদের চার ভাগে ভাগ করতেন। সেই ভাগগুলো নিন্মরূপ-
বেগাবেগা- যে শীঘ্র শেখে শীঘ্র ভুলে যায়
বেগচেরা- যে শীঘ্র শেখে চিরদিন মনে রাখে
চেরবেগা-যে দেরীতে শেখে শীঘ্র ভুলে যায়
চেরচেরা- যে দেরীতে শেখে দেরীতে ভোলে।
সবচেয়ে উন্নত প্রজাতির মানুষ হলো বেগচেরা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্মৃতিশক্তি হলো চেরবেগা। আমি মনে হয় চেরবেগা আমি কেবলই ভুলে যাই। প্রতিদিন ভুলি। গতকাল যা সঠিক জেনেছি আজ তা ভুল জানি। চেরবেগা জীবন লইয়া আমি বিব্রত আছি।
[সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমার বাল্যকথা পড়ার সময় যে কথাগুলো ঘুরছিল মাথায়]
No comments:
Post a Comment