Tuesday, February 14, 2017

Antarctica: A Year on Ice.... সিনেমা নয়, দুর্লভ এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয়

এন্টার্কটিকার সাথে আমার তথ্যগত পরিচয় বহুদিনের। এক যুগ আগের একটা সময়ে আমি এন্টার্কটিকা ভ্রমণের স্বপ্নে বুঁদ হয়েছিলাম। আমার আরো অনেক অবাস্তবায়িত স্বপ্নের মতো এন্টার্কটিকাও হিমঘরে রয়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগে তারেক অনুর একটা টেড টকে এন্টার্কটিকা ভ্রমণের একটা পরিকল্পনা শুনে সাথে সাথে সেই সুপ্ত ইচ্ছেটা জেগে উঠলে আপ্লুত হয়ে অনুকে বলেই ফেলি, আমাকেও সাথে নিও ভাই।

সেই দিন আসতে এখনো অনেক দেরী। আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হবে এখন বলা যাচ্ছে না। কিন্তু স্বপ্নটা জেগে থাকতে থাকতে হাতে এসে গেল অসাধারণ একটা এন্টার্কটিকা চলচ্চিত্র Antarctica: A Year on Ice. পরিচালনা-গবেষণা-ক্যামেরা সবকিছু সব্যসাচীর দক্ষতা নিয়ে চালিয়েছেন নিউজিল্যাণ্ডের Anthony B. Powell, (অচেনা অজানা পাওয়েল ভাইয়ের কাছে আমার অসীম কৃতজ্ঞতা।)

বিবিসির Frozen Planet যারা দেখেছেন কিংবা জিওগ্রাফিক চ্যানেলের এন্টার্কটিকা বিষয় ডকুমেন্টারী যারা দেখেছেন তারা শুধু তথ্য জেনেছেন এন্টার্কটিকা বিষয়ে। এই চলচ্চিত্রেও তথ্য আছে কিন্তু তথ্যের চেয়েও বেশী যা দেখবেন অসাধারন অপার্থিব কিছু দৃশ্য যা আর কোথাও দেখেননি। আমি নিশ্চিত এই গ্রহের ৯৯ ভাগ মানুষের পরিচয় নেই এই অসাধারণ দৃশ্যের সাথে। time-lapse photography দিয়ে মাসের পর মাস ধরে তোলা ছবি আর ভিডিওচিত্রের অপূর্ব সমন্বয়।

ইংরেজির Breathtaking শব্দটির যথার্থ অনুবাদ উপলব্ধি করেছি এইসব দৃশ্যমালা প্রাণ ভরে চোখ ভরে দেখতে দেখতে। রাতের আকাশ যে এতটা বিচিত্র বর্ণের, বিচিত্র রূপের, বিচিত্র চরিত্রের আলোক বাগানে পরিণত হতে পারে সেটা এন্টার্কটিকাবাসী ছাড়া আর কেউ জানে না। আকাশ এখানে নেমে এসেছে অনেক কাছাকাছি, হাত বাড়ালেই মুঠো মুঠো তারা। মেরু জ্যোতির অনেক ছবি দেখেছি আগে, কিন্তু এমন জীবন্ত চলমান দৃশ্যে কখনো দেখা হয়নি। এই দৃশ্য আমার পক্ষে বর্ণনাতীত। শেলী কীটস কিংবা রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ দাশের হাতেই এই চিত্ররূপ অক্ষরে ধারণ করা সম্ভব ছিল। আফসোস, তাঁরা কেউ দেখেনি এই দৃশ্য। তবু জীবননানন্দ দাশ অদেখা অনেক দৃশ্যকে তাঁর কবিতায় ধারণ করেছেন অলৌকিক ভাবে। তাঁর কবিতার অবোধ্য কোন ছত্রের সাথে এইসব অপার্থিব নীহারিকা দৃশ্যের সাদৃশ্য খোঁজে যেতে পারে।




বিশাল এই মহাদেশে গড়ে মাত্র ৫০০০ মানুষের অস্থায়ী বাস, যারা গবেষণা ইত্যাদিতে ব্যস্ত। শীতকালে যা নেমে আসে ৭০০ জনে। শীতকালে দীর্ঘ ৪ মাস সভ্য পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে এন্টার্কটিকাবাসী। এই চলচ্চিত্রটি সেই সব অধিবাসীর দৈনিক জীবন যাপনের গল্প, বলা যায় এন্টার্কটিকাবাসীর এক বছরের বরফ-যাপিত সংসার নিয়ে।

আর দশটি ডকুমেন্টারীর সাথে এই ছবির পার্থক্য হলো এখানে প্রতিটি দৃশ্য, এত চমৎকার টানা শ্বাসরুদ্ধকর আনন্দে চোখ ভরিয়ে দিয়েছে যে দেড় ঘন্টা সময় দশ মিনিটে কেটে গেছে। বহুবার দেখেও মুগ্ধতা কাটবে না আমার।

আমার যদি এন্টার্কটিকা ভ্রমণ নাও হয় এখন আর আক্ষেপ নেই। এই ছবি আমাকে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিয়েছে। আমি নিজে ভ্রমণ করে এত কিছু দেখা সম্ভব ছিল না। কিছু চলচ্চিত্র আছে যা দেখা কেবলমাত্র বিনোদন না, একটা দুর্লভ অভিজ্ঞতাও। এই ছবিটা দেখে সেই বিচিত্র দুর্লভ অভিজ্ঞতার আনন্দই যুক্ত হলো থলিতে।

No comments: