Sunday, February 14, 2016

বসন্তদিনে শীত বন্দনা

বাঙালীরা বসন্ত এলে কেমন আপ্লুত হয়। ফাল্গুনের প্রথম দিন নিয়ে মাতামাতি করে। বাঙালীর হুজুগে আমিও পহেলা ফাল্গুনে ডিসি হিলে যাই কোন কোন বছর। কিন্তু বসন্ত আমার প্রিয় ঋতু না। ফাল্গুনের প্রথমাংশের প্রতি কিছু অনুরাগ থাকলেও মোটের উপর বসন্ত আমার ভালো লাগে না। বসন্তের শেষে কেমন একটা হাহাকারের সুর বাজে। বুকের ভেতর শিনশিন করে। হারিয়ে ফেলার সুর বাজে। সবসময় যে হারিয়েছি তা নয়, অনেক ভালো ভালো সময় কাটলেও পুরো ঋতুটাকে আমি ঠিক ভালোবেসে উঠতে পারি না। আমি বরং শীতের বন্দনা করি। বাংলাদেশের শীত আমার কাছে অনেক বেশী প্রিয়। প্রিয় ফুলগুলো শীতেই দেখা যায়।

বসন্ত এলে তাই এই কবিতাটি আমার সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে-

"হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?"
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
"দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?"

"এখনো দেখনি তুমি?" কহিলাম "কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?"
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
"অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? -শুনি নাই,রাখিনি সন্ধান।"

কহিলাম "ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।"
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
"নাই হ'ল, না হোক এবারে-
আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।"

কহিলাম "ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।"
কহিল সে পরম হেলায়-
"বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য বিরচন?"

"হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?"
কহিলাম "উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?"
কহিল সে কাছে সরি আসি-
"কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।"

['তাহারেই মনে পড়ে' - বেগম সুফিয়া কামাল]

তুমিও নিশ্চয়ই জানো তাহা!

No comments: