Saturday, January 20, 2024

শতেক আলোর ভিড়ে- খুঁজে পাওয়া হারানো গান

মানুষের জীবনে অদ্ভুত অপ্রত্যাশিত কিছু কিছু প্রাপ্তি আছে যা একেকটা দিনকে ভরিয়ে দিতে পারে। খুব তুচ্ছ একটা প্রাপ্তিকেও মনে হতে পারে বিশাল অর্জন। আজ তেমনই একটি ব্যাপার ঘটলো। প্রায় তিন দশক আগে অজয় চক্রবর্তীর গানের সাথে প্রথম পরিচয়। সেই সময় তাঁর সদ্য প্রকাশিত একটা ক্যাসেট কিনেছিলাম। সেই ক্যাসেটে এমন কিছু গান ছিল যেগুলো বহুবার শোনার পরও পুরোনো হয়নি। এখনো আমার কাছে সমান প্রিয়। কিন্তু ক্যাসেট যুগ শেষ হয়ে যাবার পর গানগুলো হারিয়ে গিয়েছিল আমার কাছ থেকে। পরে ইউটিউব যুগ আসার পর অনলাইনে খুঁজে খুঁজে সেই গানের অনেকগুলো উদ্ধার করতে পেরেছিলাম। শুধু একটি গান বাদে। যে গানটি আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল, সেই গানটিই কোথাও পাওয়া গেল না। বন্ধুবান্ধব সবাইকে বলেছি। কারো কাছে নেই তার সন্ধান। সারা দুনিয়া খুঁজে কোথাও না পেয়ে ২০১৩ সালে মরিয়া হয়ে একটা পোস্ট লিখি নিজের ব্লগস্পটে। যদি পৃথিবীর কোন প্রান্তে কারো কাছে এই গানের খোঁজ থাকে, যদি ওই পোস্ট কারো চোখে পড়ে....খুব অসম্ভব একটা ব্যাপার। নিজেও কোনদিন বিশ্বাস করিনি কেউ খোঁজ দিতে পারবে। কারো খোঁজ থাকলেও খেয়ে কাজ নেই আমাকে সেই খোঁজ জানাবে।

Sunday, November 24, 2013

স্মৃতিময় গান, কোজাগরী রাত

শতেক আলোর ভিড়ে, নিভে গেল......
কোজাগরী রাত জাগা... চাঁদিনীর  যত আলো কণা....
(অজয় চক্রবর্তী)


প্রাঙ্গন জুড়ে সবুজের মেলা। আম, কাঠাল, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, নারিকেল, বরই, জাম্বুরা সহ নানা জাতের ফলের গাছে আকাশ প্রায় ঢাকা। মাত্র কবছর আগেও গাছগুলো একদম চারাগাছ। ফকফকা জোছনা ছিল প্রান্তরজুড়ে। কিন্তু এখন জোছনাদের অনেক কসরত করতে হয় এই প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে। কোন কোন মাতাল করা চাঁদনী রাতে বেতের মোড়া নিয়ে বারান্দা বসে গাছের ফাঁক গলে পড়া জোছনা দেখতে বসতাম। কত বছর ধরে সেই মায়াবী জোছনার রূপ দেখছি, তবু যেদিন প্রথম অজয়ের এই গানের সাথে জোছনা দেখলাম সেদিন আমি জোছনার এক নতুন রূপ দেখলাম। আগে কখনো দেখিনি। গাছের ফাঁক গলে পড়া জোছনার আলো প্রাঙ্গন জুড়ে সৃষ্টি করেছে অসাধারণ এক আলপনা। অপূর্ব সেই দৃশ্য, বর্ননাতীত সেই সৌন্দর্য। আমি রাতভর সেই সৌন্দর্যে ডুবে থাকতাম। এমনকি রাত পোহাবার পরও আমার চোখে ভাসতো সেই আলপনার মায়া। অজয়ের এই গানটা আমি হারিয়ে ফেলেছি অনেক বছর আগে। তারপর থেকে ক্রমাগত খুঁজে গেছি। আর কোথাও পাইনি।

সেই মায়াবী জোছনার আলপনা ঢাকা বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে সেই কবে। তবু আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতির একটি সেই কোজাগরি রাতের চাঁদের আলপনা।

আমি গানটি খুঁজে যাবো। যতদিন না পাই। এই গানের সাথে আমার প্রিয় স্মৃতিদের বসবাস।

আহা, কেউ যদি খুঁজে দিত? অথবা কোন একটা লিংক? 

---------------------------------------------------------------

৮ বছর পর

কিন্তু দীর্ঘ ৮ বছর কেউ কোন খোঁজ দিতে পারেনি, কিংবা কারো চোখে পড়েনি। ৮ বছর পর ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর অচেনা একজন সেই পোস্টে এসে মন্তব্যের ঘরে একটা লিংক দিয়ে গেলেন। সেটা আমার চোখে পড়েছে আরো মাসখানেক পর। দুর্ভাগ্য আমার ততদিনে দেখা গেল লিংকটা কোন কারণে অকার্যকর হয়ে আছে। হতাশ হয়ে গেলাম। 

আরো তিন বছর পর কেটে গেছে তারপর। কী একটা কারণে ২০২৪ সালের ২০ জানুয়ারী রাতে ব্লগের সেই একযুগ আগের পোস্টটা সামনে এসে পড়ল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেই লিংকে ক্লিক করলাম। লিংকটা কাজ করবে না জেনেও। কিন্তু কী আশ্চর্য! অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো। তিন বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা সেই অকার্যকর লিংকটা আজকে জেগে উঠলো। আমার বহুল কাঙ্খিত গানটা তিন দশক পর আবারো বাজতে শুরু করলো। আমার মনে হলো স্বপ্ন দেখছি। নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই আনন্দ প্রকাশ করার মতো ভাষা নেই। আমি যেন ত্রিশ বছর পুরোনো নস্টালজিয়ায় ডুবে গেলাম। চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো একের পর এক স্মৃতির ফলক। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে আমাদের সেই বাগানঘেরা বাড়িটা আর নেই। সেখানে বহুতল দালান উঠে পুরোনো দিনের সব চিহ্ন আমূল বদলে দিয়েছে। কিন্তু এই গানটা নিমেষের মধ্যে আমাকে সেই বাগানবাড়ির চাঁদনী রাতের আলপনার জগতে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।  

হে অচেনা মানুষ- আপনার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থেকে গেলাম। আমার হারিয়ে যাওয়া অতীতের একটি টুকরো আপনি ফিরিয়ে দিলেন।


শতেক আলোর ভিড়ে- অজয় চক্রবর্তী


এক যুগ আগের সেই পুরোনো পোস্ট:

https://neersondhani.blogspot.com/2013/11/blog-post_24.html

No comments: