Saturday, January 30, 2016

বই কড়চা

সকালটা বেশ ঠাণ্ডা আজকেও, কুয়াশায় ঢাকা আকাশ। সে কারণে দেরীতে ওঠা হচ্ছে ঘুম থেকে। রাতে ঘুমোতেও দেরী হয়। সকালের কাজকর্ম সেরে বারোটার দিকে বাতিঘরের উদ্দেশ্যে বেরুতে হলো। এই মাসে বই কেনার বাজেট শেষ বলে ওদিকে যাইনি বেশ কিছুদিন। কিন্তু আজকে যেতে হলো কন্যাকে নিয়ে, সে আবদার করছে কদিন থেকে বাতিঘরে যাবার। ঘাটতি বাজেট নিয়েই বের হলাম তাই।

বাতিঘরে বই দেখতে দেখতে বহুবছর আগের কথা মনে পড়লো। আমিও তখন ক্লাস থ্রি ফোরে পড়ি। বাবার সাথে নিউমার্কেটের দোতলার একটা দোকানে যেতাম। বইঘর। আমার খুব প্রিয় জায়গা ছিল ছেলেবেলায়। আমার বই প্রেমের যাত্রা শুরু ওখান থেকেই। বাবা যদি আমাকে বইঘর না চেনাতেন, আজকে বইয়ের প্রতি যে ভালোবাসা সেটা গড়ে উঠতো না হয়তো।

চারদশক পেছন ফিরে তাকিয়ে এবার সামনে তাকালাম। চারদশক সময়ের দূরত্ব কতটুকু? বইঘর থেকে বাতিঘর। নিউমার্কেট থেকে জামালখান। দূরত্ব দুই কিলোমিটার।

এখন বইঘর নেই, বাতিঘর এসেছে। বইঘর ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে আরো দুই যুগ আগে। আমার বাবা আমাকে চিনিয়েছিল বইঘর, আমি আমার সন্তানদের চিনিয়েছি বাতিঘর। ওরা সেই চেনাপথ ধরে এগিয়ে যাবে এটা ভাবতে ভীষণ ভালো লাগে। তবে দুই সময়ের দুটো বই দোকানের নামের মিলটুকুও বেশ লাগে। আমার ছোট্ট একটু আক্ষেপ আছে বাতিঘর নিয়ে।  এক প্রিয় বন্ধুকে একবার বাতিঘরে বেড়াতে নেবো বলেছিলাম, হয়নি।

বই দেখা এবং বই স্মৃতির পালা শেষ। এবার বই কেনার পালা। কিনবো না বললেও কিছু বই চোখে পড়ে যায়। পরেরবার এসে যদি না পাই, সেই ভয়ে আবারো কিনতে হয়। বাজেটের বাইরে গিয়ে কিনতে হলো বেশ কটি বই। বাসন্তী গুহ ঠাকুরতার একাত্তরের স্মৃতি,  আল বেরুনীর ভারততত্ত্ব, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর এর জার্নাল ৭১, জাহিদ সরওয়ারের পায়ুবাসনার জনগণ,  আহমদ ছফার ডায়েরী, প্রমথনাথ বিশীর গল্প সমগ্র এবং বাদল সৈয়দের জলের উৎস।

জানুয়ারী মাস শেষ হতে আর একদিন বাকী।

No comments: