Friday, November 24, 2023

উন্নয়নের বিপক্ষে

উন্নতি একটা নেশা- প্রয়োজন নয়। নেশার কারণেই সব মানুষ উন্নতির পেছনে ছোটে। সেটা ইলন মাস্ক হোক কিংবা গণি মিয়া হোক। কিন্তু যথেষ্ট হয়েছে আর উন্নতি চাই না- এই কথা কেউ বলে না। আমার যতকিছুই থাকুক, আরো উন্নতি করতে হবে। উন্নতি না করা একটা অযোগ্যতা। যেন আমরণ শুধু উন্নতি করার জন্য মানুষের জন্ম হয়েছে। উন্নতিই মানুষের একমাত্র লক্ষ্য। এটা খুব হাস্যকর একটা প্রবণতা। তার চেয়ে বড় কথা উন্নতির কারণেই মানবসভ্যতা ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে।

সম্ভবত মানুষের সভ্যতা ধ্বংসের সূচনা হয়েছে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে। যন্ত্রের উন্নতির সাথে মানুষ একের পর এক যেসব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে, তার একাংশে মানুষের মঙ্গল হলেও আরেকটা অংশ মানুষের ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মূলত বিশ শতকের শুরু থেকে মানুষ একের পর এক সভ্যতা বিনাশকারী আবিষ্কার করে যাচ্ছে। অতি দ্রুত শিল্পোন্নয়নের কারণে পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যেমন এই গ্রহের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে, তেমনি মানুষ সচেতনভাবেই পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য যেসব মারাণাস্ত্র তৈরি করেছে সেটাও মানুষকের ধ্বংস ত্বরান্বিত করছে। কিন্তু মহাশক্তিধর দেশগুলো সেদিকে চোখ বন্ধ করে উন্নতি চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ ভাবছে না এত উন্নতির আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা। এত যন্ত্রের উৎপাদনের দরকার আছে কিনা, বছর বছর নতুন গাড়ির দরকার আছে কিনা। বৈশ্বিক উষ্ণতা, পরিবেশ বিপর্যয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব শব্দ কেবল কথার কথা হিসেবে বলা হয়। যাদের দায়িত্বশীল হবার কথা তাদের কেউ দায়িত্বশীল হয় নি। যাদের লাগাম টেনে ধরার কথা তাদের কেউ টেনে ধরছে না।

অথচ মানবসভ্যতাকে বাঁচাতে হলে উন্নতির চাকা থামাতে হবে। শিল্প উন্নয়নকে সীমিত করতে হবে। এত গাড়ি, এত যন্ত্র, এত অস্ত্র, এত আসবাবের প্রয়োজন নেই।

ছোট একটা উদাহরণ দেই। আমরা ১০ টাকা দামের ওয়ান টাইম যে বলপয়েন্ট কলমটা ব্যবহার করি, সেটা রিফিল করার ব্যবস্থা থাকলে আরেকটা কলম কিনতে হতো না। এখন আমরা প্রতি মাসে একটা শিশুর জন্য গড়ে ৫টা কলম কিনি। বছরে ৬০টা কলম লাগে। অথচ রিফিল করার ব্যবস্থা থাকলে হয়তো বছরে ৫টার বেশি কলম লাগতো না। পৃথিবীতে ৩০০ কোটি মানুষের যদি বছরে ৬০টি করে কলম লাগে তাহলে ১৮ হাজার কোটি কলম উৎপাদন করতে হবে। ১৮হাজার কোটি প্লাস্টিক পন্য উৎপাদিত হয় শুধু কলমের জন্য। কলম হলো আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার করা জিনিসের মধ্যে খুব তুচ্ছ একটা জিনিস। তার চেয়ে  অন্যন্য জিনিস অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়। এবং আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের যত জিনিসপত্র আছে তার প্রায় সবগুলোতে কোন না কোনভাবে প্লাস্টিক আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বর্জ্য উৎপাদিত হয় প্লাস্টিক পন্যে। অন্য কিছুর কথা বাদ দিলেও শুধু পলিথিন ব্যাগই যথেষ্ট আগামী একশো বছরে পৃথিবীর সবগুলো নদী নালা সমুদ্রের অর্ধেক ভরাট হয়ে যাবার জন্য।

আমরা যদি চাহিদা না কমাই, তাহলে এসব পন্যের উৎপাদন হতে থাকবে। প্রয়োজনের পাশাপাশি অপ্রয়োজনেও আমরা নতুন নতুন জিনিসপত্র কিনি। প্রতিটি পন্যের সাথে আছে পলিথিন, প্লাস্টিক। নতুন পন্য মানে নতুন প্যাকেজ। নতুন প্যাকেজ মানেই পলিথিন। একটা নতুন পন্য মানেই প্লাস্টিকের একটা বাড়তি টুকরো। একটা নতুন পন্য কেনা থেকে বিরত থাকলে পৃথিবীর একটু উপকার হয়। পৃথিবীর উপকার হলে আপনার ভবিষ্যত প্রজন্ম ভালো থাকবে। আপনি এত ধন সম্পদের সঞ্চয় করছেন ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে। যদি পৃথিবীটা ভালো না থাকে তাহলে আপনার ধন সম্পদ ব্যবহার করেও ওরা নিরাপদ জীবন পাবে না। 

মানুষের চাহিদার কোন শেষ নাই। যার একশো কোটি টাকা আছে তিনি চেষ্টা করেন এক হাজার কোটি টাকার মালিক হতে। যার এক হাজার কোটি আছে তিনি দশ হাজার কোটির দিকে তাকিয়ে থাকেন। এটা রিকশাওয়ালা থেকে বিলিয়নিয়ার সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই চাহিদার পুরোটাই হলো নেশা। এখানে প্রয়োজনের সীমানা আপেক্ষিক ব্যাপার।

আসলে এত উন্নতি কী আমাদের দরকার আছে? মানুষের গড় আয়ু ৭০-৮০ বছর। এই জীবনটুকু কাটানোর জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু হলে নিজেকে থামতে বলেন। আপনি থামলে সভ্যতার উপকার হবে। সত্যি হবে।

মানুষের এই অসীম চাহিদা আসলে কোন উপকারে আসে না। এই বিষয়ে কোথাও নীচের কথাগুলো পড়েছিলাম। কার কথা মনে নেই কিন্তু কথাগুলো বেশ পছন্দ হয়েছিল বলে নোট করে রেখেছিলাম-

We shall all be buried with our relatives and friends in 100 years, just as we were in 2123. Strangers will reside in our homes, which we have worked so hard to build, and they will own all we own now. All of our stuff, even the car we spent a fortune on, will be unknown and unborn, and will most likely be scrapped, preferably in the hands of an unknown collector. Our descendants will have little or no idea who we were, let alone remember us. How many of us are familiar with our grandfather's father? After we die, we will be remembered for a few years, then we will be simply a portrait on someone's bookshelf, and our history, photos, and deeds will vanish into history's oblivion. We won't even be remembered. If we halted one day to consider these things, we might see how foolish and weak the goal to get it all was. If we could simply think about it, our approaches and thoughts would undoubtedly alter, and we would be different individuals. Always wanting more, there is no time for what is truly significant in life. I'd change all this to live and enjoy the walks I've never taken, these hugs I didn't give, these kisses for our children and our loved ones, these jokes we didn't have time for. Those would certainly be the most beautiful moments to remember, after all they would fill our lives with joy. And we waste it day after day with greed, greed and intolerance.

এখানে যে কথাটা বোঝাতে চেয়েছে তার সারাংশ হলো -২১২৩ সালে আপনাকে মনে রাখার মতো একজন বংশধরও হয়তো থাকবে না। মনে রাখলেও সেটা আপনার কোন কাজে আসবে না। আপনাকে মনে রাখার জন্য আপনি এখন হাজার কোটি টাকা খরচ করলেও কাজ হবে না। বরং আপনার এখনকার অতি উন্নতি হয়তো তাদের ভবিষ্যতকে অন্ধকার করে দেবে বলে মনে রাখার বদলে তারা আপনাকে গালিও দিতে পারে। আপনি এখন নিজের উন্নতি করতে গিয়ে ভবিষ্যতের জন্য অন্ধকারের চাষ করছেন। আপনার উন্নতির সেবার করার জন্য তৈরি করা প্রতিটি শিল্পপন্য পৃথিবীর পরিবেশকে দুষিত করছে প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন ৮০০ কোটি মানুষ ৮০০০ কোটি শিল্প পন্য ব্যবহার করছে কোন না কোনভাবে। তাদের সবগুলোই ভবিষ্যতের বিষ।

মোদ্দাকথা হলো- আপনার অপ্রয়োজনীয় উন্নতির নেশাটা লোভ কমাতে পারলে ভবিষ্যত পৃথিবী একটু কম বিষাক্ত হবে।

No comments: