Sunday, October 26, 2014

অর্থপূর্ণ কিংবা অর্থহীন কিছু দুঃস্বপ্ন

চেনা রাস্তায় কোন এক অচেনা কবরখানা। আমি একটি কবরের সামনে দাঁড়িয়ে। কবরটি কয়েকটি ইস্পাতের ঢাকনা দিয়ে ঢাকা দেয়া। আমি স্টীল পাইপের ফ্রেমগুলো তুলে ঢাকনা খুলে কবরটা উন্মুক্ত করলাম। কবরে সাদা কাফন পরে শুয়ে আছে যে লাশটা সে আমার খুব প্রিয়জন, তার চলে যাওয়া অনিবার্য হয়েছিল বলে সে চলে গিয়েছে, আমার কোন ভয় শোক তাপ কিছুই লাগছিল না। যেন খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা। আমি লাশটির মাথার পাশে রাখা একটা পুটুলি দেখলাম। সে পুটুলিতে কি আছে মনে নেই। কিন্তু আমি দেখছিলাম পুটুলিটি ঠিকঠাক আছে কিনা। সদ্য কবর দিয়ে সবাই চলে যাবার পর আমি নিশ্চিত হতে এসেছিলাম জিনিসটা ওখানে দেয়া হয়েছিল কিনা। দেখে নিশ্চিন্ত হলাম। এরপর লাশের শরীর স্পর্শ করে দেখলাম, তখনো শক্ত হয়ে যায়নি। আমি কবরের ঢাকনাগুলো আবার জায়গামতো বসিয়ে দিয়ে উঠে পড়লাম।

কিছুদুর হেঁটে গিয়ে আবারো কবরের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময় হঠাৎ চমকে দেখি লাশটা কবর থেকে উঠে কবরের পাশে একটা স্টিলের খাটিয়ায় শুয়ে আছে। মাথাটা একটু উঁচু করা। কাফনে ঢাকা শরীরের মাথার অংশটা খোলা। সেই খোলা অংশে দেখা যাচ্ছে ওর অনিন্দ্যসুন্দর মুখটি। আমি স্পষ্ট দেখলাম সে হাসছে আমার দিকে চেয়ে, সেই চিরপরিচিত হাসি। অশ্রু সরিয়েও যে মুখে হাসি ফোটে সেই ম্লানসুন্দর হাসি। সেই হাসির কোন অর্থ আমি বুঝতে পারলাম না। বুকের ভেতর কেমন করে উঠলো। না কষ্ট না ভয় একটা অনুভুতি। আমার কিছু করার নেই। কিছু জানার উপায় নেই।

আমি ফিরে চলে আসলাম। কিছুদূর গিয়ে
বাদামতলী মোড়ে পৌঁছে আবার ফিরতে চাইলাম। কোথায় ফিরছি জানি না। আমি তখন আখতারুজ্জামান সেন্টারের উল্টোদিকে। আমি রাস্তা পেরিয়ে কেন যেন দক্ষিণ দিকে যাচ্ছিলাম। যে রাস্তায় লাশটা দেখে এসেছি সেই দিকেই কী?

রাস্তা পেরোতে গিয়ে দেখলাম পূর্বদিকে আগ্রাবাদ হোটেলের দিক থেকে গোঁ গোঁ শব্দে একটা হেডলাইটবিহীন অন্ধ ট্রাক ছুটে আসছে, চারপাশ অন্ধকার, সড়কবাতি জ্বলছে না, আশপাশের কোন দালানেও নেই বাতির আভাস, যেন এক অন্তহীন ব্ল্যাকআউট, সেই ব্ল্যাকআউটের মধ্যে পূর্বদিক থেকে ছুটে আসা ট্রাকটা দেখে আমি রাস্তাটা দ্রুত পেরিয়ে যেতে চাইলাম, কিন্তু হঠাৎ আমার চোখের উপর একটা অন্ধকার পট্টি পড়ে চারপাশ নিকষ কালিতে ঢেকে দিল, তখন আমি আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না, চোখ থেকে পট্টিটা নামানোর প্রানান্তকর চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হলাম তখন দিগ্বিবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে অন্ধের মতো ছুট লাগালাম মাথাটা নীচু করে, কিন্তু ছুটতে গিয়ে টের পেলাম আমি দিক হারিয়ে ফেলেছি, আমি চরকির মতো ঘুরতে শুরু করেছি, উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম সবকিছু আমার কাছে অর্থহীন হয়ে গেল, আমি যে কোন একটা দিকে ছুটে হেডলাইটবিহীন অন্ধ ট্রাকের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করলাম, যদিও জানি ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে আমাকে পিষে দিয়ে ট্রাকটি শরীরের উপর দিয়ে পেরিয়ে যাবে যে কোন সময়।

ঠিক তখন গোঁ গোঁ শব্দ নিয়ে পার্শ্ববর্তিনীর ধাক্কায় ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। 
আমি বেঁচে আছি! ওটা নিতান্তই এক দুঃস্বপ্ন ছিল। স্বপ্নগুলোর হয়তো কোন মানে নেই, হয়তো আছে। সময়ের কাছে এর কোন ব্যাখ্যা থাকলে থাকতে পারে কিন্তু আমার নিজের কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে ইচ্ছে করছে না। আয়ুষ্কাল সমাপ্ত হবার পর কেউ হয়তো স্বপ্নগুলোর অর্থ খুঁজে পাবে। কে জানে? এক রাতে আধডজন স্বপ্ন হানা দিয়েছে যার প্রায় প্রতিটিই ভয়ংকর। কিন্তু বাকী স্বপ্নগুলো ভোর হবার আগেই মুছে গেছে স্মৃতি থেকে।

No comments: