Sunday, March 1, 2015

পুরোনো সেই বেয়াদব

রিপনকে নিয়ে হোটেলে বসে চা নাস্তার অর্ডার দেয়া শেষে দেখি পাশের টেবিলে তাহের ওরফে তাইজ্জা বসা। পাড়ার ঝুপড়ি হোটেল, অনেক বছর পর এখানে আসলাম। সেই তাইজ্জা এখনো আছে! বয়স বেড়েছে, মুখে খোঁচাখোঁচা কাঁচাপাকা দাড়িগোঁফ, চোয়াল ভাঙ্গা, কপালে কাটা দাগ, চোখে সেই কুৎসিত চাউনি। এরকম বিদঘুটে ভয়ংকর চেহারা আমি খুব বেশী দেখিনি। এক নজরে্‌ই বলে দেয়া যাবে অপরাধজগতেই তার বিচরণ।

প্রায় বিশ বছর পর দেখছি ওকে, বয়স বাদে এখনো তার স্বভাব চরিত্র বদলায়নি মনে হচ্ছে। আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকালো। চিনতে পেরেছে নিশ্চয়ই। আমি তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলাম। মনে পড়লো কী ভয়ংকর দুর্ধর্ষ অপরাধী এই লোকটা। পাড়ার একটা বাড়িও শান্তিতে ঘুমাতে পারতো না। কোন মেয়েই নিরাপদ ছিল না ওর কাছ থেকে। সে কোন বাড়ির সামনে গিয়ে গলা চড়িয়ে ডাক দিলে সেই বাড়ির লোক ভয়ে কাঁপতে থাকতো। টাকা দিবি, নাকি মেয়েটারে তুলে নিবো? যে কেউ বাড়ি করতে মালপত্র আনলে সাথে সাথে হাজির। টাকা দিবি না কি নালায় ফেলে দেবো? তখন এলাকা আরো নির্জন ছিল, কেউ থানা পুলিশের ঝামেলা করলে তার উপর মহাদুর্যোগ নেমে আসতো।

আমার সাথে শুধু একবার ঝামেলা হয়েছিল। সচরাচর সে আমাকে ঘাঁটাতো না, আমিও তাকে কিছু বলতাম না। তার কাজে বাধা দেবার মতো দুঃসাহসও ছিল না আমার। মনে মনে রাগ পুষে সয়ে নিতাম।

একদিন আর পারা গেল না। আমি ভার্সিটি থেকে ফিরে শুনলাম, সে আমাদের ঠিক সামনের বাসায় এসে হামলা করেছে, ওদের মালপত্র ফেলে দিয়েছে, বাধা দিতে গেলে আমার বাবার সাথেও বেয়াদবী করেছে। বলেছে আমাদেরকেও দেখে নেবে। রাতে এটাক করবে। ঘরের সবাই দুশ্চিন্তায়।

নাহ আর বাড়তে দেয়া যায় না। সেই রাতে এক ক্যাডার বন্ধুকে ডেকে এনে দুজনে দুটো রিভলবার নিয়ে মুখোশ পরে রাস্তায় নামলাম। ওদের দলটা আমাদের দেখলো। আমরা অস্ত্র দুটো টর্চের আলোয় দেখিয়ে দিলাম। তারপর ওদের দিকে আগাতে থাকলাম। আমাদের দুজনের মাথায় কালো দুটো মাংকিক্যাপ। মুখোশের মতো এঁটে হাঁটতে লাগলাম। রাতের বেলা দুজনকে ভয়ংকর লাগছিল। ওরা উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করলো। আমরা ওদের পিছন পিছন হাটছি। ওরা আরো দ্রুত এলাকা ছাড়িয়ে চলে গেল। আমরা ঘরে ফিরে এলাম। নাক ডেকে ঘুমোলাম। সকালে দুই গালে হাসলাম। খেলনা রিভলবার দিয়ে এতটা দাবড়ানি দেয়া যাবে নিজেরাই বুঝিনি। বুঝলাম সাহসটাই সব, বাকী সব প্রদর্শনীর খেলা।

সেই তাইজ্জা। তার সবকিছু ছাপিয়ে একটাই মনে পড়লো। বেয়াদব। ওর মতো চরম বেয়াদব আমি আর একটাও দেখিনি জীবনে। আমি অনেক কিছু সহ্য করতে পারলেও বেয়াদব লোক দুচোখে দেখতে পারি না। তাইজ্জাকে ঘেন্না করার অনেক কারণের মধ্যে তার বেয়াদবীটাই মনে থাকবে অনেক কাল।

আমরা চা নাস্তা শেষ করলাম। তারপর উঠলাম। তাইজ্জা তখন সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে আর কিছু একটা ভাবছে। মুখে তার কুৎসিত হাসি। হাসি দিয়েই সে কিভাবে যেন বেয়াদবী করতে জানে। আমাকে দেখেই হাসলো কিনা বুঝলাম না। আমার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলেও কিছু বললাম না। রিপনকে বললাম, চল উঠি।

No comments: