Saturday, May 12, 2012
হাউ টু ম্যানেজ ইয়োর পাপ
ধার্মিকদের জন্য ব্যাপারটা মানে এই লেখার বিষয়বস্তু অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। কিন্তু পাপীরা মনে মনে মুচকি হেসে জানবেন এতো আমার রোজকার কারবার, নতুন করে কি শেখার আছে? আসলে শেখানোর কোন চেষ্টা করা হচ্ছে না। শেখাবার থাকলে শিরোনাম দিতাম- 'এসো নিজে শিখি'।
যাই হোক বিষয়ের শুরুতে রোজার দিনে শৃংখলাবদ্ধ শয়তানের কাণ্ডকীর্তি দিয়ে কিছু বলি।
ভাবছেন রোজার দিনে তো শয়তানকে গরাদে পুরে রাখা হয়। তার কাণ্ড কীর্তি নিয়ে কিসের চাপাবাজি? সেটা আমারও বিস্ময় ছিল। কিন্তু বেশীক্ষন বিস্ময় থাকবে না, যখন আপনি ইরাদ হোসেনকে দেখবেন। আসুন পরিচয় করিয়ে দেই ইরাদ হোসেনের সাথে।
ইরাদ হোসেন অতিশয় ভদ্রলোক মানুষ। নিয়মিত ধর্ম কর্ম করেন। অন্য অনেকের মতো তিনি ধর্মের সাথে কর্মকে মেলান না। ধর্মের কাজ ধর্মের সিস্টেমে করে, কর্মের কাজ কর্মের সিস্টেমে চালান। দুই সিস্টেমের মধ্যে কখনো বিরোধ বাধে না তাঁর। এখানেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব। ইহকাল আর পরকালকে যারা একটা সুতোয় বাঁধতে পারে জগতে তাদের উন্নতি ঠেকাবে তেমন শক্তি কারো নেই।
ধর্মে যাদের অতি মতি আছে তাদের প্রধান কয়েকটি আচার হলো নিয়মিত মসজিদে গমন করে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করা, রোজার দিনে ইফতার করে ঘুম দেবার বদলে খতম তারাবীর জন্য প্রস্তুত হওয়া, জুম্মাবারে এগারোটার সময় মসজিদে গিয়ে প্রথম কাতার দখল করে ইমাম সাহেবের বয়ান শোনা ইত্যাদি। ইরাদ হোসেন এর কোনটিতেই ব্যর্থ হয়নি কোনকালে।
ফিরে আসি রোজার দিনে। এই মাসটিতে ইরাদ হোসেন বছরের অন্যন্য সময়ের তুলনায় অধিক পূণ্য কামাই করার চেষ্টা করে। সুযোগ পেলেই শয়তানকে শাপ শাপান্ত করে। ফলে তার পূণ্যের ঘরে বাম্পার ফলন সারা বছর। পাপের ঘরটা খা খা শূণ্য। রোজার দিনে শয়তানের প্রতি বিশেষ ঘৃনা নিক্ষেপ করার মানসে তারাবীর নামাজ শেষ করে আসার পথে শয়তানের দরোজায় গিয়ে কষে অভিশাপ দিয়ে আসে। সেদিন শয়তানের গরাদের কাছে দাড়িয়ে শাপান্ত করার সময় তার পাঞ্জাবির পকেটে কখন যে ইবলিশের বামহাত আলগোছে কিছু একটা ঢুকিয়ে দেয় সে টের পায় না। যখন সে টের পায় তখন সে ঘরের কাছাকাছি। পাপের বীজটা হাতে নিয়ে সে বুঝতে বাকী থাকে না এটা কার কাজ এবং এটা কিসের বীজ। একই সাথে কিসের বীজ বুঝতে পেরেছে বলেই ওটা স্পর্শ করে ইরাদ হোসেন কেমন দুর্বল বোধ করতে থাকে। তাই ফেলে দেবার বদলে বীজটা ড্রয়ারে রেখে দিল। ছোট্ট করে ভেবেছে 'থাক, কালকে ফেলবো, আজকে রাখি'। সেই শুরু। প্রতিদিন ইরাদ হোসেন তারাবী থেকে ফেরার পথে শয়তানের গরাদে যায় অভিশাপ দিতে, ফেরার পথে একটা করে বীজ পকেটে করে নিয়ে আসে, সে বলে অনিচ্ছায়, লোকে বলে স্বেচ্ছায়।
বীজগুলো ফেলতে গেলে দুর্বল লাগে, তাই জমিয়ে রাখতে রাখতে বিশাল স্তুপ হয়ে যায়। তখন সে খেয়াল করে তার পাপের শূণ্য ঘরটা এখন আর খাঁ খাঁ করে না। পাপপূণ্য সমানতালে মিলে মিশে বাস করতে থাকে দুই পাশের দুটো ঘর জুড়ে।
ইরাদ হোসেন মাঝে মাঝে অনুতপ্ত হয়। তখন সে ধর্মের ব্যাখ্যাসংক্রান্ত বইপত্র খুলে পাপবীজ সংক্রান্ত জ্ঞানার্জন করে। দেখতে পায় সকল পাপেরই সহজ সমাধান আছে মুষ্টিমেয় গুরুতর কয়েকটি বাদে। ইরাদ হোসেন বোকা নয়, তেমন গুরুতর পাপ সে করে না। ছোটখাট নিয়ন্ত্রনযোগ্য পাপ সে করে যা প্রতিদিনের প্রার্থনায় কেটে যায়। বরং ধর্মমতে যখন বিশেষ কিছু দিবসে পূণ্যের বাম্পার বোনাস দেয়া হয়, তখন বর্তমান ছাড়িয়েও আগামী কয়েক বছরের জন্য পূণ্য সঞ্চিত হয়ে যায়। এতটা পূণ্য একজন মানুষের জন্য বাহুল্যই বটে। বিলাসিতাও বলা যায়।
সে কখনো বিলাসীতা পছন্দ করে না। ইহকালে তো নয়ই পরকালেও না। এক জায়গায় পড়েছে কেয়ামতের দাড়িপাল্লায় তিল সমান একটা পূণ্য পাহাড় সমান একটা পাপের চেয়েও ওজনদার। কেয়ামতের ময়দানের অভিকর্ষ বিজ্ঞান সে বোঝে না। কিন্তু বোঝে যে ধর্মগ্রন্থ যা বলে তার সবই সত্য।
তাই মাঝে মাঝে আজকাল সে বাড়তি পাপ সঞ্চয় করতে থাকে। সেই পাপগুলো রাখার সমস্যা দেখা গেলে সে কিছু পূণ্যকে ডিলিট করে ট্র্যাশ বক্সে পাঠিয়ে দেয়। তার পূণ্যের ঘর এমনিতেই বড়, তাছাড়া বিশেষ দিবসের বাড়তি পূণ্যের চাপ তো আছেই। সামান্য কিছু পূণ্য মুছে গেলেও তেমন ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না।
পাপপূণ্যের এই যাত্রায় ইরাদ হোসেন নতুন যাত্রী হলেও সে পেছনে ফেলে দেয় অনেক সিনিয়র পাপীকে।
এখানেই সে একটু ভুল করে, সে বোঝেনি পাপের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার নিয়ম নেই। এটি পূণ্য প্রতিযোগিতার মতো নয়। পূণ্য যদি হয় ইউজার নেম, পাপ হবে পাসওয়ার্ড। তার পূণ্য সবাই দেখবে জানবে, কিন্তু তার পাপ কেবল সে একাই জানবে।
ইরাদ খেয়াল করে দেখলো পাপের বীজগুলো সংখ্যায় এখন পূণ্যের চেয়ে বেড়ে গেছে। তবু সে পাপকে ডিলিট করতে পারছে না সময়ের এক অমোঘ নির্দেশে। তাই সে বুদ্ধি করে পাপগুলোকি জিপ করে ফেলতে শুরু করে। জিপ করে পুরো পাপের ফোল্ডার আপ করে দিল ইন্টারনেটে। ফলে তার ঘরের মধ্যে এখন খা খা শূণ্যতা, পূণ্য দিয়ে সেই শূণ্যতা পুরণ করা যাচ্ছে না। তখন সে নতুন কিছু পুণ্য ডাউনলোড করে নিয়ে কপিপেষ্ট করতে শুরু করে। এমনকি পাপের শূণ্যঘরটাও পূণ্যে ভরপুর হয়ে যায়। কপিপেষ্ট পদ্ধতি তাকে পূণ্যশীর্ষে তুলতে সাহায্য করেছে।
বিষয়টা খুবই তুচ্ছ। ভালো করে খেয়াল না করলে বাইরের কেউ বুঝবে না। একদিন সে খেয়াল করলো আজকাল সে গরাদের কাছে গেলে ইবলিশ সালাম দেয়া দূরে থাক ফিরেও তাকায় না। গোমড়া মুখে বিপরীত দিকে বসে থাকে। সে পাঞ্জাবীর পকেট উন্মুক্ত করে দিলেও তাতে একটা পাপবীজও আমদানী হয় না।
এটা নিয়ে শয়তানের সাক্ষাত সহকারীকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করা হলে সেও ফিসফিস করে জানায়,
"বসের মন খারাপ, কারণ নরকে বসের চেয়ারে আরো যোগ্য নতুন লোক অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়ার জন্য মনোনয়নপত্র আহবান করা হয়েছে, তার মধ্যে এমন একজনের নাম এসেছে স্বর্গ নরক উভয় স্থানে অবাধে গমনের পাসপোর্ট আছে যার। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে হি ইজ দ্য বস। ইবলিশের জন্য এটা এক রকমের পদাবনতি, এবং অপমান। এই অপমানের শোধ নিতে বস আত্মহত্যা বৈধ করার জন্য বিধাতার কাছে আবেদন করেছে।"
"সেই মনোনয়ন প্রাপ্ত লোকটা কে তুমি জানো?"
"তার নাম ইরাদ হোসেন।"
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment