Sunday, March 2, 2014

ভাস্কো-দা-গামাঃ হার্মাদ না অভিযাত্রী - ১

ইতিহাস বিষয়ে আমার পড়াশোনা কম বলে আজকাল খুব আগ্রহ বোধ করছি ইতিহাস পাঠে। বিশেষ করে প্রাচীন ইতিহাস। পুরোনো দিনের প্রতি আমার একটা নস্টালজিয়া কাজ করে। যে সময় আমি পৃথিবীতে আসিনি, সেই সময়কাল হলেও। একশো দুশো কিংবা পাঁচশো বছর পুরোনো দিন নিয়েও আমি এক ধরনের নস্টালজিয়ায় ভুগি। ওই সময়কালের পৃথিবী মানুষ ও প্রকৃতি আমাকে ভীষণভাবে টানে। আমি যে পৃথিবী দেখছি সেই পৃথিবীর তুলনায় কতটা পার্থক্য জানতে ইচ্ছে করে।

পুরোনো বই পেলে তাই আমি গোগ্রাসে গিলি। দমবন্ধ করা আবেগ নিয়ে পড়ি। তেমন একটা বই পেয়ে গেলাম সেদিন। যে বইয়ের অস্তিত্বই জানতাম না কোনদিন। বইটার নাম A Journal of the First Voyage of Vasco da Gama 1497-1499

বইটা 1898 সালে মূল পর্তুগীজ থেকে ইংরেজিতে সংকলিত করেছেন ইঙ্গ-জার্মান ভৌগলিক E G Ravenstein। মূল পর্তুগীজ জার্নাল কে লিখেছেন সেটা নিয়ে একটু সংশয় আছে। তবে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞরা Joao De Sa (জাহাজের ক্লার্ক) অথবা  Alvero Velho (ভাস্কো দা গামার প্রিয় সৈনিক) এই দুজনের মধ্যে যে কোন একজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন। আমার কাছে আলভেরোকেই যৌক্তিক মনে হয় বর্ননার ধরন দেখে। তবে এই অভিযানটা বিপদসংকুল, পদে পদে রোমাঞ্চ আর শিহরণে ভরপুর। পড়তে পড়তে আমার খুব ইচ্ছে করছিল অনুবাদ করতে। ভাস্কো দা গামার ভারত অভিযানের উপর এত বিশদ বর্ননা আর কোথাও পাইনি আগে। তাও একদম প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে, যিনি ভাস্কো দা হার্মাদের সরাসরি সহযোগী। সমগ্র ভারত বর্ষের কাছে ইতিহাসের পাতায় পাতায় পর্তুগীজরা ঘৃণার সাথে স্মরিত হওয়ায়, ভিন্ন দৃষ্টিতে লেখা জার্নালটা পড়তে অদ্ভুত লাগছিল।

কিছু ভিন্ন রকমের তথ্য পাওয়া গেল যা আমার জানা পূর্ববর্তী তথ্যের সাথে মেলে না। আমি এতদিন জানতাম ভাস্কো দা গামা ভারতবর্ষের সমুদ্র পথ খোজার জন্য কেপ অব গুড হোপ ঘুরে মরিশাস থামেন, ওখান থেকে এক ভারতীয়কে ঘুষ দিয়ে জাহাজে তুলে তার মাধ্যমে ভারত এসে পৌঁছান। কিন্তু আসল তথ্য হলো গামা কেনিয়ার মেলিন্দা নামক অঞ্চলের রাজার সাথে খাতির করে তার মাধ্যমে এক খ্রিষ্টান নাবিক সংগ্রহ করে ভারতের পথে রওনা দেন। Cana নামক সেই নাবিক পথ দেখিয়ে ভারতের মাদ্রাজ উপকূলে পৌছে দেন গামাকে।

এখানে একটা ব্যাপার উল্লেখ করা দরকার। আদিকালে ইউরোপের সাথে এশিয়ার একটা বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল মধ্যপ্রাচ্যের উপর দিয়ে। ক্রুসেডের পর তুর্কী সম্রাজ্যের উপর দিয়ে ইউরোপের খ্রিষ্টানদের বাণিজ্যিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শত শত বছর ধরে ভারতে যাবার বিকল্প একটা পথ খুঁজতে শুরু করে ইউরোপীয়ানরা। মধ্যপ্রাচ্যের রুট বন্ধ হয়ে সমুদ্রপথে অভিযান চালাতে শুরু করে ইউরোপের রাজন্যবর্গ। এক ভারত রুট খুঁজতে খুঁজতে ওরা বাকী পৃথিবী চষে ফেলে, ফলে নতুন নতুন মহাদেশ আবিষ্কার হয়ে যায়। পৃথিবীর বিশাল অংশ ইউরোপীয়ানদের পদানত হয়ে যায়। প্রথম বড় সাফল্য আসে কলম্বাসের হাতে, তারপর ভাস্কো দা গামা, তারপর ফার্ডিন্যাণ্ড ম্যাগিলান। সেই থেকে বিশ্বের সম্পদের সিংহভাগের মালিকানা সাদা চামড়ার দখলে যাওয়া শুরু। ভাস্কো দা গামার অভিযানের জার্নালটা ভুগোল পরিবর্তনের ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থেকে যাবে। বইটার অর্ধেক শেষ করে লেখাটা শুরু করলাম। বাকীটা শেষ হলে অনুবাদের কাজে হাত দেবার ইচ্ছে।

আপাততঃ পাঠানুভুতিই লিখছি।


[চলবে]

No comments: