Monday, September 30, 2024
লেভান্টের দানব
Wednesday, September 25, 2024
পাহাড় বিক্রির বিজ্ঞাপন
পাহাড় বিক্রির বিজ্ঞাপন: চিঙ ওয়েঙ
যারা পাহাড়ে জমি কিনতে চান আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। একটা পাহাড় কিনে দিব। তবে বউ বাচ্চা নিয়ে বাড়ি বানিয়ে থাকতে হবে। আপনার বউ সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে পাহাড়ের নিচে ছড়া তে পানি আনতে যাবে। সেই পানি মাথায় করে বাড়িতে নিয়ে আসবে আপনার বউ। আর হে, শীতকালে কিন্তু ছড়ার পানি শুকিয়ে যাবে!আপনি জুম চাষ করবেন পাহাড়ে।( তবে এই জুম চাষ শুধুমাত্র বর্ষাকালে করা যাবে। বাকি মাস ৪০০ টাকার মজুরি তে জংগলে কাজ করতে হবে)। দূপুর বেলা আপনার বউ তেল ছাড়া খাবার নিয়ে আসবে জুম ঘরে! নতুবা জুমের সবজি, ছড়ার কাঁকড়া ধরে বাঁশের চুঙ্গাই ভরে রান্না করে খাবেন তেল আর মসলা ছাড়া। মাঝে মাঝে আমরাও গেলাম আপনার অতিথি হতে। এক দুই দিন আপনার পাহাড়ের ভিলাতে থেকে আসলাম। আর হে আপনার বাচ্চাদের কিন্তু ইস্কুলে পাঠাতে হবে। ইস্কুলে যেতে দুই তিন কিলো হাটা লাগবে কিন্তু!!!
কেউ চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন। দেখলাম আমার পরিচিত অনেকেই পাহাড় কিনতে চাচ্ছেন ।
জমির দাম একরে ১০ হাজার টাকা মাত্র!!!
----------------------------------
বন্ধুতালিকার একজনের শেয়ার করা বিজ্ঞাপন পোস্টটি পড়ে আমার কয়েক বছর আগের সাজেকের একটা অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ল। সাজেকের প্রাইমারী স্কুলটার পেছনদিকে একটা রাস্তা নেমে গেছে খাড়া নীচের দিকে। মনে হলো সেদিকে একটা পাড়া আছে। একদিন ভোরবেলা নাস্তা করার আগে হোটেল থেকে বেরিয়ে আমি কৌতূহলী হয়ে সেই পথ দিয়ে পাহাড়ের নীচের দিকে নেমে গেলাম। অনেকটা পথ নামার পর দেখলাম মাথায় দুটো কলসী(একটার ওপর আরেকটা) বসিয়ে একটা বাচ্চা ছেলে উঠে আসছে। ওকে একটু থামিয়ে আলাপ করলাম। জানতে চাইলাম কোথা থেকে পানি আনছে। সে জানালো নীচের দিকে একটা ঝরনা আছে সেখান থেকে ঘরের জন্য পানি আনছে। সেই ঝরনার খোঁজে আরো নীচে নেমে যেখানে গেলাম, সেখান থেকে উঠে আসতে খালি হাতেই আমার দম বেরিয়ে যাবার দশা। আমি তখন ভাবছিলাম ওই ৯/১০ বছরের বাচ্চাটার মাথায় রাখা কলসীগুলোর কথা।
Sunday, September 22, 2024
আদিবাসী বনাম অভিবাসী
বসতির নিরিখে পৃথিবীর মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। আদিবাসী এবং অভিবাসী। যারা যুগ যুগ ধরে নিজেদের আদি বাসভূমে নিজেদের প্রাচীন সংস্কৃতি ধারণ করে বসবাস করে তারা আদিবাসী। আবার যারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে বসতি গড়ে এবং নিজেদের সংস্কৃতি সভ্যতাকে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ওপর চাপিয়ে দেয় তারা হলো অভিবাসী। হাজার বছর আগে আদিবাসীরা ছিল শক্তিশালী। কিন্তু সময়ের সাথে আধুনিক প্রযুক্তি আয়ত্ব করার কারণে অভিবাসীরা আদিবাসীদের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। গত পাঁচশো বছর ধরে পৃথিবীটা অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় যায় পুরোপুরি। আধুনিক মানচিত্রে গত পাঁচশো বছরে যেসব অঞ্চল ‘আবিষ্কার’ করা হয়েছে তার সবটুকু অভিবাসীদের দখলে। তিন মহাদেশ এবং তিন মহাসমুদ্রে অভিবাসীদের হাতে কয়েক কোটি মানুষ নিহত হবার পর আদিবাসীরা নিজেদের বাসভূমি হারানোর বিষয়টা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। পৃথিবীটা অভিবাসীদের রাজত্বে চলে গেছে পুরোপুরি।
আদিবাসীর সংজ্ঞা কী আসলে? এটা কি ভূমির অধিকার বিষয়ক ব্যাপার নাকি জাতি ও সংস্কৃতির ব্যাপার? খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে আদিবাসী হলো তারা যারা এখনো নিজ নিজ জাতিগোষ্ঠির আদিম সংস্কৃতিগুলো ধারণ করেছে। যাদের জীবনযাত্রার মধ্যে ইউরোপের সংজ্ঞায় নির্মিত সভ্যতা প্রবেশ করেনি অথবা প্রবেশ করলেও সেটা সীমিত আকারে আছে। কিন্তু আদিবাসীর সংজ্ঞা নিয়ে প্রায়ই যে বিতর্কটা ওঠে সেটা হলো ভূমির অধিকার বিষয়ক। এই ভূমিতে কে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল। কারা আগে এসেছিল। কাদের প্রভাব বেশি ছিল ইত্যাদি। কিন্তু আদিম জনগোষ্ঠী মূলত যাযাবর ছিল যাদের নির্দিষ্ট এলাকায় বেশিদিন বসবাস করতো না। নানান কারণে বাসস্থান স্থানান্তর হতো। পৃথিবীর অধিকাংশ আদিবাসী পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করে। এটার মূল কারণ সমভূমির দখল নিয়েছে ভদ্রলোকের সভ্যতা। যারা প্রযুক্তির শক্তি নিয়ে পৃথিবী দখল করেছে।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন আদিবাসীদের বসতি ছিল তাইওয়ানে। গত দশ হাজার বছর ধরে তাইওয়ান থেকেই ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়া সহ পুরো প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে আদিবাসীরা ছড়িয়ে পড়েছে। তাইওয়ানে সেই আদিবাসীরা এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। জনসংখ্যার মাত্র ২% আদিবাসী। বাকী সবাই অভিবাসী। অভিবাসীদের ৯২ ভাগ হলো চীনের হান জনগোষ্ঠী। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নৃতাত্তিক জাতি গোষ্ঠী হলো চীনের হান জনগোষ্ঠী। এরাই চীনের ৯৫ ভাগ জনসংখ্যা। একই কথা প্রযোজ্য দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরো জাতির ক্ষেত্রে। পুরো উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার আদিম জাতিগোষ্ঠিগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আন্দেজ পর্বতমালার পাদদেশে যেসব জাতিগোষ্ঠি বসবাস করছে, একসময় এদের পূর্বপুরুষ পুরো দক্ষিণ আমেরিকা দাপিয়ে বেড়াতো।
বাংলাদেশে যেসব পার্বত্য জাতিগোষ্ঠি আছে তারা এদেশের আদিবাসী কিনা এটা নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক হয়। তারা কত বছর ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করছে, তাদের আগেও এখানে আদিম জনগোষ্ঠী ছিল কিনা ইত্যাদি নিয়ে। এই কথাগুলো বলা হয় শুধু ভূমির অধিকার নিয়ে। একটু বৃহত্তর পরিসরে ভাবলে দেখা যাবে ভূমিটা এখানে মূখ্য বিষয় নয়। ভারতের মিজোরাম, বার্মার চিন, কিংবা পূর্বাঞ্চলে কুকি বা লুসাই নামে সাধারণভাবে পরিচিত যে জনগোষ্ঠি, তাদের মধ্যে শত শত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠি রয়েছে। বিবর্তিত বা বিলুপ্ত হয়ে গেছে তেমন জাতিগোষ্ঠিও কম নয়। তারা সবাই দেড় থেকে দুহাজার বছর আগে চীনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে এই অঞ্চলে এসেছিল। তারও আগে এখানে যেসব জনগোষ্ঠি ছিল, তাদের কোনো অস্তিত্ব এখন নেই। যেমন আমাদের দেশে পার্বত্য জাতিগোষ্ঠির মধ্যে চাকমারা সবচেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ, আবার বম জনগোষ্ঠি সংখ্যায় অনেক কম। কিন্তু এই অঞ্চলে বমদের বসতি চাকমাদের চেয়ে অনেক প্রাচীন। সুতরাং কাকে আপনি এখানকার আদিবাসী বলবেন? সবক্ষেত্রেই দেখা যাবে আগে কোনো না কোনো জাতিগোষ্ঠীর বসতি ছিল ওই এলাকায়। একহাজার, দুহাজার, তিন হাজার, দশ হাজার? তাদের কোনো ইতিহাস কিংবা চিহ্ন নেই কোথাও।
আমাদের সমভূমির বাঙালিদেরও নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। কিন্তু সেটার সাথে পার্বত্যবাসীদের তুলনা করা উচিত হবে না। আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্যের পরিচয় কিছুটা তুলনা করা যাবে আমেরিকানদের সাথে। ইউরোপ থেকে দলে দলে নানা জাতিগোষ্ঠি আমেরিকা গিয়ে যে একটা নতুন জনগোষ্ঠি এবং সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে তারাই আমেরিকান। বাঙালিরা আমেরিকানদের চেয়ে হাজার বছর পুরোনো জাতি, কিন্তু এখানেও দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে আসা নানান জাতিগোষ্ঠির মিশ্রিত একটা জাতির জন্ম হয়েছে। এখানে আমাদের বিশুদ্ধ আদিম সংস্কৃতি খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। এই বিশুদ্ধতার অভাবেই সমভূমির জাতিগুলোর মধ্যে সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি সবকিছুতে অস্থিরতা, বিশৃংখলা, নৈরাজ্য বেশি। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব এখানে প্রবল। কারণ ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠি থেকে আসা লোকেরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চায় নানা ভাবে। কেউ বংশগৌরবে, কেউ অর্থ সম্পদে। কেউবা স্রেফ হাস্যকর ইগোর জোরে।
Friday, September 20, 2024
Waiting books
Maybe you will not finish reading all these books. But they are waiting for you for months. Your waiting list is getting bigger, but your time is getting shorter. Make your time for waiting books.
Friday, September 13, 2024
নীরবতাপর্ব....ক্রমশ...
Wednesday, September 11, 2024
'অসভ্য' দেশের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক
এই জাতিগত দাঙ্গাগুলো আধুনিক সভ্যতার দান। বিষয়টা অনেক দীর্ঘ বিস্তারিত আলাপের বিষয়। সংক্ষেপে বলতে গেলেও ধৈর্যে কুলাবে না অনেকের। তবু যতটা সম্ভব সংক্ষেপে বলছি।
পৃথিবীতে বিদ্যমান রাষ্ট্রগুলোর মানচিত্র সৃষ্টির অনেক গল্প আছে। একেকটি মানচিত্র কিভাবে তৈরি হয়েছে সেই গল্পগুলোর বড় অংশ জুড়ে আছে মর্মান্তিক সব উপাখ্যান। অধিকাংশ সীমান্ত বিভাজন ভয়ানক যুদ্ধের পরিণতি। মানুষ যতই নিজেকে সুসভ্য বলে ঘোষণা করুক, সীমান্তের এই গল্পগুলোর মধ্যে মানবজাতির সবচেয়ে বড় অসভ্যতাগুলো লুকিয়ে আছে। অস্ত্রশক্তি আর রাজনৈতিক কুটকৌশলের খেলার মাধ্যমে জন্ম হওয়া স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর ভেতরেও অনেক অমানবিক ব্যাপার রয়ে গেছে। পৃথিবীর অল্প কিছু রাষ্ট্র বাদে বৃহৎ সব রাষ্ট্রের মানচিত্রের মধ্যেই লুকিয়ে আছে নানা ধরণের অসভ্যতার ইতিবৃত্ত। এসব অসভ্য মানচিত্র ছিঁড়ে কিছু দেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও এখনো অসংখ্য পরাধীন জাতি এসব রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে পিষ্ট হচ্ছে সভ্যতার ছাদের নীচে। একেকটা দেশে একেক রকমের বঞ্চনার গল্প।
কাছের দেশ হিসেবে সবার আগে ভারতের উদাহরণ দেই। পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে অনেকগুলো জাতির বসবাস। তাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। সরলভাবে চিন্তা করলে ভারতের ভেতরে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হতে পারতো সেরকম রাজ্যের সংখ্যা কয়টি? মোটা দাগে বলতে গেলেও সংখ্যাটা দশের বেশি হবে। অনেক জায়গাতেই ভারতের মূলধারার সংস্কৃতি ধারণ করে না তেমন কিছু জাতিকেও জোর করে ভারতের ভেতরে বেঁধে রাখা হয়েছে। বেঁধে রাখা হয়েছে বলতে হচ্ছে কারণ সে রাজ্যগুলো নিজ থেকে ভারতের সাথে যুক্ত হয়নি। বৃটিশ শাসনের সময় থেকে তাদের জোর করে ভারতভুক্তি করা হয়েছে। যেমনভাবে সোভিয়েত আমলে মধ্য এশিয়ার অনেক রাজ্যকে সোভিয়েত ইউনিয়ন হিসেবে বন্দী করা হয়েছিল।
পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে এই কথা আরো বেশি সত্য। এই ২০২৪ সালে মনিপুরে যে আগুন চলছে, বার্মায় আরাকান রাজ্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে চাইছে অথবা কুকিচিনের প্রধান ঘাঁটি চিনল্যান্ড যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, সবগুলো ওই একই কারণে। গত দেড়শো দুশো বছর ধরে ওইসব অঞ্চল যারা শাসন করছে তারা সবাই বহিরাগত। জোর করে ওইসব রাজ্য দখল না করলে সেগুলো হয়তো এখন স্বাধীন রাজ্য হিসেবেই থাকতো। অস্বীকার করা যাবে না কোনো কোনো এলাকায় বাংলাদেশও তাদের ছোট ভাই। একই কথা প্রযোজ্য হিমালয় অঞ্চলের রাজ্য গুলোর ক্ষেত্রেও।
হিমালয় অধ্যুষিত এলাকার একটা জাতিও ভারতীয় নয়। বৃটিশদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সুত্রে মালিকানা না পেলে সেই রাজ্যগুলো কখনোই ভারতের অংশ হতো না। নেপাল ভূটান যে কারণে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, একই কারণে ভারতের ভেতরের সেই রাজ্যগুলোর অধিকার ছিল স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে বেঁচে থাকা। কিন্তু অসভ্য রাজনীতির কুটনৈতিক চালের কারণে তা হয়নি। এই অঞ্চলের সবগুলো সরকার পৈত্রিক উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সম্পদের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যগুলোকে ভোগ দখল করছে। রাজ্যগুলোকে যদি জনমত যাচাই করা হয় তবে নিশ্চয়ই তারা স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকতে চাইবে। অরুনাচল থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত সমগ্র উত্তরাঞ্চলে একই চিত্র। পূর্ব দিকে মনিপুর মেগালয় মিজোরাম নাগাল্যাণ্ডের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। ভারতের সঙ্গে এই রাজ্যগুলো নিতান্ত বাধ্য হয়ে যুক্ত আছে।
আগামী একশো বছরের মধ্যে হয়তো এখানে অনেকগুলো আলাদা রাষ্ট্র গঠিত হবে। দুশো বছর আগে পৃথিবীর যেসব জাতি পরাধীন ছিল, তাদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য ছিল। একইভাবে তিব্বত কিছুতেই চীনের অংশ হতে পারে না। পারে না জিনজিয়াং নামের উইঘুরদের দেশটাও। চীনের ভেতরে লুকিয়ে আছে এরকম অন্ততঃ আরো ডজনখানেক আলাদা জাতি। সোভিয়েত রাশিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া রাষ্ট্রগুলো আজ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। আরো অনেক পরাধীন জাতি আছে তার ভেতরেই। সারা পৃথিবীতে স্বাধীন রাষ্ট্র হবার যোগ্যতা সম্পন্ন জাতির সংখ্যা নেহাত কম নয়। দেশে দেশে তাদের অস্তিত্ব ছড়িয়ে আছে। সবগুলো জাতি যদি যদি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতো পৃথিবীতে স্বাধীন দেশের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতো।
ষোড়শ শতকের আবিষ্কারের যুগ থেকে শুরু করে জগতের শক্তিমানেরা পৃথিবীর একশোভাগ ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে। এক ইঞ্চি মুক্ত জায়গা নেই কোথাও। আপনি শুনে অবাক হতে পারেন ভারত মহাসাগরে কয়েকশো ফুট প্রস্থের এমন কিছু ক্ষুদে দ্বীপ আছে যেগুলো এখনো ইউরোপীয়ানদের দখলে।
মোদ্দাকথা পৃথিবীর সব মানুষকে কোন না কোন রাষ্ট্রের অধীনস্থ করা হয়েছে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। পৃথিবীতে এমন অনেক আদিবাসী আছে তারা জানেও না কে তাদেরকে শাসন করছে। হয়তো শাসন করছে এমন কেউ যাদের সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই। হয়তো সেই জাতি উপজাতিগুলোর রাষ্ট্র, স্বাধীনতা, পতাকা, মানচিত্র এসবের কোন প্রয়োজন নেই। তবু সভ্যতার দোহাই দিয়ে তাদেরকে কোন না কোন রাষ্ট্র খোপে প্রবেশ করানো হয়েছে। মানুষ আধুনিক বলে বিবেচিত হবার পর থেকে এসব রাষ্ট্র সীমানার জন্ম। অথচ এসব সীমানার প্রশ্ন যখন ছিল না তখনও তাদের অস্তিত্ব ছিল। সীমান্ত থাকা না থাকায় তাদের কিছু এসে যায় না। মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণীর সীমান্ত নেই। আদিযুগে হাজার হাজার বছর ধরে মানবজাতি এসব ছাড়াই পৃথিবীতে বেঁচে ছিল প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। কিন্তু এখন ইচ্ছে থাকলেও কোনও জাতি রাষ্ট্রবিহীন থাকতে পারবে না। তাদেরকে কোন না কোন রাষ্ট্রের অধীনে থাকতেই হবে। কেউ না কেউ তাকে দখল করে নেবেই। এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরের দূর দূরান্তের হাজার হাজার ক্ষুদে ক্ষুদে দ্বীপের জাতিগোষ্ঠীগুলোও রক্ষা পায়নি এই সভ্যতার থাবা থেকে।
কিন্তু সব মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে কোন না কোন রাষ্ট্রের অধীনে থাকতে হবে কেন? এই যে আধুনিক সভ্য রাষ্ট্রের যে ফরমূলা, পতাকা মানচিত্র জাতীয়সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয় পৃথিবীর আদিম জনগোষ্ঠিদের মধ্যে ছিল না, এখনো নেই। আশ্চর্য ব্যাপার হলো এই প্রশ্নটা সাধারণভাবে আমাদের মানে তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের মনে জাগে না। আমরা মেনেই নিয়েছি মানুষের জীবনে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। অথচ মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণী এই আইনের আওতায় নেই। একটা পিঁপড়া কিংবা কাক কিংবা কুকুর বেড়ালকে নাগরিকত্ব নিয়ে কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। অথচ মানুষকে নিরন্তর এই যন্ত্রনা পোহাতে হয়।
হঠাৎ করে কেন এই প্রশ্ন তুললাম? আমার মনে হয়েছে মানুষের জন্য পৃথিবীতে কিছু মুক্ত দেশ মুক্ত অঞ্চল থাকা দরকার। যেখানে আধুনিক রাষ্ট্রকাঠামো থাকবে না, রাজনীতি থাকবে না, পাসপোর্ট থাকবে না, মানচিত্র থাকবে না, পতাকা থাকবে না। শুধু মানুষ থাকবে। আদিম স্বাধীন মানুষ। যে মানুষেরা স্বাধীনভাবে তাদের আদিম জীবনযাত্রা বজায় রাখতে পারবে। যে মানুষকে জোর করে আধুনিক সভ্যতার দীক্ষা গ্রহন করতে হবে না। যে মানুষকে অন্যের বানানো স্বর্গে সুখী হবার ভাণ করতে হবে না। যে মানুষ নিজস্ব আলয়ে একটি স্বাধীন বন্য প্রাণীর জীবন যাপন করবে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কোন দেশ কোথাও নেই। পৃথিবীতে আর কোন জঙ্গল, পর্বতমালা কিংবা দ্বীপ নেই যেখানে সভ্যতার কদর্য পদক্ষেপ পড়েনি।
আধুনিক মানুষের বানানো সভ্যতার সংজ্ঞায় মানুষদের জন্য প্রকৃতির দেয়া স্বাধীনতা নিয়ে বসবাস করার স্বাধীন কোন অঞ্চল নেই। এই না থাকাটা একটা বড় রকমের মানবাধিকার লংঘন। এই মানবাধিকার লংঘনের কথা কেউ বলে না। অথচ প্রকৃত স্বাধীনতা হলো প্রকৃতির সন্তান হিসেবে প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার অধিকার। পৃথিবীতে অন্য প্রাণীদের জন্য ছোটখাট অভয়ারণ্য থাকলেও মানুষের জন্য কোনও অভয়ারণ্য নেই।
আধুনিক মানুষের রাষ্ট্রকেন্দ্রিক এই সভ্যতার যাত্রা শুরু মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে। ইউরোপীয়ান ফরমূলার রাষ্ট্রকাঠামোর বয়স মাত্র কয়েকশো বছর। মহাকালের তুলনায় এটা কিছুই না। এটা হয়তো আর এক হাজার বছরও টিকবে না। টিকলে কী হবে কল্পনায় আসে না। তিনশো বছর আগে মানুষ প্রযুক্তির যে পর্যায়ে ছিল তাতে করে মানবজাতি আরো দশ হাজার বছর টিকতে পারতো। কিন্তু গত একশো বছরে মানুষ যেসব প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে তাতে স্বজাতিকে ধ্বংস করার মতো যথেষ্ট অস্ত্র মজুদ হয়ে গেছে, স্বজাতিকে চরম ঘেন্না করার নানান বিভক্তিও তৈরী হয়ে গেছে। এই মানসিকতার বহুধাবিভক্ত মানব জাতি আর এক হাজার বছর দূরে থাক দুশো বছর টিকবে কিনা তাতেও সন্দেহ আছে।
মাঝে মাঝে তাই মানুষের জন্য একটা অভয়ারণ্যের খুব প্রয়োজন অনুভব করি। পৃথিবীতে কিছু আদিম অসভ্য জাতিগোষ্ঠির জন্য এমন কিছু ভূখণ্ড থাকা দরকার ছিল যেখানে ওরা নিজেদের মতো জীবন কাটাবে। আদিম স্বাধীন মানুষেরাই পৃথিবীর প্রকৃত নাগরিক। পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রাখার জন্য এমন কিছু এলাকা থাকা উচিত।
কেন উচিত সে বিষয়ে একটা বাস্তব উদাহরণ দিয়ে শেষ করছি। অনেকে থাংলিয়ানা বইতে পড়েছেন ঘটনাটা। উনিশ শতকে লুসাই যুদ্ধের পর একদল পার্বত্য আদিবাসীকে আধুনিক উন্নত সভ্যতা দেখিয়ে মুগ্ধ করার জন্য জাহাজে করে কলকাতা শহরে নেয়া হলো। কিন্তু দেখা গেল মুগ্ধ হওয়া দূরে থাক, দুদিন বাদেই ওরা কলকাতার ওপর মহা বিরক্ত হয়ে বলছে, তোমাদের এই সভ্যতা আমাদের দরকার নাই। আমাদের সেই পাহাড়ের চুড়ায় রেখে আসো যেখান থেকে নিয়ে এসেছো। ওখানেই আমাদের শান্তি। ওটাই আমাদের দুনিয়া।
Saturday, September 7, 2024
ফ্যাসিবাদী শব্দপ্রয়োগ সংক্রান্ত
ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর থেকে একটা শব্দ খুব বেশি ব্যবহার হচ্ছে। ফ্যাসিবাদ। গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী দুঃশাসনকে বোঝাতে এই শব্দটা ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু সপ্তাহখানেক বা তার বেশিসময় ধরে খেয়াল করছি শব্দটা অপব্যবহার শুরু হয়েছে। যারা শব্দটার অর্থ বোঝে না, প্রয়োগ বোঝে না তারাও মুখস্থ শব্দটা ব্যবহার করছে। নিজের মতামতের বাইরে কিছু পেলেই তাকেই ফ্যাসিবাদ বলা হচ্ছে। যার ফলে এই শব্দটার আসল অর্থটা হারিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের আমলে যেভাবে রাজাকার শব্দটা যত্রতত্র ব্যবহার করা হতো এখন ফ্যাসিবাদ শব্দটিও সেই পথে যাত্রা শুরু করেছে।
আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল এই বিপ্লবের স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু উপহার দেবে। পুরোনো ভুল পন্থাগুলো ঝেড়ে ফেলে নতুন ভাষায় কথা বলবে, নতুন প্রজন্ম বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে, সেজন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও সরকারের শীর্ষপদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ছাত্র প্রতিনিধিদের। তারা কোনো রাজনৈতিক পথ ও মতের অনুসারী হবার কথা নয়। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।
যা ঘটছে তাতে মনে হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম রাজনৈতিক প্রতারণার ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে এখানে। এই নাটকের মঞ্চ হিসেবে বাংলাদেশের এই রেকর্ড কেউ ভাঙ্গতে পারবে মনে হয় না। দুই মাস আগে কেউ কল্পনাও করেনি মুক্তিযুদ্ধ শব্দটাকে ফ্যাসিবাদ শব্দার্থে রূপান্তরিত করার দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারবে। এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে চারদিকে। সাধারণ মানুষকে এত বোকা মনে করা ঠিক না।
ত্রিদেশীয় সীমান্তের রহস্য: চিনল্যান্ড
অধ্যয়ন-১
বাংলাদেশ-বার্মা-ভারত সীমান্তের দূর্গ অরণ্যের জাতিগোষ্ঠি সম্পর্কিত অনুসন্ধান। ১৮৮২ সালে ক্যাপ্টেন লুইনের লেখা ফ্লাই অন দ্য হুইলের হারিয়ে যাওয়া জাতিগোষ্ঠির খোঁজ করার চেষ্টার প্রথম পর্ব। লুসাই বলে কথিত তিনটি গোত্রের মধ্যে ছিল হাওলং, সাইলু এবং শেন্দু। এদের মধ্যে মাত্র একটির সন্ধান মিলেছে বলে মনে হয়। বার্মার চিন প্রদেশ যাদের নিয়ন্ত্রণে সম্ভবত তারাই হাওলং। সাইলু এবং শেন্দুজদের বিষয়ে আরো খোঁজ করতে হবে। বিশেষ করে শেন্দুজ গোত্রকে কখনোই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
সাম্প্রতিক সময়ের একটি ঘটনা। যেটা পৃথিবীর প্রধান পত্রপত্রিকায় তেমন ঠাঁই করতে পারেনি। ফলে আমাদের অগোচরেই থেকে গেছে ঘটনাটা। অন্তত বাংলাদেশের মানুষের জন্য খবরটা গুরুত্বপূর্ণ।
বার্মার চিন প্রদেশ চিনল্যান্ড নামে একটা দেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, এই স্বাধীনতা অবশ্য কোনো দেশ থেকে স্বীকৃতি পায়নি। তাদের ভাষায় চিনল্যান্ড এর আক্ষরিক অর্থ হলো 'আমারদেশ'। মূলত চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামের বিদ্রোহী গ্রুপ এই স্বাধীন দেশের মালিকানা দাবী করেছে। তাদের নিজস্ব সরকার কাঠামো প্রকাশ করেছে। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পু পা থাং। নতুন দেশের জনসংখ্যা পনের লাখের মতো। তাদের সরকারী ভাষা বার্মিজ, কুকিচিন,ইংরেজির পাশাপাশি মিজো ভাষাও ব্যাপক প্রচলিত। জাতীয় প্রতাকায় লাল সাদা নীলের মধ্যে দুটো ধনেশ পাখি। চিনল্যান্ডকে লুসাই ভাষায় চিনরামও বলা হয়। মূলত প্রাচীন লুসাই জাতির একাংশ দিয়েই এই রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছে। এই সরকার গঠনের পেছনে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করেছে ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্রোহী গ্রুপ CNF, এই দলের প্রতিষ্ঠা ছিলেন পু তিয়াল খাল এবং পু লিয়ান নো থাং। তারা ভারতে এই দলটি গঠন করেছিলেন। ওই দলের সামরিক শাখার নাম CNA বা চিন ন্যাশনাল আর্মি।
এদের মূল গোত্রটি হলো উনিশ শতকে হাওলং নামে যে গোত্রটা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিল সেই গোত্র। হারবার্ট লুইন তাদেরকে হাওলং বলে অভিহিত করেছিলেন তার বইতে। তবে তাদের আসল নামটা সম্ভবত Khlong বা Khlaung, যেটার অর্থ মানুষ। বার্মিজরা তাদেরকে আশো চিন বা আশো খালং নামে ডাকে। বর্তমানে বার্মিজ সরকারের প্রবল নিপীড়নের মধ্যে আছে ওই জাতিগোষ্ঠি। পালিয়ে গেছে অনেকে ভারতের মিজোরামে। হয়তো বাংলাদেশেও কিছু আশ্রয় নিয়েছে গোপনে।
এদের উপভাষাগুলোর মধ্যে আছে:
Zomi Tedim Chin with an estimated 344,000 speakers
Thadou Kuki Chin estimated 300,000
Asho Chin 200,000-300,000
Falam Chin with an estimated 50,300 speakers
Haka Chin (Hakha) with an estimated 125,000 speakers
Matu Chin 25,000 speakers
Khumi Chin 90,000
Mara Chin with an estimated 50,000 speakers
Cho Chin 60,000
Zotung Chin 35,000
এদেরই একটা অংশ বান্দরবানে বাংলাদেশের সীমানায় বসবাস করছে যারা কুকি চিন নামে পরিচিত। এরা বাংলাদেশেও বিদ্রোহের চেষ্টা করে যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। এদের অধিকাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। কিছুদিন ধরে একটা মতবাদ চালু হয়েছে এরা বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের একাংশ নিয়ে একটা খ্রিস্টান দেশ গড়তে চায়। সে কারণেই কুকি চিন বিদ্রোহীরা বাংলাদেশ সীমান্তে অস্থিরতা চালাচ্ছে।
প্রাচীন লুসাই জাতির একাংশ নিয়ে গঠিত এই দেশ বা প্রদেশটা এখনো আরাকান আর্মির মতো তেমন শক্তিশালী নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে বাইরের শক্তির প্রশ্রয় পেলে এরা আঞ্চলিক উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে এদিকে।
অধ্যয়ন-২
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে ভারতের দুটি রাজ্য ত্রিপুরা এবং মিজোরাম। বার্মার দুটি রাজ্য চিন ও আরাকান। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পূর্বদিকে মনিপুর। বর্তমান মানচিত্রে ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের অধীনস্থ হলেও এই রাজ্যগুলোর মধ্যে একটা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঐক্য আছে। সেই ঐক্য হাজার বছর প্রাচীন। ঐক্যের সূত্র বুঝতে হলে রাজ্যগুলোর ইতিহাস জানতে হবে। রাজ্যগুলোতে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠিগুলোকে বুঝতে হবে। পত্রিকার পাতায় মনিপুর প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। মনিপুরের যে সমস্যা সেটা ভাল করে বুঝতে হলে মনিপুর মিজোরাম এবং চিন এই তিনটা রাজ্যের ইতিহাস একসাথে পড়তে হবে। কারণ গত একশো বছরে রাজনৈতিক সীমান্ত বদলে গেলেও এই রাজ্যে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠিগুলোর সাংস্কৃতিক ঐক্য বদলায়নি। এরা একদিকের ধাওয়া খেয়ে আরেক রাজ্যে বসতি গড়েছে ঠিক, কিন্তু এদের মধ্যে প্রাচীন জাতীয়তাবোধ ভালোভাবেই অক্ষুন্ন আছে। ভারত কিংবা বার্মার আগ্রাসন এদেরকে যে গত অর্ধশতাব্দী সময় দরে দমন করতে পারেনি সেটা এখন ভালোভাবেই টের পাওয়া যাচ্ছে।
বার্মায় চিন রাজ্যের অভিযানে অংশ নেয়া ব্রিটিশ কর্মকর্তা Lt. Betram ১৮৮৮ থেকে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে The Chin Hills লিখেছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অস্থিরতার আদ্যপান্ত বোঝার জন্য এই গ্রন্থটি জরুরী। কারণ সীমান্তের ধোঁয়া এই পারেও কিছু কিছু উড়ে আসতে শুরু করেছে। মনিপুরে যাদের সাথে যুদ্ধ চলছে, তাদেরই অন্য অংশ বার্মার চিন প্রদেশ স্বাধীন করতে চাইছে। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের কুকি-চিন বিদ্রোহী গোষ্ঠিও বান্দরবানে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যদিও সংখ্যায় তেমন বেশি নয়। চিন, মিজোরাম, মনিপুরে সব মিলিয়ে পঞ্চাশের বেশি জাতিগোষ্ঠি আছে যাদের অধিকাংশ বাস্তবতা মেনে যে যার দেশের সরকারের সাথে আপোষ করে নিয়েছে। কিন্তু অল্প কয়েকটা গ্রুপ এখনো বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে পূর্ব পুরুষদের মতো। বলাবাহুল্য এই বিদ্রোহগুলোর পেছনে ন্যায্য কারণও আছে। প্রতিটা দেশে সরকারী শক্তি কোনো না কোনো ভাবে তাদের ওপর অবিচার চালিয়েছে। দেশভেদে সেই অবিচারের কারণগুলো আলাদা। কিন্তু অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো তাদের রক্তের ভেতরে লুকিয়ে আছে। যেটা শত শত বছর পরও লুপ্ত হয়নি।
আ ফ্লাই অন দ্য হুইল গ্রন্থে তার কিছু অংশ পড়েছিলাম। এখন পড়ছি দ্য চিন হিলসের বিবরণ। দুটো গ্রন্থই সমসাময়িক। পার্বত্য অঞ্চলের অস্থিতিশীলতার কারণের পাশাপাশি সেই জাতিগুলোকে চিনতে সাহায্য করে। বলাবাহুল্য, এসব বই শাসকদের দিক থেকে যে বাস্তবতার চিত্র দেখায় আমরা সেটাই দেখতে পাই। পার্বত্যজাতিগোষ্ঠির দিক থেকে সেটা এক নাও হতে পারে। তাদের কারো লেখা বই পড়ার আগ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা উচিত হবে না। জো কিংবা চিন গোষ্ঠির কেউ কি তাদের ইতিহাস লিখেছেন?