-মৃত্যু কয় প্রকার?
-দুই প্রকার
-কি কি
-স্বাভাবিক মৃত্যু অস্বাভাবিক মৃত্যু
-ভুল...মৃত্যু চার প্রকার। দুর্ঘটনায় মৃত্যু, অসুস্থতার মৃত্যু, অপাঘাতে মৃত্যু, আত্মহত্যা মৃত্যু
-কথা তো আমার লাইনেই। দুর্ঘটনা আর অসুস্থতা হলো স্বাভাবিক মৃত্যু, অপাঘাত আর আত্মহত্যা হলো অস্বাভাবিক
-আরো একটা মৃত্যুর কথা বাদ গেছে
-কোনটা
-শর্ট সার্কিট
-এটা কেমন?
-এটাকে ডাক্তারেরা বলে স্ট্রোক। অসুখ নাই বিসুখ নাই, দুর্ঘটনা নাই, দুম করে শর্ট সার্কিট হয়ে গেল মাথায়।
-ফাজলামি করো?
-ফাজলামি না, ইতরামি বলতে পারো
-মানুষকে নিয়ে ইতরামি?
-না নিজেকে নিয়ে, আমার ধারণা আমি শর্ট সার্কিটে মরবো
-তুমি কি মানুষ না?
-না আমি অমানুষ
-সেজন্যই মৃত্যু নিয়ে গবেষণা করছো?
-না, গবেষণা করছি না, কিন্তু বিশাল একটা ভাবনায় পড়ছি
-কিসের ভাবনা
-মৃত্যুর পর মানুষ কোথায় যায়
-তুমি সেদিন বললা মানুষ মাটির সাথে মিশে যায়
-সে তো আমি নাস্তিক বলেই, তুমিও কি মাটির সাথে মিশে যাবে?
-মাথা খারাপ? আমি নাস্তিক না। আমি ধার্মিক মানুষ, মাটির সাথে মিশবে আমার দেহ, আত্মা আমার ঘুরতে থাকবে জগতময়
-এই তো, দেখো তুমিও দার্শনিক বাতাসে নড়তে শুরু করেছো
-দার্শনিকেরা কি অধার্মিক?
-দার্শনিকেরাও ধার্মিক হতে পারে তোমার মতো। যারা গাছেরও খাবে তলারও কুড়োবে
-আমি মানছি না। ধর্ম নিয়ে আমার যে জ্ঞান তোমারও সেই জ্ঞান। কিন্তু আমার জ্ঞান নিয়ে আমি আস্তিক, তোমার জ্ঞান নিয়ে তুমি নাস্তিক
-আমি নাস্তিক, কারণ আমি মৃত্যু পরবর্তী কোন গন্তব্যে বিশ্বাস করি না
-তোমার এই অবিশ্বাসের জন্য তোমাকে কেয়ামত পর্যন্ত গজবের আগুন পোহাতে হবে
-আর তোমাকে কি বেহেশতের সুবাস দিয়ে ঢেকে রাখবে
-তা কেন, কিন্তু আমার বিশ্বাসের জোর আমাকে যন্ত্রনা থেকে রক্ষা করবে।
-বিশ্বাসের জোর কতদিন থাকবে
-সেটা নির্ভর করবে বিশ্বাসটা কতো মজবুত তার উপর
-তোমার বিশ্বাস কতোটা মজবুত
-সেটা দিয়ে তোমার কাজ কি?
-জানতে চাইছি তুমি কতো বছর ঠেকিয়ে রাখতে পারবে
-অন্ততঃ কয়েকশো বছর
-হাসতে ইচ্ছে করছে
-কেন
-তুমি আমার উপর তিন মাসের একটা বিশ্বাস রাখতে পারোনি,
-তোমার কথা আলাদা
-আলাদা কেন
-তুমি একটা অমানুষ। নাস্তিকেরাই এরকম অমানুষ হয়
-আর যারা দীর্ঘকালের বন্ধুতাকে মুহুর্তের ভুলে উচ্ছেদ করতে বলে তারা
-তুমি কথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে নেয়ার চেষ্টা কোরো না
-আচ্ছা ধরো তিনশো বছর তুমি বিশ্বাস দিয়ে ঠেকিয়ে রাখবে কবর যন্ত্রনা, এই তিনশো বছর পরে যদি কেয়ামত না হয়?
-তা তো হবেই না। কিন্তু তিনশো বছরে আমি পারিপার্শ্বিক অবস্থাগুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়ে ফেলতে পারবো, মুর্দাপ্রহরীদের সাথে খাতির করে নিতে পারবো
-তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে কবর হলো থানা বা জেলখানার মতো যেখানে প্রহরীদের সাথে খাতির করলেই আরামে থাকা যায়
-শোনো তোমাদের ডারউইনই তো বলেছে অভিযোজনের কথা,
-তুমি এখন ডারউইনে বিশ্বাস করতে শুরু করেছো? বাহ উন্নতি হয়েছে তোমার
-ধুরো বিশ্বাস করবো কেন, একটা উদাহরণ দিলাম মাত্র
-উদাহরণ দেবার জন্য একজন মোল্লা মওলানার নাম পাইলা না?
-তা পাবো না কেন, কিন্তু তাদের কথা তো তুমি বিশ্বাস করবা না,
-আমি যাকে বিশ্বাস করবো তাকে দিয়ে আমাকে উদাহরণ দিলে আমি কি ধার্মিকতার দিকে অগ্রসর হবো
-তোমার মাথায় নিরেট পাথর, তোমাকে বোঝানো আমার কম্ম নয়।
-এই তো তুমি চট করে এক্সট্রিম হয়ে যাচ্ছো। আস্তিকতার এইটা একটা বড় সমস্যা। যাদের বিশ্বাস যত কঠিন, তারা তত বেশী এক্সট্রিম।
-আর অবিশ্বাসীরা বুঝি একেবারে জলের মতো তরল
-আমাকে দেখেও কি তা বোঝা যায় না?
-তুমি একটা থিউরিষ্ট এভিল
-যে স্বর্গের যাত্রীদের নরকের টিকেট কেটে দেয়
-আমাকে নিয়ে তাই করোনি?
-তোমার উপর জোর খাটিয়েছি
-জোর খাটাওনি কিন্তু দিনের পর দিন তোমার এভিল থিউরিগুলো আমার মগজে ঢুকিয়ে একটা যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছো
-সেই যুদ্ধে কে জিতলো
-জিতলো আমার বিশ্বাস
-যুক্তি জিতলো না কেন
-বিশ্বাসের শক্তি বেশী ছিল বলে
-সংখ্যায় যুক্তিরা বেশী থেকেও শক্তিশালী বিশ্বাসের কাছে হেরে গেল। এটাকে রাজনীতির ভাষায় কি বলে জানো?
-কি বলে
-তার আগে একটা প্রশ্নের জবাব দাও
-বলো
-মধ্যপ্রাচ্যে এক ইজরায়েলের বিরুদ্ধে দশটা আরব দেশ যুদ্ধ করে পারেনি, কেন জানো?
-জানি
-কেন
-ইজরায়েলের অস্ত্রের জোর বেশী, পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক ওরা
-তাই সংখ্যায় বেশী হয়েও আরব দেশগুলো হেরে গেছে,
-ঠিক তাই
-বিশাল আরবের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র ইজরায়েলের এই বিজয়কে তুমি সমর্থন করো?
-প্রশ্নই ওঠে না
-তাহলে তোমার বিশ্বাসের সাথে আমার যুক্তিরা হেরেছে ওটা কেন সমর্থন করছো
-তুমি এটার সাথে ওটা মেলাবে? একটা হলো ধর্ম, আরেকটা রাজনীতি
-বন্ধু, এখানেই গোলমাল। ধর্মে বিশ্বাসের রাজত্ব আর রাজনীতিতে অবিশ্বাসের। তবু ধর্ম আর রাজনীতি মিলে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে।
-আমি তোমার সাথে এই বিষয়ে এখন আর তর্ক করতে চাই না
-কিন্তু আমার আরো কথা বলার ছিল
-তোমার বলার থাকলেও আমার শোনার সময় নাই। আমাকে এখন ঘুমাতে হবে কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।
-ঠিক আছে আজকের মতো রাখছি।
=================================
No comments:
Post a Comment