Sunday, August 31, 2014

অনিশ্চয়তার অন্ধকার বনাম আশাবাদের আলো

বিদ্যমান সকল অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আমাদের আয়ুষ্কাল কাটিয়ে যেতে হয় পৃথিবীতে। তেমন অনিশ্চয়তার আশংকায় আমার উপর নির্ভরশীল পরিবার প্রিয়জনদের ক্রমাগত স্মরণ করাতে হয় আমার অনুপস্থিতিতে সমুদয় অসুবিধাগুলো কিভাবে মোকাবেলা করবে। কোন শূন্যতাই চিরন্তন নয় জানি। আমি না থাকলেও পৃথিবীর সবকিছু ঠিকঠাক চলবে। তবু গুটিকয়েক মানুষ এবং আমার সন্তানেরা দীর্ঘসময় আমাকে ভুলতে পারবে না। শিশুদের আগলে রাখার মতো আশ্রয় খুব বেশী নেই।

এখনো তেমন কোন বিপর্যয় ঘটেনি আমাদের। কিন্তু চারপাশ থেকে যে দুঃসংবাদের হাতছানি প্রতিদিন এসে দাঁড়ায়, তাতে এসব আশংকা দানা বাঁধে। গত বছর আমার এক প্রিয় স্বজন চলে গেল সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে। সেই একই রোগে আক্রান্ত আরো একজনের চিঠি পেলাম আজ। কাছের কেউ না, অফিশিয়ালী পরিচিতদের একজন। কদিন আগেও তাকে সুস্থ, যোগ্য, সফল মানুষ জানতাম। হঠাৎ বিপর্যয়ে তার জীবন বিপন্নতার মুখোমুখি। মেজর অপরাশেন শেষে বিদেশ থেকে ফিরেছে কদিন আগে। এখন সে রাইসটিউব দিয়ে খাবার খেয়ে বেঁচে আছে, ডানপাশ অকেজো হয়ে আছে প্রায়, চারটা নার্ভ এখনো কাজ করছে না, আরো কয়েক মাস লাগবে একটু স্বাভাবিক হতে, কতটা স্বাভাবিক হবে তা জানা নেই, কিন্তু আবারো দেশের বাইরে যেতে হবে রেডিওথেরাপী দিতে। বিপদের ঘড়ি চালু হয়ে গেছে। থামবে কবে জানা নেই। আমরা সবাই কোন না কোন সময় এই সব বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারি। অর্থ সম্পদ এসব বিপদ ঠেকাতে পারে না।

এই সবই স্বার্থপর চিন্তা ভাবনা। একটা বয়স এলে মানুষ কেবল স্বার্থপর চিন্তা ভাবনা করে। কিছু মানুষ তার চেয়ে ব্যতিক্রম। তাদের মতো হতে পারি না কেন? আগুনের মধ্যে বসেও যারা হাসে পুষ্পের হাসি। কিছু মানুষ জীবন খুড়ে খুড়ে যারা নতুন নতুন চারাগাছ বুনেন, আনন্দ খুঁজে নেন তুচ্ছাতিতুচ্ছের মধ্যেই। আমি সেইসব আনন্দদায়ক মানুষদের সন্ধান করি। লেখকদের মধ্যেই খুঁজি। শিবরাম চক্রবর্তী সেরকম একজন প্রিয় লেখক। খুব অন্ধকারেও যার লেখার রস দিনযাপনকে আনন্দে ভরিয়ে রাখে। আজ শিবরাম পড়তে ইচ্ছে করছে কষ্ট ভুলে থাকার জন্য। কিন্তু গতকাল থেকে পড়তে শুরু করেছি সত্যেন্দ্রনাথের 'আমার বাল্যকথা'। উনিশ শতকের বইটার শুরু থেকে প্রথমার্ধই বেশী আকর্ষণীয়। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষের কীর্তিকাহিনী নিয়ে প্রথম অংশটা। আপাততঃ তাই পড়ি।



No comments: