Monday, August 17, 2015

মধ্যরাতের অনিদ্রাচারী

দূর কোথাও থেকে প্রাচীন একটি ঘড়ির ঘন্টাধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এইমাত্র দশটা বাজলো। ঘড়িটা খুব দূরে নয়, কিন্তু দূর ঠেকলো খুব। কাছের জিনিসকে দূরে দেখছি।

আমি খুব সহজেই বিরক্ত হয়ে যাই আজকাল। অথবা লোকজন সহজে আমার বিরক্ত হবার মতো আচরণ করে। আমি নিভৃত জীবনের লোভে চাকরী ছেড়েছি, আমি কুতর্ক এড়াতে সামাজিক ব্যাপার এড়িয়ে চলি, তবু কোথাও কোথাও আমাকে কোলাহল পোহাতে হয়, কুতর্কে জড়াতে হয়। তখন আমি আরো দূরে কোথাও পালাবার পথ খুঁজি।

আজকাল মানুষ আমাকে বড় বিরক্ত করে। মানুষের উপর থেকে আমার সহ্যসীমা নেমে যাচ্ছে। এমনকি যে মানুষকে আমি খুব পছন্দ করি, যে মানুষের জন্য আমি মঙ্গল ছাড়া আর কিছু ভাবি না, যে মানুষ আমার উপর নির্ভর করতো একসময়, আজকাল সেই মানুষকেও দেখি বিরূপ হয়ে উঠতে, সেই মানুষের মধ্যেও অচেনা আচরণ। তাই মানুষকে এড়িয়ে থাকতে চাই।

আমি পড়াশোনার জগতে ফেরার জন্য জীবিকা বদলেছি। আমি কথিত সংসারী হয়েও নিজের জন্য একাকীত্ব খুঁজি সেই জগতে বাস করার জন্য। মানুষ জেগে থাকলে আমার পড়াশোনা আগায় না। মানুষ যখন ঘুমায় তখনই পড়ার পথ খুঁজি। কোলাহলে আমি পড়তে পারি না, লিখতে পারি না। প্রতিটা মধ্য রাত আমি জেগে কাটাই। তবু দিবাভাগে কিছুকাল নিজের মতো কাটাবার মতো একখণ্ড জমিন খুঁজি।

সব মানুষ আহত করে না। দূরের মানুষতো নয়ই। আহত করার অধিকার রাখে কাছের মানুষ। আঘাত করার সুযোগ বেশী কাছের বন্ধুর। কাছের বন্ধুর কাছে সতর্ক থাকে না কেউ। কাছের বন্ধুটি ঠিক ছুরি চালিয়ে দিতে পারে বুকের ভেতর।

ব্যক্তিগত গ্লানিগুলি প্রকৃত অর্থে মূল্যহীন। অনুতাপ অনুশোচনা এসব  ননসেন্স। এর মানে তুমি সময়ের কাজ সময়ে করোনি অথচ অর্থহীন কাজে বহু ঘন্টা নষ্ট করেছো।  জীবনটা ছোট, ফুরিয়ে যাবে যে কোন সময়, সবই জানি। তবু তাকে নির্মমভাবে অপচয় করি, ভুল জিনিসের পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করি।

যখন মনে পড়ে তখন গোছাই। আবার ভুলে যাই। মনে পড়লে আবার গোছাবো।

এই শূন্যতা অর্থহীন। আমি জানি এ কিসের শূন্যতা। কিন্তু এই শূন্যতা পুরন কারো পক্ষে অসম্ভব।

আড্ডা দিলে ভালো লাগতো? এই মুহুর্তে কে কে ফ্রী আছে? অনলাইন বা অফলাইনে?  ডাক দিলেই আড্ডা দেয়া যায়। তবু ডাকছি না। সবারই নিজস্ব জগতের কাজকর্ম আছে। আমার জন্য সৌজন্যের খাতিরে কেউ সময় নষ্ট করবে চাই না।

[রাত্রি দ্বিপ্রহর]


No comments: