জ্ঞান এবং স্মৃতি ছাড়া মানুষের নিজস্ব সম্পদ বলতে কিছু নেই। আর যা কিছু আছে সবকিছুর 'আমারত্ব'ই আপেক্ষিক। আর কোন কিছুই স্থায়ী নয়। অথচ মানুষ মালিকানা দখল নিয়েই কত যুদ্ধ বিগ্রহ মামলা মোকদ্দমা হয়রানিতে জড়ায়। এমনকি দলিলপত্রে বৈধ আমিত্ব খুব জোরালোভাবে বজায় থাকলেও সম্পত্তি বেহাত হয়, বেদখল হয়।
কিন্তু সবকিছু হারিয়ে গেলেও হারায় না স্মৃতি, মানুষ বিশিষ্ট কিছু স্মৃতি দিয়েও জীবন পার করে দিতে পারে। স্মৃতিভ্রষ্টতা হয় কখনো কখনো, সেটা মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা কিংবা অন্য কোন সীমাবদ্ধতার জন্য। মানুষ যদি শুধু স্মৃতির মালিকানা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতো তাহলে পৃথিবীতে কোন সমস্যাই হতো না মানুষের মধ্যে।
আমাদের পুরোনো বাড়িটার জন্য মাঝে মাঝে মন কেমন করে, গোপন দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায়। প্রথমে অনিচ্ছায়, পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে বাড়িটার মালিকানা ছেড়ে দিতে হয়। মালিকানা ছেড়ে দেয়াতে আমাদের কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি, বরং উপকারই হয়েছে বৃহত্তর অর্থে। তবু একসময় ছিল, এখন নেই - এই ভাবনাটা একটা কষ্টবোধ জাগিয়ে তোলে কখনো কখনো। বাড়িটা নেই, বাগানটাও নেই এখন। ছেড়ে আসার পর ওই পথে যেতে ইচ্ছে করতো না। কিন্তু যেতে হতো কোন এক অনিবার্য আকর্ষণে এবং চোখে পড়ে জীর্ণ বাড়িটা ভেঙ্গে, বাগানের ছায়াঘন গাছগুলো কেটে বিশাল ইমারত উঠে গেছে। সেই ইমারতে বাস করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নতুন নতুন সুখী পরিবার। না, ইমারতের প্রতি আমার লোভ নেই, কিন্তু বাগানটার জন্য আমার লোভী স্মৃতিটার কান্না পায়। কিন্তু সবকিছু হারিয়ে গেলেও হারায় না স্মৃতি, মানুষ বিশিষ্ট কিছু স্মৃতি দিয়েও জীবন পার করে দিতে পারে। স্মৃতিভ্রষ্টতা হয় কখনো কখনো, সেটা মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা কিংবা অন্য কোন সীমাবদ্ধতার জন্য। মানুষ যদি শুধু স্মৃতির মালিকানা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতো তাহলে পৃথিবীতে কোন সমস্যাই হতো না মানুষের মধ্যে।
ওই বাগানের আম কাঠাল নারিকেল সুপারী পেয়ারা বরই কামরাঙ্গা গাছগুলোর প্রতিটা নাড়ি নক্ষত্র আমার জানা। আমি জানতাম কোন গাছের ফল মিষ্টি, কোন গাছের ফল রসালো, কোন গাছের ছায়া দুপুরে শীতল মায়া যোগায়। শিউলী, কামিনী, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা ফুলের ঝাড়গুলো থেকে এখনো ভেসে আসে দূরবর্তী ঘ্রাণ। যন্ত্রপিষ্ট ইঠ পাথরের শহরের মাঝখানে এমন একটা দুর্লভ বাগানের অধিকার আমার ছিল, আজো ভাবতে ভালো লাগে।
সেই সময়ে ফিরে যাবার কোন উপায় নেই। ওরকম আরেকটি বাগান কখনো হবে না আমার। এই দীর্ঘশ্বাসের কোন মানে নেই। বরং এই ভেবে সন্তুষ্ট থাকি যে, আমার স্মৃতির মালিকানা বদল হয়নি, আমি এখনো স্মৃতির সুবাস মেখে চোখ বন্ধ করে সেই সময়ে পৌঁছে নিজের মতো করে ঘুরে বেড়াতে পারি আমার বাগানে। স্মৃতির বাগানের মতো নিরাপদ আর কী আছে। স্মৃতির বাগান কখনো নষ্ট হয় না, চুরি হয় না, মালিকানা বদল হয় না।
No comments:
Post a Comment