১.
'জাপানীজ ওয়াইফ' দেখলাম সেদিন। অপর্না সেনের ছবি। ছবিটা নামিয়ে রেখেছিলাম আগেই। দেখা হয়নি এদ্দিন। সিনেমাটা আমাকে যে দুটো কারণে আলোড়িত করেছে তার একটি হলো ঘুড়ি। ঘুড়ি জিনিসটা স্মৃতি জাগানিয়া।
জাপানীজ ওয়াইফে ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে বেশ সুন্দর কয়টা দৃশ্য আছে। পুরো ছবির মধ্যে একমাত্র প্রানবন্ত অংশ ওইটিই। দৃশ্যটা এত ভালো রকম চিত্রায়িত হয়েছে যে দেশী ঘুড়ির ছবি দেখেই আমি সাঁ করে ত্রিশ বত্রিশ বছর আগে চলে গেলাম। কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে স্পষ্ট দেখতে পেলাম ওই ঘুড়িটা আমার খুব চেনা। ঘুড়ি হাতে নেবার পর বাতাসে পত পত শব্দ হয় তা যেন আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম। পাতলা কাগজের যে বাতাসের আঘাতে শব্দ হতো তা মধুরতম সঙ্গীতের মতো কানে বাজতো। এত বছর পরেও কানের কাছে শব্দটা বাজতে লাগলো।
এক রঙা, দুই রঙা, তিন রঙা পাংকি। এই তিনরকম ঘুড়িই দেখা যেতো দোকানে। ছবিতেও সেই খুব চেনা রঙের ঘুড়িগুলোই দেখলাম। আজকাল কি ঘুড়ি বিক্রি হয়? কোথাও ঘুড়ি উড়তে দেখি না কেন? শহরে কেউ ঘুড়ি ওড়ায় না? নাকি আজকাল ঘুড়ি তৈরী করে না কেউ। ঘুড়ি তৈরী করার সেই পাতলা রঙিন কাগজগুলো কোথায় আজ? পলিথিনের আগ্রাসনে কি লুপ্ত হয়ে গেছে? এই কাগজগুলো আর কোন কাজে আসতো? বিয়ে বাড়ীর ডেকোরেশানের সাজেও কাগজগুলোর ব্যবহার ছিল। খুব খুব স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম ছবির ওই অংশটা দেখে।
২.
ছবিটাকে অসাধারণ বলা উচিত কিনা জানি না তবে চিত্রায়ন ভালো লেগেছে, কাহিনীর বৈচিত্রের কারনে মনে রাখার মতো ছবি। কিন্তু কয়েক জায়গায় অসংগতি লেগেছে।
এক. নায়ক বাংলাদেশে, নায়িকা জাপানে। নায়ক নায়িকার পরিচয় প্রেম চিঠিতে। টেলিফোনে ওরা দুজনে ঠিকমতো কথা বলতে পারে না ইংরেজী দৌর্বল্যের কারণে। চিঠি ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে ভাববিনিময় করতে পারে না। নায়ক নিজেই স্বীকার করেছে। কিন্তু বিয়ে করে ফেললো কি করে? চিঠিতে কি বিয়ে করা যায়?
দুই. মেয়েটা জাপানে অসুস্থ হয়ে পড়ে, জাপানের মতো উন্নত দেশের চিকিৎসা বাদ দিয়ে নায়ক ভারতীয় ডাক্তারের হোমিওপ্যাথ এলোপ্যাথ ও কবিরাজী চিকিৎসার ওষুধ কিনে পাঠায়। যদিও ঔষধ পৌছিবার আগেই রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এই অংশটা ভীষন আজগুবি আরোপিত লেগেছে। কাহিনীকার ভারতীয় চিকিৎসার মহার্ঘ তুলে ধরতে চাইলেন নাকি প্রেম ভালোবাসার মাহাত্ম্য তুলে ধরতে চাইলেন বুঝলাম না।
তিন. গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে পরিবার পর্যন্ত বিয়েটাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছে। গ্রামের ছেলে একটা জাপানী মেয়েকে বিয়ে করেছে এটা নিয়ে দেশ গ্রাম পরিবার খুব সন্তুষ্ট আছে। এটা অবিশ্বাস্য লেগেছে। বাঙাল দেশে অবাস্তব একটা চিত্র।
চার. ছবিটার শেষে এসে করুণ রস অনেক বেশী গাঢ় হয়ে গেছে। নায়ক একদিনের ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে নিউমোনিয়া হয়ে মারা যায় হঠাৎ। খবর পেয়ে ক্যান্সার রোগী জাপানী বউ মাথার চুল কেটে সাদা শাড়ী পরে অজ গ্রামে চলে আসে, বাড়ী চিনতে যার কোন অসুবিধা হয় না। এরকম ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু উপস্থাপনা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।
পাঁচ. সব শেষে দর্শকের একটা আক্ষেপ আসতে পারে যেটাকে বলা যায়, গোইং টু নো হোয়্যার! দর্শক হিসেবে আমার খুব অসহায় লেগেছে পরিণতিতে। যেন হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল ছবিটা। ছোট গল্পের কায়দায় এই আক্ষেপটাই সিনেমার সার্থকতা?
.................................................................................................................................
এটা ঠিক রিভিউ হলো না। চট-সমালোচনা বলা যায়। কেবল ছবিটা যারা দেখেছেন তারাই বুঝবেন। জানতে কৌতুহলী একই অসংগতি আর কারো লেগেছে কিনা?
No comments:
Post a Comment