Tuesday, February 28, 2017

যে সিনেমায় ভ্রমণের আনন্দ

পৃথিবীর অনেক দৃশ্য অদেখা থেকে যাবে শেষমেষ। কোথাও বেড়াতে গেলে ফিরে আসার পর সঞ্চয় থাকে স্মৃতিগুলো। কিছু দৃশ্য ধরা থাকে ক্যামেরার চোখে, কিছু জমা থাকে নিজের দৃষ্টি স্মৃতিতে। প্রযুক্তির যুগটাকে খুব পছন্দ করি একটা কারণে। যেখানে যাইনি, যাওয়া হবে না- সেখানকার ঝকঝকে দৃশ্য চোখের সামনে হাজির করছে প্রতিদিন আধুনিক হতে থাকা প্রযুক্তি। কম্পিউটার, চলচ্চিত্র ইত্যাদি যত উন্নত হবে আমাদের দেখার সুযোগ তত বেশী। সিনেমা কেন পছন্দ করে মানুষ? শুধু কিছু গল্প উপন্যাসের দৃশ্যরূপ দেখার জন্য নয় নিশ্চয়ই। আরো বহুবিধ কারণ আছে, অনুভূতির অনুরণন আছে।

সেই সাথে আমার আছে আরো একটি বিশেষ কারণ। সিনেমা দেখার আনন্দ আমার কাছে শুধু একটি ঘটনা বা গল্পের দৃশ্যরূপ অবলোকন নয়। চিত্রায়িত দৃশ্যাবলীর ভূগোলেরও একটা ভূমিকা আছে তাতে। কোন কোন সিনেমার গল্প ভালো না হলেও তার দৃশ্যায়ন অসাধারণ হতে দেখেছি। যদি সেই দৃশ্য অদেখো কোন ভূগোলের চিত্র ধারণ করে তাহলে গল্পটি যাই হোক সেই সিনেমা আমি দেখবো। আমার কাছে প্রতিটি নতুন সিনেমা শুধু একটি গল্প শোনা নয়, একটি নতুন পৃথিবীও দেখা। অদেখা ভূখণ্ডে চিত্রিত নির্মিত অখাদ্য চলচ্চিত্রও আমি দেখতে রাজী যদি তার ক্যামেরার কাজ ভালো হয়, যদি এই গ্রহের একটি নতুন দৃশ্য আমার চোখের সামনে উপস্থিত করে।

যেখানে যত বেশী নতুন ভৌগলিক দৃশ্য সেখানে তত বেশী আনন্দ। নতুন নতুন দেশের সিনেমার প্রতি বাড়তি আগ্রহ এই কারণেই। একেকটা সিনেমা যেন একেকটি নতুন দেশ ভ্রমণের তৃপ্তি। প্রতিটি ভ্রমণের আনন্দ বেদনার মিশেল একেকটি ভ্রমণ একেকটি নতুন আনন্দ দুয়ার খুলে দেয় চোখের সামনে।

নীচের সিনেমাগুলো সেরকম কয়েকটি উদাহরণ। 


Tanna প্রশান্ত মহাসাগরের ভানুয়াতু দ্বীপপুঞ্জের অখ্যাত একটা দ্বীপ তান্না। সেই দ্বীপের প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক আদিবাসী সমাজের একটি ট্র্যাজিক প্রেমের সত্যি ঘটনার গল্প নিয়ে অসাধারণ চিত্রায়ণ সমৃদ্ধ একটি সিনেমা।  সিনেমাটি তৈরী করার জন্য অষ্ট্রেলিয়ান পরিচালক ছয় মাসের জন্য তান্না দ্বীপের আদিবাসীদের সাথে বসবাস করেছিলেন এবং সবচেয়ে চমকপ্রদ হলো সিনেমাতে ওই দ্বীপের আদিবাসীরাই অভিনয় করেছে যারা কখনো সভ্য সমাজের সংস্পর্শে আসেনি। ২০১৭ সালে অস্কারের বিদেশী সিনেমা ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছিল ছবিটা।


Kon-Tiki - গতকালের আগে আমিও জানতাম না  Thor Heyerdal নামের এক সুইডিশ স্কলার নিজের গবেষণাকে সত্য প্রমাণ করার জন্য দুনিয়ার সবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ৮০০০ কিমি দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের একটা দ্বীপের উদ্দেশ্যে কাঠের ভেলা নিয়ে দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়েছিলেন ১৯৪৭ সালে। সেই অভিযানের নাম Kon Tiki. প্রতিষ্ঠিত ধারণার বিপরীতে তিনি জানিয়েছিলেন প্রশান্ত মহাসাগরের আদিবাসীরা এশিয়া থেকে আসেনি, এসেছিল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে। আদিবাসীদের দেয়া তথ্য মতে ১৫০০ বছর আগে তাদের পূর্বপুরুষ সূর্যোদয়ের দিক থেকে সূর্যাস্তের দিকে পাড়িয়ে দিয়েছিল কাঠের ভেলায় চড়ে। চমৎকার থ্রিলিং এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন Joachim Rønning এবং Espen Sandberg

কয়েক বছর আগে দেখা Amelia ছবির কথা মনে পড়ে গেল। 'এমেলিয়া' নামের এক নারী পাইলট একাকী একটা ছোট্ট প্লেন নিয়ে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন ১৯৩২ সালে। সেই ছবির দৃশ্যায়ন চিত্রায়িত হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার ইরিয়ান জায়া প্রদেশের দুর্গম রেইন ফরেস্ট এলাকায়। 'এমেলিয়া' তৈরী করেছিলেন মীরা নায়ার ২০০৯ সালে।


Patagonia দেখার সিদ্ধান্ত নেই নামটি দেখে। ছাত্রজীবনে ফার্ডিন্যাণ্ড ম্যাগিলানের সেই অভিযানের গল্পটি পড়ার পর থেকে দক্ষিণ আমেরিকার ওই অঞ্চল সম্পর্কে কৌতুহল। তখন থেকেই নামটা চেনা। আর্জেন্টিনার দক্ষিণ সীমান্তের ওই প্রদেশটি ঘুরেই ম্যাগেলান প্রশান্ত মহাসাগর আবিষ্কার করেছিলেন ১৫২০ সালে এবং আধুনিক যুগের প্রথম মানুষ হিসেবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার গৌরব অর্জন করেছিলেন মাঝপথে আদিবাসীদের হাতে নিহত হবার পরও। এই সিনেমাটি সেই ঘটনা নিয়ে নয় বরং বিপরীত যাত্রার দুটো চমকপ্রদ গল্প নিয়ে। দুটো গল্পে মোট চারজন মানুষ। এক নারী শেকড় খুঁজতে যায় প্যাটাগোনিয়া থেকে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ওয়েলসে, আরেক পুরুষ ওয়েলস থেকে অন্য এক তথ্য তালাশে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে প্যাটাগনিয়া পৌঁছায়। পথে পথেই ঘটনা আগাতে থাকে। দুটো গল্প একসাথে যাত্রা করে কিন্তু তাদের কোথাও দেখা না হয়েও গল্পটি দর্শকের হৃদয়কে স্পর্শ করে। বৃটিশ-আর্জেনটিনার যৌথ উদ্যোগের সিনেমাটি বানিয়েছেন Marc Evans

এই সিনেমাগুলোতে ভ্রমণের তৃপ্তি পাওয়া গেল। পজ বাটন টিপে একেকটি দৃশ্যে মিনিট খানেক ব্যয় করা গেছে কোথাও কোথাও। যেমন ছিল এন্টার্কটিকার ডকুমেন্টারীতে।

No comments: