Tuesday, August 26, 2014

চোখ বন্ধ, বেছে নাও.....

মানুষের আয়ু যতটা সীমিত ততটা অনিশ্চিত। সীমাটা জানা নেই বলে অনিশ্চয়তার উপর চাপটা আরো বেশী। এই সীমিত সময়েই যা কিছু করে ফেলা দরকার। এই ক্ষণে এসে টাইমলাইন হিসেব করে বিস্মিত হই, আমি কেন যথা সময়ে 'কিছু করে ফেলার' এই পরিকল্পনায় অংশ নিলাম না। শিক্ষাজীবনে যেমন একাডেমিস্ট ছিলাম না, পেশাগত ক্ষেত্রেও ক্যারিয়ারিস্ট হতে ইচ্ছে করেনি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও চাকরী বদল করিনি। মাত্র কয়েকশো মাইল দূরের রাজধানীর চাকরীতেও বিমুখ আমি। বর্তমান কোম্পানীতেও যা যা করলে পকেট ভারী হতো তার কিছুই করিনি। কেন? মিলিয়ন থেকে শুরু করে বিলিয়ন ডলারের পরিবর্তিত হওয়া কোম্পানীর ঠুঁটো জগন্নাথের একজন তো হয়েছি।(শান্ত্বনা!) আরো উন্নতির, আরো টাকা পয়সার কী দরকার? চলছে তো, চলছে না? আসলে এই সবই খোঁড়া যুক্তি। পৈত্রিক ব্যাকাপটা না থাকলে আমি নিজের জন্য প্যাকাপ করতে মাঠে নেমে যেতাম হয়তো। মানুষ বড় বিচিত্র উপায়ে নিজেকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে।

তবু এর মধ্যেই মাঝে মাঝে নতুন একটা খেয়াল চাপে। নিজেকে বোঝাই, এখন বরং অবসর নিয়ে ফেলা দরকার। আটটা পাচটা চাকরী করে সময় নষ্ট না করি আর। সময় চলে যাচ্ছে অথচ কত পড়াশোনা বাকী, কত কি জানার বাকী, কত লেখালেখি, শেখাশেখি। গুডরিডসে ঢুকলে তরুণ সহব্লগার বন্ধুদের পড়াশোনা দেখে লজ্জিত হই। ওরা যেসব বই পড়তে দেয় সেগুলো পড়া দূরে থাক আমার নিজের কেনা আধপড়া/আনপড়া বইয়ের সংখ্যাই এখন শতেক ছাড়িয়ে গেছে। টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে আধমূর্খ অতৃপ্ত হয়ে মরবো?

এই বয়সে এসে মুখোমুখি সাংঘর্ষিক অবস্থায় পাই পড়াশোনা আর ক্যারিয়ারকে। সময় নিয়ে কাড়াকাড়ি। ৪৫ বছর পার হবার পর এই দ্বন্দ্বটা অনেক বেশী প্রকট। যেটুকু আয়ু অবশিষ্ট আছে তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি করবে এই দুটো প্রয়োজন। সংসার চাইবে ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দিতে, আমি চাইব পড়াশোনাকে দিতে। কে জিতবে? যেই জিতুক আমি নিশ্চিত জানি আমার চেয়ে সংসারের হাত অনেক বেশী শক্তিশালী। কিন্তু আমার প্রয়োজনের গুরুত্ব বুঝবে কে? মহাকাল?

নাকি বলবো, চোখ বন্ধ, বেছে নাও..........?

No comments: