একটা সময় ছিল যতক্ষণ অফিসে থাকতাম ততক্ষণ ইন্টারনেটে যুক্ত থাকতাম। মানে আমার পিসিটা সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সংযোগ প্রাপ্ত ছিল। এক যুগেরও বেশী সময় এই সুবিধা নিয়ে কাজ করেছি। অফিসের কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইন্টারনেট ঘুরে বেড়াতাম। গুগল, ফোরাম, ফেসবুক, ব্লগ ইত্যাদি ছিল প্রিয় বিষয়। কিন্তু একটা সময় এসে দেখা গেল কাজের ফাঁকে ফাঁকে আর ইন্টারনেটে ঘুরছি না। ইন্টারনেটের ফাঁকে ফাঁকে কাজ করছি। কখনো কখনো কাজই ভুলে যাচ্ছি। ফলে উপর মহল সিদ্ধান্ত নিল আমাকে ইন্টারনেটের ভয়াবহ নেশা থেকে রক্ষা করবে। সেই জন্য আমার ইন্টারনেট জগত থেকে বিচ্ছিন্ন করে কেবল কেজো ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত করে দিল। কাজের প্রতি আমার প্রবল অনীহা। কাজ না করতে করতে আমি ভুলেই গেছি কি আমার কাজ। প্রতিদিন কেন অফিসে আসি আমি জানি না। বাসার সামনে অফিসের গাড়িটা এসে দাঁড়ায় সকাল পৌনে সাতটায়, আমি প্রতিদিন তাতে চড়ে অফিসে আসি। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আবার অফিসের নীচে নামি, গাড়িটা আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যায়। মাঝখানের সময়টুকু আমি কেন অফিসে থাকি এটা বুঝতে পারছি না। ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পর আমার মস্তিষ্ক আর ঠিকভাবে কাজ করছে না। আমি পিসি খুলে মনিটরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকি, মেইল চেক করি, কেজো মেইল, কেজো মেইলের মতো বিরক্তিকর জিনিস দুনিয়াতে আছে কিনা জানি না। এরা পারে কেবল কলিজায় একটু পর পর খামচি দিতে। এই খাইছি তোরে, পাইছি তোরে.......পালাবি কোথায়? ইত্যাদি নানারকমের বিদঘুটে ইঙ্গিতময় খবর আসে। আর আমি দিন দিন দুর্বল হয়ে যাই। জিমেইলে ঢুকতে পারি না, বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি না, ব্লগে ঢুকতে পারি না, লেখালেখি করতে পারি না, ফেসবুকে ঢুকতে পারি না, স্ট্যাটাস দিতে পারি না। জীবনে আর বাকী রইল কি। আমার পুরো বিশ্বটা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে হঠাৎ করে। এই সীমাবদ্ধ জীবনে বাঁচার ইচ্ছেটাও উবে যায় মাঝে মাঝে।
প্রথমঃ মানুষ বাঁচে বাতাস মানে অক্সিজেন দিয়ে
দ্বিতীয়ঃ মানুষ বাঁচে পানি দিয়ে
তৃতীয়তঃ মানুষ বাঁচে ভাত খেয়ে
চতুর্থত মানুষ বাঁচে জীবিকা দিয়ে
পঞ্চমতঃ মানুষ বাঁচে স্বচ্ছলতা দিয়ে
ষষ্ঠতঃ মানুষ বাঁচে স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে
এখানে ছয়টি বাঁচার মধ্যে একটা ধারাবাহিক সম্পর্ক আছে। যার বাতাস আছে সে চায় পানি। যার পানি আছে সে চায় ভাত। যার ভাত আছে সে চায় নিয়মিত আয়/জীবিকা। যার জীবিকা ঠিক আছে সে চায় স্বচ্ছলতা। যার স্বচ্ছলতা আছে সে চায় স্বাচ্ছন্দ্য জীবন।
পৃথিবীতে জীবিত সব মানুষ প্রথম তিনটির অন্তর্ভুক্ত। অনাহারে মারা যাবে কিংবা যাচ্ছে সেরকম কিছু মানুষ বাদ দিলে ৭০০ কোটি মানুষই প্রথম তিনটি দলের অন্তর্ভুক্ত। তার এক ধাপ উপরে আছে জীবিকা। মানে আয়ের একটা উৎস আছে এদের। এরকম মানুষের সংখ্যা ৮৫ শতাংশ ধরলে ১৫ শতাংশকে কর্মহীন ধরা যায়। পনের শতাংশ কর্মহীন মানুষও ভাত খেয়ে বেচে আছে কোনমতে। ৮৫ শতাংশের মধ্যে স্বচ্ছলতা আছে হয়তো ৩০ শতাংশের। ৫৫ শতাংশ কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করে বেঁচে থাকে। ৩০ শতাংশের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে বেঁচে আছে কতো শতাংশ? যারা ঘরের খেয়ে ইন্টারনেট গুঁতানোর সময় পায় তাদেরকে নিশ্চয়ই স্বাচ্ছন্দ্য গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। সেই স্বাচ্ছন্দ্য গ্রুপের একাংশ বাঁচে ইন্টারনেট দিয়ে!
আমার এত ভণিতার উদ্দেশ্য এই দলকে নিয়ে যারা অক্সিজেনের দুটি মৌলিক উপাদানের মধ্যে ইন্টারনেটও যুক্ত করে দিয়েছে এটাকে H2ONET(এইচটুওনেট) বলা যায়।
এই দলটার বায়ু পানি ইন্টারনেট ছাড়া বাঁচে না। কিংবা বাঁচাটা দুর্ভোগ হিসেবে দেখে। আমি দিনে যতটা সময় বসে থাকি ততক্ষণ ইন্টারনেট থাকা চাই। এমন না যে ইন্টারনেট থাকলেই আমি কাজ করে উড়িয়ে ফেলছি। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য যেমন অক্সিজেন চাই, তেমনি বসে থাকার জন্য ইন্টারনেট চাই। শুয়ে গেলে, কিংবা ঘুমোতে গেলে, কিংবা রাস্তায় থাকলে ইন্টারনেট না থাকুক সমস্যা নাই। কিন্ত আমি ডেস্কে আছি, কিন্তু ইন্টারনেট নেই, এটা দুঃসহ। ইন্টারনেট ছাড়া দিনের আটঘন্টা অফিসে কাজ করেছি, তেমন নজীর গত একযুগে নেই। এতদিন পর খেয়াল করলাম, মানুষ আটঘন্টা ডেস্কে বসে কাজ করে কিভাবে? আমাকে তো ডেস্কে বসিয়ে রাখে ইন্টারনেট সংযোগ। বাকীদের?
No comments:
Post a Comment