Saturday, March 12, 2016

সন্ধি বিচ্ছেদ

"সন্ধির সাথে যেদিন আমার বিচ্ছেদ ঘটলো সেদিন আমি ব্যাকরন বইয়ের বদলে অংক খাতা খুলে বসলাম। আমি অংকে খারাপ কিন্তু হিসেবটা ঠিক করা দরকার। কিন্তু হিসেব কি অত সহজে মেলে? সন্ধিকে আমি কত টাকা দিয়েছি, সন্ধি আমাকে কত টাকা দিয়েছে তার হিসেব মেলাতে বসে অংকের সাথে আমার ঝগড়া বেঁধে গেল। সেই ঝগড়া থামাতে কবিতার আশ্রয় নিতে হলো। কবিতা তার ছাতাটা খুলতে না খুলতেই দমকা বাতাস এসে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল সন্ধ্যারাগিনীর কাছে। সন্ধ্যারাগিনী তখন সূর্যাস্তের শেষ আঁচলে বসে অনুপম বেহালায় সুর মেলাতে বসেছিল। ঘনিয়ে এসেছিল ফাল্গুন ধুলোর অন্ধকার। তারপর রাত আরো গভীর হতে থাকলো। মধ্যপথ পেরিয়ে গেল ছায়াপথ। সহস্র মুহুর্তের রাগ অনুরাগ পেরিয়ে নিকষ অন্ধকার যখন সুদূর নীহারিকার ছিটকে আসা আলোক কণা বিতরণে ব্যস্ত তখন কোথাও থেকে চৌরাসিয়া এসে আমাকে বাঁশীর সুরে তুলে নিল। আমি ভাসতে ভাসতে ভাসতে.......উধাও হয়ে গেলাম সময়ান্তরালে।"

বাতিল কাগজের নীচ থেকে উঁকি দেয়া অক্ষরগুলো অমিতকে বিদ্রুপ করতে থাকলে অমিত পুরোনো একটি বই খুলে নিরীক্ষা করতে বসলো। প্রচ্ছদ ছেঁড়া বইটি সযত্নে রক্ষা করার সকল প্রয়াস ব্যর্থ করে দিয়েছিল জলীয় বাতাস। পোকার হাত থেকে রক্ষা পেলেও সময় তাকে ক্ষয়িষ্ণুতার পথে এগিয়ে নিয়েছে বহুদূর। এখন আর ফেরার কোন পথ নেই।

ফেলে আসা শহরের সব স্মৃতিই ধোঁয়াশা হয়ে গেছে। ঘাসের গালিচার বদলে কংক্রিটের ফ্লাইওভারে ছেয়ে গেছে রাজপথ। কোথায় খুঁজবে সে মলিন হয়ে যাওয়া শার্টের পকেটে ভিজে যাওয়া চিরকুটে লেখা দোকানের মেমোটা। সংখ্যাগুলোর উল্টো পিঠেই ছিল একাগ্রতার ছয়টি শব্দ। পেন্সিলের লেখা কখনোই অক্ষয় থাকে না, ভিজে বাতাসই তা মুছে দেবার জন্য যথেষ্ট।

চৈত্রের আগমনী ধুলো মার্চপাস্ট করে সার্কিট হাউস পেরিয়ে থমকে দাঁড়ায় রক্তিম সড়ক বাতির বিচ্ছুরিত আলোয়। এই শহরে এখন সন্ধ্যে নেমে এসেছে। চৌরাস্তা পেরোবার হুকুম নেই তোমার। ধুলোর ঝড় স্তিমিত হয়ে নেমে যায় দেয়াল ঘেরা খোলা ময়দানের আশ্রয়ে।

No comments: