প্রযুক্তির কাছে আমাদের অশেষ ঋণ কেননা তার হাত ধরেই আমরা প্রতিদিন নতুন পুরোনো কত আনন্দ আবিষ্কার করি। মাঝে মাঝে গান কবিতার নেশায় ধরে। সেই নেশা নিয়ে দুই কলম লেখা যাক।
জগজিত সিং এর গানের সাথে আমার পরিচয় এবং প্রেম দুটোই ঘটেছিল
এই গানটি গানটি দিয়ে। তখন সম্ভবত আমি কলেজের শেষ দিকে, ইন্টার পরীক্ষা দেবো। ওই গানটি যখন শুনি তখন আমি জানতাম না যে তিনি বাঙালী নন। অথচ কী অদ্ভুত সুন্দর করে বাংলা গান গাইলেন। প্রথমবার শোনার পর আরো কত শতবার শুনেছি পরবর্তী বছরগুলোতে দুই যুগ পার হবার পরও গানের সূচনার সুরটা যদি দূর কোথাও থেকে ভেসে আসে, বুকের ভেতর স্মৃতিগুলো কেমন তোলপাড় শুরু করে। ইতিমধ্যে হিন্দি গজল পেয়ে যাই, তখন আরো বুঁদ হয়ে পড়ি জগজিতে।
একই সাথে আরো অনেকের গজল মুগ্ধতার সাথে শুনেও জগজিতকে আলাদা ভাবে পাই। কেন জানি না। তারপর আরো কিছুকাল পর বিটিভির কল্যাণে মির্জা গালিবের সিরিজটি দেখা হয় তখন আবিষ্কার করি অন্য এক জগজিতকে। যে জগজিত হয়ে পড়েন মির্জা গালিবের গজলের অনন্য রূপকার। আমরা জগজিতের কন্ঠের সৌন্দর্যে আবিষ্কার করি মির্জা গালিবকে। আমি জানি না জগজিত না গাইলে আমি মির্জা গালিবকে এভাবে ভালোবাসতাম কিনা।
মির্জা গালিবের এই গজলটা এখনো বেদনা হয়ে বাজে।
কবিতার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে ব্রততী বন্দোপাধ্যায়ের সাথে। এক বন্ধুর কল্যানে তাঁর সাথে পরিচয়। সেই পরিচয়ে বুঝলাম এরকম আবৃত্তি এর আগে শুনিনি। বাংলাদেশে রবিশংকর মৈত্রীর কবিতা শুনে সেই যে ভীষণ মুগ্ধতার আবেশে জড়িয়েছিলাম, তার অনেক বছর পর ব্রততীকে খুঁজে পেয়ে যেন তা পূর্ণতা পেলো। ব্রততীর
না পাঠানো চিঠি কবিতাটি আর কেউ এভাবে আবৃত্তি করতে পারতো কিনা জানি না। তাঁর কাছাকাছি একজনকে পেয়েছিলাম যার কন্ঠ এই আবৃত্তির মতো। কিন্তু তিনি আর আবৃত্তি করেন না আজকাল।
সেদিন ঘুরতে ঘুরতে আরো একটি কবিতার সন্ধান পেলাম যে কবির নামও আগে শুনিনি। আবৃত্তি শুনে কবি আবুল হোসেন খোকন সম্পর্কে আগ্রহী হলাম। প্রায় অচেনা এই কবির
মেহেদী পাতা কবিতাটিও অপূর্ব। একটি কবিতা লিখেও অনেকে বিখ্যাত হয়ে যান। একটি কবিতা আবৃত্তি করেও অনেকে বুকের খুব গভীরে স্থান করে নেন। রবিশংকর মৈত্রীকে ফেসবুকের কল্যাণে খুঁজে পেয়েছি, কিন্তু তাঁর সেই আবৃত্তিটা আর কোথাও পাইনি।
প্রিয় কবি কে- জিজ্ঞেস করলে চোখ বন্ধ করে বলে দেই, জীবনানন্দ দাশ। কিন্তু তার বাইরেও তো রয়ে গেছে অসংখ্য প্রিয় কবি। আবুল হাসান, জয় গোস্বামী, শঙ্খ ঘোষ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুন সহ নাম ভুলে যাওয়া অনেক কবি। তবু জীবনানন্দের নামটা প্রথমেই আসবে কেননা জীবনানন্দ এমন একজন কবি যাকে বুঝতে বুঝতে কেটে যেতে পারে আস্ত একটা জীবন। মানুষ চিরকালই রহস্যের পুজারী।
****** ******* ********
লিখতে লিখতে বিকেলের চায়ের সময় হয়ে গেল। এক কাপ গরম লাল চা, যার উপর ভেসে থাকবে একটুকরো লেবু, একটুখানি আদাকুচি, তিনটে পুদিনা পাতা। ভরপুর একটা সুগন্ধী চা!
No comments:
Post a Comment