Wednesday, September 26, 2012

আন্তর্জালিক আচ্ছন্নতা

শাহানা পাশ ফিরে শুয়ে আছে।

বিরক্ত লাগছে তার। রাকিবকে নাকি নিজেকে নাকি.........। বুঝতে পারছে না। রাকিব আজ রাতে আর কথা বলবে না। কাল সকালে উঠে নাস্তা না করে অফিসে চলে যাবে। শৈলিকে স্কুলে দিয়ে এসে শাহানার সারাটা দিন বিষবিষ লাগবে। এই বিষ তার নিজেরই সৃষ্টি। রাকিবকে ওভাবে প্রত্যাখ্যান না করলেও চলতো। কখনো করেনি। বিয়ের পর এই প্রথম। দশ বছরের মাত্র একবার প্রত্যাখ্যান করেছে তাতেই রাকিব ওরকম রিএক্ট করলো! অথচ রাকিব ওকে কতো বার, অগুনতি সময় প্রত্যাখ্যান করেছে। যখন রাকিবের ইচ্ছে করে তখনই হয়। শাহানার কিছু বলার নাই। এটা মেনেই শাহানা এতগুলো বছর কাটিয়েছে ওর সাথে। আশ্চর্য! নারী বলে তার কোন মত নেই? নিষিদ্ধ চার পাচদিন বাদে বাকী দিনগুলোতে সে স্বামীর ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য? এমনকি জ্বর শরীরেও শাহানা সয়ে গেছে। স্বামীর চাহিদা মেটানো অতি আবশ্যক- এই শর্ত বিয়ের কোন কাগজে লেখা ছিল! এসব কি কাউকে বলা যায়?

রাকিবের নাক ডাকার শব্দ আসছে না এখনো। তার মানে সে ঘুমায়নি এখনো। রেগে ফুলে আছে। যখন রেগে ফুলে থাকে তখন সে মটকা মেরে পড়ে থাকে, ঘুমায় না। ঘুমালে নাক ডাকার শব্দ পাওয়া যায়। সেই শব্দ পাওয়ার পরই শাহানার ঘুম আসে। আজ রাতে শাহানারও ঘুম আসবে না। দুজনেই হয়তো সারারাত নিঃশব্দে জেগে থাকবে। খুব অস্বস্তি হচ্ছে শাহানার। রাকিবের জন্য এটা খুব বড় একটা শক। এই প্রথম রাকিব গায়ে হাত দেয়ামাত্র ঝটকা মেরে হাতটা সরিয়ে দিয়ে চুড়ান্ত বিরক্তি প্রকাশ করেছে শাহানা। শব্দ দুটোর জন্যও এখন শাহানা মনে মনে লজ্জিত।

কিন্তু কি করবে। সে একটা নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলেছে আজ। শহীদ ভাইয়ের সাথে একমাস আগে নতুন করে পরিচয় হবার সময়ও কল্পনা করেনি এমন কিছু।
শাহানার বাবা রেলওয়েতে চাকরী করার সময় ওদের পাশের টিলায় শহীদ ভাইদের বাংলো ছিল। শহীদ ভাইয়ের বাবাও রেলওয়েতে চাকরী করতেন। ছেলেবেলায় শাহানা আর শহীদ পাশাপাশি বড় হলেও কেউ কারো সাথে তেমন কথাবার্তা বলতো না। শহীদ ছিল একটু মুখচোরা।  শাহানা ইন্টার পাশ করার পরপর শহীদের বাবা বদলী হয়ে ঢাকা চলে যায়। শাহানার কিছু মনেই নাই ওদের কথা। কিন্তু সেদিন ফেসবুকে একটা ফ্রেণ্ড রিকুয়েষ্ট এলো। শরীফুল ইসলাম। নামটা অচেনা। তবে তিনজন মিচুয়াল ফ্রেণ্ড দেখা যাচ্ছে। ওই তিনজন আবার ওর ঘনিষ্ট বন্ধুদের অন্যতম। তাই দ্বিধা না করে শাহানা গ্রহন করে নিল বন্ধু তালিকায়। ওমা, সাথে সাথে মেসেজ চলে আসলো এর কাছে। দীর্ঘ একটা মেসেজ। শাহানা অবাক। সে এরকম কারো কাছ থেকে মেসেজ আশা করেনি। চেনা কেউ না এমনকি আধচেনাও না। কিন্তু চিঠির শেষে নামটা দেখে চমকে উঠলো। শহীদ। তার মানে শহীদ ভাই! যার সাথে কোনদিন কথাও বলেনি। সে এত বড় একটা চিঠি লিখে বসেছে? তার বুকটা কেমন একটু কেঁপে উঠলো। আনন্দ নাকি ভয় বুঝতে পারলো না। ১৫ বছর আগের কথা!

রাকিব আছে বাসায়। সে দেখলে কি মনে করবে? শাহানার কোন প্রাইভেসী নেই রাকিবের কাছে। রাকিবই ওর প্রায় সব মেসেজের উত্তর লিখে দিত। কারণ শাহানা কম্পিউটারে কাঁচা। আজকাল কিছু কিছু  শিখে উঠেছে। তবু সে রাকিবকেই ডাক দেয় কিছু লিখতে পড়তে। ফলে ওর সব বন্ধবান্ধবের খোঁজ জানে রাকিব। কখনো কোন সংকোচ লাগেনি ওর কাছে। রাকিবই ওর জীবনের সব, ওর কাছে গোপন রাখার মতো কিছু থাকতে পারে কোনদিন ভাবেনি। কিন্তু আজকের এই মেসেজটা তাকে উলটপালট করে দিল। এটা রাকিবকে দেখানোই যাবে না। রাকিব এসে দেখে ফেলবে ভয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে দিল ঝট করে।

রাতে ঘুম হলো না সেদিন। সারারাত চিঠির অক্ষরগুলো চোখের সামনে ভেসেছে। এটা কি লিখলো শহীদভাই এতদিন পর। তিনি নিজে বিবাহিত, একটা ছেলে আছে পাচ বছরের। শাহানাও বিবাহিতা, তারও আট বছরের মেয়ে আছে একটা। দুজনেই সুখী সংসার করছিল। এত বছর পর হঠাৎ এটা কি শোনালো শহীদ ভাই। যে মানুষ কোনদিন চোখ তুলেও তাকায়নি সে মানুষ তাকে এতকাল ধরে পাগলের মতো ভালোবাসছে, এমনকি বিয়ের পরও তার কথা একদণ্ড ভোলেনি! শাহানার বিয়ের খবর পেয়ে উনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। এসব কিছুই জানে না শাহানা! সে এমন কোন আহামরি সুন্দরী না। কেউ তাকে কখনো প্রেমের ঈঙ্গিতও দেয়নি জীবনে। যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার সাথেই সবকিছু। রাকিব ছাড়া কার কাউকে ভাবতে পারতো না সে। কিন্তু সেদিন শহীদ ভাইয়ের চিঠি পেয়ে তার বুকের ভেতর ভাংচুর শুরু হয়েছিল।

পরদিন রাকিব অফিসে গেলে শাহানা নেট খুলে ফেসবুকে ঢুকলো। ভেবেছিল সে যৌক্তিক একটা চিঠি লিখবে। কিন্তু লেখা শেষ করে সে নিজেই চমকে গেল। এসব কি লিখেছে সে। শহীদ ভাইয়ের চেয়ে তার অবস্থাও খুব বেশী ভালো না। সে কখন শহীদভাইয়ের প্রেমে পড়ে গেছে। এই চিঠি পেয়ে নাকি ১৫ বছর আগে? শাহানা জানে না। সে কেবল জানে এই লোকটা তাকে টানছে খুব। সেদিন থেকে নেশা হয়ে গেছে তার। প্রতিদিন শহীদ ভাইয়ের সাথে চিঠি চালাচালি। দুরুদুরু বুকে। চিঠি থেকে চ্যাট শুরু। ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট। ঘরের কাজ মাথায় উঠলো। রাকিব ঘরে ফিরলে আগের মতো ছুটে যায় না দরোজা খুলতে। কাজের মেয়েটা দরোজা খুলে দেয়। রাকিব এসে দেখে শাহানা বিছানায় শুয়ে আছে বাতি নিবিয়ে। শরীর খারাপ? কপালে হাত রাখে রাকিব। সে বলে মাথাটা ধরেছে। রাকিব বলে দাড়াও আমি টিপে দিচ্ছি বাম লাগিয়ে। সে তাড়াতাড়ি উঠে বসে। আগে এই জিনিস প্রিয় ছিল তার। রাকিব ওর কপাল টিপে দিলে সে আরামে ঘুমিয়ে পড়তো। কিন্তু আজকাল তার সামান্য স্পর্শও বিরক্ত লাগে।

আজ দুপুরে শহীদভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে কেমন আচ্ছন্নতা চলে আসলো। শহীদভাই হঠাৎ ওকে বলে বসলো, তোমাকে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে শানু। এই কথা শুনে ওর সমস্ত শরীরে যেন বিদ্যুত বয়ে গেল। এত বছরের বিবাহিত শরীরটা যেন নিমেষে কুমারীত্বে চলে গেল, সে যেন হয়ে উঠলো নবীন অনভিজ্ঞ ষোড়শী তরুণী। চুপ করে থাকলো। শহীদভাই মৌনতাকে সম্মতি ধরে চ্যাটের মধ্যেই ভার্চুয়াল চুমু খেল তাকে। সে তখনো চুপ। তার সমস্ত শরীরের রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে যেন। শহীদভাই তাকে জড়িয়ে ধরে আদর খেতে শুরু করলো। এমন করে আদর করছে যেন সে তার পাশে বসে আছে। একই ঘরে। সে নিজেকে সম্পূর্ন সমর্পন করে দিল শহীদভাইয়ের কাছে। সমস্ত শরীর জুড়ে অবিরাম রিনিঝিনি সুখ। শহীদ ভাই একটু থামতে সে বলে উঠলো, থামবেননা প্লীজ! এরপর যা ঘটলো তা ভাষায় প্রকাশের যোগ্য নয়। আনন্দের তুঙ্গে উঠে গেল দুজনে চরম উত্তেজনায়। শাহানা এক পর্যায়ে বলে দিল আজ থেকে তার শরীরটা শহীদের। আর কেউ এটা স্পর্শ করতে পারবে না। এরকম একটা পাগলামি সিদ্ধান্ত শুনে শহীদও চমকে গেল। কিন্তু শাহানা অনড়। সে সমাজ সংসার সব কিছু অস্বীকার করে শহীদকে পেতে চাইল। বাস্তবে সম্ভব না, তাই ভার্চুয়ালী সে আজ থেকে শহীদের বউ হয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিল।

দুপুরের সেই আদর সেশানের পর শাহানা অন্য মানুষ হয়ে গেল। সংসারের সবকিছু তার অসহ্য লাগলো। এমনকি শৈলী কি খেল না খেল সেটাও জিজ্ঞেস করলো না। রাতে রাকিব অফিস থেকে ফিরলে সে বাতি নিভিয়ে শুয়ে থাকলো। রাতে কিছু খেতে পারলো না।

রাকিবের সাথে বিয়ে হবার পর কখনো একমাস বিরতি দেয়নি ওরা। প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত হতো ওদের। একদম নিয়ম করে। মাঝে মাঝে বেশীও। কিন্তু শহীদের সাথে পরিচয় হবার পর একবারো সে রাকিবের সাথে করেনি। রাকিব খুব বেশী আগ্রাসী না। শাহানা না এগোলে সে এগোয় না। সবসময় শাহানাকেই শুরু করতে হয়। এই একমাস শাহানা একবারও আগায়নি। তবু রাকিব মাঝে মাঝে গায়ে হাত দিয়েছে। স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে আদর দিয়েছে, কিন্তু শাহানা সাড়া দেয়নি বলে কিছু হয়নি। রাকিব হতাশ হয়ে ঘুমিয়ে গেছে প্রতিবারই। কেবল আজ রাতে রাকিব কেমন আগ্রাসী হয়ে তার উপর চড়াও হয়েছিল। জোর করে আদর করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে শাহানার প্রিয় একটা জায়গায় আদর দিলে সে জেগে ওঠে, সেখানে সে স্পর্শ করতেই শাহানা কটুবাক্যে তাকে ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিল। রাকিব আর জোর করেনি, আলগোছে বিছানার ওপাশে সরে গিয়ে শুয়ে পড়েছে।

শাহানার মনে একটা পাপবোধ জাগছে। কিন্তু লোভও ছাড়ছে না। ভালোবাসার লোভ। এমন করে ভালোবাসার কথা শোনেনি সে। রাকিব ছাড়া আর কোন পুরুষের কথা সে জানতো না। পুরুষেরা যে নাটক সিনেমার চেয়েও বাস্তবে অনেক বেশী ভালোবাসার কথা বলতে পারে এটা তার ধারণা ছিল না। সে একটা নতুন জীবন পেয়েছে গত একমাসে। শহীদভাই তার নতুন একটা জগত হয়ে দাড়িয়েছে। যে জগতে আর কেউ নেই। সে আর শহীদ। তারা নিজ নিজ সংসারে থেকেও এই নতুন জগতে স্বামীস্ত্রী হিসেবে থাকবে। শহীদভাই তাকে আজীবন আগলে রাখবে বলে কথা দিয়েছে। কোন সংসারের ক্ষতি না করে দুজন দুজনকে আজীবন ভালোবাসবে।

সকালে নাস্তা না করে অফিসে চলে গেল রাকিব। দুজনের মধ্যে কোন কথা হলো না। শাহানা ঠিক করলো ওর সাথে জীবনেও কথা বলবে না। যদি সে নিজ থেকে এসে কথা না বলে। অকেজো পুরুষ। তার সমস্ত জীবনটাকে একঘেয়ে করে দিয়েছিল। গত এক দশক কি ভয়াবহ বঞ্চনা নিয়ে সময় কাটিয়েছে! যদি শহীদভাইয়ের সাথে বিয়ে হতো তার! ভেবে শিহরিত হয়ে উঠলো আবার। আজ আসবে শহীদভাই? আজকে কিরকম আদর করবে? আজকে ওয়েবক্যাম খুলবে ওরা। কালকে সেভাবেই কথা হয়েছিল। গতকালই খুলতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রথমদিন বলে কেমন লজ্জা গ্রাস করেছিল। আজকে কাজের মেয়েটাকে ছুটি দিয়ে দিল। শৈলী স্কুলে। ফিরতে চারটা। তার আগ পর্যন্ত ওরা দুজন একা। একান্ত সময়। অসহ্য সুখের প্রতীক্ষায় শাহানা। একটা বাজতেই নেট খুলে বসলো। শহীদ এখনো আসেনি। কি করছে এতক্ষণ। আসছে না কেন? অস্থির হয়ে উঠলো সে। অবশেষে অনলাইন দেখালো শহীদকে-

-কী ব্যাপার এত দেরী কেন?
-দেরী কই, মাত্র দশমিনিট
-প্রতীক্ষার দশমিনিটও অনেক দীর্ঘ, জানো না?
-জানি সোনা! আর কখনো হবে না এমন
-এখন ক্যাম খোলো তোমার চাঁদমুখটা দেখি
-আগে তুমি খোলো
-না তুমি
-তুমি
-তুমি
-একটা দুঃসংবাদ আছে।
-কি
-তোমার ভাবী চলে এসেছে ছুটি সংক্ষিপ্ত করে গতরাতে।
-আশ্চর্য। তার না আরো তিনদিন থাকার কথা ছিল?
-তাই তো ছিল। কিন্তু গতকাল নাকি তার খুব খারাপ লাগছিল আমার জন্য। তাই চলে এলো
-এখন কোথায়। এখন গেছে ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে,
-সর্বনাশ!
-আসতে আরো ঘন্টাখানেক আছে, ততক্ষণ আমরা কথা বলি
-শুধু কথা?
-আজ আর কিছু হবে না
-সব শেষ একদিনেই?
-তা কেন, কিন্তু বোঝোই তো, প্রতিদিন সমান যায় না
-কেন কালকে বউ এসে সব প্রেম পুষিয়ে দিল নাকি?
-আরে না, বউয়ের অত প্রেম কই। তোমার কাছেই সব
-রাতে বউয়ের সাথে প্রেম হয় নাই? এতদিন পর পেলেন
-না, এই আর কি
-এই আর কি, খুলে বলেন
-তেমন কিছু না, ও নিয়মিত রুটিন কাজের মতো
-মানে, হয়েছে
-একবার
-বুঝেছি।
-কি বুঝেছ
-পুরুষের প্রেম
-কেন পুরুষ প্রেম করতে জানে না?
-জানবে না কেন। তার প্রেমের ধরনধারন সব আলাদা। দিনে একজন, রাতে অন্যজন। প্রেমের ছড়াছড়ি পুরুষজীবনে।
-ছি তুমি এসব কি বলছো, তোমার সাথে কি ওর তুলনা হয়?
-আমার সাথে তুলনা নাই। আমি কে? একবেলার আনন্দসামগ্রী। হিহিহিহি.......
-তুমি ভুল বোঝো না। আমি সত্যি করতে চাইনি। ও এমন জোর করলো, আমি না করতে পারিনি।
-জোর তো করবেই। এখন তো নারীদের প্রাধান্য ওরা যা চায় তা দিতেই হয়।
-তুমি বোঝার চেষ্টা করো শানু.....
-চুপপপ। আর কখনো ওই নামে ডাকবেন না আমাকে। আজ থেকে সব খেলা শেষ
-মানে?
-মানে খুব সহজ। আপনি আপনার পথে থাকুন, আমি আমার পথে
-কি বলছো এসব। এতদিনের সম্পর্ক, গত একমাসের এত ভালোবাসা, এতসব একদিনে শেষ?
-জী, জনাব। জীবনের প্রথম এবং শেষ ভুল আমার। এবার আপনি বিদেয় হোন, আমিও বিদায় হই
-শোনো, এভাবে যেও না প্লীজ। তোমার পায়ে পড়ি। তুমি জানো না আমি তোমাকে কিরকম......
-আর শুনতে চাই না মিষ্টার। কালকে যথেষ্ট খেসারত দিয়েছি। ভাগ্যিস আজ আর দিতে হয়নি।
-আমি তোমার সাথে দেখা করে সব বলবো
-ব্যাস, বলেছেন ওতেই যথেষ্ট। আর কিছুর দরকার নাই। কাল থেকে আমাদের আর কোনদিন যোগাযোগ হচ্ছে না। দয়া করে আরো কোন মেসেজ দেবার চেষ্টা করবেন না। আপনাকে আমি ব্লক করে দিতে বাধ্য থাকবো তাহলে।


শহীদের সাথে সম্পর্কটা আপনি থেকে তুমিতে চলে গিয়েছিল। আজ আবার তুমি থেকে আবারো আপনিতে নামিয়ে দরোজা বন্ধ করে দিল চিরতরে। ল্যাপিটা বন্ধ করে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো শাহানা। মানুষকে কতো সহজে বিশ্বাস করে শাহানা! রাকিব ওকে বারবার সতর্ক করতো এতটা সরল না হতে। কি বোকা ছিল সে। রাকিবকে অগ্রাহ্য করে ভালোবাসার নামে নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিল আধচেনা একজনকে । ভালোবাসায় এতটা প্রতারণা লুকিয়ে থাকতে পারে সে কখনো ভাবেনি। পৃথিবীটা তার চোখের সামনে দুলতে থাকলো। গত একমাসের স্মৃতিগুলো এখন কিরকম বিষাক্ত লাগছে ভাবা যায় না। নিজেকে তার খুব নোংরা লাগছে এখন। কি শাস্তি দেবে সে নিজেকে এখন? রাকিব যদি এখন অফিস থেকে চলে আসতো! আসতে পারে না মাঝে মাঝে চমকে দিতে? বিয়ের প্রথম দিনগুলোর মতো। রাকিব ওকে প্রেমের কথা বলে না কখনো, কিন্তু এখন সে জানে যেসব কথা মুখে বলা হয় না সেখানেই লুকিয়ে থাকে অনেক বেশী সত্য! অনেক বেশী সুন্দর সেসব কথা। অকথিত সেসব কথা দিয়ে শাহানা ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুনটাকে চাপা দিয়ে রাখতে চায়।

No comments: