১. বিপরীত লিঙ্গের দুজন মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভালো সম্পর্ক কতোদিন পর্যন্ত টিকতে পারে? প্রেম-বন্ধুত্বে দীর্ঘকাল টিকে। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে ভালো সম্পর্ক মানে কি দুজনের মধ্যে ভালোবাসা সমহারে বিদ্যমান থাকা নাকি দুজন দুজনকে স্রেফ সহ্য করে নিয়ে থাকা? একটা আপাতঃ সুখী সংসার দেখে কেউ কি বুঝবে দুজন কতটা সুখী মানুষ আর কতোটা সফল অভিনয় শিল্পী?
২. ধরা যাক মানব মানবী খুব ঘনিষ্ট দুজন মানুষ। হয় বন্ধুত্বে, নয় প্রেমে, নয় দাম্পত্যে যুক্ত আছে দীর্ঘসময়। এর মধ্যে কতোটা খাটি মমত্ব বিদ্যমান? উন্নত দেশে পাঁচ বছর লিভ টুগেদার করে পাঁচ মাস পর ভেঙ্গে যাবার নজির ভুরি ভুরি। এই দৃশ্য এখন বাংলাদেশেও বিরল নয়। হয়তো ডিভোর্স হচ্ছে না, কিন্তু একই ছাদের নীচে দুজন মানুষ আলাদা সংসার পেতে কাটিয়ে দিচ্ছে বছরের পর বছর। কিন্তু এই বিচ্যুতির প্রধান কারন কি? আশাভঙ্গ নাকি বিস্ময়ভঙ্গ?
৩. সম্পর্কের শুরুতে যে মুগ্ধতা নিয়ে যাত্রা করা হয় সেটা প্রত্যাশার ডালপালা বিস্তার করতে থাকে সময়ের সাথে। কিছু কিছু প্রত্যাশা প্রকাশও পায় না। বিয়ের পর সেই প্রত্যাশায় যদি গুড়ে বালি পড়ে একটা প্রাথমিক ধাক্কা লাগে। ক্রমে ধাক্কার পরিমান বাড়তে থাকে হতাশার সাথে। বিয়ের আগে-পরের ভিন্নতায় দুজন মানুষের মুগ্ধতার স্মৃতি হারিয়ে যায় বর্তমানের তিক্ততার আড়ালে।
৪. সম্পর্কে জটিলতা আসার বহুবিধ কারণ থাকতে পারে। খুব কম গুরুত্বপূর্ন ইস্যুও একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে স্থায়ী চিড় ধরিয়ে দিতে পারে। স্বামীস্ত্রী সম্পর্কের মতো প্রেমে বা বন্ধুত্বের মধ্যেও সেরকম জটিলতা আসতে পারে। আশাভঙ্গ বা বিশ্বাসভঙ্গের যাতনা আমাদের অহরহ পোড়ায়। দশ বছরের পুরোনো বন্ধুত্ব বিশ মিনিটের ভিন্ন একটা ঘটনায় চরম হোঁচট খেতে পারে। পাল্টে দিতে পারে সকল সমীকরণ।
৫. যারা প্রেম করে বিয়ের বিপক্ষে, তারা বলেন প্রেমের বিয়ে টেকে না। আবার যারা প্রেম করে বিয়ের পক্ষে তারা বলেন, প্রেমের বিয়েতেই সুখ, আরোপিত বিয়েতে প্রেম নেই, সুখ নেই। আসলে কোনটাই স্থির সত্যি নয়। দুই দিকেই বিপরীত চিত্রের নজির আছে। সাত বছর প্রেম করে সাত মাসে যেমন বিয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে, তেমনি সাতদিন প্রেম না করেও সাত বছরের সুখী সংসার আছে তেমন নজীর আছে।
৬. সম্পর্ক জিনিসটা যত্নের উপর ভীষণ নির্ভরশীল। সম্পর্ক যতটা যাপন করতে হয় ততটা লালনও করতে হয়। হাজার মাইল দূর থেকে প্রেম করার সময় যে আবেগ তা বাসর ঘরে ঢোকার পর থেকে যদি তার মৃত্যুঘন্টা বেজে যায়, সেই প্রেম অর্থহীন, সেই সম্পর্ক যত্নহীন। হাজার দিন প্রেম করেও যারা সম্পর্ক লালন করতে অক্ষম, তাদের বিয়ে সংসার ইত্যাদিতে প্রবেশ করা অনুচিত।
৭. প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে দুইটা কথা। প্রেম-ভালোবাসা মূলতঃ দুইরকম।
ক) আমি কাউকে দেখে কেবল মুগ্ধ হয়েই ভালোবেসে ফেললাম। সে আমাকে ভালো নাও বাসতে পারে। এই প্রকার ভালোবাসা প্রায়শঃ হতাশায় পর্যবসিত হয়। এটি খুব রিস্কি ভালোবাসা। এতে কষ্ট প্রচুর। তবে এই জাতীয় ভালোবাসা নিঃস্বার্থ। অপরপক্ষ ভালো না বাসলেও তাকে ভালোবাসা যায়। তবে সিডাকসিন, ফেনসিডিল, গাজা , মদ এই প্রেমের নিত্য সঙ্গী হতে পারে।
খ) কেউ আমাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে ভালোবাসলো, আমি তার ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে ভালোবাসলাম। এই ভালোবাসায় দ্বিতীয় পক্ষের কোন রিস্ক নেই। দায় নেই। এই ভালোবাসা একটু স্বার্থপর। আমি তাকে ততক্ষণই ভালোবাসি, যতক্ষণ তার ভালোবাসার ফল্গুধারা অব্যাহত। এই প্রকার ভালোবাসার নাম, নির্ভরশীল ভালোবাসা। এই জাতীয় প্রেমিক প্রেমিকাগন সুশীলতায় পারদর্শী হয়ে থাকে।
এই দুই দলের বাইরে তৃতীয় একটা দল আছে। এরা প্রেমহীন, অভাগা। তবে এই অভাগারা সবসময় সংখ্যাগরিষ্ট। সমাজে প্রেমহীন লোকেরা সংখ্যাগরিষ্ট। এদেরও একটা সুলভ ভালোবাসা আছে। অপ্রকাশিত ভালোবাসা। দুনিয়ার ৯৫% ভাগ মানুষ এই ভালোবাসার আওতাভুক্ত। এটি ব্যক্তিবিশেষের বাইরে সিনেমার নায়ক নায়িকা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এই ভালোবাসায় কোন দায় নেই, কষ্ট নেই, ঝামেলা নেই, নির্ঘুম রাত নেই, কবিতা নেই, গান নেই, হাহাকার নেই, ভাত মাছ তরকারীর ফাকে ফাকেও এই ভালোবাসা দিব্যি চলে যায়। এটাকে সর্বোত্তম নিরাপদ ভালোবাসা বলা যায়।
.........................................................................
রুমানা সাঈদের সম্পর্ক ১৮ বছরের। ৭ বছরের প্রেম আর ১১ বছরের সংসার। ৭ বছর নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু ১১ বছরের কতোটা 'সুখ' আর কতোটা 'সহ্য করে নেয়া' ওই দুজন বাদে কেউ জানবে না।
No comments:
Post a Comment