Monday, April 20, 2015

এই বৈশাখের গদ্য

আমাকে কোন এক সময় কঠিন দুঃখ পেতে হবে। যে মানুষেরা খুব আরামপ্রিয় এবং অতিসংবেদনশীল হয়ে ওঠে তাদের জন্য এটা অনিবার্য পরিণতি। অনাগত ভবিষ্যতের এই অপ্রিয় বাস্তবতাকে মেনে নিয়েও আমি বলি আমি সবচেয়ে বেশী সংবেদনশীল সম্পর্কের ক্ষেত্রে। আমি মোটামুটি বন্ধুবৎসল মানুষ। আমার খুব বেশী বন্ধু নেই। তবে যা আছে কমও না। আমার বন্ধুদের সাথে তেমন কোন সমস্যা নেই। বড় হবার পর বন্ধুত্বে সমস্যা করে অর্থনৈতিক স্বার্থ। আমার সেরকম স্বার্থজড়িত ব্যাপার খুব বেশী ছিল না। যখনি অর্থনৈতিক স্বার্থ এসে পড়ে তখন বন্ধুতার মধ্যে শিথিলতা ভর করে। অচেনা হতে শুরু করে চেনাবন্ধুও। 

আমি যে বিশ্বাস করে ঠকিনি সেটা বলবো না। তবে এটুকু বিশ্বাস করতে চাই যে আমাকে ঠকিয়েছে সেটা তার শেষ উপায় বলেই। সে নিজেও নিশ্চয়ই এমন কোন বিপদে আছে। আমাকে কিছু না বলে আলগোছে সরে গেছে, অদৃশ্য হয়ে গেছে মোটা অংকের লেনদেন বকেয়া রেখে, তাকেও আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। দিয়েছি আমি মহান বলে নয়। আমি বন্ধুতাকে ভালোবাসি বলে। তার সাথে আমার দীর্ঘকালের সুসম্পর্ক ছিল বলে। ওই স্মৃতিগুলোকে আমি অমর্যদা করতে চাইনি। সে যে চরম অকৃতজ্ঞ আচরণ করেছে এটাকে আমি ভুলে যেতে চাই। 

জীবনযাত্রার মতো আমি বন্ধুতার ব্যাপারেও খুব আয়েশী।  আমি বন্ধুর কাছে চোখ বন্ধ করে নিরাপদ থাকতে চাই। যে বন্ধু চট করে চোখ উল্টে ফেলতে পারে, কুৎসিত আচরণ করতে পারে, তেমন বন্ধুকে আমি ভয় পাই। নিরুপদ্রপ বন্ধুতা আমার কাছে সর্বকালের কাম্যবস্তু। আমরা সবচেয়ে ভালো থাকি মন ভালো করে দেয়া সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির কাছে। সেই মন ভালো রাখা বন্ধুটিকে যদি কখনো ভয় পেতে হয়, তার মতো দুঃসময় বন্ধুতা জগতে আর কিছু নেই। নিজেকে তখন খুব অনিরাপদ আর অনিশ্চিত লাগে। আমার ভাবতে ভালো লাগে আমি সেরকম বন্ধুতা থেকে মুক্ত। বন্ধুতায় আমার নতুন করে আর হারাবার কিছুই নেই। বন্ধুদের কাছে আমি এখনো চিরকৃতজ্ঞ।

===========



দূর কোথাও থেকে প্রাচীন একটি ঘড়ির ঘন্টাধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এইমাত্র দশটা বাজলো। ঘড়িটা খুব দূরে নয়, কিন্তু দূর ঠেকলো খুব। কাছের জিনিসকে দূরে দেখছি।

অথবা
আমি খুব সহজেই বিরক্ত হয়ে যাই আজকাল। অথবা লোকজন সহজে আমার বিরক্ত হবার মতো আচরণ করে। আমি নিভৃত জীবনের লোভে চাকরী ছেড়েছি, আমি কুতর্ক এড়াতে সামাজিক ব্যাপার এড়িয়ে চলি, তবু কোথাও কোথাও আমাকে কোলাহল পোহাতে হয়, কুতর্কে জড়াতে হয়। তখন আমি আরো দূরে কোথাও পালাবার পথ খুঁজি।
অথবা
আজকাল মানুষ আমাকে বড় বিরক্ত করে। মানুষের উপর থেকে আমার সহ্যসীমা নেমে যাচ্ছে। এমনকি যে মানুষকে আমি খুব পছন্দ করি, যে মানুষের জন্য আমি মঙ্গল ছাড়া আর কিছু ভাবি না, যে মানুষ আমার উপর নির্ভর করতো একসময়, আজকাল সেই মানুষকেও দেখি বিরূপ হয়ে উঠতে, সেই মানুষের মধ্যেও অচেনা আচরণ। তাই মানুষকে এড়িয়ে থাকতে চাই।
অথবা
আমি পড়াশোনার জগতে ফেরার জন্য জীবিকা বদলেছি। আমি কথিত সংসারী হয়েও নিজের জন্য একাকীত্ব খুঁজি সেই জগতে বাস করার জন্য। মানুষ জেগে থাকলে আমার পড়াশোনা আগায় না। মানুষ যখন ঘুমায় তখনই পড়ার পথ খুঁজি। কোলাহলে আমি পড়তে পারি না, লিখতে পারি না। প্রতিটা মধ্য রাত আমি জেগে কাটাই। তবু দিবাভাগে কিছুকাল নিজের মতো কাটাবার মতো একখণ্ড জমিন খুঁজি।
অথবা
সব মানুষ আহত করে না। দূরের মানুষতো নয়ই। আহত করার অধিকার রাখে কাছের মানুষ। আঘাত করার সুযোগ বেশী কাছের বন্ধুর। কাছের বন্ধুর কাছে সতর্ক থাকে না কেউ। কাছের বন্ধুটি ঠিক ছুরি চালিয়ে দিতে পারে বুকের ভেতর।
অথবা
ব্যক্তিগত গ্লানিগুলি প্রকৃত অর্থে মূল্যহীন। অনুতাপ অনুশোচনা এসব  ননসেন্স। এর মানে তুমি সময়ের কাজ সময়ে করোনি অথচ অর্থহীন কাজে বহু ঘন্টা নষ্ট করেছো।  জীবনটা ছোট, ফুরিয়ে যাবে যে কোন সময়, সবই জানি। তবু তাকে নির্মমভাবে অপচয় করি, ভুল জিনিসের পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করি।
অথবা
যখন মনে পড়ে তখন গোছাই। আবার ভুলে যাই। মনে পড়লে আবার গোছাবো।
অথবা
এই শূন্যতা অর্থহীন। আমি জানি এ কিসের শূন্যতা। কিন্তু এই শূন্যতা পুরন কারো পক্ষে অসম্ভব।
অথবা

আড্ডা দিলে ভালো লাগতো? এই মুহুর্তে কে কে ফ্রী আছে? অনলাইন বা অফলাইনেডাক দিলেই আড্ডা দেয়া যায়। তবু ডাকছি না। সবারই নিজস্ব জগতের কাজকর্ম আছে। আমার জন্য সৌজন্যের খাতিরে কেউ সময় নষ্ট করবে চাই না।

অথবা

যা ভাবছি তা ঠিক নাও হতে পারে। অধিকাংশ মানুষ ভুল ভাবনার খেসারত দেয় শেষ সময়ে গিয়ে। তখন আর ফেরার পথ থাকে না।


No comments: