Tuesday, April 12, 2011

একটি নিরেট সাদাকালো ভ্রমণ


জায়গাটা অচেনা। কিন্তু মানুষগুলো চেনা। অচেনা জায়গায় চেনা মানুষের মিশ্র সমাহার। কেন ওখানে সমবেত হয়েছে সবাই প্রশ্ন জাগেনি মনে। শহর থেকে অনেক দূরের একটা জায়গা। পাহাড়ী এলাকা। নদী কিংবা লেক আছে। আছে লঞ্চের মতো ছোট নৌযান।

পৌঁছানোর পরপর দুপুরের খাবার ডাক এলো। খাবার খেতে যেতে হবে অন্য একটা পাহাড়ে। কেন অন্য পাহাড়ে যেতে হবে প্রশ্ন নেই। যাবার নিয়ম, যেতে হবে।

একটা দল নৌকায় উঠলো। আমিও উঠলাম। লঞ্চ চলছে লেকের নিস্তরঙ্গ জল ঠেলে। সবার মধ্যে নতুন জায়গার উত্তেজনা। একেকটা দৃশ্য আসে সবাই উৎফুল্ল হয়ে যায়। কিন্তু আমি চুপ হয়ে বসে থাকি। যেন এসব দেখে অভ্যস্ত। আগেও দেখেছি। অবাক হবার কিছু নেই। কেবল সঙ্গে যাচ্ছি।

রোদহীন দুপুর। মেঘলা আকাশ। ধূসর বিষন্ন প্রকৃতি। আচমকা নৌযানটা অন্য একটা জায়গায় গিয়ে নোঙর করে বসলো। একটা বাঁধের মতো জায়গা। উচু ঘাসহীন গোলাকার টিলার বাঁধ। বাঁধের ওপারে জায়গায় জায়গায় জল জমে আছে। সবাই হৈ হৈ করে নেমে গেল। অপ্রত্যাশিত একটা ভ্রমণের সুযোগে উৎফুল্ল ওরা। কেবল আমারই যেতে ইচ্ছে করলো না। আলস্য হাতে বসে থাকলাম।

তারপর নৌযান থেকে নেমে দাঁড়ালাম বাধের ওপর। মনে হলো এখানে আমি আগেও এসেছি। দেখে গেছি সব। যাবার উৎসাহ নেই তাই। অপেক্ষা করছি সবাই ফিরে আসবে। সময় কেটে যাচ্ছে। ওরা আসছে না। দেরী হয়ে যাচ্ছে।

কিছু পর মাঝি নৌযানে উঠে ডাক দিল। কেউ শুনছে না। সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে গেছে। আমি নিকটে ছিলাম বলে ডাক শুনে নৌযানে উঠে বসলাম। লঞ্চটা ইঞ্জিনের আওয়াজ করতেই আরো দুয়েকজন এসে উঠে বসলো।
বাকীরা রয়ে গেল। নৌযান ছেড়ে দিল। আমি মাঝিকে বললাম আমাকে রেখে আসো যেখান থেকে এনেছো সেখানে। আমি কোথাও যাবো না।

দুপুরের খাবার কথা আমি ভুলে গেলাম। মাঝি ফিরে চললো। আমি চুপ করে বসে রইলাম। ফিরতি যাত্রায় পৌছে গেলাম আমার আদি অবস্থানে। মাঝি আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল বাকীদের কাংখিত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে।

আমার কোথাও যাওয়া হলো না।
যেখানে ছিলাম সেখানেই রয়ে গেলাম।
বুকের ভেতর কেমন একটা অচেনা অনুভূতি।
..........................................................................

ঘুম ভেঙ্গে গেল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম না সময়টা কতো। এখানেও ধূসর আকাশ। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামছে বোঝা গেল দেয়ালে তাকিয়ে। ঘড়িটা বলছে সোয়া ছটা। কয়েক সেকেন্ড ঘোরে থাকার পর বুঝলাম খানিক আগে ঘটা ব্যাপারগুলো স্রেফ স্বপ্ন। অর্থহীন একটা সাদাকালো স্বপ্ন। কেন দেখলাম জানি না। ঘোর চোখে নিয়েই বিছানা ছাড়লাম। আজ বিকেলে আমার কোথাও যাবার কথা ছিল। যাওয়া হলো না। দিবাস্বপ্নেই গড়িয়ে গেছে সময়। যেতে পারিনি বলে আক্ষেপ হলো না। বরং অনেকদিন পর ভাবালু স্বপ্ন দেখলাম বলে খানিকটা বিষন্ন বিলাসে নিমগ্ন হলাম।

অন্য কিছু ভাবাচ্ছে না, স্বপ্নটা কেন সাদা কালোতে দেখলাম, ওটা নিয়েই বেশী ভাবিত হইলাম। কারণ মনোবিজ্ঞানীরা যাই বলুক, আমার আগেকার সকল স্বপ্নই ছিল সম্পূর্ণ রঙিন।

অপাংক্তেয় প্রাণ

চাঁদের আলো নিয়ে জন্মেছিল সে। হতদরিদ্র পরিবারেও উজ্জ্বলতা আর আনন্দের হাওয়াই মিঠাই উড়িয়েছিল। কচুঘেচু খেয়েও ফর্সা সুন্দর স্বাস্থ্যবান শরীরের শিশু। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সমস্যার উৎপত্তি। চার পাঁচ বছরে এসেও বুদ্ধি শুদ্ধির লক্ষণ নেই। দশ বছর পেরিয়ে গেলেও অবুঝ শিশু রয়ে যায়। মায়ের কোলে কোলে ঘুরতে চায়। ডাক্তার বৈদ্য দেখানোর পর বিষন্ন পিতামাতা জেনে যায় ছেলে জন্ম প্রতিবন্ধী, চিকিৎসায় ফল নেই।

এতবড় ছেলেকে কোলে নিয়ে হাঁটতে আমেনার কষ্ট হতো। তবু ফুটফুটে মুখটা দেখলে কষ্ট উবে যেত। বিছানায় পেশাব পায়খানাও করে দিত সময় সময়। মা আছে, চিন্তা নেই। পরিষ্কার করে দেবে হাসিমুখে। পাড়াপ্রতিবেশী দূর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

ছেলেটার তখন চোদ্দ বছর। একদিন আমেনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হলো উপজেলা সদরে। টেম্পুতে যেতে দশ মিনিট। ছেলেটাকে কোলে নিয়ে যেতে কষ্ট হলেও উপায় নেই। ঘরে কেউ নেই দেখার। যদি অবুঝ ছেলে পুকুরে নেমে ডুবে যায়, সেই ভয়ে এগারোটার দিকে দুই মুঠ সাদা ভাত লবন দিয়ে কচলে খাইয়ে সাথে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

দুপুরের পর গ্রামে একটা খবর এলে হৈ চৈ পড়ে যায়। কাছের মহাসড়কে একটা টেম্পুকে গুড়িয়ে দিয়ে পালিয়েছে বেপরোয়া বাস। স্থানেই মারা গেছে কয়েকজন। সেই টেম্পুর যাত্রী ছিল আমেনা আর তার ছেলে। দুজনেই মারা গেছে। লাশ নিয়ে গেছে পুলিশে।

হায় হায় করে ওঠে পাড়ার লোক। খবর পেয়ে শহর থেকে আমেনার স্বামী ছুটে এসে লাশের খোঁজ করতে যায় সদরে। গিয়ে কেবল বউয়ের লাশটাই পায়। ছেলের লাশ নেই। অনেক খোঁজার পর মারাত্মক আহত একটা ছেলেকে হাড়ভাঙা ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানা গেল। ওখানে গিয়ে আপাদমস্তক ব্যান্ডেজ বাধা অজ্ঞান ছেলেকে জড়িয়ে ধরে হাঁউমাঁউ করে কেঁদে ওঠে ফজলু।

ডাক্তাররা বহুকষ্টে অপারেশান করে জোড়াতালি লাগায় শরীরে। যতটুকু জোড়া লাগার ততটুকু লাগে। হাসপাতালের মেয়াদ শেষে নিয়ে আসতে হয় ছেলেকে। এই রোগীর আর কোন চিকিৎসা নেই। যা হয়েছে আর বেশী জোড়া লাগবে না। অনির্দিষ্টকাল হাসপাতালে থাকা যায় না।

ফজলু মিয়া পড়লো বিপদে। এই ছেলেকে এখন দেখবে কে? কথা বলতে পারে না, মাথায়ও গন্ডগোল আছে, এখন শরীরের সমস্ত হাড়ে ভাঙন। যখন হাত পা সবল ছিল তখনো হাঁটতো না, এখন এই পঙ্গু অবস্থায় কি করবে? আগে বিছানা নোংরা করতো, বউ সাফ করতো। এখন কে সামলাবে এসব। সন্তানের স্নেহ ছাপিয়ে বিরক্তিটাই প্রবলতর হতে থাকে চেহারায়। নানান জায়গায় ধর্না দেয় ছেলেটাকে গছানোর জন্য। এত মানবাধিকার সংস্থা এনজিও আছে দেশে। কিন্তু এই ছেলের দায়িত্ব নেবার জন্য কাউকে পাওয়া যায় না।

গ্রামের লোকজন আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আল্লাহ গরীব মানুষকে এত বিপদ কেন যে দেয়। মড়ার উপর খাড়ার ঘা। মায়ের সাথে সাথে ছেলেটাও মরে গেলে ভালো হতো। ফজলু মিয়ারও সেই মত। কিন্তু ছেলেটা না খেয়ে না খেয়ে হাড় চামড়ায় জং ধরিয়ে ফেললেও মরার দিকে যাচ্ছে না। পাছা ঘষে ঘষে বাঁকাচোরা চার হাতপায়ে বিচিত্র উপায়ে ছেলেটা যখন স্থান পরিবর্তন করে, সেই দৃশ্যটা বর্ণনা করার ভাষা নেই। কারণ সেটা হাঁটাও না হামাগুড়িও নয়। কেমন একটা পাশবিক চলন। মানুষ থেকে একটা প্রাণী যেন পশুতে রূপান্তরিত হয়েছে। ভয়াবহ একটা দৃশ্য। না দেখলে বিশ্বাস করবে না কেউ।

খাদ্য গ্রহনের ব্যাপারটাও অদ্ভুত। প্রতিবেশীরা কুকুর বেড়ালকে যেভাবে খাবার দেয় সেরকম করে এই ছেলেটাকেও কিছু উচ্ছিষ্ট ছুড়ে দেয়। ছেলেটা সেই খাবার দুহাতের খামচাখামচিতে যে ভঙ্গিতে মুখে তুলে নেয় সেই দৃশ্যটা দেখলে কুকুর বিড়ালকেও অনেক ধনী মনে হবে। তাকানো যায় না এমন।

ফজলু মিয়া শহরে দারোয়ানির চাকরী করে, ছেলেকে দেখাশোনা করতে হলে চাকরী ছাড়তে হবে। সেটা সম্ভব না। তাই ছেলেটাকে গ্রামের মানুষের দয়ার উপর ছেড়ে দিয়ে শহরে চলে যায় সে। আর মনে মনে বিধাতার কাছে চায় ছেলেকে যেন ভালোয় ভালোয় তুলে নেয়। কিন্তু বিধাতা তার প্রতি কর্ণপাত করে না। মাস কেটে বছর গড়িয়ে গেলেও টিকে থাকে ছেলেটা।

গ্রামে যাইনি ইতিমধ্যে। ছেলেটার খোঁজ নেয়া হয় নি দীর্ঘদিন। অনেকদিন পর সেদিন ফজলু মিয়ার সাথে দেখা হলো পথে। খবর কি, জিজ্ঞেস করলাম। ফজলু মিয়া খুব স্বাভাবিক সুরে বললো-
"খবর খুব ভালো, ছেলেটা মরে গেছে।"

ফজলু মিয়ার চোখে বিষাদের চিহ্ন খুঁজে লাভ হলো না। পরম স্বস্তির চিহ্ন ঝলমল করছে সেখানে।
ভাবছিলাম ছেলেটার মূল্যহীন জীবনটার কথা। কোন কোন প্রাণ শরীরে এমন অপাংক্তেয় হয়ে ঝুলে থাকে!

ঢাকা, ২২৮০ সাল

-এক থাপড়ে চোপা খুলে ফেলবো হারামজাদা বেয়াদ্দপ কুনহানকার!!!
-এক্ষন তোরে ঘাড় চাইপা ধইরা লাত্থি দিমু মাঙ্গের পো, তোর বাপের দিন্না আসমান পাইসস? যা সর সামনে থেক্যা!!!!
- যা ব্যাটা! আমি সরুম কা? তোর দরকার হইলে উপর দিয়া চইল্যা যা, নইলে নীচে দিয়া হান্দা, আমার এহানে প্যাসেঞ্জার নামবো.....
- ঐ.....তুই কি চউখের মাথা খাইছস? দেহস না জানোয়ারের সন্তান রেক্সিকার বাচ্চা পাছা বাইর কইরা কোনাকুনি খাড়ায়া আছে মাথার উপ্রে,
- হ হের লাইগ্যা বাহাদুরি না কইরা আমার লগে? পারলে রেক্সিকার পাইলটরে ক পাছা সরাইতে....
- হুরো ব্যাডা, মাতা ঠিক আছেনি, ওই হালায় বাম্পারে সিকিউরিটি পাংখা লাগাইছে। কাছে ঘেঁষতে গিয়া আমার গ্যাসের টাংকি ফুটা হয়া গেছিল হেইদিন

ফার্মগেটের আকাশে সন্ধ্যের মুখে মুখে এরকম হল্লা গালিগালাজ গুলো নিয়মিত।

সবগুলো টেপখাওয়া ভাঙাচোরা আকাশ টেম্পু এখানে ধাক্কাধাক্কি করছে। বিকেল পাঁচটা বাজে প্রায়। শীতকাল বলে সূর্য আগেই পাটে বসেছিল, এখন গোধুলি আলোয় এই আকাশযানগুলি নানান ফ্লোরের অফিস যাত্রীদের তোলার জন্য দেড়শো দুশো তলা দালানের ল্যান্ডিং স্টেশানের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। এই দুটো আকাশ টেম্পু সবচেয়ে পুরোনো মডেলের। ২২৩০ সালের বাহন এই ২২৮০ সালে এসব একদম অচল, তবু তার মালিক বিদেশ থেকে পুরোনো মাল এনে জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে আকাশ ট্রাফিকে যুক্ত করে দিয়েছে। তবে দিনের বেলা এরা চলতে পারে না যতক্ষণ ট্রাফিক ফ্লায়ারগুলো সচল থাকে। দশ বিশ হাজার টাকার দুয়েকটা নোট পকেটে গুঁজে দিলেও কাজ হয় না। তবে পাঁচটার পর থেকে ট্রাফিক ফ্লায়ারের ডিউটিতে ভাটা পড়ে। ওরা তখন চাকরী থেকে ব্যবসায়ে। সারাদিন এদিক সেদিক থেকে যা কামাই করে পাইলটদের কাছ থেকে, তা নিয়ে ভাগবাটোয়ারা শুরু করে তখন।

এই সুযোগে এই আকাশ টেম্পুগুলো যাত্রীর সন্ধানে নামে। কিন্তু এদের জন্য যন্ত্রনা হয়ে দাঁড়ায় দানাবাকৃতির রেক্সিকাগুলো। চার ইঞ্জিনের এই বিশাল উড়ান বাহনে প্রায় শখানেক লোক বসতে পারে কিন্তু দাঁড়িয়ে ঝুলে আরো অন্তত আড়াইশো। বিশ একুশ শতকের দিকে এরকম সাইজের আকাশযান দিয়ে দেশ বিদেশে মানুষ বহন করা হতো। তবে তখন ওগুলো অনেক উপরে উড়তো। এগুলো এত বড় যে রকম একটা দাঁড়ালে ল্যান্ডিং স্টেশানের পুরোটা দখল করে নেয়। ভাড়া বেশী হলেও নিরাপত্তার কারণে ওগুলোই পছন্দ দুরের যাত্রীদের।

ফলে আকাশ টেম্পুগুলোর তেমন বেইল নাই আজকাল। কেবল ফাঁক ফোকর দিয়ে প্যাসেঞ্জার ধরে। থাবড়া মারতে মারতে টেম্পুগুলোর বডি রং অনেক আগেই চলে গেছে, কোন মতে হুড়কা দিয়ে দরোজা বন্ধ করা যায়। জানালার গ্লাস একটাও অক্ষত নেই। এপার ওপার বাতাস হু হু করে। শীতে আর বর্ষায় বেশী কষ্ট। একটু উপরে উড়লে বর্ষাকালে ভেতরে মেঘ ঢুকে সব ভিজিয়ে দেয়। তাই সাবধানে নীচে নীচে চালাতে হয়। কিন্তু ২০০০ মিটারের নীচে নামতে পারে না, নামলেই জরিমানা। লাইসেন্স বাতিল।

বশিরের মেজাজ সকাল থেকেই খারাপ।
মেহেরবানু গতকাল তাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে নুবিদালীর সাথে। নুবিদালী তার টেম্পুর হেলপার ছিল বহুদিন। বিশ্বাসী লোক। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আশ্রয় দিয়েছিল তাকে। আপন ভাইয়ের মতো যত্নে রেখেছিল। মেহেরবানু বাপের বাড়ী গেলে সাথে দিয়েছে নুবিদালীকে। সেই নুবিদ্যা কখন যে তার কলিজার ধনে হাত দিয়ে বসে আছে সে কল্পনাই করেনি। রোজ কেয়ামতের নাকি আর বেশী বাকী নাই। বিশ পঞ্চাশ বছর পরে এই অঞ্চলটা পুরোপুরি পানি তলায় চলে যাবে। মানুষগুলো অবিশ্বাসী হয়ে গেছে আজকাল।

গালিগালাজ দেবার পর মনটা একটু যেন হালকা হলো। জীবনটা আর চলে না। একা থাকতে ইচ্ছা করে না এই পঞ্চাশ বছর বয়সে। শোনা যাচ্ছে তাদের টাওয়ার বস্তির দেড়শোতলা খুপড়িগুলো ভেঙ্গে দুই হাজার তলা দালান ওঠানো হবে। নীচের দিকে কেউ থাকতে চায়না। ভূমিতে মারাত্মক দুষন। মুষ্টিমেয় কৃষক ছাড়া আর কেউ নীচে থাকে না। সবার ঘরবাড়ী আকাশে। বড়লোকরা তো উপগ্রহ বানিয়ে বসবাস করে আজকাল। কেবল মধ্যবিত্তরাই এসব দুশো তলা দালানে আবাস গেড়ে আছে। কারণ তাদের স্যাটেলাইট বাড়ী করার মতো অর্থ নেই।

বশির ভাবলো টেম্পুটা জমা দিয়ে আজ বেরুতে হবে মেহেরবানুর খোজে। উনিশ বছরের সংসার তার। এক রাতে এভাবে হাপিস হয়ে যেতে পারে না। নুবিদালীর মতো অপদার্থ যুবকের সাথে পালিয়ে গিয়ে তার মান সম্মানের উপর বিরাট আঘাত দিয়েছে। বশির গতি বাড়িয়ে উড়াল দিল ফার্মগেট ছাড়িয়ে। ময়নামতিতে শেষ প্যাসেঞ্জারকে নামিয়ে ছুটে এসে সে কাঁচপুর সেতুর কাছটিতে এসে আকাশ টেম্পুটা জমা দিল সরফরাজের গ্যারেজে। কাঁচপুর সেতুটা স্মৃতি হিসেবে এখনো আছে কিন্তু ওটা দিয়ে কেউ পারপার করে না। নীচ দিয়ে যে নদীটা গেছে সেটি বিষাক্ত তরলে পরিপূর্ণ। ওখানে মশাও জন্মায় না এতটাই জঘন্য।

টট্টরে শব্দের ব্যক্তিগত জীর্ণ ফ্লায়ারটা নিয়ে বশির খানিক উড়ে গিয়ে বসলো জিসি টাওয়ারের ১৩৮ তলায় নেয়ামতের চা দোকানে। এই টাওয়ারটা বহু পুরোনো। পরিত্যক্ত হতে যাচ্ছে শীঘ্রি। এখানে যারা বাস করতো সবাই নদীভাঙা মানুষ। আশ্রয় নিয়েছিল সাময়িক। কিন্তু কদিন আগে এই টাওয়ারও ভেঙ্গে ফেলার নোটিশ এসেছে। এটি নাকি শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে। ২১৭০ সালে বানানো। এখানে একটি দেড় হাজার তলার টাওয়ার তোলা হবে যাতে সংকুলান হবে কয়েক লাখ মানুষের। দশ কোটি মানুষের এই শহরে বসবাসের একটু খানি ফোকর বের করা কঠিন কাজ আজকাল।

নেয়ামতের চায়ের সাথে দুটো বিস্বাদ বিস্কুট খেয়ে একটা লাল ফিল্টারের সিগ্রেট ধরিয়ে রাতের তারা গোনার দিকে মন দিল সে। ভাবছে মেহেরবানু কোথায় যেতে পারে। সিটি কাউন্সিলে অভিযোগ করলে মুশকিল আছে, বিয়ের ট্যাক্স ফাঁকি দেবার জন্য রেজিস্ট্রি করেনি। জানতে পারলে সোজা জেলের ঘানি টানতে হবে। তার ১৯ বছরের সংসার অবৈধই বলা চলে আইনতঃ। আজ বউ হারিয়েও কাউকে অভিযোগ জানাতে পারছে না তাই।

টুলে হেলান দিয়ে ঝিমোচ্ছে সে ধোঁয়ার টানে। লাল ফিল্টার বেচা বিক্রি অবৈধ, ভেতরে নেশার বড়ি দেয়া আছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ধরার কে আছে? কয়েকটা সুখটান যাবার পর ভাসতে ভাসতে কার যেন ঠোঁটের একটা উষ্ণ স্পর্শ পেল কানের লতির ঠিক নীচে। কে? মেহেরবানু? না, এতো মেহেরবানু নয়। একটা হলুদিয়া পাখির মতো যে হাসছে তাকে গলা জড়িয়ে ধরে, তাকে আগে কখনো দেখেনি।

বাহ্ এই পাখিটা বড় চমৎকার তো! মেহেরবানু হারিয়ে গেলে কি আসে যায়, এটা তো মেহেরবানুর চেয়েও অনেক সুন্দর, আর মায়ামতী। কিন্তু কথাবার্তা ছাড়া তাকে হঠাৎ কোথ্থেকে এসে জড়িয়ে ধরে আদর করছে, এটা অবিশ্বাস্য লাগলেও খারাপ লাগলোনা একটুও। বরং মেহেরবানুর জন্য জমানো মনখারাপগুলো বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে শুরু করেছে। নুবিদালীর উপর বরাদ্দ আক্রোশটা খুনখারাবি থেকে নেমে এসে সামান্য কিল ঘুষিতে নির্ধারিত হলো।

পৃথিবীতে শান্তির সুবাতাস আনতে প্রেমের কোন বিকল্প নেই। এই অচেনা মেয়েটি তাকে সেই প্রেমের আকাশেই ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বশিরের খুব ইচ্ছে হলো একে নিয়ে ফ্লায়ারের উপর বসিয়ে দক্ষিন দিকের কোন শহরে চলে যেতে যেখানে সাগর এসে মিশে গেছে বালুকাবেলায়। ভাবনা আসা মাত্রই মেয়েটার গালে একটা পাল্টা চুমু খেয়ে ফ্লায়ারের হেলমেটটা তুলে নিয়ে মাথায় পড়লো আর জড়িয়ে ধরলো হলুদিয়াকে।

চলো পাখি উড়ে যাই.....বুকে করে নিয়ে যাই...... ছন্দে ছন্দে দুলতে চাই........এরকম কাব্যমালা গাথাঁর মাঝেই হেলমেটের ফিতা ধরে কে যেন টান দিল পেছন থেকে আর সে ধপাস করে ফ্লায়ারের সীট থেকে পিছলে পড়ে গেল, পেছনে জড়িয়ে থাকা মেয়েটিও পিছলে যাচ্ছে। তাকে ধরার জন্য পেছন ফিরতে গিয়েই ঠক করে মাথাটা ঠোক্কর খেল একটা পিলারে। আর দেখলো ঠা ঠা করে আকাশ কাঁপিয়ে হাসছে নেয়ামত।

স্বপ্ন দেখছিল সে এতক্ষণ? এত সব আনন্দ এক ফুৎকারে কোথায় কোন নীহারিকায় উড়ে গেল। মেজাজ টাং করে উঠলো আবারো।

নাহ মেহেরবানুকে খুঁজে বের করতেই হবে। নুবিদালিকে করা একটু আগের ক্ষমাটা তুলে নিয়ে কিল ঘুষি থেকে আবারো খুন খারাবিতে ফিরে গেল বশির। ফ্লায়ারে ভটভট শব্দ তুলে উড়াল দিল দক্ষিণে।

তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা

তোমার কাছ থেকে সজ্ঞানেই দূরে থাকি। তোমাকে না দেখেই দিনটা কাটাবার চেষ্টা করি। আমাকে তুমি চাও না, তাতে আমার আক্ষেপ নেই। আক্ষেপ একটাই তুমি কখনো বিশ্বাসই করলে না কতোখানি ভালোবাসি তোমাকে।

বেশী কাছাকাছি হলে কি সস্তা হয়ে যায় প্রেম? তাই কি বিব্রত করে তোমাকে? যখন তোমার কাছ থেকে দূরে থাকি, যখন তোমাকে না দেখে থাকি, তখন তুমি সুস্থ থাকো, ভালো থাকো, আনন্দে থাকো, জয়ী থাকো। কোন কোন প্রেম অভিশপ্ত হয় শুনেছি, আমারো কি তাই? প্রায়শ্চিত্ত পন্থা অজানা বলে কখনো সেই অভিশাপ কাটিয়ে ওটা হয়নি।

আমি তাই সজ্ঞানেই তোমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকি। জানি তুমি অভিমান করো। আমাকে ভুল বোঝো। আরো জানি আমাকে আকাংখা না করলেও আমার জন্য প্রতীক্ষা করো খুব গোপনে। তোমার মঙ্গল বয়ে আনতে পারবো না জেনেও কখনো কখনো আমাকে তোমার পাশে দেখতে চাও। তোমার গোপন আকাংখা আমি জানি বলেই মাঝে মাঝে তোমার কাছে গিয়ে খানিকক্ষণ বসে আসতে চাই। কিন্তু যখনই বসি তখনই ঘটে বিপর্যয়। সেদিনও যেমন ঘটলো, গত হপ্তায়। খুব বিব্রত হয়ে পালিয়ে এসেছিলাম সেদিন।

আজও তোমার কাছ থেকে সারাদিন দূরে দূরেই কাটিয়েছি। দুয়েকবার স্বেচ্ছা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উঁকি মেরেও ফিরে এসেছি। তোমার বিপর্যস্ত অবস্থা দেখতে আমার ভালো লাগে না। আমার ভালোবাসাকে আমি গোপন কুঠুরিতে লুকিয়ে রাখি তালাবদ্ধ করে। অপমান থেকে নিরাপদে। তবু সন্ধ্যে পেরোবার পর রাত যখন গভীর হচ্ছিল, আমার পক্ষে আর দূরে থাকাটা কঠিন হয়ে গেল। খুব ইচ্ছে হলো একটুখানি বসে আসি। মাত্র অল্প কিছু সময়। ভয়ে ভয়ে বসলাম। কিছু সময় কাটালাম তোমার হাত ধরে। কাঁপছিলে তুমি চরম উত্তেজনায় কিংবা ভয়ে, আমি তোমার হৃদপিন্ডের ধুকপুক টের পাচ্ছিলাম। হয়তো শেষমেষ চাইছিলে আমি উঠে চলে যাই। বুঝতে পেরেও চুপ করে বসে রইলাম জেদ ধরে। আমি তোমাকে চাই, তুমি জানো। আমি তোমাকে জানাতে চাই, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে হারতে দেবো না, হারাতে দেবো না আজ।

হতাশ করোনি তুমি। মধ্যরাতের আগেই মাত্র ছয় বল বাকী থাকতেই আমি তোমাকে পেয়ে গেলাম।


তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা বাংলাদেশ!!!!

আমার কুফা উপস্থিতিও তোমার বিজয়রথ থামাতে পারেনি আজ।

১. লেখাটি উৎসর্গ করা হলো বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচের বিজয়ের নায়ক শফিউল আর মাহমুদুল্লা জুটিকে।
২. শিরোনাম কৃতজ্ঞতা, কবি শহীদ কাদরী।

ফেরা

কনকনে শীতল বাতাস। গলাবন্ধ সোয়েটারেও মানছে না। ঠকঠক করে দাঁতে দাঁত বাড়ি খাচ্ছে। কানমাথা সব ঢাকা আছে তবু এই বেদিশা ঠান্ডায় কাবু হয়ে আছে মুহিব। পকেট থেকে প্রায় চ্যাপটা হয়ে যাওয়া মার্লবরোর প্যাকেট বের করে গুনে দেখলো, মাত্র পাঁচটা বাকী আছে। সামনে যদিও দীর্ঘ রাত, হাতে সময় অল্প, এই পাঁচটাতেই হবে। গত পনের দিন ধরে রাতগুলো যেন সারাজীবন দেখে আসা রাতের চেয়ে অনেক বেশী দীর্ঘতর। সব দুঃসময়ের রাতই দীর্ঘ হয়।

বাবা এখন কি করছে? মায়ের সাথে আবারো ঝগড়া বাধিয়েছে? বাবামার ঝগড়ায় মুহিব মায়ের অন্ধ সমর্থক। তবে আজ যদি সেই ঝগড়ায় উপস্থিত থাকতো মুহিব বাবার পক্ষ নিত। এখনকার ঝগড়ায় বাবার যুক্তি ফেলে দিতে পারে না সে। কারণ বাবার পিঠটা দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েই এরকম এক অন্ধকার রাতে ঘর ছেড়েছিল সে। সাথে নগদ সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। জমি বিক্রি করে দোকানের মূলধন যোগান দেবার জন্য টাকাটা আলমারীতে তুলে রেখেছিল বাবা।

ভেবেছিল জীবনের প্রথম ও শেষ চুরিটা দ্বিগুন পুষিয়ে দেবে এক বছরের মধ্যে। বাবাকে অবাক করে দিতে চেয়েছিল সে। বাবা নিশ্চয়ই ক্ষমা করে দেবে ক্ষতিপূরন পেলে। দোকানে খাটিয়ে এক বছরে কি সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হতো?

ফোন করলেই মা কাঁদতো। তানিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েও ভেঙ্গে গেল টাকার জন্য। বাবা দোকান বিক্রি করে দিয়েছে। দোকান বিক্রির টাকা অর্ধেক উড়িয়েছে মদ খেয়ে। বদমেজাজী হয়েছে আরো। কথায় কথায় চড় লাথি দেয়। দুইবেলার খাবারটা কোনমতে যোগাড় হয় এখনো। আর কদিন পর তাও হবে না, রাস্তায় নামতে হবে। “তুই কবে আসবি, আমি আর পারছি না”।

মায়ের কান্না শুনতে ভালো লাগতো না বলে মুহিব লাইন কেটে দিত আলগোছে।

এক বছরে সাত লাখ টাকা আয় কঠিন ছিল না। আটমাসেই পাঁচ লাখ জমে গিয়েছিল। এদেশ থেকে টাকা পাঠানোর সমস্যা ছিল বলে বছর শেষে সব টাকা নিজের সাথে নিয়ে যাবে বলে ঠিক করে রেখেছিল। মনে মনে বলতো, আর কটা দিন সবুর করো মা। তোমার ছেলে নিজ পায়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু আচমকা এরকম আগুন জ্বলে উঠবে কে জানতো। আশপাশের দেশগুলো যখন উত্তপ্ত তখনো বোঝেনি তার আঁচ এত তীব্র হয়ে এখানেও ছারখার করে দেবে। যখন তিউনিসিয়া মিসর ছাড়িয়ে আগুনটা লিবিয়ায় এসে ঢুকলো, এত দ্রুত ঘটে গেল যে কোন সুযোগই পেল না। এক রাতেই সব লুট হয়ে গেল তার মতো আরো অনেকের। সর্বস্ব গেল। পাঁচ লাখের মধ্যে পাঁচটা টাকাও বাঁচাতে পারেনি। প্রায় এক কাপড়ে কোন মতে একটা ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে এসেছিল মরুভূমি পেরিয়ে।

বিনা খরচায় দেশে ফিরতে পারা কম সৌভাগ্যের নয়। সিগারেটে টান দিতে দিতে ভাবলো মুহিব। রাত বারোটা বেজে আরো বিশ মিনিট এগিয়ে গেছে। কোথাও কোন শব্দ নেই। জাহাজের ইঞ্জিনের একটানা গুনগুন শব্দ ভেসে আসছে দূর থেকে। সকাল থেকেই প্ল্যানটা হচ্ছে। ওরা পঁয়ত্রিশজন। সংখ্যাটা আরো বাড়তো। কিন্তু জানাজানি হবার ভয়ে লোক বাড়ানো গেল না আর।

দক্ষ সাঁতারু না হলে কিছুতেই এটা সম্ভব না। মুহিব সাঁতারে দক্ষ না। কিন্তু উপায় নেই। শেষ চেষ্টা করে দেখতে হবে। ‘ফেরা’ আর ‘না ফেরা’ মধ্যে বেছে নিতে হবে একটা। মুহিব শেষটাই বেছে নিল।

আধাঘন্টা পর কনকনে বাতাসের শীষের সাথে আরো কিছু ফিসফাস যুক্ত হলো জাহাজের পেছনদিক থেকে। বাতি নেবানো এই অংশে। কয়েকজনের পরনে লাইফজ্যাকেট। রাত একটা বাজে। দেরী করা যাবে না আর।

ঘুমন্ত জাহাজটির কয়েকশত যাত্রী, নিরাপত্তাকর্মী আর নাবিকের কেউ জানলো না পঁয়ত্রিশজন অকুতোভয় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া তরুণ ভূমধ্যসাগরের বরফশীতল জলে লাফিয়ে পড়েছে দেশে না ফেরার কঠিন প্রতিজ্ঞায়।

১৮ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হলো পরদিন। ১৫ জনকে খুজে পাওয়া গেল না। আর যে দুজন ভেসে উঠলো মুহিব তাদের একজন।

চারকোনা কাঠের বাক্সের ভেতর শুয়ে বদরাগী বাবার অসহায় কাঁধে চড়ে বাড়ী ফিরছে মুহিব। বাবার কাঁধটা আজ এত চওড়া লাগছে!

তিন বছর বয়সেই শেষবার বাবার কাঁধে চড়েছিল। আর কখনো বাবার কাঁধ ছোঁয়া হয়নি। এখন চাইলেই হাত বাড়িয়ে বাবার কাঁধটা ছুঁতে পারে। কিন্তু হাত দুটো বরফের মতো জমে আছে বলে বাড়াতে পারলো না সে।

বিশ্বকাপে চট্টগ্রামঃ নগরসজ্জা

টাইগারপাসে তিনটা বাঘমামা কিংবা মামীকে কে রাস্তার আশেপাশে সেট করে দেয়া হয়েছে। যদিও এই বাঘ চট্টগ্রামে কখনো দেখা যায়নি। চট্টগ্রামের বাঘ চিতাবাঘ। এই বাঘ সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। হোক ভিন্ন জেলার বাঘ। বাংলাদেশেরই তো। তবে যিনি এই বাঘের শিল্পী তিনি সম্ভবতঃ সুলতানের ধারা অবলম্বন করতে চেয়েছিলেন ভাস্কর্য তৈরীতে। শিল্পী সুলতানের চিত্রকর্মে মোটাসোটা পেশীবহুল নরনারীর প্রাচুর্য লক্ষনীয়।

বাঘ পেশীবহুল হলে সমস্যা ক? সমস্যা নাই। কিন্তু তিন বাঘের তিন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলাম। তাই লিখি একটু।

প্রথম বাঘটা দেওয়ানহাট ওভার ব্রীজের পর রাস্তার আইল্যান্ডের উপর দন্ডায়মান। এই বাঘটি সবচেয়ে বড়। চেহারায় ক্ষ্যাপাটে। কিন্তু স্বাস্থ্য দেখে বাঘটাকে মনে হচ্ছে না খুব জোরে ছুটতে পারে। এটি সম্ভবতঃ বাঘিনী এবং গর্ভবতী বাঘিনী। কারন এত পেটমোটা স্বাস্থ্য অস্ট্রেলিয়ার দুধেল গাই ছাড়া কোথাও দেখা যায় না।

দুই নম্বর বাঘটি সাইজে একটু ছোট। কিন্তু চেহারায় কেমন একটা ভীতিচিহ্ন। তাকে যেখানে রাখা হয়েছে পাহাড়ের সেই অংশটা প্রতিরক্ষাবাহিনীর ক্যাম্পের মতো চামছাটা! মানে জঙ্গল কেটে সাফ করে বাঘের মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। উদোম পাহাড়ের নীচে সিমেন্টের বেদীর উপর প্লাস্টিকের ঘাসপাতার উপর সদর্পে দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গি করে আছে। এই বেচারার স্বাস্থ্য খানিক পেশীবহুল হলেও আশেপাশের জঙ্গলহীনতা তাকে কেমন একটু লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।

তিন নম্বর বাঘটিও স্বাস্থ্যে চেহারায় দুই নম্বরের মতো। এটি অবশ্য যৎ কিঞ্চিত জঙ্গল পেয়েছে। কিন্তু এই জঙ্গলে জোনাকীর বদলে গুড়াবাতি জ্বলছে লাল নীল রঙের। এবং বাঘের উপরে ডেকোরেশানের যে ফ্ল্যাশ লাইট আলোবর্ষন করছে সেই হলুদ আর বাঘের চামড়ার হলুদ বর্ন মিলে মিশে জঙ্গলের মধ্যে জন্ডিস বাঘ হয়ে বিব্রত দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের বাঘদের এই দৈন্য দশায় দায়ী সিটি কর্পোরেশান নাকি বিসিবির নজরজারির অভাব জানি না।

এই তিনটা বাঘের আশেপাশে আরো অনেক কাজের বাকী। তাদের দাঁড়িয়ে থাকার বেদীতে এখনো রং করা হয়নি। সিটি কর্পোরেশান ভাবছে হয়তো আর একসপ্তাহের মধ্যে আশে পাশের জঙ্গল থেকে লতাপাতা এসে জড়িয়ে ধরে বাঘগুলোকে আরো রাজসিক করে তুলবে। আরো কদিন দেখবে চৈতমাসে কোন জঙ্গল বাড়ে কি না। নইলে ১০ তারিখ রাতে আরো কিছু প্লাস্টিক ঘাসপাতা কিনে এনে বাঘগুলোর চেহারায় প্রাণ দিয়ে দেবে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশান না জানলেও আমরা জানি আগামী একসপ্তাহে জঙ্গল একফুটও বাড়বে না।

পিএইচপি গ্রুপ সারা শহরে বিশ্বকাপ তোরনে ভরিয়ে দিয়েছে। গতকাল বিকেলে দেখা গেল নিমতলা বিশ্বরোডের ডানদিকের তোরণটা রাস্তায় শুয়ে আছে কাত হয়ে। কেউ বললো ট্রাকের ধাক্কায়, আর কেউ বললো, বাংলাদেশ ৫৮ রান করার প্রতিবাদে সমর্থকরা এসে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। কোনটা সত্য জানি না। তবে গতকাল সত্যি বাংলাদেশ একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে।

এয়ারপোর্ট থেকে সাগরিকা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যাবার জন্য যে মোড়টা প্রথমে পড়বে সেখানে বিমানবাহিনীর একটা জং ধরা প্লেন বহুবছর ধরে অবহেলায় একটা পিলারের উপর ঝুলে আছে সিটি কর্পোরেশানের অনাদরে। এতদিন ওই চত্বরটা তিনটা কলাগাছ আর কিছু সীমের লতার ঝোপ দিয়ে ঢাকা ছিল। আশেপাশে শুটকি বিক্রেতারা বসতো। রাজনৈতিক দলের অফিসও ছিল বেশ কবছর।

বিশ্বকাপ উপলক্ষে এসব অবৈধ দোকানপাটগুলো সরানো হলো, সীমগাছ কলাকাছ গুলো কেটে বিমানটিকে দর্শনীয় অবস্থায় আনা হলো। কিন্তু বিমানটি যে মাত্র কয়েক গ্যালন রঙের বিনিময়ে উজ্জল চেহারা পেত সেটা কেউ বুঝলো না। ওটাকে ফেলে রাখা হলো রান্নাঘরে পুরোনো ডেকচির ধাতব রং মাখিয়ে। পরতে পরতে দারিদ্র যার।

একই জায়গায় ঠিক মোড় বরাবর গ্রামীন ব্যাংকের সৌজন্যে একটা চমৎকার ম্যূরাল তৈরী করা হয়েছে ক্রিকেট খেলোয়াড়দের মুর্তি দিয়ে। আগে এখানে একটা কাঠবাদাম গাছের ছায়া ছিল সেখানে মোটর সাইকেল নিয়ে দাঁড়ানো ট্রাফিক সার্জেন্টগন ঢাকা থেকে আগত ট্রাক ড্রাইভারদের কাছ থেকে বখরা-চাঁদার রফা করতো। বিশ্বকাপ তাদের লেনদেন অবকাঠামোর উপর একটা আঘাত হানলো।

ক্রিকেট খেলোয়াড়দের এই মুর্তিগুলো এখন চট্টগ্রামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভাস্কর্য। রাতের বেলা সাদার উপর আলো পড়লে অপূর্ব সুন্দর দেখায়। কিন্তু সাদা পোষাকের মুর্তিগুলো তিন চারদিন পরেই গাড়ীর কালোধোঁয়া আর রাস্তার ধুলায় কালশিটে হয়ে গেল। দিনের বেলায় ভয়াবহ লাগতে শুরু করেছে মুর্তিগুলো।

১১ তারিখের আগে এগুলোকে একবার গোসল দেয়া না হলে, বিদেশী অতিথিরা চুনকালি মাখা ক্রিকেট খেলোয়াড় দেখে চমকে উঠতে পারে।

এত বছরের ধুলা কি মাত্র কদিনের ঝাড়ুতে মোছা যায়? শহরটা কিছু পরিষ্কার হয়েছে, বিশ্বকাপের একমাত্র অর্জন। তবে আরো কটা দিন আগে এই পরিচ্ছন্নতা রংবদলের কাজগুলো করা যেতো না? আরো দুবছর আগে থেকেই জানি বিশ্বকাপ কোথায় হবে। বারো মাস আগেই তো এসব উন্নয়নের ধাক্কা শুরু হতে পারতো, তাহলে যে রুগ্ন চারাগাছগুলো আইল্যান্ডের জায়গায় জায়গায় লাগানো হচ্ছে সেগুলো অন্তত কয়েকটা ডালপালা মেলে দেখাতে পারতো বিদেশী অতিথিদের।

গরীবের ঘরে বড়লোক অতিথি এলে যা করা হয়, বাংলাদেশ তাই চেষ্টা করছে অতিথি আপ্যায়নে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যেটি, চট্টগ্রামের দর্শক কি সহিষ্ণুতার পরিচয় দেবে আগামী শুক্রবার? খেলায় হেরে গেলেও 'বাংলাদেশ বাংলাদেশ' করে উৎসবে মেতে উঠতে পারবো না আমরা?

অপ্রীতিকর

টাকাটা ভীষণ ময়লা। লোকটাও। আপাদমস্তক নোংরা একটা লোক ততোধিক নোংরা একটা নোট বাড়িয়ে দিচ্ছে তাকাতেও গা ঘিনঘিন করছে। টাকাটা নোংরা হলেও মূল্য তার নতুন নোটের মতোই। জমিরুদ্দিনের মাথায় ব্যাপারটা গোলমেলে ঠেকে। মানুষ নোংরা হলে তাকে আমরা ঘরের ত্রিসীমানায় ঢুকতে দেই না, আর ময়লা টাকা অবাধে বুক পকেটে নিয়ে ঘুরি। মানুষ আর টাকা দুটোর মধ্যে টাকারই জিত। যদিচ টাকা মানুষের সৃষ্টি, কিন্তু সৃস্টিকর্তার চেয়ে সৃষ্টির মূল্য বেশী এখানে। যত্তসব অজাচার!

জমিরুদ্দিন একসময় নতুন টাকার মতো টাটকা ছিল। কর্মসময় ফুরিয়ে অবসরে যাবার পর থেকে ময়লা জীবন শুরু। সবকিছু দীনহীন হতে থাকে, পরনের ফতুয়ার পেছনের কোনা দুটো নৌকা হয়ে থাকে। পুত্রকন্যাগণ নিতান্তই দায়সারা ভাবে কাছে আসে। বাড়ীটা নেহায়েত তার নামে বলেই। স্ত্রী বিগত হয়েছে অবসরে যাবারও আগে। একাকীত্বের স্বাদ নতুন কিছু নয়। স্ত্রী থাকলে অবসর পরবর্তী সময়ে তাকে কিরকম সমাদর করতো বলা মুশকিল।

জমিরুদ্দিন হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিল। ভিক্ষুকটাকে দশ টাকার নোটটা দিয়ে পাঁচ টাকা ফেরত চেয়েছে। আগে কখনো এই কাজ করতো না। পুরো দশ টাকাই দিয়ে দিত। কিন্তু অবসরে যাবার পর থেকে পকেটে কতো টাকা আছে তার মুখস্ত। আগে কখনোই মানিব্যাগে থাকা টাকার পরিমাণ জানতো না।

আয়ু বেশী নেই তার। ফুরিয়ে আসছে আয়ু আর ব্যাংকের বাজেট। তার ইচ্ছে ব্যাংকের বাজেট যেন আয়ুবাজেটের চেয়ে একটু বেশী দীর্ঘায়িত হয়।

টাকাটা ফেরত দিয়েও ভিক্ষুকটা চলে গেল না। সামনে দাঁড়িয়ে রইল। কিছু একটা বলবে। দোয়া করবে? বিরক্তি লাগে এই ব্যাপারটা। টাকা দিয়েছি, নিয়ে চলে যা।

অ জমির। ভিক্ষুকের মুখে নিজের নাম শুনে চমকে উঠে সে। ভালো করে তাকায় দাড়িগোঁফে সাদা জঙ্গলের ভেতরে তোবড়ানো মুখটার দিকে। চশমাও আছে যার ডানচোখের কাঁচে পরিষ্কার ফাটল।

অ জমির, তুই আমারে চিনছোস? আবারো ডাকলো ভিক্ষুকটা।

জমিরুদ্দিন চশমাটা ভালো করে মুছে আবার তাকায়। কে লোকটা? তার নাম জানে কি করে? তার কোন বন্ধু দেউলিয়া হয়ে ফকির বনে গেছে.....হতেই পারে না।

আমি শফিউল। কোনাবাড়ির শফিউল.............এটুকু শুনেই স্মৃতি এক লাফে তাকে ইতিহাসের এক চরম অপমানজনক অধ্যায়ে নিয়ে যায়। চল্লিশ বছর পেছনে।

কিন্তু এই শফিউল তো খুন হয়ে যাবার কথা। ভিখিরি সেজে পুলিশের চর হয়ে কি সে আজ এই বাড়িতে? মাথা থেকে টাকাপয়সার দর্শন সব উবে যায়। চল্লিশ বছর আগে শফিউল তাকে চরম অপমান করেছিল, মরে যাবার মতো ঘেন্না লেগেছিল নিজেকে। সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে শফিউলকে ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে খুন করার জন্য এক লাখ টাকা নগদ দিয়েছিল জমিরুদ্দিন।

"আমি তোমাকে চিনি না!!"

ভয়ে ঘামতে থাকলেও ভেতরটা শক্তই তার। হাতের লাঠিটা মুঠো করে ধরে রাখে। এই লাঠিতে ভর না দিয়ে সে উঠে দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু খুনের মামলায় ফেঁসে যাবার ভয় তাকে লাঠি ছাড়াই দাঁড় করিয়ে দেয়।

"আমি তোকে চিনিনা, যা দূর হ এখান থেকে।" ক্রোধ আর অচেনা ভীতিতে চিৎকার করে ওঠে জমিরুদ্দিন।

পাড়া কাঁপিয়ে হো হো করে হেসে ওঠে শফিউল। জমিরুদ্দিনের পাঞ্জাবীটা ভিজে গেছে, ভেতরের গেঞ্জী থেকে ঘামের ধারাটা কোমর হয়ে হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে। এখুনি বদলানো দরকার। কিন্তু তার আগে এই বদমাশটাকে তাড়াতে হবে।

কিন্তু অট্টহাসিটা তাকে এতটা ভারসাম্যহীন করে যে হাতের লাঠিটা অজান্তেই শফিউলের মাথায় নেমে আসে।
এবং এক আঘাতেই শফিউলের পতন।

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পূর্বে তার মুখ দিয়ে গড়গড় শব্দে বেরুনো বাক্যটা, "এবার তোরে ফাঁসিতে ঝুলানো গেলরে হারামজাদা।"

বারান্দায় ভেসে যাওয়া রক্তের মধ্যে পতিত শফিউলের কুঁচকানো কপালের নীচে আধভাঙ্গা চশমার কাঁচে জমিরুদ্দিনের ফাঁসিকাষ্ঠের ছবিটা যেন ভেসে উঠলো।

আড়িয়াল বিলে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার গবুচন্দ্রীয় স্বপ্ন

এক. আবদুইয়ার মাথাটা সারাবছরই নড়বড়ে থাকে। আর শীতকাল আসলে তো একদম চরমে। তার মুখ দিয়ে যেসব শব্দ বের হয় সে তুলনায় রাস্তাঘাটে শুনতে পাওয়া দৈনিক খিস্তিগুলি নিতান্তই নিরীহ। আবদুইয়ার চোখে চোখে তাকালেই সে ধরে নেবে আপনি তার গালির খদ্দের এবং খদ্দের সন্তুষ্টির জন্য তেড়িয়া হয়ে উঠবে সে...... সুতরাং তার চোখে চোখে কেউ তাকায় না। নিরাপত্তার খাতিরে আবদুইয়াকে রাস্তার যেপাশে দেখি আমি তার বিপরীত দিকে চলে যাই।

আবদুইয়া মাঝে মাঝে আমাদের বাড়ীর উল্টোদিকের কমিউনিটি সেন্টারের বারান্দায় রাত কাটায় যেখানে আমাকে অফিসের গাড়ীর জন্য দাঁড়াতে হয়। ভাগ্য খারাপ হলে বৃষ্টির দিনে বারন্দার ভেতরের দিকে চলে যেতে হয় যেখানে আবদুইয়া ঘুমিয়ে আছে এবং প্রতিমুহূর্তে আশংকায় থাকতে হয় না জানি আবদুইয়া জেগে উঠে। ভয়ে আমি মোবাইল পর্যন্ত সাইলেন্টে রাখতাম। যেদিন বাসা বদল করে অন্য পাড়ায় চলে যাই সেদিন সবচেয়ে স্বস্তি পেয়েছিলাম আবদুইয়ার কাছ থেকে পালাতে পেরেছি বলে। আজ হঠাৎ আবদুইয়ার কথা মনে পড়লো পত্রিকার সংবাদটা দেখে-

আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার এলাকাবাসী। গতকাল সোমবার দিনভর এ বিক্ষোভে জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের এক কর্মকর্তা নিহত হন। আহত হয়েছেন ৪০ পুলিশ সদস্য, একজন ম্যাজিস্ট্রেট, পাঁচ সাংবাদিক ও বিক্ষোভকারী শতাধিক গ্রামবাসী।

দুই.
নির্মান ব্যয়ে এতদিন যাবত এক নম্বরে থাকা ২০ বিলিয়ন ডলারের হংকং এয়ারপোর্ট শীঘ্রই হেরে যাচ্ছে ৮২ বিলিয়ন ডলারের দুবাইয়ের আল মাকতুম এয়ারপোর্টের কাছে।

এশিয়ার এয়ারপোর্টগুলো যদিও সাইজে আটলান্টা, ডালাস কিংবা শিকাগোর তুলনায় কিছুই না তবু সংবাদে নানা রকম রেকর্ডের খবর যেন একটু বেশীই আসে। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্ট, কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট, সাংহাই পুডং এয়ারপোর্ট, থাইল্যান্ডের সুবর্নভূমি এয়ারপোর্ট, সৌদি আরবের কিং ফাহাদ এয়ারপোর্ট, হংকং এয়ারপোর্ট কিংবা জাপানের কানসাই এয়ারপোর্ট সবসময় কোন না কোন কারনে আলোচিত, কোন না কোন কারণে বিখ্যাত। এশিয়ার সমৃদ্ধি নিয়ে গর্ব করতে ভালোই লাগে। এশিয়া তো আমারই মহাদেশ।

দুবাই এয়ারপোর্টের কাছে পরাজিত হওয়াতে হংকং, সিঙ্গাপুর, সাংহাই কিংবা কানসাই এয়ারপোর্টের কতোটা মন খারাপ হয়েছে জানি না, কিন্তু ঢাকার হযরত শাহজালাল এয়ারপোর্টের খুব আঁতে ঘা লেগেছে।

তাই সরকারের কোন নাজিরের হঠাৎ মনে হলো, আমরা কি নিতান্তই পাঁচু গোপাল? আমাদের নাম কেন জ্বলজ্বল করবে না বিশ্বের দরবারে। একটা ঝাকানাকা এয়ারপোর্ট থাকলে দক্ষিন এশিয়ার হাব হতে আর কোন সমস্যা নাই। আমাদের শক্তি সামর্থ্য কি কম? ফুটবলে ভুটানের কাছে হিমশিম খেলেও ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করিনি? দারিদ্রের তালিকায় এক নাম্বার থাকতে না পারলেও দূর্নীতিতে পাঁচের মধ্যে থাকিনি? ঘরে ঘরে পাঁচকোটি মোবাইলের ডিজিটাল রিংটোন পৌঁছে দেইনি? দুনিয়া কাঁপানো একটা এয়ারপোর্ট তৈরী করা আমাদের জন্য কি অসম্ভব কাজ? জাপান যদি সাগর ভরিয়ে এয়ারপোর্ট তৈরী করতে পারে, সামান্য আড়িয়াল বিল খুঁড়ে একটা এয়ারপোর্ট তৈরী করা কি খুব কঠিন?

হুকুম হলো, ওই মোখলেস, যা একখান ফিজিবিলিটি রিপোর্ট বানায়ে আন আড়িয়াল বিলের উপর। পাঁচটার মধ্যে রিপোর্ট চাই, ছটায় মিটিং আছে।

বিশেষজ্ঞ মোখলেস একটা তড়িৎ রিপোর্ট বানিয়ে নিয়ে নাজিরের কাছে যায়, নাজির ওটাকে সই করে উজিরের কাছে গেল, উজির ওটাকে মন্ত্রীর টেবিলে ফেলতেই আহলাদে মন্ত্রী চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, হা হা হা, কি চমৎকার আইডিয়া..... হ্যাঁ এই আড়িয়াল বিলেই আমাদের এয়ারপোর্ট হবে এবং তা বঙ্গবন্ধুর নামেই হতে হবে।

মন্ত্রী অনতিবিলম্বে লেক্সাস হাঁকিয়ে গনভবনে ঢুকে কাঁচুমাচু হয়ে রিপোর্ট পেশ করে বলে, "মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী এ আমার সামান্য আবদারে আপনি কিছুতেই 'না' করতে পারবেন না। টাকাপয়সা হাতের ময়লা, জীবন দুদিনের বায়না। ৫০ হাজার কোটি টাকা ৮ বিলিয়ন ডলারেরও কম। পোঁদে লাথি খাওয়া দেশের ফকির মিসকিনেরাও মিডল ইষ্ট থেকে এর চাইতে বেশী পাঠায়। বঙ্গবন্ধুর নামকে স্থায়ী করতে আড়িয়াল বিলে একখানা এয়ারপোর্ট হতেই হবে, এট এনি কষ্ট্! মানি ইজ নো প্রবলেম, আই উইল..... সরি আপা!" শেষদিকে এসে একটু থতমত খেয়ে যায় অতিরিক্ত আবেগে ভেসে যাবার কারণে।

*************************************
তিন.
রাতারাতি বাংলাদেশ কতোটা ধনী হয়ে গেছে জানি না। দেশের প্রধান দশটা সমস্যার মধ্যে বিমানবন্দর একটা কিনা জানি না। কিন্তু নীচে এশিয়ার তুচ্ছ(!) কয়েকটা এয়ারপোর্টের নির্মান ব্যয় দেখে আজ আমার আবদুইয়ার কথা মনে পড়লো। ইচ্ছে হলো আবদুইয়া হয়ে চিৎকার দিয়ে বলি............... খা.......পো......দি!!!!!!

Kuala Lumpur International Airport = 3.5 billion dollars

Indira Gandhi International Airport = 1.5 billion dollars

Singapore Changi Airport = 3.05 billion dollars (in two phase)

Suvarnabhumi Airport Thailand = 3.8 billion dollars

Shanghai Pudong International Airport = 1.67 billion dollars (first phase)

ভূখা নাঙা বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ এখনো তিনবেলার খাদ্য যোগাড়ে হিমশিম খায়, যার মাথার উপর এখনো ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঋনের বোঝা, সেই দেশ যদি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল বিমানবন্দরের মতো ধৃষ্টতাপূর্ন অপ্রয়োজনীয় স্বপ্নের কথা বলে তখন মাথা ঠিক রাখা সত্যিই দায় হয়ে যায়।

কেবল বিমানবন্দর তৈরী করেই সিঙ্গাপুর বা হংকং এশিয়ার বানিজ্যিক হাব হয়েছে বলে যাদের ধারণা, তাদের অবকাঠামোগত জ্ঞান নিয়ে সত্যিই খুব করুণা হয়।


চার.
সমুদ্র ভরাট করে জাপান ১৫ বিলিয়ন ডলারে (পরে ২০ বিলিয়নে উন্নীত) কানসাই এয়ারপোর্ট তৈরী করার সময় এক হিসেবে দেখা গিয়েছিল এক কাপ কফির দাম ১০ ডলার না রাখলে খরচ পোষাবে না।

বাংলাদেশের গবুচন্দ্রেরা এইসব জানে না বলে আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু জেনে শুনে এত বড় অবাস্তব একটা প্রকল্পের কথা যারা মুখে আনে তাদের উদ্দেশ্য আর গত সরকারের নাজমুল হুদার ম্যাগলেভ ট্রেনের স্বপ্নের উদ্দেশ্যের মধ্যে কোন পার্থক্য পাওয়া যায় না বলেই কোন রকম আলোচনায় না গিয়ে আবদুইয়া হয়ে যেতে ইচ্ছে করে।

=========================
অতঃপর একটি লজ্জিত পাদটীকাঃ
ঢাকা এয়ারপোর্ট দিয়ে বছরে নাকি ৪০ লাখ যাত্রী আসা যাওয়া করে। খবরটা যাচাই করতে বেসামরিক বিমান কতৃপক্ষের ওয়েব সাইটে ঢুকলাম। কিন্তু ওখানে এয়ারপোর্টের নাম আর তাদের ভূতপূর্ব চেরমেনের তালিকা বাদে কোন রকম দরকারী তথ্যতো পাইনি বরং সাইটের চেহারা আর পরিবেশিত ইংরেজী পড়ে ভিড়মি খেয়েছি। চাইলে আপনিও একবার ঢুঁ দিয়ে আসতে পারেন। তরল মেজাজে পড়লে বিনোদন নিশ্চিত।
http://www.caab.gov.bd

-------------------------------------
http://www.sachalayatan.com/hrrh69/37439

জাপানীজ ওয়াইফঃ একটি চট-সমালোচনা

১.
'জাপানীজ ওয়াইফ' দেখলাম সেদিন। অপর্না সেনের ছবি। ছবিটা নামিয়ে রেখেছিলাম আগেই। দেখা হয়নি এদ্দিন। সিনেমাটা আমাকে যে দুটো কারণে আলোড়িত করেছে তার একটি হলো ঘুড়ি। ঘুড়ি জিনিসটা স্মৃতি জাগানিয়া।

জাপানীজ ওয়াইফে ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে বেশ সুন্দর কয়টা দৃশ্য আছে। পুরো ছবির মধ্যে একমাত্র প্রানবন্ত অংশ ওইটিই। দৃশ্যটা এত ভালো রকম চিত্রায়িত হয়েছে যে দেশী ঘুড়ির ছবি দেখেই আমি সাঁ করে ত্রিশ বত্রিশ বছর আগে চলে গেলাম। কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে স্পষ্ট দেখতে পেলাম ওই ঘুড়িটা আমার খুব চেনা। ঘুড়ি হাতে নেবার পর বাতাসে পত পত শব্দ হয় তা যেন আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম। পাতলা কাগজের যে বাতাসের আঘাতে শব্দ হতো তা মধুরতম সঙ্গীতের মতো কানে বাজতো। এত বছর পরেও কানের কাছে শব্দটা বাজতে লাগলো।

এক রঙা, দুই রঙা, তিন রঙা পাংকি। এই তিনরকম ঘুড়িই দেখা যেতো দোকানে। ছবিতেও সেই খুব চেনা রঙের ঘুড়িগুলোই দেখলাম। আজকাল কি ঘুড়ি বিক্রি হয়? কোথাও ঘুড়ি উড়তে দেখি না কেন? শহরে কেউ ঘুড়ি ওড়ায় না? নাকি আজকাল ঘুড়ি তৈরী করে না কেউ। ঘুড়ি তৈরী করার সেই পাতলা রঙিন কাগজগুলো কোথায় আজ? পলিথিনের আগ্রাসনে কি লুপ্ত হয়ে গেছে? এই কাগজগুলো আর কোন কাজে আসতো? বিয়ে বাড়ীর ডেকোরেশানের সাজেও কাগজগুলোর ব্যবহার ছিল। খুব খুব স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম ছবির ওই অংশটা দেখে।

২.
ছবিটাকে অসাধারণ বলা উচিত কিনা জানি না তবে চিত্রায়ন ভালো লেগেছে, কাহিনীর বৈচিত্রের কারনে মনে রাখার মতো ছবি। কিন্তু কয়েক জায়গায় অসংগতি লেগেছে।

এক. নায়ক বাংলাদেশে, নায়িকা জাপানে। নায়ক নায়িকার পরিচয় প্রেম চিঠিতে। টেলিফোনে ওরা দুজনে ঠিকমতো কথা বলতে পারে না ইংরেজী দৌর্বল্যের কারণে। চিঠি ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে ভাববিনিময় করতে পারে না। নায়ক নিজেই স্বীকার করেছে। কিন্তু বিয়ে করে ফেললো কি করে? চিঠিতে কি বিয়ে করা যায়?

দুই. মেয়েটা জাপানে অসুস্থ হয়ে পড়ে, জাপানের মতো উন্নত দেশের চিকিৎসা বাদ দিয়ে নায়ক ভারতীয় ডাক্তারের হোমিওপ্যাথ এলোপ্যাথ ও কবিরাজী চিকিৎসার ওষুধ কিনে পাঠায়। যদিও ঔষধ পৌছিবার আগেই রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এই অংশটা ভীষন আজগুবি আরোপিত লেগেছে। কাহিনীকার ভারতীয় চিকিৎসার মহার্ঘ তুলে ধরতে চাইলেন নাকি প্রেম ভালোবাসার মাহাত্ম্য তুলে ধরতে চাইলেন বুঝলাম না।

তিন. গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে পরিবার পর্যন্ত বিয়েটাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছে। গ্রামের ছেলে একটা জাপানী মেয়েকে বিয়ে করেছে এটা নিয়ে দেশ গ্রাম পরিবার খুব সন্তুষ্ট আছে। এটা অবিশ্বাস্য লেগেছে। বাঙাল দেশে অবাস্তব একটা চিত্র।

চার. ছবিটার শেষে এসে করুণ রস অনেক বেশী গাঢ় হয়ে গেছে। নায়ক একদিনের ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে নিউমোনিয়া হয়ে মারা যায় হঠাৎ। খবর পেয়ে ক্যান্সার রোগী জাপানী বউ মাথার চুল কেটে সাদা শাড়ী পরে অজ গ্রামে চলে আসে, বাড়ী চিনতে যার কোন অসুবিধা হয় না। এরকম ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু উপস্থাপনা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।

পাঁচ. সব শেষে দর্শকের একটা আক্ষেপ আসতে পারে যেটাকে বলা যায়, গোইং টু নো হোয়্যার! দর্শক হিসেবে আমার খুব অসহায় লেগেছে পরিণতিতে। যেন হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল ছবিটা। ছোট গল্পের কায়দায় এই আক্ষেপটাই সিনেমার সার্থকতা?
.................................................................................................................................

এটা ঠিক রিভিউ হলো না। চট-সমালোচনা বলা যায়। কেবল ছবিটা যারা দেখেছেন তারাই বুঝবেন। জানতে কৌতুহলী একই অসংগতি আর কারো লেগেছে কিনা?

মাছি

মাছিটা খুব বিরক্ত করছে। চারদিকে জানালা দরজা সব বন্ধ। কোত্থেকে এই নচ্ছার মাছিটা এসে আমার নাকের ডগায় বসতে চায়। প্রথমে পাত্তা দেইনি। কিন্তু ক্রমাগত নাকের উপর মাছির পদাঘাতে নাকটা সুড়সুড় করছে। মাছিটা এত জায়গা থাকতে নাকের ডগাটাকে টার্গেট করলো কেন বুঝতে পারছি না।

শোঁওওওও করে উড়ে এসে নাকের ঠিক ডগার মধ্যখানে ল্যান্ড করছে। গালে বসলে নিজে চড় খেয়েও মাছিকে কাবু করা যেত। এখন তা সম্ভব না। মাছি তাড়াতে এক রাজার নাক কেটে ফেলেছিল তার প্রহরী। রূপকথার গল্প মনে পড়লো। তবু দুদুবার থাবড়া মেরে নাক ব্যাথা করে ফেলেছি, কিন্তু মাছিটার কিচ্ছু হলো না।

অফিসের কাজ শেষ। একটা লেখা তৈরী করছিলাম। হাত দুটো মাছি তাড়াতে কীবোর্ড থেকে বারবার তুলতে হচ্ছে বলে কাজে দেরী হয়ে যাচ্ছে। বাকী সবাই চলে গেছে। আমি একা কাজ করছি সুনসান অফিসে।

মাছি যন্ত্রনায় লেখা বন্ধ করে হাত দুটো সামনে রেখে চেয়ারে হেলান দিলাম। মাছিটার মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করলাম ঠান্ডা মাথায়। আমার নাকের ডগায় তার কাজ কি? যদি কোন খাদ্যকনা লেগে থাকতো, ওটা খাওয়ার জন্য ওখানে নামতো তাও বুঝতাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নেহাত খেলাধুলা কিংবা বিরক্ত করার জন্যই সে এমন করছে। অথবা এমন হতে পারে তার কোন সঙ্গীকে আমি কখনো খুন করেছি, তার প্রতিশোধ নিচ্ছে এখন। মাছিদের এট্টুক মগজে প্রতিশোধ চেতনাও আছে?

এটা মনে হতেই তুচ্ছ মাছিটাকেও কেমন ভয় করতে লাগলো। মাছিটা যতবার উড়ে আসে, ভয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে ভয়টা বাড়তে বাড়তে মাছিটা কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা কাল্পনিক ছদ্মবেশী দানবে রূপান্তরিত হয়। অফিসের ড্রয়ার খুলে আমি কেক কাটার ছুরিটা বের করি। ছুরি দিয়ে মাছি খুন করা অসম্ভব। তবু আমি হাতের কাছে ছুরিটা রাখি। কাল্পনিক শত্রুর উদ্দেশ্যে ছুরি নাড়াই। হুঁশিয়ারী উচ্চারন করি। একাকী পাগলামি।

হঠাৎ মাছিটা নাই হয়ে গেল। ছুরি দেখে ভয় পেল? আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ছুরিটা ড্রয়ারে রেখে দিয়ে কম্পিউটারের পর্দায় চোখ দিলাম। কয়েক মিনিট কোথাও কোন শব্দ নেই।

খানিক পর পোঁওওওওও করে একটা সম্মিলিত শব্দ ভেসে এল কোথাও থেকে। আমার হাত থেমে গেল। মাছিটা দল ভারী করে ফিরে আসছে?

বহু বছর আগে একটা কাকের বাসায় ঢিল মেরে বাচ্চা ফেলে দিয়েছিলাম বলে কাকের দল সপ্তাহখানেক আমাকে পাড়ায় দেখামাত্র গুলির তালিকায় রেখেছিল। আমি দিনের বেলায় বাসায় ফিরলেই ওরা বাসা ঘিরে ফেলতো। জানালা দিয়ে হম্বিতম্বি করতো। রাস্তায় নামলে গাড়ীতে ওঠার আগ পর্যন্ত তাড়া করতো। মাথায় ঠোক্করও মেরেছে দুয়েকবার। ভয়ংকর প্রতিশোধপ্রবণ এই কাকজাতি।

মাছিদের মিছিলের গুনগুন শব্দ আর কাকদের আক্রমন স্মতি আমার মগজটাকে এমন ধোলাই করলো যে আমি দিগ্বিদিক স্থান-কাল-পাত্র ভুলে একটা অর্বাচিন চিৎকার দিলাম, জাগো বাহেএএএ......।

কাঁচের দেয়াল ভেদ করে চিৎকার কোথাও পৌছালো না। খুব অসহায় আর দুর্বল বোধ করছি। চেয়ার ছেড়ে মাটিতে বসে গেলাম। তারপর লম্বা হয়ে কার্পেটে শুয়ে পড়লাম। বুকটা ধরফড় করছে, নিজের কানেই তড়পানোর শব্দ শুনছি। কেউ টেনে না তুললে আমি উঠতে পারবো না। কিন্তু এত রাতে আমাকে উদ্ধার করতে কে আসবে? অবশেষে মাছিদের হাতেই কি মৃত্যু হবে? হাবিজাবি অবাস্তব কথা মগজে খচ খচ করতে করতে আতংকের মিটার বিপদসীমা ছুঁতেই আমি জ্ঞান হারালাম।

দেড় ঘন্টা পর নীচ থেকে সিকিউরিটি এসে আমাকে আবিষ্কার করে জ্ঞানহীন অবস্থায়।

আসলে ভয়ংকর কোন ব্যাপার ছিল না। ওটা মাছির শব্দও ছিল না। নীচের ফ্লোরে সিকিউরিটি পানির পাম্প চালু করেছিল। কিন্তু মাথার ভেতর আতংক ঢুকে গিয়েছিল বলে কোন যুক্তিই আমার পতন ঠেকাতে পারেনি।

ডাকাইচ্চা মাইয়া

ফোরে পড়ি, ক্লাসের ফার্স্টসেকেন্ড দুটো অবস্থানই মেয়েদের দখলে। থার্ড হতো একটা ছেলে। সেই সূত্রে সে ক্লাস ক্যাপ্টেন, ছড়ি ঘোরাতে পছন্দ করতো, বিশেষ করে মেয়েদের ওপর। সেই রোগাপটকা ছেলে, নাম আরাফাত, একদিন টিচারবিহীন ক্লাসে ছড়ি কষালো দস্যুটাইপ সোনিয়ার ওপর। বিনিময়ে সোনিয়া আরাফাতের কানের গোড়া প্রায় আলগা করে দিলো।

পরদিন দু'জনের মায়েরা হাজির। আরাফাতের মা নোয়াখালী আর সোনিয়ার মা টাঙ্গাইলের অ্যাম্বেসেডর। দুজনে মুখোমুখি-

- ডাকাইচ্চা মাইয়া, আঁর ল্যাদা সুটকিয়াগারে মারি আলাইছে গো, কানের লতি সোলায়ালাইছে (নোয়াখালির মা)
- আচ্ছা কামডি কর্ছে, কান্ডি ধৈরা প্যাঁচায়া দিছে (টাঙ্গাইলের মা)

........................................
[চতুর্মাত্রিকে নুশেরা তাজরীনের মন্তব্য থেকে অনুমতিক্রমে কপিপেষ্ট সংরক্ষণ]