Tuesday, March 18, 2014

স্বাধীনতার প্রশ্নে: বাংলাদেশ, ভারতীয় উপমহাদেশ,

১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে সিরাজদৌলার বাহিনী লর্ড ক্লাইভের হাতে পরাজিত হবার পর ভারত উপমহাদেশের পরাধীনতার যাত্রা শুরু। ইতিহাসে এভাবেই লেখা আছে। এখানে আমার কিছু প্রশ্ন কাজ করে। আমাদের পরাধীনতার যাত্রা কি তখন থেকে শুরু নাকি আরো আগে বা পরে? স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বলতে আমরা কি বুঝি। সেই সময়ে রাষ্ট্র নামক ধারণাটি কেমন ছিল। আদৌ রাষ্ট্র নামের কোন সীমানার অস্তিত্ব কি ছিল? সেই রাষ্ট্রে কয়টা সরকার ছিল? বাংলার একটা মাত্র যুদ্ধে সিরাজদৌলার পতনে কেন সমগ্র ভারত বৃটিশ অধিভুক্ত হতে শুরু করলো? এটা কি ভারতের দুর্বলতা নাকি ইংরেজের পরাক্রমতা। আমরা তাদের সুযোগ করে দেইনিতো?

আমি যদ্দুর বুঝি সমগ্র ভারত তখন একক রাজ্য ছিল না। একক রাজত্বের কোন নজির দেখি না। যদি একক রাজ্য হতো তাহলে ভাস্কোদাগামা যেদিন ভারতের মাটিতে পা রাখলো, সেদিন থেকেই তাদের প্রতিরোধ করা হতো। কিন্তু ভাস্কো দা গামা কোথাকার ইউরোপ থেকে কাঠের জাহাজ নিয়ে উড়ে এসে কয়েকটা গোলা মারলো আর তাতেই কালিকট বন্দরে তাদের আধিপত্য কায়েম হয়ে গেল। সেটা ১৪৯৮ সালের ঘটনা। তার মাত্র পনের বিশ বছরের মধ্যে পর্তুগীজরা সুদূর চট্টগ্রাম পর্যন্ত এসে গেল। সারা ভারতের জলপথে তাদের আধিপত্য শুরু হলো। শুধু জলপথ নয়, তারা স্থলভাগেও অত্যাচার শুরু করলো। এই শক্তি এই সাহস ভিনদেশী পর্তুগীজ কোথা থেকে পেল? পর্তুগীজ সেই সময়ে এমন কোন সমৃদ্ধ রাজ্য না যে তারা এত বড় ভারতবর্ষের উপর আক্রমন করতে পারে।  আসলে দিল্লীর মসনদে আসীন রাজা বাদশারা দেশ রক্ষা নিয়ে কোন চিন্তা করতেন মনে হয় না। নইলে দেশকে এরকম অরক্ষিত রেখে নিজেরা ওরকম ভোগ বিলাস আর বিশাল সব প্রাসাদ নির্মানে ব্যস্ত থাকতে পারতেন না। এরা না এগিয়েছে জ্ঞানে না বিজ্ঞানে। ব্যস্ত ছিল অন্তর্কলহে, ব্যস্ত ছিল অপ্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডে।

ইউরোপ ভারতের সন্ধান পেয়ে হাতে যেন চাঁদ পেল। পর্তুগীজের পিছনে আসতে শুরু করে ইউরোপের অন্যন্য জাতি। তারা ভিনদেশী বইঙ্গা হয়েও এত বড় ভারতবর্ষের শক্তিশালী মোগল সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। ভারত যদি একক রাষ্ট্র হতো, একভাবে ভারতীয় সবগুলো রাজ্য বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করতো, তাহলে এই উপমহাদেশে কোন কালেই ইউরোপীয়ান উপনিবেশ তৈরী হতে পারতো না। এ মোগল সাম্রাজ্যের ব্যর্থতা, এ আমাদের দুর্বলতা, আমাদেরই অক্ষমতা। পাঁচশো বছর পার হয়ে গেলেও সেই বিদেশী ভীতি আমাদের এখনো কাটেনি। এখনো সাদা চামড়া দেখলে আমাদের কোমর বাঁকা হয়ে যায়, কথা বলতে গেলে গলা শুকিয়ে যায়। সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে এই দুর্বলতায় বাঙালীরাই সবচেয়ে এগিয়ে। তাহলে আমরা কিভাবে বলি বাঙালী বীরের জাত। আমাদের কথিত সেই বীরত্বের গল্প কোথায়। নিজেরা নিজেদের মাথা ফাটানোকে যদি বীরত্ব বলা যায়, তাহলে তাতে বাঙালীর কোন প্রতিদ্বন্দীই নেই।

আসলে আমরা বরাবর নিজেদের প্রতি অমনযোগী নাগরিকই ছিলাম। ভারত কখনো নিজের শক্তি নিয়ে কঠিন ভাবে বিদেশী শক্তির মুখোমুখি দাড়ায়নি। যদি দাড়াতো তাহলে কখনোই এশিয়ার এই অঞ্চলে বৃটিশ শাসন বিস্তার লাভ করতে পারতো না।

ভারত কখন পরাধীনতা হারায় এই প্রশ্নের সঠিক কোন জবাব নেই। তবে নিশ্চিত যে সেটা ১৭৫৭ নয়। তারো বহু বছর আগেই পরাধীন হয়ে ছিল। ছিন্ন ভিন্ন একটা রাষ্ট্র ছিল ভারত। বাংলা তো বটেই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পাবার পূর্বে বাংলাদেশ কখনো স্বাধীন ছিল এটা আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। ইতিহাসে তেমন নজির দেখি না।




[ভাস্কো দা গামার জার্নাল পড়তে পড়তে যেসব তাৎক্ষণিক চিন্তা প্রতিক্রিয়া মাথায় আসছে, সেগুলো লিপিবদ্ধ করছিলাম। এরপর ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর প্রথম গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম হেজের ১৬৮১ সালের ডায়েরী পড়া শুরু করেছি। মাথায় নতুন চিন্তা ভর করতে শুরু করেছে। লিখে রাখছি যদি পরে কোথাও কাজে লাগে]


No comments: