Monday, April 27, 2015

চেনা ঢাকার অচেনা রাস্তায়: দীর্ঘশ্বাসের অক্ষরসমূহ

১.
অনেকদিন পর ঢাকা গিয়ে এতটা সময় কাটালাম। বহুবছর পর। চাকরীজীবনের গত বিশ বছরে তো নয়ই। গত বিশ বছরের ঢাকা যাওয়াটা ছিল জেলখানা থেকে পেরোলে মুক্তি পাওয়া আসামীদের মতো। বছরে ছমাসে একবার গেলেও অধিকাংশ সময়ে এয়ারপোর্ট/বাসস্টপ থেকে কর্মক্ষেত্র সেখান থেকে হোটেল কিংবা চট্টগ্রাম। এর বাইরে দুয়েকবার বইমেলা, দুয়েকজন বন্ধুর সাথে আসা যাওয়ার পথে দেখা করেছি। কিন্তু কোথাও গিয়ে পা ছড়িয়ে আলসে ঝরিয়ে কোথাও আড্ডা মারা হয়নি। ফলে ঢাকার পরিচিত অনেক দৃশ্য, অনেক রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ইমারত বদলে গেছে আমার অজান্তেই। কতটা বদলাতে পারে একটা শহর এবার ঢাকা গিয়েই বুঝতে পারলাম। চেনাপথগুলো খুঁজে বের করতে কষ্ট হয়ে গেল। অনভ্যাসে একা কোথাও যেতে পারি না। কথা ছিল সময় নিয়ে ঢাকা গেলে পুরোনো মুখগুলোকে বের করে ইচ্ছে মতো আড্ডা দেবো। অনেক দিন না দেখা বন্ধু স্বজনদের বাসায় যাবো। কিন্তু হলো না। চারদিন নিজের রুটিনে নিজেই আটকে ছিলাম। যে কাজে গিয়েছি সেই কাজে এমন একটা ঝামেলা লাগলো মুডই নষ্ট হয়ে গেল। আর ঠিক সেরকম মুড না হলে আমি কারো সাথে কথা বলে আড্ডা দিয়ে যুত পাই না। আমার একটা বড় ধরণের সীমাবদ্ধতা এটা। ওই চার দিনে মুষ্টিমেয় খুব ঘনিষ্ট অফলাইন বা অনলাইন দুয়েকজন বন্ধু ছাড়া কারো সাথেই যোগাযোগ ছিল না। ঢাকার পরিচিত কাউকে ডাকতে ইচ্ছে করে নি। কারো বাসায় যেতে ইচ্ছে করেনি। নিজের কাজের ঝামেলা ছাড়াও একটা অনাকাংখিত দুর্ঘটনায়ও মনটা বেজার হয়ে পড়েছিল। পুরোনো একটা ভুলের বড় খেসারত দিলাম। তবুও বলবো অনেক ভালো আছি এখনো। নেপালে যা ঘটেছে সেরকম কিছু এদেশে ঘটলে আমাদের কী অবস্থা হবে কেউ জানে না। এখনো বাকী আছে অনেক দুঃসময়ের। এখনো দেখিনি চুড়ান্ত পতন। প্রকৃতি আমাদের জন্য আরো শাস্তি নিয়ে অপেক্ষা করছে? গরীব দেশের উপর যেন প্রকৃতির আক্রোশ একটু বেশীই।

২.
তবু দুটো জায়গা ঘুরতে পেরেছি বন্ধুর কল্যাণে। ৩২ নাম্বার গেলাম এক সন্ধ্যায়, লেকের মধ্যে চমৎকার একটা রেস্তোরার খোলা চত্বরে বসে আড্ডা দিলাম। পরদিন সন্ধ্যায় কাজের মধ্যে দু ঘন্টার ব্রেক নিয়ে গেলাম টিএসসি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় চেনা জায়গাও অচেনা লাগছিল। উদ্যানে ঢুকলাম ছবির হাট দিয়ে। এই জায়গাটা আগে কখনোই এরকম ছিল না। শিখা অনির্বান দেখলাম, স্বাধীনতার স্তম্ভ দেখলাম। মুগ্ধ হলাম উন্নয়ন সৌন্দর্যে। প্রকৃতি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে। কিন্তু সভ্যতার খাতিরে এটুকু ছাড় দেয়া যা। স্বাধীনতার আলোক স্তম্ভটাকে অন্ধকারে এক শুদ্ধ বাতিঘরের মতো দণ্ডায়মান দেখে বেশ লাগলো। এই সৌন্দর্য খালি চোখেই বোঝা সম্ভব। একটু অবাক হলাম এরকম একটা সুন্দর প্রতীকের ছবি আগে দেখিনি। ফেসবুকে লোকজন এত জিনিসের ছবি তুল আপ করে, কিন্তু এটা কেন দেখিনি। আমি কয়েকটা ক্লিক করলাম মোবাইল ক্যামেরায়। ক্যামেরা মোবাইলে যেটুকু ধরা যায়, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। ফেরার পথে পার্কে কিছু অপ্রিয় দৃশ্য দেখতে হলো। অবিশ্বাস্য। এত সৃংখলার সাথে, নীরব অন্ধকারে ধোঁয়ার গন্ধ ছড়াচ্ছে দলবদ্ধ নেশাখোরের দল। হ্যাঁ এত সুন্দর একটা পার্কের একাংশ দখল করে রেখেছে শিক্ষিত গঞ্জিকাসেবিদের দল। তাদের অনেকে দেশের সংস্কৃতি জগতের অংশীদারও বটে। শিল্পের জন্য ছাড় দিতে গিয়ে সরকারও বোধকরি ওই জায়গাটাকে আলো থেকে বঞ্চিত রেখে তাদের জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। পার্কের অধিকাংশ জায়গা অন্ধকার, ওই জায়গাটা যেন একটু বেশীই। প্রদীপের নীচের অন্ধকারকে মেনে নেয়াই মনে হয় নিয়ম।

৩.
দুঃসময় আমাদের হাতের নাগালেই, অথচ সুসময় কত দ্রুত সরে যায় নাগালের বাইরে!
ভুল বোঝা সবচেয়ে সহজ, আপনজনকে ভুল বোঝা তো রীতিমত জরুরী। নইলে আক্ষেপে আশ্লেষে মরার সুযোগ হবে কী করে। সুসময়ের জন্য জমিয়ে রাখা দীর্ঘশ্বাস, নিষ্ঠুরতম আঘাতের স্মৃতিতেও এন্টিবায়োটিক মলম লাগিয়ে যায়। এটা সান্ত্বনা নয়, স্বস্তি।


Wednesday, April 22, 2015

হটমেইল- ইয়াহুর সিঁড়ি বেয়ে জিমেইলঃ তারপর, গুগল তুমিও!

আরো অনেকের মতো আমারো ইন্টারনেট মেইলে যাত্রা শুরু হটমেইলকে দিয়ে। হটমেইলে আমি প্রথম কাকে চিঠি লিখেছিলাম আজ মনেও নেই। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে সেই চিঠি প্রাপক আমার কাছের কোন মানুষ ছিল না। অফিসের কোন কলিগ, সম্ভবতঃ বিদেশী কলিগ কাউকে লিখেছিলাম হয়তো। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করাতে একাউন্ট সাসপেণ্ড হয়ে গিয়েছিল বলে হটমেইলের সবকিছু মুছে গেছে তাই মনে পড়ে না কোথায় প্রথম লিখেছিলাম।

কিন্তু এক্ষণে সাবির ভাটিয়ার কথা মনে পড়লো। ভারতীয় এই ছেলেটা ২৮ বছর বয়সে হটমেইল চালু করে বিশ্বব্যাপি তোলপাড় করে ফেলেছিল। তখনো মাইক্রোসফট হটমেইলের মালিক হয়নি। এক সময় বিল গেটস ৪০০ মিলিয়ন ডলারে হটমেইল কিনে নেন। তখন থেকে হটমেইলের নতুন যাত্রা। ২ মেগাবাইটের হটমেইলে তখন কয়টা চিঠি পাঠানো যেতো এখন ভাবা যায়?

আমি ২০০০ সালের হটমেইলকে মিস করি। যে হটমেইল থেকে একদিন ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জারও বের হয়েছিল চ্যাট করার জন্য। হটমেইলের চ্যাট ইনস্টল হবার পর বুঝতেছিলাম না জিনিসটা দিয়ে কার সাথে কথা বলবো। তার আগে আইআরসি চ্যাটের খানিক অভিজ্ঞতা ছিল, আর ছিল বুলেটিন বোর্ডে মেসেজ চালাচালির খুবই সামান্য অভিজ্ঞতা। IRC চ্যাট আমাকে টানেনি কেন যেন। কিন্তু ব্যক্তিগত চ্যাটাচেটি কি জিনিস সেটা বুঝতে পারছিলাম না। কেউ ছিল না যার সাথে চ্যাট করা যায়।

একদিন এক বন্ধুকে পেয়ে যাই। দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর এক বন্ধু, পেশায় ডাক্তার। জাপানী ভাষা শিক্ষার ফোরামে তার সাথে পরিচয়। সে নিয়মিত মেইল দিত, আমিও দিতাম। আমার তখন নতুন নতনু দেশ সম্পর্কে জানার নেশা। এশিয়া আফ্রিকা থেকে দক্ষিন আমেরিকা পর্যন্ত আমার জিওগ্রাফিক্যাল আগ্রহ ছিল। যেহেতু অনলাইনে আর কোন বন্ধুর এই মেসেঞ্জার ছিল না, তাকেই বললাম একদিন। বলতেই সে রাজী হয়ে গেল। তখন আমরা বন্ধুরা মিলে একটা ফোন ফ্যাক্স ইন্টারনেট মোবাইল ইত্যাদির একটা সেন্টার খুলেছিলাম। মূলত অফিস থেকে ফিরে আমাদের ষোলজনের আড্ডার জায়গা। রাত দশটা পর্যন্ত আড্ডা শেষে সবাই বাড়ি ফিরতাম। বাসায় তখনো কম্পিউটার নেই আমাদের। ওই সেন্টারে সবাই একটা কম্পিউটারেই কাজ করতাম। আমি সেই বন্ধুকে আগেই জানিয়েছিলাম কটার সময় চ্যাটে আসতে হবে। লগ ইন করে দেখি সে অনলাইনে। এখনো মনে পড়ে জীবনে প্রথম কাউকে অনলাইনে দেখে খুশীতে আটখানা বা দশখানা! যেন এক ক্লিকে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গল ছুয়ে দিয়েছি।

তাকে নক করে বললাম, হাই। সেও বললো, হাই। তারও আগে চ্যাটের অভিজ্ঞতা ছিল না। দুজনের প্রথম অভিজ্ঞতা হওয়ায় সেকি মুগ্ধতা। এই প্রান্তে আমি একটা শব্দ টাইপ করছি আর সেই শব্দটা পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বসে লাইভ দেখছে আরেকজন। আমি বন্ধুদের ডেকে গর্বের সাথে বললাম, দেখ আমি কত দূরের বন্ধুর সাথে চ্যাট করতে পারি। বন্ধুদের কারোরই তখনো হটমেইল বা কোন মেইল আইডি ছিল না। তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো আমার কৃতিত্বে। (শুনলে এখন হাসতে হাসতে বিষম খাবে লোকে। কিন্তু সেটাই তখনকার বাস্তবতা। মাত্র দেড় দশক আগে)

মাইক্রোসফটের স্বর্নযুগ তখন। যা কিছু ভালো, তার সাথে মাইক্রোসফটের আলো। কিন্তু একদিন সেই ‘ভালো’ মাইক্রোসফট বিজ্ঞাপনে হারিয়ে যেতে শুরু করলো। এনিমেটেড বিজ্ঞাপন আর হাবিজাবিতে নর্দমায় পরিণত হলো এমএসএন এর সমস্ত প্রোডাক্ট। ভোক্তার রুচি আর চাহিদা বুঝতে পারেনি মোটা দাগের লোভ করতে গিয়ে। মাইক্রোসফটের সাইটে ঢুকলে রীতিমত বমি পায় বিজ্ঞাপন রুচির স্থুলতায়। এত বিরক্তিকর হতে পারে কোন সাইট!!
তবে এর মধ্যে আরো এক জায়ান্ট এসে গিয়েছিল। ইয়াহু!

প্রথম দিকে ইয়াহুতে ভীষণ মুগ্ধ। কয়েক বছর ধরে রাজত্ব করলো জেরী ইয়াং এর ইয়াহু। আমি হটমেইল ছেড়ে ইয়াহুতে তরী ভেড়ালাম। তখন ইয়াহুর মেইল, চ্যাট সবকিছুই আধুনিক এবং হটমেইলের চেয়ে সুন্দর। তাদের সার্চ ইঞ্জিনও বেশ কাজের।

যখন ইয়াহুতে ভালো লাগা ভর করেছে, নির্ভর করতে শুরু করেছি তাদের অনেক কিছুতে, তখন ক্যালিফোর্নিয়াতেই নীরবে বেড়ে উঠছিল আরেকজন। শুধু সার্চ করার জন্য তার কদর বাড়ছিল। সার্চের জনপ্রিয়তার সিঁড়ি বেয়ে একদিন সে জানালো, গুগল এখন থেকে মেইল সার্ভিস দেবে সীমিত কিছু লোকের জন্য। শুধু নিমন্ত্রিত অতিথিরাই মেইল পাবেন।
জিমেইলের নিমন্ত্রন পেতে কতজনের কত আকুলতা। আমাকে কে দিয়েছিল জানি না। কিন্তু জিমেইল শুরুর এক মাসের মধ্যে আমি আইডি খুলেছিলাম মনে আছে। নিজের নামে খোলার সুযোগ ছিল তখন। তবু কেন জানি নিজের নামটা পরিহার করে অন্য আইডি নিলাম যেটা হটমেইলে ছিল। সময়টা সম্ভবত ২০০৪ সালের মাঝামাঝি। যদিও নীরবে আবির্ভূত হয়েছিল জিমেইল, কিন্তু সাইজটা ছিল চমকে দেবার মতো। যেখানে হটমেইল কোনমতে ২ মেগা দেয় ইয়াহু দেয় ৪ মেগা সেখানে তৃতীয় জনের দেবার কথা বড়জোর ৮ মেগা বা ১০ মেগা। কিন্তু যখন গুগল ১০০০ মেগার ঘোষণা দিল তখন ব্যাপারটা অবিশ্বাস্যই লাগলো। আমি যেদিন জিমেইলে প্রথম ঢুকলাম সেদিনই বুঝে নিলাম আজ থেকে হটমেইল আর ইয়াহু একাউন্টের কবরের ভিত্তিপ্রস্তর তৈরী হলো।

বুঝলাম, এতকাল ধরে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আসল জায়গায় পৌছালাম। ধরেই নিলাম আমার শেষ প্রেম জিমেইল। আর কোথাও যাবো না আমি। জিমেইলের সবকিছুই সুন্দর। জিমেইল কখনো বিরক্ত করে না ইউজারকে। বছরখানেকের মধ্যেই হটমেইল, ইয়াহুকে কিক আউট করে জিমেইলে ডুবে গেলাম।

কিন্তু আরো এক যুগ পার হবার পর এই সময়ে এসে গুগল একটু অদ্ভুত আচরণ শুরু করলো। গুগলের প্রোডাক্টগুলো বরাবর ছিল নীরব। ভোক্তাকে কখনোই বিরক্ত হতে হতো না। কিন্তু গত দুবছর ধরে গুগল হাবিজাবি কতগুলো প্রোডাক্ট এনে ঝামেলা পাকাতে শুরু করেছে। এমনকি মেইলে ক্লিক করলেও সরাসরি না খুলে আমাকে নিয়ে যায় অন্যখানে। জোর করে তাদের শ্লোগান বিজ্ঞাপন গেলাতে শুরু করে।

দেখে মনে হয় এখানে কোন মাইক্রোসফটের বিজ্ঞাপনলোলুপ এক্সিকিউটিভ যোগ দিয়েছে। যেটা মানুষকে বিরক্ত করতে শুরু করেছে। সত্যি বলতে জিমেইল এখনো আমার প্রিয় হলেও গুগল প্লাস, হ্যাং আউট ইত্যাদির উপর আমি চরম রকমের বিরক্ত। এরকম চলতে থাকলে কিছুদিন পর আমাদের নতুন প্রোডাক্ট খুজতে হবে। বলতে হবে, ভিক্ষা চাই না কুত্তা সামলান।

সুতরাং গুগল ভায়াকে বলছি, সামলে চলো, নইলে তুমিও মাইক্রোসফটের মতো ভাগাড়ে পৌঁছে যাবে। যদি ভালো ইংরেজী জানতাম তাহলে গুগলকে একটা পত্র লিখে বলতাম-

Dear Googol,
I have no doubt that I luv you. I luv Gmail, I luv Google Search, I luv Google Drive, and I luv many things of Google.

BUT I Hate Google+, I Hate Hangout, It Annoyed me like Microsoft!

I want to open Gmail directly like before. I dont want to be bothered by the redirected page, suggestion, advertisement etc. Please don’t tell me how better or how sweet your Google+ or Hangout. I dont give a sh...t for ur new lovely products!! bla..... bla.....

কিন্তু ইংরেজী কি এত সহজ? তাই বাংলায় বলি-

ডিয়ার Google,
তোমার মধ্যে এখন অনেক অপছন্দের উপাদান, আগের তুমি এখন নাই, বদলে গেছো অনেক। তোমাকে পছন্দ করা একটা যন্ত্রণা, তবু তোমাকে আমি ভালোবাসতে বাধ্য হই কেননা আমার দ্বিতীয় বিকল্প নাই। কিন্তু খেয়াল রাইখো, মার্কেট ইজ ওপেন, আমার কাছে নতুন কেউ এসে যদি নিরুপদ্রপ মেইল সার্ভিস দেয়, আমি তোমার এতকালের প্রেমকে পশ্চাতে ফেলে সামনে চলে যাবো। হটমেইল নিয়ে দুষ্ট লোকে যা বলে তোমাকে নিয়ে তা বলুক আমি সত্যিই চাই না। হটমেইলের দুষ্টুকথা পড়ে দেখো এখানে http://uncyclopedia.wikia.com/wiki/Hotmail

এখনো সময় আছে। মতি ফেরাও........গতি সামলাও।

ইতি-
একজন খাঁটি ব্লগ টাইপার

[ব্লগরব্লগর লেখা কি এত সহজ? নতুন কীবোর্ডে লেখা তো আরো কঠিন। পুরোনো রাফখাতা থেকে কপি করে এডিট করতে গিয়েও রীতিমত হাঁপিয়ে গেলাম।]

Monday, April 20, 2015

এই বৈশাখের গদ্য

আমাকে কোন এক সময় কঠিন দুঃখ পেতে হবে। যে মানুষেরা খুব আরামপ্রিয় এবং অতিসংবেদনশীল হয়ে ওঠে তাদের জন্য এটা অনিবার্য পরিণতি। অনাগত ভবিষ্যতের এই অপ্রিয় বাস্তবতাকে মেনে নিয়েও আমি বলি আমি সবচেয়ে বেশী সংবেদনশীল সম্পর্কের ক্ষেত্রে। আমি মোটামুটি বন্ধুবৎসল মানুষ। আমার খুব বেশী বন্ধু নেই। তবে যা আছে কমও না। আমার বন্ধুদের সাথে তেমন কোন সমস্যা নেই। বড় হবার পর বন্ধুত্বে সমস্যা করে অর্থনৈতিক স্বার্থ। আমার সেরকম স্বার্থজড়িত ব্যাপার খুব বেশী ছিল না। যখনি অর্থনৈতিক স্বার্থ এসে পড়ে তখন বন্ধুতার মধ্যে শিথিলতা ভর করে। অচেনা হতে শুরু করে চেনাবন্ধুও। 

আমি যে বিশ্বাস করে ঠকিনি সেটা বলবো না। তবে এটুকু বিশ্বাস করতে চাই যে আমাকে ঠকিয়েছে সেটা তার শেষ উপায় বলেই। সে নিজেও নিশ্চয়ই এমন কোন বিপদে আছে। আমাকে কিছু না বলে আলগোছে সরে গেছে, অদৃশ্য হয়ে গেছে মোটা অংকের লেনদেন বকেয়া রেখে, তাকেও আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। দিয়েছি আমি মহান বলে নয়। আমি বন্ধুতাকে ভালোবাসি বলে। তার সাথে আমার দীর্ঘকালের সুসম্পর্ক ছিল বলে। ওই স্মৃতিগুলোকে আমি অমর্যদা করতে চাইনি। সে যে চরম অকৃতজ্ঞ আচরণ করেছে এটাকে আমি ভুলে যেতে চাই। 

জীবনযাত্রার মতো আমি বন্ধুতার ব্যাপারেও খুব আয়েশী।  আমি বন্ধুর কাছে চোখ বন্ধ করে নিরাপদ থাকতে চাই। যে বন্ধু চট করে চোখ উল্টে ফেলতে পারে, কুৎসিত আচরণ করতে পারে, তেমন বন্ধুকে আমি ভয় পাই। নিরুপদ্রপ বন্ধুতা আমার কাছে সর্বকালের কাম্যবস্তু। আমরা সবচেয়ে ভালো থাকি মন ভালো করে দেয়া সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির কাছে। সেই মন ভালো রাখা বন্ধুটিকে যদি কখনো ভয় পেতে হয়, তার মতো দুঃসময় বন্ধুতা জগতে আর কিছু নেই। নিজেকে তখন খুব অনিরাপদ আর অনিশ্চিত লাগে। আমার ভাবতে ভালো লাগে আমি সেরকম বন্ধুতা থেকে মুক্ত। বন্ধুতায় আমার নতুন করে আর হারাবার কিছুই নেই। বন্ধুদের কাছে আমি এখনো চিরকৃতজ্ঞ।

===========



দূর কোথাও থেকে প্রাচীন একটি ঘড়ির ঘন্টাধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এইমাত্র দশটা বাজলো। ঘড়িটা খুব দূরে নয়, কিন্তু দূর ঠেকলো খুব। কাছের জিনিসকে দূরে দেখছি।

অথবা
আমি খুব সহজেই বিরক্ত হয়ে যাই আজকাল। অথবা লোকজন সহজে আমার বিরক্ত হবার মতো আচরণ করে। আমি নিভৃত জীবনের লোভে চাকরী ছেড়েছি, আমি কুতর্ক এড়াতে সামাজিক ব্যাপার এড়িয়ে চলি, তবু কোথাও কোথাও আমাকে কোলাহল পোহাতে হয়, কুতর্কে জড়াতে হয়। তখন আমি আরো দূরে কোথাও পালাবার পথ খুঁজি।
অথবা
আজকাল মানুষ আমাকে বড় বিরক্ত করে। মানুষের উপর থেকে আমার সহ্যসীমা নেমে যাচ্ছে। এমনকি যে মানুষকে আমি খুব পছন্দ করি, যে মানুষের জন্য আমি মঙ্গল ছাড়া আর কিছু ভাবি না, যে মানুষ আমার উপর নির্ভর করতো একসময়, আজকাল সেই মানুষকেও দেখি বিরূপ হয়ে উঠতে, সেই মানুষের মধ্যেও অচেনা আচরণ। তাই মানুষকে এড়িয়ে থাকতে চাই।
অথবা
আমি পড়াশোনার জগতে ফেরার জন্য জীবিকা বদলেছি। আমি কথিত সংসারী হয়েও নিজের জন্য একাকীত্ব খুঁজি সেই জগতে বাস করার জন্য। মানুষ জেগে থাকলে আমার পড়াশোনা আগায় না। মানুষ যখন ঘুমায় তখনই পড়ার পথ খুঁজি। কোলাহলে আমি পড়তে পারি না, লিখতে পারি না। প্রতিটা মধ্য রাত আমি জেগে কাটাই। তবু দিবাভাগে কিছুকাল নিজের মতো কাটাবার মতো একখণ্ড জমিন খুঁজি।
অথবা
সব মানুষ আহত করে না। দূরের মানুষতো নয়ই। আহত করার অধিকার রাখে কাছের মানুষ। আঘাত করার সুযোগ বেশী কাছের বন্ধুর। কাছের বন্ধুর কাছে সতর্ক থাকে না কেউ। কাছের বন্ধুটি ঠিক ছুরি চালিয়ে দিতে পারে বুকের ভেতর।
অথবা
ব্যক্তিগত গ্লানিগুলি প্রকৃত অর্থে মূল্যহীন। অনুতাপ অনুশোচনা এসব  ননসেন্স। এর মানে তুমি সময়ের কাজ সময়ে করোনি অথচ অর্থহীন কাজে বহু ঘন্টা নষ্ট করেছো।  জীবনটা ছোট, ফুরিয়ে যাবে যে কোন সময়, সবই জানি। তবু তাকে নির্মমভাবে অপচয় করি, ভুল জিনিসের পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করি।
অথবা
যখন মনে পড়ে তখন গোছাই। আবার ভুলে যাই। মনে পড়লে আবার গোছাবো।
অথবা
এই শূন্যতা অর্থহীন। আমি জানি এ কিসের শূন্যতা। কিন্তু এই শূন্যতা পুরন কারো পক্ষে অসম্ভব।
অথবা

আড্ডা দিলে ভালো লাগতো? এই মুহুর্তে কে কে ফ্রী আছে? অনলাইন বা অফলাইনেডাক দিলেই আড্ডা দেয়া যায়। তবু ডাকছি না। সবারই নিজস্ব জগতের কাজকর্ম আছে। আমার জন্য সৌজন্যের খাতিরে কেউ সময় নষ্ট করবে চাই না।

অথবা

যা ভাবছি তা ঠিক নাও হতে পারে। অধিকাংশ মানুষ ভুল ভাবনার খেসারত দেয় শেষ সময়ে গিয়ে। তখন আর ফেরার পথ থাকে না।


এরোপ্লেন

তুমি চিরকাল আকাশেরই
আমি তোমার আসা যাওয়ার রানওয়ে মাত্র

Saturday, April 18, 2015

জীবন অগাধ নয়, অসীমও নয়

১. প্রযুক্তি ও মানুষ
প্রযুক্তি সভ্যতার একটি ক্ষতিকর দিক মানবিকতার অবনতি। মানুষ প্রযুক্তির উপর এত বেশী নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে  মানুষের চেয়ে প্রযুক্তিকে বেশী বিশ্বাস করে। করবে না কেন? আমাকে যদি বলা হয় মুখে মুখে ৪৩৮৮৯৮x৫৬৭৮৯ এর গুনফল বলতে, আমি সারাদিন মাথা ঘামিয়েও সঠিক উত্তর দিতে পারবো না। কিন্তু একটা ক্যালকুলেটরকে বলা হলে সে এক সেকেণ্ডের কম সময়ে উত্তরটা হাজির করে দেবে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিলাতে একটা চিঠি যেতে কমপক্ষে দশ দিন সময় লাগবে। অথচ  ইন্টারনেটে বসে আমরা এক মিনিটের কম সময়ে চিঠি পৌঁছে দিতে পারি বিলাতে। কী চমৎকার ব্যাপার না? নিঃসন্দেহে। যোগাযোগ মাধ্যমে এটা একটা বিপ্লব। পৃথিবীকে অনেক ছোট করে দিয়েছে, মানুষকে অনেক কাছে এনে দিয়েছে। মানুষ এখন তথ্যের জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে না। কিছু জানতে হলে চট করে গুগল সার্চ দিয়ে বের করে নেয়। বন্ধুর কাছ থেকে জবাব পাওয়া যায় এক সেকেণ্ডেও(যদি চ্যাট জাতীয় কিছু হয়)। তবে মুশকিলও আছে একটা। কোন টেকি কারণে সেই বার্তাটা যদি দেরীতে পৌঁছায়, অন্যপক্ষ ধরে নেয় এখানে তাকে ফাঁকি দেয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই সে চিঠি দেয়নি। যে তথ্য চাওয়া হয়েছে সেটা দিতে বিলম্ব করেছে, অবহেলা করেছে, এড়িয়ে গেছে। দুই পক্ষের মধ্যে লেগে যায় ধুন্ধুমার যুদ্ধ। সম্পর্ক অবনতি, কখনো কখনো কাটাকাটি। এই ব্যাপারটার জন্য দায়ী প্রযুক্তির উপর নিরংকুশ বিশ্বাস। পরে পত্রদাতা এসে যতই বোঝাক যে আমি ঠিক সময়ে দিয়েছি, তুমি পেতে দেরী করেছো কেন প্রযুক্তি সমস্যার কারণে। পত্রগ্রাহক সেটা কিছুতেই মেনে নেয় না। তার বিশ্বাস প্রযুক্তির উপর অটুট। বন্ধুকে সে বিশ্বাস করতে পারে না। সে যতই জানের দোস্ত হোক। মানবিকতার এই অবনতি মেনে নেয়া কঠিন হলেও মানুষ এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। এমনকি যাদের মধ্যে একদা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে পরে ঠিক হয়ে গেছে, তাদের মনের গভীরেও একটা সুক্ষ্ণ অবিশ্বাস জেগে থাকে সবসময়। প্রযুক্তি সম্পর্কে যেমন গভীর করেছে, তেমনি করেছে ঠুনকো। নৈকট্যের মতো দূরত্ব রচনাতেও প্রযুক্তির তুলনা হয় না।

২. কুজন্মা/অজন্মা জারজ
কিছু বেজন্মা জারজের বাচ্চা পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যা করেছে তা জানতে দুদিন লেগে গেছে নেট থেকে একটু দূরে থাকার কারণে। ফেসবুক ব্লগে না থাকলে আজকাল দেশের অনেক খবর পাই না। আমি এতদিন ভাবতাম ২০০০ সালের বাঁধনের ঘটনাটার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরকম ঘটনা আর কোনদিন কেউ ঘটাবার সাহস পাবে না। আমার ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে এবছর আবারো ঘটলো আরো জঘন্যতম ঘটনা, এবং তাও ঘটেছে হাজারো লোকের মধ্যে প্রকাশ্যে, প্রায় দিনের আলোতেই। রাগে দুঃখে অক্ষম দাঁত কিড়মিড় করা ছাড়া আর কিছু করতে পারিনি। মাঝে মাঝে মনে হয় দেশের আইনে কিছু মানুষ খুন করার বৈধতা থাকা উচিত। তাহলে সেই বেজন্মা জারজদের অন্তত একজনকে খুন করে শান্ত্বনা দিতাম নিজেকে।

৩. উচ্চ ও তুচ্ছ
খুব ছোট ছোট কাজ নিয়ে দিন কাটে আজকাল। এতই ছোট যে বলার মতো না। বইপত্রের কাজ কারবার কোন কালেই বড় ছিল না। বড় বড় কাজে টাকাপয়সা বেশী হলেও ছোট কাজে একদম ফাঁকা। অথচ যে কাজে অর্থ নেই সেই কাজে আমার আগ্রহ বেশী। তাই আমার আর্থিক উন্নতি হবার কোন সম্ভাবনাই নেই। এটা জানলে আমার বন্ধু সংখ্যা অনেক কমে যাবে। তবে বন্ধুসংখ্যা কম থাকলেও বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো যাবে। অপড়ুয়া বন্ধুর সংখ্যা কম থাকাই ভালো আমার জন্য। অপড়ুয়া বন্ধুর সাথে আড্ডা মেরেও সুখ পাই না আজকাল। কপালগুনে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি পড়ুয়া। নইলে জীবনটা দুর্বিসহ হতো।  উচ্চ লোকরে বর্জন করিয়া তুচ্ছ হইয়া কাটাইব জীবন।

৪. স্বেচ্ছামৃত্যু
জীবন কী? একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ মাত্র? কতগুলো বছর মাস দিনের সমষ্টি? শৈশব কৈশোর যৌবন বার্ধক্যের যোগফল শেষে সবচেয়ে গুরুতর প্রয়োজনীয় মানুষটিও একদিন পরিণত হয় অকার্যকর হাড় মাংস সর্বস্ব একটি পরিচিত জীবে। মানুষের এই পরিণতিটা খুব মর্মান্তিক লাগে। আমি বৃদ্ধ হবার আগেই জীবনের মেয়াদ শেষ করতে চাই। এই চাওয়া পূরণ হবে কিনা তা বলার উপায় নেই। মানুষ জীবনে আরামপ্রিয় হলে মরণেও আরাম চায়। আমার কাছে সবচেয়ে আরামের মৃত্যু মনে হয় ঘুমন্ত অথবা অজ্ঞান অবস্থায় মৃত্যু। যেন কিছুই টের পেলাম না নিঃশব্দে চলে গেলাম। এরকম কোন প্রস্তুতির সুযোগ নেই পৃথিবীতে। শুধু ইচ্ছেটাই সার। তবে ইচ্ছেটা বলতে দোষ নেই। ধরা যাক আমি একজন ডাক্তারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলাম। আমার সকল প্রস্তুতি শেষ করে, সবার সাথে লেনদেন শেষ করে একটা তারিখ ঠিক করবো। ডাক্তার সেই তারিখে আমার ঘরে আসবে। চুক্তিমতন ডাক্তার আমার কাছ থেকে আগাম টাকা বুঝে নিয়ে আমাকে ইনজেকশান দিয়ে চেতনাহীন করে ফেলবে। চেতনা হারাবার পর আরেকটি বিষযুক্ত অ্যামপুল নিয়ে আমার বাহুতে পুশ করে দেবে। যেন এক মিনিটের মধ্যে আমার প্রাণবায়ু বের হয়ে যায়। ডাক্তার কাজ শেষ করে চলে যাবে। তারপর চুক্তি অনুসারে নির্দিষ্ট একটা নাম্বারে ফোন করে জানাবে আমার মৃত্যু ঘটেছে। ব্যাপারটা যত সহজে বলছি তত সহজে হবে না। কেননা সেই ডাক্তার খুনের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলতে পারেন। কেউ বিশ্বাস করবে না কোন মানুষ নিজের ইচ্ছেয় এভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে। এই পৃথিবীটা এমন নিষ্ঠুর একটা জায়গা এখানে প্রবল ভালোবাসাকেও অবিশ্বাস করে দূরে ঠেলে দেয়া যায়। তাই ডাক্তারকে আগে ভাগে আমার কাছ থেকে লিখিত কিছু ডকুমেন্ট নিতে হবে যাতে বলা থাকবে আমি স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিয়েছি। তবু হয়তো সেই ডাক্তার নিরাপদ হবেন না। ভাড়াটে খুনীর সাহায্য নিলে ব্যাপারটা সহজ। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে খুনীরাও মাঝে মাঝে মানবিক হয়ে ওঠে, সেটা আরেকটা বিপদ। পৃথিবীতে  বিনা কারণে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়, কত যুদ্ধ, কত দুর্ঘটনায় হাজার মানুষ মরে যায়, কিন্তু একজন স্বেচ্ছায় মরতে চাইলে তার জন্য বাধা হয়ে দাড়াবে তথাকথিত সভ্য আইন। কী অদ্ভুত এই সভ্যতা। আনন্দের সাথে, সফলতা নিয়ে, নিজের সময়মত মরার কোন উপায় নেই। অথচ অপাঘাতে মৃত্যুতে সভ্যতার কোন বিধিনিষেধ নেই।

Sunday, April 5, 2015

ইন্টারনেট স্পীড বিরক্তি

ধীরগতির ইন্টারনেট খুব সহজেই ধৈর্যচ্যুতি ঘটায় আমার। মেজাজ টং হয়ে যায়। মস্তিষ্ক কতটা ইন্টারনেট প্রভাবিত হলে নেট স্পীডের কারণে কোন একটা সাইট খুলতে দেরী হলে ল্যাপিটাকে তুলে আছাড় দিতে ইচ্ছে করে। তখন খুব আপনা মানুষও কাছে এসে দাঁড়ালে বিনা কারনে ঝাড়ি খায়। নেটের খারাপ অবস্থায় আমার আশেপাশে কারো থাকা নিরাপদ না।

আমি ধীরগতির ইন্টারনেটে অভ্যস্ত না। স্পীডের চাহিদাটা সময়ের সাথে বেড়েছে। ইন্টারনেটের আদিযুগে ডাউনলোড স্পীডের গড় হার ছিল ২কেবির মতো। তখন কেউ ছবি আর ডকফাইলের বেশী কিছু ডাউনলোড করার কথা ভাবতো না। একটা গান ডাউনলোড করা তো স্বপ্নের মতো ব্যাপার। মুভি ডাউনলোড কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করতো না। আমি সেই আধা কিলোবাইট থেকে শুরু করে দশ মেগাবাইটে উঠেছি। চুড়ান্ত ভালো স্পীডে দুমিনিটে দেড় ঘন্টার মুভি নামিয়ে ফেলা ডালভাত হয়ে গিয়েছিল। অফিসের কর্পোরেট ব্যাণ্ডউইথে সর্বোচ্চ বাইট আমার দখলে থাকতো। সেখান থেকে যখন আবার Banglalion এর ১ মেগা স্পীডে ফিরে আসলাম তখন প্রত্যাশার মিটার আপনাতেই কমিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ১ মেগার কানেকশানে যখন ২০কিলো স্পীডও পাইনা,  এমনকি শূন্যেও নেমে আসে, তখন মেজাজ ঠিক রাখা খুব কঠিন হয়ে দাড়ায়। আমার ধারণা ইন্টারনেট কোম্পানীগুলো পাবলিকের সাথে ব্যাণ্ডউইথ প্রতারণা করছে। এই ব্যাপারে যখন কোন অভিযোগ করা হয় তখন সুদর্শনা কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ মধু কন্ঠে যা বলবে তাতে মনে হবে যত দোষ আমার ল্যাপটপের আর আমার বাসার লোকেশানের। সেই কারণেই আমি কাংখিত স্পীড পাচ্ছি না। কিন্তু দুদিন আগেও যে আমি ১০০কিলোতে মুভি নামাইতে পারছি সেটা তিনি কিছুতেই বিবেচনা করবেন না। আমি বাংলালায়নের কথা বললাম, তার মানে এই না যে বাকীগুলাও সাধু। মোবাইল কোম্পানীগুলোর প্রতারণা নিয়ে তো রীতিমতো একটা মহাভারত রচনা করা যাবে। সেদিকে গেলাম না আপাতত। কিন্তু ইন্টারনেট বিরক্তি থেকে কয়েকটা লাইন না লিখে পারলাম না। ইন্টারনেট গত দুই দশকে আমাদের অনেকের অক্সিজেনের মতো হয়ে গেছে। এটা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে নিজেকে দম আটকানো মানুষ মনে হয়।

Friday, April 3, 2015

চৈত্রের মাঝামাঝি

১.
চৈত্র মাসের মধ্যভাগ। অন্যন্য বছর এরকম সময়ে ভ্যাপসা গরম থাকে, উৎকট একটা পরিবেশে শহর গ্রাম সর্বত্র দমবন্ধ একটা পরিবেশ তৈরী হয়ে থাকে। অনেকদিন পর এবছর তার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে পুরোনো দিনের চৈতালী হাওয়া ফিরিয়ে নিয়ে এলো। এসময়ে এলোমেলো  বাতাসে ধুলো উড়বে, পাতা ঝরবে, দিনশেষে আকাশ কালো করে ঝড়বৃষ্টি হবে ঘন্টাখানেক, এই নিয়মটা এবছর আবারো দেখলাম। ভালো লাগলো বৃষ্টির ঘ্রাণে নস্টালজিক হয়ে যেতে।

আজ সকাল থেকেই সূর্যের দেখা নেই, বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ, রাতেও ঝরেছে, সকালে একটু বিরতি দিয়ে আবারো ঝরলো। ছুটির দিনে বৃষ্টির মতো আনন্দদায়ক বিষয় আর কিছু নেই যদি অন্য সকল মৌলিক চাহিদার যোগান ঠিক থাকে। এই বৃষ্টি থেমে যাবে কিছুক্ষন পর, রোদ উঠবে দুপুরের আগেই, তবু দিনের বাকী অংশ মায়াময় বাতাস বইতে থাকবে।

২.
ব্যস্ততা বাড়েনি তবু সময় কমে গেছে। ব্যাপারটা অদ্ভুত। কাজের সময় কমিয়ে পড়াশোনার জন্য দীর্ঘতম সময় বরাদ্দ রেখেও মনে হচ্ছে কিছুই আগাচ্ছে না। অন্ততঃ লেখালেখিটা কমে গেছে আশংকাজনক হারে। অসমাপ্ত লেখা পড়ে আছে অনেকগুলো। খুচরা কাজে প্রচুর সময় অপচয় হচ্ছে। যখন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চাকরী করতাম তখন প্রচুর লেখালেখি করতাম, প্রচুর সিনেমা দেখতাম। প্রতিদিন না হলেও দুদিন পর একটা সিনেমা দেখা হতো কমপক্ষে। এখন গত এক মাসে দুটো সিনেমা দেখিনি। এমনকি নেটে আসার সময় হয় না প্রতিদিন। চ্যাটাচেটি তো ভুলেই বসেছি। টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে লাগতে হবে মনে হচ্ছে। হাতে সময় সত্যি কম, জমে আছে মেলা কাজ।

৩.
তারপর একদিন মনে পড়বে ফেলে আসা কাজের চেয়ে আরো প্রয়োজনীয় কোন বিষয়। একটা বৃক্ষ, একটা বাগান, ঝরাপাতার কান্না, একদিন সবকিছুই গল্প হয়ে যায়-


আমার ধূসর দুই চোখে চিরসবুজের গাঢ় হাতছানি

তার নাম তুমি;

আমার স্মৃতির অববাহিকায় একটি স্বপ্নের প্রিয় নদী

তুমি নিরবধি।

[মহাদেব সাহা]

ব্যস! এবার স্মৃতি ভেজে খাও। চোখে চশমার পাওয়ার বাড়াও। নতুন চশমা কেনো, নতুন ফ্রেমে দেখো জীবনকে।