সে একদিন চলে যাবে জানতাম। আমাদের গন্তব্য বরাবরই আলাদা ছিল। আমি যে ট্রেনের টিকেট কেটেছিলাম, সেও একই ট্রেনের টিকেট নিয়েছিল, কিন্তু ভিন্ন স্টেশানে। আমরা আলাদা বগিতে উঠেছিলাম। বসার জন্য সিট খুঁজতে খুঁজতে এই বগি সেই বগি ঘুরতে ঘুরতে একটা বগিতে হাজির হলাম দুজন প্রায় একসাথে।
পাশাপাশি দুটো সিট খালি পড়ে ছিল সেটাও কাকতাল হলেও এত মানুষের ভিড়ে দুজনের যে এত গল্প জমে উঠেছিল সেটা কিন্তু কাকতাল নয় মোটেও।
ব্যাপারটা খুব সহজ। আমার কিছু কথা ছিল। তাহার শোনার সময় ছিল। এবং কাংখিত সুত্রের গল্পে মজে যাবার পর আমরা ট্রেন থেকে নামার কথা ভুলেই গেলাম। ফলাফল, দুজনই গন্তব্য ফেলে পার হয়ে গেলাম।
অনেকদূর যাবার পর, অনেক অনেক কথা শেষ হবার পর গল্পের মধ্যে একটা বিতর্কের সুত্রপাত হলো। বিতর্ক থেকে বাকযুদ্ধ, বাকযুদ্ধের পর বাকহীনতা, অতঃপর দুজনেরই সম্বিত ফিরে পাওয়া। অনেক দেরীতে বুঝলাম, আমাদের নির্ধারিত স্টেশন পার হয়ে গেছে! এখন উপায়?
কোন উপায় নেই। হঠাৎ জাগা টর্নেডো রাগের কোন পূর্বপশ্চিম থাকে না। 'তোমার সাথে এই বগিতে থাকার চেয়ে আমি অচেনা স্টেশানে নেমে যাবো'। এই ভাবনায়, পরবর্তী স্টেশান আসতেই সে নেমে গেল। একবারো পেছনে ফিরে তাকালো না।
আমি ভ্রু কুঁচকে কয়েক মিনিট ভাবলাম এবং পরবর্তী স্টেশানে নামার জন্য প্রস্তুত হলাম। দশ মিনিট পরেই পরের স্টেশান। আমিও নেমে গেলাম অনির্ধারিত স্টেশানে।
এবার আমি পেছনে ফিরে যাবার উপায় খুঁজতে থাকলাম। ট্রেন ছাড়ার সময় তাকিয়ে দেখি সেই বগির খালি সিট দুটোতে অন্য দুজন মানুষ বসে কথা বলতে শুরু করেছে। ভাবছি -কিছুক্ষণ পর ওরাও কি গন্তব্য ভুলে যাবে?
মনে হয় না। পৃথিবীতে খুব অল্প পরিমান গল্প আছে যাতে দুজন মানুষ একই সাথে নিজের গন্তব্য ভুলে যেতে পারে। আমরা ছিলাম সেই গল্পের দুটো আলাদা খণ্ড। এখন ফিরে যাচ্ছি দুজনেই। আলাদা স্টেশান থেকে, আলাদা গন্তব্যে। আমাদের এখন কেবল একটাই মিল, দুজনের হাতে দুটো মেয়াদোত্তীর্ণ টিকেট।
No comments:
Post a Comment