Saturday, February 7, 2015

নতুন রুটিনের দিনযাপন


১.
নতুন রুটিনে জীবন কেমন যাবে সেটা নিয়ে সামান্য অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু কদিন যেতেই নতুন রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম এবং উপভোগ করতে শুরু করলাম এই জীবনটাকে। এরকম জীবন আগে কখনো আসেনি। একদম নিজস্ব সময়। কোথাও কোন শাসন বাধন নেই। কোথাও জীবিকার পিছুটান নেই। যখন ইচ্ছে যেখানে ইচ্ছে যেতে পারি। যত দেরীতে ইচ্ছে ঘুমোতে পারি। যত দেরীতে ইচ্ছে উঠতে পারি। রাত দুটোয় ঘুমোই সকাল দশটায় উঠি। মাঝরাতে নিজের মতো করে চা বানিয়ে খাই তারিয়ে তারিয়ে, চোখের সামনে খোলা থেকে ল্যাপটপের কোন ই বই অথবা প্রিয় কোন লেখার খাতা। কখনো কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনি। আমার মুক্ত সময়ের বেশ কিছুকাল আনন্দেই কেটে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছু পড়ি, কিছু দেখি, মেইল চেক করি, ব্লগ ফেসবুকে উকি দেই, তারপর ঘরের অফিসে নিজের কিছু কাজ করি। কাজ সারতে সারতে দুপুর। দুপুরে খেয়ে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ি নিজের অফিসে। আমার নতুন প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছি। ওটার জন্য দুপুর দুটো থেকে সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত সময় দিতে হয়। অর্থোপার্জনের জন্য দৈনিক বরাদ্দ পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা। এর বেশী নয়। জেগে থাকার অধিকাংশ ঘন্টা মিনিট আমি আনন্দদায়ক কাজে ব্যয় করতে চাই। গত বিশ বছর আমি জীবিকার জন্যই ব্যয় করেছি দিনের ৬০ ভাগ সময়। জীবনের শেষ পর্বে পা দিয়ে জীবিকার অংশে সময় কমিয়ে আনন্দের অংশে বাড়িয়ে দিয়েছি। আনন্দ মানে ফূর্তি নয়, স্বস্তিময় কাজে ব্যয় করা। পড়াশোনা, লেখাজোকা এসব নিয়ে যে কাজ তাতে আনন্দের ভাগই বেশী। আপাততঃ সেই কাজটা নির্বিঘ্নে করতে পারছি।

২.
অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটলো আজ। অথবা গতকাল। গতকালই ঘটেছে, দেখেছি আজ সকালে। আমার দুটো মেইল একাউন্ট আছে, একটা ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য, অন্যটা অফিশিয়াল যোগাযোগের জন্য। দুটোই জিমেইল। সকালে ব্যক্তিগত মেইলটাতে ঢুকে দেখলাম আমার অফিশিয়াল ঠিকানা থেকে একটা মেইল। আমি সচরাচর অফিসের মেইল মোবাইল থেকে চেক করি। ব্যক্তিগত মেইলগুলো ল্যাপটপ খুলেই চেক করি। এটা পুরোনো অভ্যেস। যদিও আজকাল আমাকে ব্যক্তিগত চিঠি লেখার কেউ নেই, কিন্তু পুরোনো অভ্যেসটা চালু রেখেছি। তো নিজের আরেকটা একাউন্ট থেকে মেইল দেখে অবাকই হলাম। মেইল খুলে দেখি কোন বার্তা নেই, কতগুলো ছবি। এই ছবিগুলো আমার ল্যাপটপে সেভ করা আছে, মোবাইলে নেই। অবাক হলাম খুব। কেননা আমি গতকাল দুপুর তিনটায় আমার মেইলেই ঢুকিনি। তখন আমি পড়ার ঘরে বসে বসে জাকির তালুকদারের 'মুসলমানমঙ্গল' বইটার শেষ অংশ পড়ছিলাম। ওই ঘরে ইন্টারনেট কানেকটিভিটি নেই। মেইলও খোলা ছিল না তাই। মোবাইল দিয়ে আমি কখনো মেইল পাঠাই না। সুতরাং মোবাইল দিয়ে এক্সেস করেছি তাও বলতে পারছি না। তাছাড়া ওই ছবিগুলো মোবাইলে নেই। এমন অদ্ভুত ঘটনা কি করে ঘটলো ভেবে পাচ্ছি না। কোন হ্যাকার আমার একাউন্টে ঢুকে কাজ সেরেছে? তাও তো হবার নয়। তখন তো নেটই ছিল না। আর ছবিগুলো তো আমার হার্ডড্রাইভের। ব্যাপারটা যতটা বিস্ময়ের তারচেয়ে বেশী আশংকার। এখন কি টেকনোলজি এতদূর এগিয়ে গেছে যে নেট ছাড়াই একাউন্ট হ্যাক করা যায়? ঘটনাটি রহস্যময় থেকে যাবে মনে হচ্ছে।

No comments: