প্রায় সাত বছর আগে মার্কেজের Hundred Years of Solitude এর একটি অনুবাদ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল বিডিআর্টসের পাতায়। সেটা নিয়ে পুরোনো একটা বাকযুদ্ধ চোখে পড়লো সেই অনুবাদ পাতায়। বাকযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বেশ কজন বোদ্ধা সমালোচক। উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং বর্তমান আনিসুজ্জামান এবং জিএইচ হাবীব, যিনি পূর্বে এই গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন। বাকযুদ্ধে অংশ না নিলেও দুই অনুবাদকই নিজ নিজ মতামত জানিয়েছেন খুব সংযতভাবেই।
“নিঃসঙ্গতার একশ বছর”-বাংলা অনুবাদে গ্রহণযোগ্য একটি সংস্করণ আমাদের দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। অনুবাদকের কাজটি শুধু গ্রহণযোগ্য নয়, খুবই উঁচুমানের হয়েছে বলে আমার ধারণা। জি এইচ হাবিব এর অনুবাদক। দুটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এটি প্রকাশ করেছে। কথা হচ্ছে নিঃসঙ্গতার একশ বছর-এর একটি সর্বজনগ্রাহ্য অনুবাদকর্ম থাকার পরও আবার কেন এর অনুবাদের প্রয়োজন পড়লো সেটি বোধগম্য হলো না। আপনাদের বক্তব্যনুযায়ী যদি ধরেই নিই যে- “বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত কিংবদন্তিতুল্য এই উপন্যাসটি মূলভাষা থেকে অনূদিত হয়নি”- তবুও পূনঃঅনুবাদের জন্য কারণটি জোরালো নয়। যদি এমন হতো, আগের অনুবাদকর্মে মূলানুগ অনুসরণের সমস্যা হয়েছে, তবেই এর একাধিক এবং মূল ভাষা থেকে অনুবাদের প্রয়োজন পড়তো। ইংরেজি থেকে অনুবাদ হলেও জি এইচ হাবীবের অনুবাদকর্ম সাবলীল এবং সুখপাঠ্য ছিল।
পাঠক হিসেবে আমি মার্কেজের অন্য উপন্যাসগুলোর পুনরায় ভালো অনুবাদগ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।
পরিশেষে বলি, অনুবাদক জনাব আনিসুজ্জামান যদি মার্কেজের “নিঃসঙ্গতার একশ বছর” অনুবাদে শ্রম ব্যয় না করে অন্য কোনো গ্রন্থ অনুবাদ করতেন সেটি পাঠক হিসেবে আমাকে আনন্দিত করতো।
লীনা দিলরুবার বিপক্ষে যুক্তি দাঁড় করিয়ে লিমা নামের আরেকজন আলোচক বলেছেন-
অনুবাদক আনিসুজ্জামানের ছন্দস্পন্দিত, সাবলীল ও মূলানুগ অনুবাদের প্রতিক্রিয়ায় লিনা দিলরুবা জি এইচ হাবীবের অনুবাদটির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, “কথা হচ্ছে নিঃসঙ্গতার একশ বছর-এর একটি সর্বজনগ্রাহ্য অনুবাদকর্ম থাকার পরও আবার কেন এর অনুবাদের প্রয়োজন পড়লো সেটি বোধগম্য হলো না।” প্রথম কথা হলো চিরায়ত যে কোন গ্রন্থের অনুবাদ একাধিকবার হতে পারে, হয়েছেও–এমন নজির ভুরিভুরি। বাংলা ভাষাতেই রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়ামের অনুবাদকদের দীর্ঘ তালিকার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো কাজী নজরুল ইসলাম (রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম), ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (রুবাইয়্যাত-ই-উমরখয়্যাম), হেমেন্দ্রকুমার রায় (ওমর খৈয়ামের রুবায়ত), কান্তিচন্দ্র ঘোষ (রোবাইয়াত্-ই-ওমরখৈয়াম), নরেন্দ্র দেব (রোবাইয়াত্-ই-ওমরখৈয়াম), হিতেন্দ্রনাথ বসু (রুবাইয়াত্-ই-ওমরখৈয়াম), শ্যামাপদ চক্রবর্তী (ওমরখৈয়ামের রুবাইয়াত), বিমলচন্দ্র ঘোষ (রুবাইয়াত্-ই-ওমরখৈয়াম), বীরেন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য (ওমরখৈয়াম-রুবাইয়াত্), সুধীর গুপ্ত (ওমরখৈয়ামের রুবায়েত্), শক্তি চট্টোপাধায় (ওমরখৈয়ামের রুবাই), অশোক ভট্টাচার্য (রুবাইয়াত্), সুনীলচন্দ্র দত্ত (রুবাইয়াত্), বিজয়কৃষ্ণ ঘোষ (রোবাইয়াত্), সিকান্দার আবু জাফর (রুবাইয়াত্-ই-ওমরখৈয়াম)। এ তালিকায় আরো রয়েছেন অক্ষয় কুমার বড়াল, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ।
এই অনুবাদকদের একজন, কান্তিচন্দ্র ঘোষ সম্পর্কে কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত লিখেছিলেন ‘প্রধানত অনুবাদক হিসেবে যাঁরা সাহিত্যের ইতিহাসে স্থান পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড এবং কান্তিচন্দ্র ঘোষ একই সূত্রে স্মরণযোগ্য।’
কান্তিচন্দ্রেরও বহু পরে নজরুল ইসলাম মূল থেকে ওমর খৈয়াম অনুবাদ করেছিলেন । কিন্তু কোনো আহম্মকই এই প্রশ্ন তুলবেন না যে এত হাতে অনুবাদের পরও নজরুল কেন অনুবাদ করতে গেলেন, তাও আবার মূল থেকে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে হাবীবকৃত নিঃসঙ্গতার একশ বছর বইটি যে ‘সর্বজনগ্রাহ্য’– এই কথা তিনি কোন যুক্তি বা জরীপের ভিত্তিতে বলছেন? আমিও একজন পাঠক। আমাকে কি তিনি সর্বজনের মধ্যে ভাবছেন? যদি না ভেবে থাকেন তাহলে আমাকে ছাড়া সর্বজন হয় কী করে? আর যদি আমি সবর্জনের অংশ হই তাহলে আমার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এই যে হাবীবের অনুবাদটি আমার পছন্দ হয়নি, কিন্তু তারপরও আমি তাকে সাধুবাদ জানাই এই গ্রন্থটির প্রথম অনুবাদক হওয়ার গৌরব অর্জনের জন্য। এটাকেও আমি খাটো করে দেখতে নারাজ। এরকম একটি জটিল উপন্যাসের অনুবাদ সহজ নয়, তা সে মূল থেকেই করুন বা ইংরেজি অনুবাদের ভিত্তিতেই করুন না কেন। কিন্তু তাই বলে এর ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে কথা বলা যাবে না– তাতো নয়। এই অনুবাদের অনেক ত্রুটি আছে এবং এই ত্রুটিও আসলে দুই ধরণের ক্রুটি। প্রথম ত্রুটি হচ্ছে তিনি কোথাও কোথাও ইংরেজির ভুল অনুবাদ করেছেন। দ্বিতীয় ত্রুটি হলো ভুল ইংরেজি অনুবাদের নির্ভুল অনুবাদ করেছেন। এই দ্বিতীয় ক্রুটি ঘটেছে মূলত মূল ভাষাটি সম্পর্কে তার অজ্ঞতার কারণে।
এটা ভাবা এক ঔপনিবেশিক আধি যে ইংরেজি অনুবাদ মানেই নির্ভুল। গ্রেগরী রাবাসার অনুবাদ অবশ্যই ভালো অনুবাদ, কিন্তু তা যে পুরোপুরি নির্ভুল এবং নিখুঁত এমন দাবী করাটাও হবে হাস্যকর ব্যাপার। মূল ভাষায় যারা এই বইটি পড়েছেন তারাই বলতে পারবেন কোথায় সেই ত্রুটি। আপনি, লীনা দিলরুবা, কোন যুক্তিতে এই দাবী করছেন যে, “যদি এমন হতো, আগের অনুবাদকর্মে মূলানুগ অনুসরণের সমস্যা হয়েছে, তবেই এর একাধিক এবং মূল ভাষা থেকে অনুবাদের প্রয়োজন পড়তো।”? অনুবাদের অনুবাদ মূলানুগ হবে– এ ধরণের দাবী কোনো উন্মাদও করবে বলে মনে হয় না। হাবীবের অনুবাদটি যদি মূলানুগই হতো তাহলে হাবীব আর আনিসুজ্জামানের অনুবাদে কোনো পার্থক্য থাকা উচিত নয়। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে ঠিক উল্টোটাই।
হাবীবের অনুবাদটি যে ‘সর্বজনগ্রাহ্য’ হয়নি তার একটা উদাহরণ আপনার অবগতির জন্য এখানে হাজির করছি। পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অনুবাদক, প্রাবন্ধিক এবং স্প্যানিশ বিশেষজ্ঞ রবিন পালের প্রতিক্রিয়া আছে হাবীবের এই অনুবাদটি সম্পর্কে। তিনি হাবীবের অনুবাদের ত্রুটি, এমনকি ভাষাগত ত্রুটি সম্পর্কেও কথা বলেছিলেন:
“কিছু কিছু অনুবাদ অস্বস্তিদায়ক। যেমন- ‘ব্যাপারটা তাকে খানিকটা স্বস্তি দেবে মনে ক’রে একটা চারকোল নিয়ে এসে অগুনতি যেসব মিলনের পয়সা তখনো সে অরেলিয়ানোর কাছে পেতো সেগুলো মুছে দেয়… (পৃ ৩৬৪) Gregory Rabassa-র ইংরেজি হল এমন ‘Thinking that it would console him, she took a piece of charcol and erased the innumerable loves that he still owed her for, and (p.419) ‘চারকোল’ এবং ‘মিলনের পয়সা’ কানে লাগে যথেষ্ট। তেমনি অস্বস্তিকর ‘মাকোন্দো ততক্ষণে সেই ‘বাইবেলিয় যুগের হারিকেনের রুদ্ররোষের কবলে পড়ে ঘুরপাক খাওয়া ধুলোবালি আর ধ্বংস্তুপের একটা ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে… ’ ইংরেজিটা ছিলো Macondo was already a fearful whirl Wind of dust and rubble being spun about by the wrath of the biblical hurricane… (p.422), পাঠক বুঝতে পারছেন বেশ কিছু প্রতিশব্দের গন্ডগোল আছে এখানে। বেশ আড়ষ্ট বাংলা– এ হচ্ছে স্রেফ একটা সামান্য ক্ষয়কারী অধঃক্ষেপ (পৃ.১৯) (this is just a little corrosive sublimate)
হিংগুলির নারকীয় গুণাগুণ (পৃ ১৯) (his Diabolical properties of cinnabar), rudimentary laboratory তো ‘সদ্য তৈরি গবেষণাগার’ (পৃ ১৯) নয়। রোদেলা বাগান, স্মৃতির অভ্রমিত অঞ্চল শুনতে অবশ্য খারাপ লাগে না। Squid সমুদ্র শামুক নয়, বরং এক জাতীয় সামুদ্রিক মাছ যা বঁড়শির টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। Pirate বললে যেমন ‘হার্মাদ’ বোঝায় না। ( রবিন পাল, যুগলবন্দী: স্পেনীয় ও ভারতীয় সাহিত্য, প্রকাশক: এবং মুশায়েরা, কলকাতা, প্রকাশকাল: জানুয়ারি ২০০৭, পৃ: ২০৮-২০৯)
এই হচ্ছে আপনার ভাষায় ‘গ্রহণযোগ্য’, ‘উঁচুমানের’, এবং ‘সর্বজনগ্রাহ্য’ অনুবাদের নমুনা।
আপনি প্রতিক্রিয়ার এক জায়গায় স্ববিরোধী একটি কথা বলেছেন, “পাঠক হিসেবে আমি মার্কেজের অন্য উপন্যাসগুলোর পুনরায় ভালো অনুবাদগ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।” প্রশ্ন হলো হাবীবকৃত এই ক্রুটিপূর্ণ অনুবাদটির পরিবর্তে যদি অন্য হাতে নতুন অনুবাদের বিরোধীই হন তাহলে অন্য অনুবাদগুলোর ক্ষেত্রে “পুনরায় ভালো’ অনুবাদগ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা” অনুভব করেন কোন যুক্তিতে?।
মানুষ দুধের স্বাদ পেলে কেন ঘোলে স্বাদ মেটাবে? কিন্তু আপনি ব্যতিক্রম। ঘোল খেতে খেতে আপনি রীতিমত ঘোলানুরাগীই নন, উপরন্তু দুধেরই বিরোধিতায় নেমেছেন।
বাংলাদেশে এমনিতেই মূল ভাষা থেকে অনুবাদ করার যোগ্য লোকের অভাব। আর এই কারণে ‘অনুবাদের অনুবাদ’ হ্ওয়ায় আমাদের অনুবাদ সাহিত্য এক ধরণের দীনতায় ভুগছে। কিন্তু কেউ এই অভাব পূরণের জন্য এগিয়ে এলে আমরা সেটা সহ্য করতে পারি না স্রেফ কায়েমি স্বার্থের কারণে। অরুচি, দুর্নীতি, কার্পণ্য, দীনতা, দুর্বৃত্তায়ন আমাদের মর্মে এতোই প্রোথিত যে ভালো জিনিস এবং ভালো উদ্যোগকে পর্যন্ত মেনে নিতে পারি না। আপনি তারই এক অপদৃষ্টান্ত হয়ে থাকলেন।
অনুবাদক আনিসুজ্জামান, আপনার অনুবাদের কাজ যেন দুষ্টজনের প্রতিরোধে থমকে না যায় এই অনুরোধ জানাই। আপনাকে অভিবাদন।
এই বিতর্কে অংশ নিয়ে স্পেনিশ থেকে সরাসরি অনুবাদক আনিসউজ্জামান মন্তব্য করেছেন:
আমার এবং জি এইচ হাবীবের অনুবাদ নিয়ে পাঠকবন্ধুদের বাদানুবাদে আমার অস্বস্তি এই জন্যে যে হাবীবের মতো একজন মশহুর অনুবাদকের সঙ্গে আমার মতো গৌণ এক অনুবাদকের তুলনা করা হচ্ছে। আমি নিজে হাবীবের অনুবাদের অনুরাগী পাঠক। আমি তাকে সাক্ষাতে একবার সে কথা জানিয়ে্ওছিলাম। আমি তার আলোচ্য অনুবাদটিও পড়েছি। পড়ে ভালো্ও লেগেছে। কিন্তু তারপরেও, মূলের সঙ্গে এর কোথাও কোথাও দূরত্ব আছে, ভাষাগত কিছু ভিন্নতা্ও আছে এবং সেটা থাকবেই। এই থাকার মূল কারণ তার অনুবাদটি মূলত ইংরেজি অনুবাদের আশ্রয়ে গড়ে উঠেছে। এমনকি একই ইংরেজি অনুবাদের আশ্রয়ে গড়ে ওঠা দুজনের অনুবাদ্ও দুরকম হতে বাধ্য। এমন উদাহরণতো আছেই। আর আমি যেখানে মূল থেকে করার চেষ্টা করছি সেখানে তা আরও একটু ভিন্ন হ্ওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে ভিন্নতার অজুহাতে যাতে কোনো ভুল-পাঠ ঢুকে না পরে সেদিকে নিশ্চয়ই খেয়াল রাখা দরকার। আমি এই অনুবাদে সেটা খেয়াল রাখতে চাই, কিন্তু আমার অসতর্ক মুহূর্তে এবং বেখেয়ালে যে তেনমটা ঘটবে না–তার নিশ্চয়তা দেয়া খুব কঠিন। সেজন্যে বন্ধুদের কাছে আগেভাগেই অনুরোধ জানিয়ে রাখি: তেমন কিছু নজরে পড়লে আমার সমালোচনা করে (প্রয়োজনে তুলোধুনো্ও করতে পারেন) সংশোধন করে দিন। আপনারা নিন্দা এবং তারিফের মাধ্যমে আমাকে যারা অনুপ্রাণিত করছেন, তাদের সবার কাছেই আমার কৃতজ্ঞতা।
অতঃপর প্রথম অনুবাদক জিএইচ হাবীবও অংশ নিয়েছেন বিতর্কে। তিনি বলেছেন-
কথিত আছে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস রচিত ‘Cien años de soledad’ -এর “Gregory Rabassa” কৃত ইংরেজি অনুবাদ “One Hundred Years of Solitude”-কে স্বয়ং মার্কেস মূল রচনার চাইতে ভালো বলেছেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার সাহিত্যিক André Brink তাঁর দীর্ঘ প্রবন্ধ ‘Making and Unmaking. Gabriel García Márquez: One Hundred Years of Solitude’-এর শেষে টীকায় বলছেন “All the references to the English text are to the felicitous if flawed translation by Gregory Rabassa in the Picador edition (London, 1978).”
তার মানে, সেই বিশ্বনন্দিত অনুবাদেরও ভুল ধরা পড়েছে তাঁর কাছে, হয়ত আরো অনেকের কাছে। সম্ভবত তাতে অনুবাদটি সাহিত্যাঙ্গনে অপাংক্তেয় হয়ে যায়নি। কাজ করলেই ভুল হয়, না করলে হয় না। আর যিনি বা যাঁরা ভুল ধরেন তাঁরাও তা করতে গিয়ে ভুল করেন মাঝে মাঝে।
“One Hundred Years of Solitude” অনুবাদে আমার অতি ক্ষুদ্র, তুচ্ছ ও — আশংকা করি — বৃথা প্রয়াসে এরকম শত শত ভুল আছে নিশ্চয়ই। সেসব যাঁরা ধরিয়ে দিয়েছেন — রবিন পাল তাঁদের অন্যতম — তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সেসব ত্রুটিনির্দেশ-এর মধ্যে যেগুলো যৌক্তিক মনে হয়েছে সেসব আমি পরবর্তী সংস্করণে শুধরে নেয়ার চেষ্টা করেছি, এবং সেচেষ্টা আমার অব্যাহত আছে। আর আমি এই কথাটি আগেও দুএক জায়গায় বলেছি যে, কেন যেন এই উপন্যাসের একটি বাক্যের অনুবাদেও আমি সন্তুষ্ট নই, মনে হয় যেন সেগুলো ভালো করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। যাই হোক, কিন্তু যতদূর মনে পড়ে রবিন পাল তাঁর লেখায় আমার ব্যবহার করা ‘পানি’, ‘খালা’, ‘পেশাব’ শব্দ নিয়েও আপত্তি তুলেছিলেন এই যুক্তিতে যে এগুলো বুঝতে কারো কারো অসুবিধে হতে পারে, এগুলো একটু অপ্রচলিত। আমি তাঁর এই বিজ্ঞ মত মানতে পারিনি। শব্দগুলো তাই বদলে দেয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করিনি।
আর আমাদের দেশের বাংলা অনুবাদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমার কিছু বক্তব্যের একটি হচ্ছে, আমার ধারণা, যেসব কাজের বাংলা অনুবাদের মান খুব খারাপ নয়, সেসব ফের অনুবাদ আমাদের অন্য বিলাসিতা। যে-বিলাসিতা ইংরেজি এবং আরো গুটিকতেক ভাষার লোকজন করতে পারেন। এখনো যে কত সহস্র কাজের বাংলা অনুবাদ দরকার তার যে ইয়ত্তা নেই! তবে, অনুবাদটি যদি মূল ভাষা থেকে না হয়ে থাকে অথবা কাজটি সম্পর্কে যদি অনুবাদকের বিশেষ দুর্বলতা থাকে সেক্ষেত্রে রচনাটি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার অনুবাদে আমার অন্তত আপত্তি নাই। আর তাই আনিসুজ্জামানের অনুবাদ প্রচেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই, ও তাঁর সাফল্য কামনা করি। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আনিসুজ্জামানের অনুবাদে আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ:
No comments:
Post a Comment