মাঝে মাঝে ভাবি বাড়ি ফিরবো না।
বাসা থেকে কর্মক্ষেত্রের দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমটার। ১৫ মিনিটে পৌঁছে যাবার কথা। কিন্তু শেষ কবে ১৫ মিনিটে পৌঁছেছি মনে নেই। গতকাল পৌঁছালাম সোয়া দুই ঘন্টায়। সারাদিন অফিস করে যত না পরিশ্রম, যাত্রাপথে তার দশগুন অথবা বেশী। একটা মানুষকে পায়ের গোছায় দড়ি দিয়ে বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে নীচে একটা গরম চুলা জ্বালিয়ে রাখলে যে কষ্ট হয়, আমরা প্রতিদিন বিনাকারণে প্রায় সেরকম শাস্তি পাচ্ছি।
ট্র্যাফিক জ্যামের মধ্যেও সুন্দর অসুন্দর আছে। ইপিজেড থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত জ্যামটা সম্ভবতঃ পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত জ্যাম। এই রাস্তা দিয়ে ভিইআইপিরা চুপচাপ কিভাবে প্রতিদিন এয়ারপোর্ট যাতায়াত করে সে এক বিস্ময়। এই রাস্তার পুরোটা জুড়েই বিশাল সব গর্ত। স্থানে স্থানে আবর্জনার ভাগাড়, দানবীয় ট্রেলার ট্রাক কাভার্ডভ্যানের সড়ক বেদখল তো আছেই, তার উপর এই সড়কে চলাচলকারী ১০০ বছরের পুরোনো, অসংখ্য জোড়াতালির বাস ট্রাক যারা শুধু ট্রাফিকের পকেটে পয়সা দিয়েই চলে। এই গাড়িগুলো থেকে যে কর্দমাক্ত ধোঁয়া বের হয় সেগুলো জামাকাপড়ের চেহারা যেভাবে বদলে দেয়, ফুসফুসের চেহারাও সেভাবে বদলে দিচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।
এই রাস্তায় যেমন ক্ষুদে রিকশা টেম্পু টেক্সি চলে, তেমনি চলে ৪০ ফুট লম্বা কন্টেইনার,ভগ্নপ্রায় ট্রাক বাস কাভার্ডভ্যান। এই বড় বড় দানবগুলো যে কি বিশ্রীরকম ধাক্কাধাক্কি করে চলে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। এর মাঝে আবার মানুষ মারার ওভারটেকিং প্রতিযোগীতাও চলে যদি ২০ ত্রিশ ফুট খালি রাস্তা মেলে। এসব নানান বিদঘুটে সাইজের যানবাহন থেকে নির্গত গরম ধুলো ধোয়া দুর্গন্ধে কেউ শ্বাসকষ্টে মারা গেলে তার লাশও সময়মত হাসপাতালে পৌঁছাতে পারবে না ভয়ংকর জ্যামের কারণে।
আমি তাই মাঝে মাঝে ভাবি, আজ বাড়ি ফিরবো না। কর্মক্ষেত্রের এক কোনে শুয়ে কাটিয়ে দেবো। ৭ কিমি পাড়ি দিতে প্রতিদিন রাস্তার এই ভয়ংকর দুই ঘন্টা আমার আয়ু থেকে কতটা সময় কেড়ে নিচ্ছে সেটা কেউ জানে না। কিন্তু আমাদের সবার সম্মিলিত অঙ্গপ্রত্যক্ষের যে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে তা সমগ্র চট্টগ্রাম শহর বিক্রি করেও পূরণ করা যাবে না।
[মাননীয় মেয়র, নগর প্রশাসক, সরকার.... আপনারা কেউ এদেশে বাস করেন কিনা জানি না, আপনাদের কোন অস্তিত্ব আমি বহুকাল টের পাই না। তবু আরেকটি অরণ্যে রোদন পেশ করলাম]
No comments:
Post a Comment