কম্পিউটার, অপারেটিং সিস্টেম এবং
প্রোগ্রাম
Windows 3.1, Word Perfect 5.0,
Lotus123,
আমি জন্মেছিলাম রেডিও
যুগে। কৈশোরে এসে ক্যাসেট প্লেয়ার এবং টেলিভিশনের দেখা পেলাম। তারুণ্যের
দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে ভিসিআর,
ডিশ এন্টেনার সাথে পরিচয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষাংশে পরিচয়
হলো কম্পিউটারের সাথে। সাতদিনে মোট চোদ্দঘন্টা সময় কাটিয়েছি একটি আইবিএম ২৮৬ কম্পিউটারে
সাথে, সেই সময়কালের সবচেয়ে আধুনিক সংস্করণ। Word
Perfect এবং Lotus123 ছিল আমাদের
কম্পিউটারের সেই প্রাথমিক শিক্ষা।
তখনো ডস(DOS) অপারেটিং সিস্টেমে
কম্পিউটার চলতো, যেকানে কমাণ্ড মুখস্ত রাখা সবচেয়ে বড়
চ্যালেঞ্জ ছিল। পড়াশোনা শেষ করে চাকরীতে ঢুকে দেখা হলো
উন্নতমানের একটি কম্পিউটারের সাথে। তখন সমস্ত অফিসে একটি কম্পিউটার থাকলেও সেটাকে
প্রযুক্তিবান্ধব অফিস ধরা হতো। আমাদের অফিসে একটি আইবিএম ৪৮৬ কম্পিউটার ছিল।
সেখানে বাড়তি ছিল উইণ্ডোজ ৩.১ নামের একটি প্রোগ্রাম।
কিন্তু সেই উইণ্ডোজে কী করা হবে তখনো স্থির জানা ছিল না আমাদের। অফিসের সব কাজ
ওয়ার্ড পারফেক্ট এবং লোটাস১২৩ তে হতো। উইণ্ডোজ খুলে আমরা অবসরে গেম খেলতাম,
তাস খেলতাম লুকিয়ে। ও হ্যাঁ কম্পিউটারটি ছিল সম্পূর্ণ রঙিন। যখন
উইণ্ডোজ প্রোগ্রামটি খোলা হতো, তখন পর্দাটা রঙিন হয়ে যেতো,
ওটাই ছিল একটা বিনোদন। সেই উইণ্ডোজ যে ভবিষ্যত পৃথিবী দখল করতে
পারে সেটাও তখন ভাবা যায়নি। সময়টা খুব বেশী প্রাচীন তাও নয়, ১৯৯৫ সালের মাঝামাঝি। তার এক-দেড় বছরের মধ্যে বিশ্বজোড়া উইণ্ডোজের
রাজত্ব শুরু হয়। বিপ্লবটি শুরু হয় উইণ্ডোজ ৯৫ নামক অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে। সেই
থেকে শুরু হয় কম্পিউটার যুগের বর্তমান ধারার সূচনা।
পুরো অফিসের জন্য কেনা
হলেও সেটা চালাবার বিদ্যা আমাদের দু চার জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, যার মধ্যে অধিকাংশ আমার
দখলে থাকতো ডকুমেন্টের কাজ ছিল বলে। ওয়ার্ড পারফেক্টের ব্যাকগ্রাউণ্ড পর্দাটা ছিল
নীল, তার উপর সাদা ফন্টে লেখা হতো। কুরিয়ার ফন্ট সবচেয়ে
জনপ্রিয় ছিল, যার চেহারা টাইপ মেশিনের সাথে মেলে।
উইণ্ডোজ ৯৫ এর মাধ্যমে যে
নতুন যুগের সূচনা হয় সেখানে ওয়ার্ড পারফেক্টের জায়গায় চলে আসে এমএস ওয়ার্ড, লোটাসের জায়গা দখল করে
এক্সেল। এই সবগুলোই মাইক্রোসফটের তৈরী। আমরা পুরোনো যুগ পেছনে ফেলে নতুন যুগের সাথে
তাল মেলাতে থাকি।
প্রথম প্রিন্টার
Epson 1170
কম্পিউটারের সাথে ছিল
একটা প্রিন্টার মেশিনও। মডেল সম্ভবত এপসন ১১৭০, ডট মেট্রিক্স প্রিন্টার। বিপুল শব্দ করে প্রিন্ট করতো।
কেউ প্রিন্ট কমাণ্ড দিলে সমস্ত অফিসে জানা হয়ে যেতো।
ইন্টারনেটে জগতে প্রথম
পদক্ষেপ
Eudora, Netscape Explorer, Internet
Explorer
এমন সময় একদিন পত্রিকায়
পড়ি পৃথিবীতে নতুন এক বিপ্লবের সূচনা হতে যাচ্ছে যার নাম ইন্টারনেট। তখনো পর্যন্ত
আমাদের অফিসের সকল যোগাযোগ কার্যক্রম ছিল টেলিফোন এবং ফ্যাক্স নির্ভর। ফ্যাক্স
ব্যাপারটাই ছিল আমাদের জন্য একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। টেলিফোনের সাথে সংযুক্ত একটা
যন্ত্রের ভেতর একটা কাগজ ঢুকিয়ে দিলে সেটা হুবহু কপি হয়ে যেতো সুদূর কোন অফিসে, পৃথিবীর যে কোন
প্রান্তে। সেখান থেকেও একইভাবে চিঠিপত্র ডকুমেন্ট চলে আসতো নিমেষের মধ্যে। ফ্যাক্স
মেশিন ছাড়া আমরা একদিনও চলতে পারতাম না। সকালে অফিসে ঢুকে প্রথম এবং প্রধান কাজ
ছিল ফ্যাক্স মেশিনের কাছে গিয়ে রাতে এসে জমা হওয়া বস্তা বস্তা মেসেজ এবং ডকুমেন্ট
জড়ো করে ফাইলভুক্ত করা। তারপর সেইসব মেসেজের জবাব লিখতে বসা। বস্তা বস্তা ফ্যাক্স
প্যাড ছিল অফিসে। সেই ফ্যাক্স ব্যবস্থার চেয়ে অধিকতর উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা
আবিষ্কার হয়েছে শুনে আমরা বিস্মিত এবং আনন্দিত। পত্রিকায় পড়ার কয়েক মাস পরে একদিন
অফিসে এসে হাজির হলো ইন্টারনেট ওয়ালা। এক আইটি কোম্পানী এসে জানালো তারা সেই
প্রযুক্তির অধিকারী হয়েছে, আমরা চাইলে সেই প্রযুক্তি
ব্যবহার শুরু করতে পারি। লাগবে শুধু একটি টেলিফোন লাইন, সাথে
একটা মডেম। কম্পিউটার এবং টেলিফোনের সাথে মডেম যুক্ত করে দিয়ে ডায়াল-আপ নামের একটা
প্রোগ্রাম চালু করলে সেটা বিচিত্র শব্দ সহকারে যুক্ত হয় আইটি কোম্পানীর সার্ভারের
সাথে, যুক্ত হবার পর নির্ধারিত আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিলে
আমরা সরাসরি ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করে ফেললাম। সেই প্রথম কী শিহরণ, কী আনন্দ! ডস সিস্টেমের কালো পর্দায় সাদা ফন্টে হাবিজাবি কতকিছু লেখা
দেখা গেল, কিছু বুঝলাম না। তখনো উইন্ডোজ সিস্টেমের ডায়াল
আপ চালু হয়নি। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই ইন্টারনেট কিভাবে সাহায্য করবে তার বিস্তারিত
কিছুই জানি না। www দিয়ে পর্দার একটা জায়গায় টাইপ কোন
ঠিকানা লিখলে সেখানকার লেখাজোকা চলে আসে। তবে সবই টেক্সট, কোন গ্রাফিক্স তখনো চালু হয়নি। পরীক্ষামূলকভাবে সেই আদিম সিস্টেমের
ইন্টারনেট কদিন দেখে শখ মেটালাম কয়েক হাজার টাকা গচ্ছা দিয়ে।
এর বছরখানেকের মধ্যে উইণ্ডোজ ৯৫ চালু হয়ে গেলে, আসল ডায়াল আপ কানেকশান নেয়া হলো। শুরু হলো উইণ্ডোজ ভিত্তিক নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইমেইলের জন্য ইউডোরা নামের একটা প্রোগ্রাম ছিল, সেটা দিয়েই আমাদের নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু হলো ১৯৯৭ সাল থেকে। ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য ছিল ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এবং নেটস্কেপ এক্সপ্লোরার। এই পর্যায় থেকে সত্যিকারের ইন্টারনেট যোগাযোগ শুরু হয় আমাদের অফিসে। ১৯৯৭ সালে শুরু হ্ওয়া সেই ধারার কয়েকটি নমুনা দেয়া হলো নীচে।
(উপরে ছবি-১: কম্পি্টার মডেম, ছবি-২: ডায়াল করার স্ক্রিন, ছবি-৩: ইন্টারনেটে যুক্ত হবার পরের স্ক্রিন। )
নব্বই দশকের আদিযুগের কম্পিউটার ব্যবস্থার বিবরণ আপাতত এখানেই সমাপ্ত
এর বছরখানেকের মধ্যে উইণ্ডোজ ৯৫ চালু হয়ে গেলে, আসল ডায়াল আপ কানেকশান নেয়া হলো। শুরু হলো উইণ্ডোজ ভিত্তিক নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইমেইলের জন্য ইউডোরা নামের একটা প্রোগ্রাম ছিল, সেটা দিয়েই আমাদের নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু হলো ১৯৯৭ সাল থেকে। ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য ছিল ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এবং নেটস্কেপ এক্সপ্লোরার। এই পর্যায় থেকে সত্যিকারের ইন্টারনেট যোগাযোগ শুরু হয় আমাদের অফিসে। ১৯৯৭ সালে শুরু হ্ওয়া সেই ধারার কয়েকটি নমুনা দেয়া হলো নীচে।
(উপরে ছবি-১: কম্পি্টার মডেম, ছবি-২: ডায়াল করার স্ক্রিন, ছবি-৩: ইন্টারনেটে যুক্ত হবার পরের স্ক্রিন। )
নব্বই দশকের আদিযুগের কম্পিউটার ব্যবস্থার বিবরণ আপাতত এখানেই সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment