আরো অনেকের মতো আমারো ইন্টারনেট মেইলে যাত্রা শুরু হটমেইলকে দিয়ে।
হটমেইলে আমি প্রথম কাকে চিঠি লিখেছিলাম আজ মনেও নেই। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে
সেই চিঠি প্রাপক আমার কাছের কোন মানুষ ছিল না। অফিসের কোন কলিগ, সম্ভবতঃ
বিদেশী কলিগ কাউকে লিখেছিলাম হয়তো। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করাতে একাউন্ট
সাসপেণ্ড হয়ে গিয়েছিল বলে হটমেইলের সবকিছু মুছে গেছে তাই মনে পড়ে না কোথায়
প্রথম লিখেছিলাম।
কিন্তু এক্ষণে সাবির ভাটিয়ার কথা মনে পড়লো। ভারতীয় এই ছেলেটা ২৮ বছর
বয়সে হটমেইল চালু করে বিশ্বব্যাপি তোলপাড় করে ফেলেছিল। তখনো মাইক্রোসফট
হটমেইলের মালিক হয়নি। এক সময় বিল গেটস ৪০০ মিলিয়ন ডলারে হটমেইল কিনে নেন।
তখন থেকে হটমেইলের নতুন যাত্রা। ২ মেগাবাইটের হটমেইলে তখন কয়টা চিঠি পাঠানো
যেতো এখন ভাবা যায়?
আমি ২০০০ সালের হটমেইলকে মিস করি। যে হটমেইল থেকে একদিন ইনস্ট্যান্ট
মেসেঞ্জারও বের হয়েছিল চ্যাট করার জন্য। হটমেইলের চ্যাট ইনস্টল হবার পর
বুঝতেছিলাম না জিনিসটা দিয়ে কার সাথে কথা বলবো। তার আগে আইআরসি চ্যাটের
খানিক অভিজ্ঞতা ছিল, আর ছিল বুলেটিন বোর্ডে মেসেজ চালাচালির খুবই সামান্য
অভিজ্ঞতা। IRC চ্যাট আমাকে টানেনি কেন যেন। কিন্তু ব্যক্তিগত চ্যাটাচেটি কি
জিনিস সেটা বুঝতে পারছিলাম না। কেউ ছিল না যার সাথে চ্যাট করা যায়।
একদিন এক বন্ধুকে পেয়ে যাই। দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর এক বন্ধু, পেশায়
ডাক্তার। জাপানী ভাষা শিক্ষার ফোরামে তার সাথে পরিচয়। সে নিয়মিত মেইল দিত,
আমিও দিতাম। আমার তখন নতুন নতনু দেশ সম্পর্কে জানার নেশা। এশিয়া আফ্রিকা
থেকে দক্ষিন আমেরিকা পর্যন্ত আমার জিওগ্রাফিক্যাল আগ্রহ ছিল। যেহেতু
অনলাইনে আর কোন বন্ধুর এই মেসেঞ্জার ছিল না, তাকেই বললাম একদিন। বলতেই সে
রাজী হয়ে গেল। তখন আমরা বন্ধুরা মিলে একটা ফোন ফ্যাক্স ইন্টারনেট মোবাইল
ইত্যাদির একটা সেন্টার খুলেছিলাম। মূলত অফিস থেকে ফিরে আমাদের ষোলজনের
আড্ডার জায়গা। রাত দশটা পর্যন্ত আড্ডা শেষে সবাই বাড়ি ফিরতাম। বাসায় তখনো
কম্পিউটার নেই আমাদের। ওই সেন্টারে সবাই একটা কম্পিউটারেই কাজ করতাম। আমি
সেই বন্ধুকে আগেই জানিয়েছিলাম কটার সময় চ্যাটে আসতে হবে। লগ ইন করে দেখি সে
অনলাইনে। এখনো মনে পড়ে জীবনে প্রথম কাউকে অনলাইনে দেখে খুশীতে আটখানা বা
দশখানা! যেন এক ক্লিকে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গল ছুয়ে দিয়েছি।
তাকে নক করে বললাম, হাই। সেও বললো, হাই। তারও আগে চ্যাটের অভিজ্ঞতা ছিল
না। দুজনের প্রথম অভিজ্ঞতা হওয়ায় সেকি মুগ্ধতা। এই প্রান্তে আমি একটা শব্দ
টাইপ করছি আর সেই শব্দটা পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বসে লাইভ দেখছে আরেকজন। আমি
বন্ধুদের ডেকে গর্বের সাথে বললাম, দেখ আমি কত দূরের বন্ধুর সাথে চ্যাট
করতে পারি। বন্ধুদের কারোরই তখনো হটমেইল বা কোন মেইল আইডি ছিল না। তারা
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো আমার কৃতিত্বে। (শুনলে এখন হাসতে হাসতে বিষম খাবে
লোকে। কিন্তু সেটাই তখনকার বাস্তবতা। মাত্র দেড় দশক আগে)
মাইক্রোসফটের স্বর্নযুগ তখন। যা কিছু ভালো, তার সাথে মাইক্রোসফটের আলো।
কিন্তু একদিন সেই ‘ভালো’ মাইক্রোসফট বিজ্ঞাপনে হারিয়ে যেতে শুরু করলো।
এনিমেটেড বিজ্ঞাপন আর হাবিজাবিতে নর্দমায় পরিণত হলো এমএসএন এর সমস্ত
প্রোডাক্ট। ভোক্তার রুচি আর চাহিদা বুঝতে পারেনি মোটা দাগের লোভ করতে গিয়ে।
মাইক্রোসফটের সাইটে ঢুকলে রীতিমত বমি পায় বিজ্ঞাপন রুচির স্থুলতায়। এত
বিরক্তিকর হতে পারে কোন সাইট!!
তবে এর মধ্যে আরো এক জায়ান্ট এসে গিয়েছিল। ইয়াহু!
প্রথম দিকে ইয়াহুতে ভীষণ মুগ্ধ। কয়েক বছর ধরে রাজত্ব করলো জেরী ইয়াং এর
ইয়াহু। আমি হটমেইল ছেড়ে ইয়াহুতে তরী ভেড়ালাম। তখন ইয়াহুর মেইল, চ্যাট
সবকিছুই আধুনিক এবং হটমেইলের চেয়ে সুন্দর। তাদের সার্চ ইঞ্জিনও বেশ কাজের।
যখন ইয়াহুতে ভালো লাগা ভর করেছে, নির্ভর করতে শুরু করেছি তাদের অনেক
কিছুতে, তখন ক্যালিফোর্নিয়াতেই নীরবে বেড়ে উঠছিল আরেকজন। শুধু সার্চ করার
জন্য তার কদর বাড়ছিল। সার্চের জনপ্রিয়তার সিঁড়ি বেয়ে একদিন সে জানালো, গুগল
এখন থেকে মেইল সার্ভিস দেবে সীমিত কিছু লোকের জন্য। শুধু নিমন্ত্রিত
অতিথিরাই মেইল পাবেন।
জিমেইলের নিমন্ত্রন পেতে কতজনের কত আকুলতা। আমাকে কে দিয়েছিল জানি না।
কিন্তু জিমেইল শুরুর এক মাসের মধ্যে আমি আইডি খুলেছিলাম মনে আছে। নিজের
নামে খোলার সুযোগ ছিল তখন। তবু কেন জানি নিজের নামটা পরিহার করে অন্য আইডি
নিলাম যেটা হটমেইলে ছিল। সময়টা সম্ভবত ২০০৪ সালের মাঝামাঝি। যদিও নীরবে
আবির্ভূত হয়েছিল জিমেইল, কিন্তু সাইজটা ছিল চমকে দেবার মতো। যেখানে হটমেইল
কোনমতে ২ মেগা দেয় ইয়াহু দেয় ৪ মেগা সেখানে তৃতীয় জনের দেবার কথা বড়জোর ৮
মেগা বা ১০ মেগা। কিন্তু যখন গুগল ১০০০ মেগার ঘোষণা দিল তখন ব্যাপারটা
অবিশ্বাস্যই লাগলো। আমি যেদিন জিমেইলে প্রথম ঢুকলাম সেদিনই বুঝে নিলাম আজ
থেকে হটমেইল আর ইয়াহু একাউন্টের কবরের ভিত্তিপ্রস্তর তৈরী হলো।
বুঝলাম, এতকাল ধরে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আসল জায়গায় পৌছালাম। ধরেই
নিলাম আমার শেষ প্রেম জিমেইল। আর কোথাও যাবো না আমি। জিমেইলের সবকিছুই
সুন্দর। জিমেইল কখনো বিরক্ত করে না ইউজারকে। বছরখানেকের মধ্যেই হটমেইল,
ইয়াহুকে কিক আউট করে জিমেইলে ডুবে গেলাম।
কিন্তু আরো এক যুগ পার হবার পর এই সময়ে এসে গুগল একটু অদ্ভুত আচরণ শুরু
করলো। গুগলের প্রোডাক্টগুলো বরাবর ছিল নীরব। ভোক্তাকে কখনোই বিরক্ত হতে হতো
না। কিন্তু গত দুবছর ধরে গুগল হাবিজাবি কতগুলো প্রোডাক্ট এনে ঝামেলা
পাকাতে শুরু করেছে। এমনকি মেইলে ক্লিক করলেও সরাসরি না খুলে আমাকে নিয়ে যায়
অন্যখানে। জোর করে তাদের শ্লোগান বিজ্ঞাপন গেলাতে শুরু করে।
দেখে মনে হয় এখানে কোন মাইক্রোসফটের বিজ্ঞাপনলোলুপ এক্সিকিউটিভ যোগ
দিয়েছে। যেটা মানুষকে বিরক্ত করতে শুরু করেছে। সত্যি বলতে জিমেইল এখনো আমার
প্রিয় হলেও গুগল প্লাস, হ্যাং আউট ইত্যাদির উপর আমি চরম রকমের বিরক্ত।
এরকম চলতে থাকলে কিছুদিন পর আমাদের নতুন প্রোডাক্ট খুজতে হবে। বলতে হবে,
ভিক্ষা চাই না কুত্তা সামলান।
সুতরাং গুগল ভায়াকে বলছি, সামলে চলো, নইলে তুমিও মাইক্রোসফটের মতো
ভাগাড়ে পৌঁছে যাবে। যদি ভালো ইংরেজী জানতাম তাহলে গুগলকে একটা পত্র লিখে
বলতাম-
Dear Googol,
I have no doubt that I luv you. I luv Gmail, I luv Google Search, I luv Google Drive, and I luv many things of Google.
BUT I Hate Google+, I Hate Hangout, It Annoyed me like Microsoft!
I want to open Gmail directly like before. I dont want to be bothered by
the redirected page, suggestion, advertisement etc. Please don’t tell
me how better or how sweet your Google+ or Hangout. I dont give a sh...t
for ur new lovely products!! bla..... bla.....
কিন্তু ইংরেজী কি এত সহজ? তাই বাংলায় বলি-
ডিয়ার Google,
তোমার মধ্যে এখন অনেক অপছন্দের উপাদান, আগের তুমি এখন নাই, বদলে গেছো অনেক।
তোমাকে পছন্দ করা একটা যন্ত্রণা, তবু তোমাকে আমি ভালোবাসতে বাধ্য হই কেননা
আমার দ্বিতীয় বিকল্প নাই। কিন্তু খেয়াল রাইখো, মার্কেট ইজ ওপেন, আমার কাছে
নতুন কেউ এসে যদি নিরুপদ্রপ মেইল সার্ভিস দেয়, আমি তোমার এতকালের প্রেমকে
পশ্চাতে ফেলে সামনে চলে যাবো। হটমেইল নিয়ে দুষ্ট লোকে যা বলে তোমাকে নিয়ে
তা বলুক আমি সত্যিই চাই না। হটমেইলের দুষ্টুকথা পড়ে দেখো এখানে http://uncyclopedia.wikia.com/wiki/Hotmail
এখনো সময় আছে। মতি ফেরাও........গতি সামলাও।
ইতি-
একজন খাঁটি ব্লগ টাইপার
[ব্লগরব্লগর লেখা কি এত সহজ? নতুন কীবোর্ডে লেখা তো আরো কঠিন। পুরোনো রাফখাতা থেকে কপি করে এডিট করতে গিয়েও রীতিমত হাঁপিয়ে গেলাম।]
No comments:
Post a Comment