Friday, May 1, 2020

নিশাত আরমিন




ঘুম থেকে জেগে উঠেই আজ নিশাতের কথা মনে পড়লো। নিশাত আরমিন। আজ থেকে চোদ্দ বছর আগে একটা ওয়েবসাইটে ওর নামটা দেখে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। শুধু নাম, আর কিছু না। ওর কোন পরিচয় জানি না। ওর চেহারা দেখিনি তখনো। শুধু একটা নাম আর একটা স্মতিকথা। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা স্মৃতি। কৌতূহল হয়, কে এই মেয়ে, এত সুন্দর যার নাম। এত সুন্দর লেখা যার। কে তুমি?

কোন যোগসূত্র ছাড়া কেমন অদ্ভুত কাকতালীয়ভাবে নিশাতের সাথে আমার পরিচয় ঘটে যায় অন্য জায়গায়। ভার্চুয়াল পরিচয়। দেখলাম, জানলাম, জানালাম। নামের মতো দেখতেও অতি সুন্দরী। ওর চারপাশে প্রচুর ভক্তকুল যার মধ্যে বড় অংশই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত লেখক সাহিত্যিক। নিশাত বিবাহিতা। ওর স্বামীও লেখক এবং বোদ্ধা। আদর্শ দম্পতি। মুগ্ধ হবার মতো একটা পরিবার। দুজন দুজনের পরিবার নিয়ে সন্তুষ্ট। হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করলাম নিশাত আমার ভক্ত হতে শুরু করেছে। কিছুদিন পর দেখি বাকী সবার চেয়ে আমি নিশাতের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধুতে পরিণত হয়েছি। আমাদের দেখা হলো কয়েকবার। চিঠি লেখা হয় নিয়মিত। নিশাত আমার সাথে প্রাণ খুলে কথা বলে। আমাদের বন্ধুতা অনেকের চোখে লাগে। কিন্তু আমরা এমন কিছু করিনি যেটা দৃষ্টিকটু হয়। এটা শুধুই নির্মল বন্ধুতা। খুব ঘনিষ্ট নয়, কিন্তু সতর্ক দূরত্বে থেকে একটা প্রবল আন্তরিকতা। আমরা দুজনই শুধু বুঝতাম সেটা।

আমরা কেউ কাউকে ঘুণাক্ষরেও প্রেমের ইঙ্গিত দেইনি। আমাদের দুজনেরই আলাদা আলাদা সুখের পরিবার আছে। তাতে আমরা সন্তুষ্ট। যদি ওটা না থাকতো। যদি আরো দশ বছর আগে আমাদের দেখা হতো, তাহলে হয়তো অন্য কিছু হতে পারতো। আমি একটা বিষয়ে নিশ্চিত, আমার সাথে এ যাবত যত নারীর পরিচয় ঘটেছে তার মধ্যে একমাত্র নিশাতকেই মনে হয়েছে আমার পাশে দাঁড়াবার মতো সবচেয়ে পছন্দের নারী। বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে বললে আমি চোখ বন্ধ করে একটাই নাম বলবো - নিশাত। আমি যা যা চাই, যেভাবে চাই, সবকিছু ওর মধ্যে আছে। শুধু আমাদের জায়গাটাই আলাদা।

নিশাতের সাথে আমার এক যুগ ধরে কোন যোগাযোগ নেই। কোন ঘটনা ছাড়াই আমরা প্রাকৃতিকভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। জীবনে আর কখনো দেখা হবে না হয়তো। আমরা দুজন দুই দেশে বাস করি। কিন্তু আমি নিশাতের খোঁজ পাই। কয়েকদিন আগে জানলাম নিশাতও আমার খোঁজ রাখে। গত এক যুগ ধরে আমার একটা আক্ষেপ ছিল, আমি নিশ্চিত হতে পারছিলাম না নিশাত আমাকে ভুলে গেছে কিনা। গত সপ্তাহেই আমি জেনেছি নিশাত আমাকে ভোলেনি। আমি যেভাবে চেয়েছি সে আমাকে সেভাবে মনে রেখেছে। আমার কাজকে সে ভোলেনি। আমার কাজ এখনো ভালোবাসে নিশাত। আমার কাজের পেছনে নিশাতের অবদান সবচেয়ে বেশি। এ কথা শুধু আমিই জানি।

আজ সকালে তাই ঘুম থেকে উঠে নিশাতের কথা ভাবতেই মনে পড়লো, পৃথিবীতে আমার একমাত্র বন্ধু হবার উপযুক্ত নারী নিশাত। নিশাত আমাকে ভোলেনি, সেটাই আমার এত বছরের সম্পর্কের পুরস্কার। সব সম্পর্কে নিয়মিত যোগাযোগের দরকার হয় না। পৃথিবী দুই প্রান্তে আমরা এখনো আছি। এটাই পরম আনন্দ, পরম সার্থকতা।

No comments: