খলিল জিবরানের এই কবিতাটি আমার খুব প্রিয়। অনুবাদটা পড়ে একটা জিনিস বুঝলাম, অনুবাদকের শুধু ভাষাজ্ঞান থাকলেই হয় না। তার ভেতর কবিতার শেকড়ও থাকতে হয়। আমি জিবরানের এই কবিতার আরেকটা অনুবাদ পড়েছিলাম যেটা পড়ে ধর্মগ্রন্থ পাঠের অনুভূতি হয়েছিল এবং তাতে কোন বক্তব্য খুঁজে পাইনি যেটা এই অনুবাদে খুবই চমৎকার ভাবে এসেছে। Hasan Murshed এর ভেতর নিঃসন্দেহে নীরব একজন কবি বাস করে তা এই অনুবাদেই পরিষ্কার।
"বন্ধু তো সেইজন, যে ধারণ করবে তোমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর।
তাকে দেখেই তোমার চোখে মুখে জাগবে ধ্বনিত ধৈবত।
তুমি বুঝতে পারবে আলো, আলো আসছে...।
সে হবে তোমার ঐশ্বর্য যা তোমাকে দান করবে জীবনের উষ্ণতা।
তুমি তোমার দু'চোখ তৃষ্ণার মতো তুলে ধরবে তার দিকে আর সেই হবে তোমার তৃষ্ণা নিবারণী।
যখন সে তার হৃদয় উন্মুক্ত করবে, তোমার কাছে যত অন্ধকারই হোক তা -
তুমি ভয় পেয়ো না। আর বন্ধুকে কখনো "না" বলো না...।
যখন সে মৌন তখন কিছুটা সময় তাকে একা থাকতে দাও। তার নিজস্বতাকে তুমি তছনছ করো না।
শরতের স্নিগ্ধ আলো হও, বৈশাখের খরতাপ হয়ো না।
বন্ধুতা তো সেই সর্গীয় অমরাবতী যেখানে অপার্থিব আনন্দের মধ্যে পাখিডাকা নিস্তব্ধতায় জন্ম নেয় স্বপ্ন, ইচ্ছে, আকাঙ্খা।
বন্ধুতায় কখনো দূরত্ব সৃষ্টি হলে ভেঙে পড়ো না।
সাময়িক দূরত্বে বরং অনুভূতি আরো স্পষ্ট হয়, যেমন সমতল থেকেই সবচে ভালো দেখা যায় পাহাড়চূড়ো।
বন্ধুতায় কখনো প্রাপ্তির প্রত্যাশা রেখো না। ওটা তবে বন্ধুতা নয়। বন্ধুতা তো এক সংজ্ঞাহীন বেহিসেবি অনুভূতির আশ্চর্য অনুবাদ।
তুমি তোমার সবচেয়ে ভালো যা কিছু তা উৎসর্গ কর বন্ধুর জন্য।
সে যদি তোমার আবেগে ভাটা দেখে- তাকে জানিয়ে দাও এরপরই জোয়ার আসবে। তাকে কখনো মৃত্যু, হাহাকার, ধ্বংস দেখিও না।
বন্ধুর ভেজা হাতের আঙুল ছুঁয়ে তুমি বেঁচে ওঠো, তোমার হাত বাড়িয়ে তাকে বাঁচিয়ে তোলো।
তোমার দুঃসময়ে তাকে সহযোগিতার সুযোগ দাও, কিন্তু নিজেকে কখনো মূল্যহীন করো না।
আর দুজন পরস্পরকে আলোকিত কর, যে আলোর ভেতরে সব রঙের উৎসার ঘটে। সে আলো অনিঃশেষ ও শান্তিকামী।
এসব কিছুই জীবনকে দেয় কোমল সকাল, স্নিগ্ধ সজীবতা-
এসব নিয়েই বন্ধু...
No comments:
Post a Comment