Tuesday, April 12, 2011

মাছি

মাছিটা খুব বিরক্ত করছে। চারদিকে জানালা দরজা সব বন্ধ। কোত্থেকে এই নচ্ছার মাছিটা এসে আমার নাকের ডগায় বসতে চায়। প্রথমে পাত্তা দেইনি। কিন্তু ক্রমাগত নাকের উপর মাছির পদাঘাতে নাকটা সুড়সুড় করছে। মাছিটা এত জায়গা থাকতে নাকের ডগাটাকে টার্গেট করলো কেন বুঝতে পারছি না।

শোঁওওওও করে উড়ে এসে নাকের ঠিক ডগার মধ্যখানে ল্যান্ড করছে। গালে বসলে নিজে চড় খেয়েও মাছিকে কাবু করা যেত। এখন তা সম্ভব না। মাছি তাড়াতে এক রাজার নাক কেটে ফেলেছিল তার প্রহরী। রূপকথার গল্প মনে পড়লো। তবু দুদুবার থাবড়া মেরে নাক ব্যাথা করে ফেলেছি, কিন্তু মাছিটার কিচ্ছু হলো না।

অফিসের কাজ শেষ। একটা লেখা তৈরী করছিলাম। হাত দুটো মাছি তাড়াতে কীবোর্ড থেকে বারবার তুলতে হচ্ছে বলে কাজে দেরী হয়ে যাচ্ছে। বাকী সবাই চলে গেছে। আমি একা কাজ করছি সুনসান অফিসে।

মাছি যন্ত্রনায় লেখা বন্ধ করে হাত দুটো সামনে রেখে চেয়ারে হেলান দিলাম। মাছিটার মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করলাম ঠান্ডা মাথায়। আমার নাকের ডগায় তার কাজ কি? যদি কোন খাদ্যকনা লেগে থাকতো, ওটা খাওয়ার জন্য ওখানে নামতো তাও বুঝতাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নেহাত খেলাধুলা কিংবা বিরক্ত করার জন্যই সে এমন করছে। অথবা এমন হতে পারে তার কোন সঙ্গীকে আমি কখনো খুন করেছি, তার প্রতিশোধ নিচ্ছে এখন। মাছিদের এট্টুক মগজে প্রতিশোধ চেতনাও আছে?

এটা মনে হতেই তুচ্ছ মাছিটাকেও কেমন ভয় করতে লাগলো। মাছিটা যতবার উড়ে আসে, ভয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে ভয়টা বাড়তে বাড়তে মাছিটা কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা কাল্পনিক ছদ্মবেশী দানবে রূপান্তরিত হয়। অফিসের ড্রয়ার খুলে আমি কেক কাটার ছুরিটা বের করি। ছুরি দিয়ে মাছি খুন করা অসম্ভব। তবু আমি হাতের কাছে ছুরিটা রাখি। কাল্পনিক শত্রুর উদ্দেশ্যে ছুরি নাড়াই। হুঁশিয়ারী উচ্চারন করি। একাকী পাগলামি।

হঠাৎ মাছিটা নাই হয়ে গেল। ছুরি দেখে ভয় পেল? আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ছুরিটা ড্রয়ারে রেখে দিয়ে কম্পিউটারের পর্দায় চোখ দিলাম। কয়েক মিনিট কোথাও কোন শব্দ নেই।

খানিক পর পোঁওওওওও করে একটা সম্মিলিত শব্দ ভেসে এল কোথাও থেকে। আমার হাত থেমে গেল। মাছিটা দল ভারী করে ফিরে আসছে?

বহু বছর আগে একটা কাকের বাসায় ঢিল মেরে বাচ্চা ফেলে দিয়েছিলাম বলে কাকের দল সপ্তাহখানেক আমাকে পাড়ায় দেখামাত্র গুলির তালিকায় রেখেছিল। আমি দিনের বেলায় বাসায় ফিরলেই ওরা বাসা ঘিরে ফেলতো। জানালা দিয়ে হম্বিতম্বি করতো। রাস্তায় নামলে গাড়ীতে ওঠার আগ পর্যন্ত তাড়া করতো। মাথায় ঠোক্করও মেরেছে দুয়েকবার। ভয়ংকর প্রতিশোধপ্রবণ এই কাকজাতি।

মাছিদের মিছিলের গুনগুন শব্দ আর কাকদের আক্রমন স্মতি আমার মগজটাকে এমন ধোলাই করলো যে আমি দিগ্বিদিক স্থান-কাল-পাত্র ভুলে একটা অর্বাচিন চিৎকার দিলাম, জাগো বাহেএএএ......।

কাঁচের দেয়াল ভেদ করে চিৎকার কোথাও পৌছালো না। খুব অসহায় আর দুর্বল বোধ করছি। চেয়ার ছেড়ে মাটিতে বসে গেলাম। তারপর লম্বা হয়ে কার্পেটে শুয়ে পড়লাম। বুকটা ধরফড় করছে, নিজের কানেই তড়পানোর শব্দ শুনছি। কেউ টেনে না তুললে আমি উঠতে পারবো না। কিন্তু এত রাতে আমাকে উদ্ধার করতে কে আসবে? অবশেষে মাছিদের হাতেই কি মৃত্যু হবে? হাবিজাবি অবাস্তব কথা মগজে খচ খচ করতে করতে আতংকের মিটার বিপদসীমা ছুঁতেই আমি জ্ঞান হারালাম।

দেড় ঘন্টা পর নীচ থেকে সিকিউরিটি এসে আমাকে আবিষ্কার করে জ্ঞানহীন অবস্থায়।

আসলে ভয়ংকর কোন ব্যাপার ছিল না। ওটা মাছির শব্দও ছিল না। নীচের ফ্লোরে সিকিউরিটি পানির পাম্প চালু করেছিল। কিন্তু মাথার ভেতর আতংক ঢুকে গিয়েছিল বলে কোন যুক্তিই আমার পতন ঠেকাতে পারেনি।

No comments: