Wednesday, March 12, 2014

ব্যাটারি গলির বাজার



বেসরকারী অফিসের কীবোর্ড পেষা কর্মচারী শরাফ উদ্দিন। যিনি মাসে সাড়ে বারো হাজার টাকা বেতন পেয়ে স্ত্রী আর দুই কন্যাকে নিয়ে ৪ হাজার টাকা দিয়ে দুই কক্ষের একটা অন্ধকার ঘুপচি ঘরে আপাতঃ সুখের সংসারে বাস করেন। যিনি  কৈশোরে বিজ্ঞানী হবার স্বপ্ন দেখতেন, তারুণ্যে পরিব্রাজক হবার স্বপ্ন দেখতেন, বয়স হবার পর সাহিত্যিক হবারও স্বপ্ন দেখেছিলেন নির্দয় সময় তার স্বপ্নগুলো এক এক করে ছেঁটে ফেলার আগ পর্যন্ত।

এখন 
তাঁর  নতুন কোন স্বপ্ন নেই, আকাংখা নেই, অভিযোগ নেই। অবশিষ্ট স্বপ্ন শুধু পরিবার নিয়ে তিনবেলা খেয়ে নাক ডেকে সাত ঘন্টার ঘুম নিয়ে বেঁচে থাকা। বলা চলে বেঁচে থাকাই একমাত্র স্বপ্ন তাঁর। ব্যাটারি গলির সস্তা বাজার সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করে।

শরাফ উদ্দিন তাই একদিন যে কবিতাটি পত্রিকায় ছাপিয়ে অফিসময় তোলপাড় করে ফেললেন সেই কবিতাটির বিষয় প্রেম নয়, যুদ্ধ নয়, রাজনীতিও নয়, নেহায়েত অনুল্লেখ্য  ঝুপড়ি ঘরের মাছ তরিতরকারির মলিনতম এক বাজার।

কবিতাটি স্থানীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় ছাপা হবার পর অফিসে তাঁর সম্মানের উর্ধ্বগতি দেখা দেয়। এই ছোট অফিসের সম্মান বৃদ্ধি করে দিয়েছে শরাফ উদ্দিনের কবিতা। তাই বড় কর্তার নির্দেশে পত্রিকায় ছাপা হওয়া কাটিং বাধাই করে ঝুলিয়ে দেয়া হয় শরাফউদ্দিনের পেছনের দেয়ালে।

এখনো প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে শরাফউদ্দিন এখনো গুটি গুটি পায়ে ব্যাটারি গলির বাজারে ঢোকেন। চোখ দিয়ে ছেঁকে ছেঁকে সস্তা মাছ বের করেন, গুনে গুনে দরদাম করেন, দরদামে পাঁচ টাকা জিতলে তা দিয়ে একটা পান আর একটা নেভি সিগ্রেট কিনেন। মাছ কাটার ফাঁকে ফাঁকে মুখভর্তি ধোঁয়া ছেড়ে অন্ধকার আকাশে জ্বলজ্বলে নক্ষত্র দেখেন এবং ভাবতে থাকেন ওরকম একটা নক্ষত্রের অতিক্ষুদ্র একটা অংশ দিয়ে তৈরী একটা গ্রহের
 বাসিন্দা তিনি। এত ক্ষুদ্র হবার জন্য তার কোন রকম ক্ষেদ নেই তার। চাওয়াপাওয়ার কোন হিসেব তখন বিব্রত করতে পারে না শরাফউদ্দিনকে।




No comments: