Sunday, January 1, 2012

ভুল

বাস থেকে নেমে প্যান্টের পেছনের পকেটে হাত দিয়েই টের পেল, নেই।

থাকার কথাও না। চিড়ে চ্যাপটা ভিড়ে জনসমক্ষে মানিব্যাগ খুলে ভাড়া দিয়েছে। ভাড়া মেটানোর পরপরই গেছে বোধহয়। মানিব্যাগে পাঁচশো টাকার আটটা নোট ছিল, কিছু খুচরো দশ-বিশ-পঞ্চাশ টাকার নোট, কিছু টুকরো মলিন কাগজ, লন্ড্রির স্লিপ, কয়টা আধময়লা ভিজিটিং কার্ড এবং সিনে ম্যাগাজিন থেকে কেটে রাখা মডেল জয়ার ছবি।

তিন তারিখে দেবার হলেও দিচ্ছে দিবে করে আজকেই দিল টিউশানীর টাকাটা। মাকে দুটো, ভাইকে দুটো, চারটায় নিজের সারা মাস, এভাবেই হিসেবটা করা ছিল।

চারপাশে প্রচন্ড ভিড়। বাসে, রাস্তায়, ফুটপাতে। মানুষের ধাক্কায় মানুষ গড়িয়ে চলছে। স্বাধীন হাঁটা অসম্ভব। গুলিস্তানের এই জায়গাটা পকেটমারের স্বর্গ। ঈদ মৌসুমে পকেট বাণিজ্য আরো চরমে। ঢাকার দুষিত বাতাস ইফতারীর গন্ধে চোঁ বোঁ করছে। মানুষের পকেটভর্তি টাকা। দুয়েকটা বুক পকেটে পাঁচশো টাকার আবছা নোটগুলো ভেংচি কাটতে দেখা যাচ্ছে। সুযোগসন্ধানী হলে নিজেও দুয়েকটা মানিব্যাগ কামাই করে বাড়ি ফিরতে পারতো আজ।

মনটা চুপসে গেছে। মাসের মাত্র তেরো তারিখ। ঈদের কথা বাদ। বাকী সতেরো দিনের কি হবে? উদাস মনে ধাক্কার স্রোতে এগিয়ে চললো। দুনিয়ার কিচ্ছু ভাল্লাগছে না আর।

হঠাৎ বুকের উপর কারো হাতের একটা ধাক্কা। সরু কালো হাতটা ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে যাবার সময়ই বুঝলো আসলে এইমাত্রই খোয়া গেল মানিব্যাগটা। ভাড়া মিটিয়ে তাড়াহুড়োয় বুক পকেটে রেখেছিল।

ছোট্ট ভুল, কিন্তু ক্ষমার অযোগ্য।

No comments: